চারদিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর বৃহস্পতিবার সকালে মারা যান ফজিলাতুন নেসা বাপ্পী। ২৮ ডিসেম্বর শ্বাসকষ্টজনিত জটিলতা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।
হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ কে এম আক্তারুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্যাথলজি পরীক্ষায় ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির এইচ১এন১ পজিটিভ পাওয়া গিয়েছিল।
“এটা সোয়াইন ফ্লুর ভাইরাস, তিনি এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন।”
তবে এ রোগের প্রতিষেধক রয়েছে এবং বাংলাদেশে সোয়াইন ফ্লুর চিকিৎসা সহজলভ্য হওয়ায় আতঙ্কিত না হওয়ার কথা বলছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সাবেক ডিন অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ রোগে আক্রান্ত হলে ‘বেশিরভাগ সময়’ রোগী ভালো হয়ে যায়।
তবে শ্বাসকষ্ট ও ডায়াবেটিসের রোগী, গর্ভবতী নারী, ৬ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশু, ৬৫ বা তার বেশি বয়সী ব্যক্তি এবং ফুসফুসের রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে সোয়াইন ফ্লুর ঝুঁকি বেশি থাকে বলে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন তিনি।
জ্বর, নাক দিয়ে সর্দি ঝরা, গলা ব্যথা ও কাশির সঙ্গে শ্বাসকষ্ট সোয়াইন ফ্লুর অন্যতম উপসর্গ। সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত ব্যক্তির কাছে থাকলে, তার ব্যবহৃত পাত্রে খাবার খেলে বা ওই ব্যক্তির কাপড় পড়লে ফ্লু ছড়ানোর সম্ভাবনা থাকে।
এ কারণে সর্দিকাশি বা জ্বর হলে বসে না থেকে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার পাশাপাশি আক্রান্ত রোগীর পরিচর্যার সময় সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সোয়াইন ফ্লু এখন বাংলাদেশে নিয়মিতই হয়। এ রোগের জীবাণু এখন মানুষ থেকে মানুষে ছড়ায়। মানুষের শরীর থেকেও ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির শরীরে ভাইরাসটি এসে থাকতে পারে।”
শীতের সময় জ্বর ও কাশিসহ বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতা দেখা যায়। এ কারণে বাংলাদেশে ওই সময়ই ইনফ্লুয়েঞ্জা ছড়ায় বলে একটি ধারণা প্রচলিত আছে।
এক্ষেত্রে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে ডা. ফ্লোরা বলেন, বাংলাদেশেই এখন সোয়াইন ফ্লুর টিকা পাওয়া যায়। হজযাত্রীদের যাওয়ার আগে এই টিকা দেওয়া হয়।
“আমরা এই টিকা রুটিনলি নিতে বলি না। তবে যদি কারও রোগ থাকে, অ্যাজমা থাকে বা প্রেগনেন্সির সময় সতর্কতা হিসেবে এই টিকা নিতে পারে। এই রোগটা সাধারণত প্রকট হয় না। কিন্তু যাদের ক্ষেত্রে সিভিয়ার হতে পারে তাদের আমরা টিকার পরামর্শ দিই।”
তিনি বলেন, এখন ইউরোপে সোয়াইন ফ্লুর মৌসুম বলে সেখান থেকে ফেরা কারও মধ্যে লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
২০০৯ সালের এপ্রিলে বিশ্বের ৭৪টি দেশে এইচ১এন১ ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেলে সোয়াইন ইনফ্লুয়েঞ্জা বা সোয়াইন ফ্লুকে মহামারী ঘোষণা করে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। সে বছর বাংলাদেশের মানুষের মনেও শঙ্কার ছায়া ঘনায়।
ওই বছর ১৯ জুন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা এক ব্যক্তির দেহে দেশে প্রথমবারের মত সোয়াইন ফ্লুর ভাইরাস পাওয়ার কথা জানায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জুনের শেষ নাগাদ দেশে সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত ৯ জনের মধ্যে ৮ জনেরই সুস্থ হয়ে ওঠার কথা জানায় আইইডিসিআর।
২০০৯ সালে কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তাদের বেশিরভাগই বড় কোনো জটিলতা ছাড়া সুস্থ হয়ে যান। ওই বছর সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত সোয়াইন ফ্লুতে ৩ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায় সরকারি হিসাবে।
এরপর ২০১৩ সালের এপ্রিলে আবার সোয়াইন ফ্লু ধরা পড়ে।চিকিৎসকরা বলছেন, সোয়াইন ফ্লু এখন বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা বি ও এইচ৩ এর মতই মৌসুমী ইনফ্লুয়েঞ্জায় পরিণত হয়েছে।