হৃদরোগ ঝুঁকি কমাতে খাবারে ‘ট্রান্স ফ্যাট’ ২ শতাংশে নামানোর লক্ষ্য

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২৩ সালের মধ্যে ট্রান্স-ফ্যাটি এসিড (টিএফএ) মুক্ত বিশ্ব অর্জনের লক্ষ্যের সাথে যোগ দিয়ে এই সময় সীমার মধ্যেই বাংলাদেশে খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা ২ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যের ঘোষণা দিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Dec 2019, 07:48 PM
Updated : 15 Dec 2019, 07:48 PM

রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, প্রগতির জন্য জ্ঞান- প্রজ্ঞা এবং কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) আয়োজিত ‘ট্রান্স ফ্যাট নির্মূল করি, হৃদরোগের ঝুঁকি কমাই‘ শীর্ষক অ্যাডভোকেসি ক্যাম্পেইন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে একথা বলেন তিনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্স ফ্যাটের সর্বোচ্চ মাত্রা ২ শতাংশ নির্ধারণ করতে নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়ন করা জরুরি।

“পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও খাদ্যদ্রব্যে ট্রান্স ফ্যাট নির্মূল করতে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে।”

সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায়  ঘোষিত সময়ের মধ্যে খাদ্যে ট্রান্স ফ্যাটের মাত্রা ২ শতাংশে নামিয়ে আনা যাবে।”

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর ২ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ হৃদরোগের কারণে মারা যায়, যার অন্যতম কারণ এই ট্রান্স ফ্যাট।

উচ্চ মাত্রায় ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণ হৃদরোগজনিত মৃত্যু ঝুঁকি বৃদ্ধি করে বলে জানাচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও।

সংস্থাটির মতে, বিশ্বে প্রতিবছর এক কোটি ৭৯ লাখ মানুষ হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করে, যার মধ্যে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ মানুষের শিল্পোৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণের কারণে মৃত্যু হয়ে থাকে।

এখনও ৫০০ কোটি মানুষ শিল্পোৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণজনিত ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, যাদের অধিকাংশই বাস করে নিম্ন ও নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে।

২০১৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ‘রিপ্লেস অ্যাকশন’ প্যাকেজ ঘোষণা অনুযায়ী ২০২৩ সালের মধ্যে শিল্পোৎপাদিত ট্রান্স ফ্যাটমুক্ত বিশ্ব অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

আর এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ২০২৩ সালের মধ্যে ট্রান্স ফ্যাট মুক্ত বাংলাদেশ গড়ার আন্দোলনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে অনুষ্ঠানে সবাই একমত পোষণ করেন।

আমদানি পর্যায়ে যেসব তেলে উচ্চ মাত্রার ট্রান্স ফ্যাট বা ট্রান্স ফ্যাটি এসিড পাওয়া যাবে সেগুলো আমদানি নিরুৎসাহিত করা প্রয়োজন উল্লেখ করে অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন,  মাত্রাতিরিক্ত ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণ হৃদরোগ, স্ট্রোক ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

জাতীয় হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এবং রিসার্চ ইনিস্টিটিউটের অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, “ট্রান্স ফ্যাট এক ধরনের অসম্পৃক্ত চর্বি বা আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট যা রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল হিসেবে পরিচিত এলডিএল (লো-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন) কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে, অপরদিকে এইচডিএল (হাই-ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন) কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়।”

অনুষ্ঠানে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার আব্দুল মালিক বলেন, “এখন ৫০ বছর বয়সের নিচে প্রচুর মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে, যার অন্যতম কারণ ট্রান্স ফ্যাট।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী, একজন ব্যক্তির দৈনিক ট্রান্স ফ্যাট গ্রহণের পরিমাণ হওয়া উচিত মোট খাদ্যশক্তির ১ শতাংশের কম, অর্থাৎ দৈনিক ২০০০ ক্যালরির ডায়েটে তা হতে হবে ২ দশমিক ২ গ্রামের চেয়েও কম।

বাংলাদেশে ট্রান্স ফ্যাট নির্মূল সংক্রান্ত কোনো নীতি না থাকায় বিভিন্ন খাদ্যপণ্যে উচ্চমাত্রায় চর্বি জাতীয় পদার্থ গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি রয়ে যাচ্ছে, যা হৃদরোগজনিত অকাল মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে অনুষ্ঠানে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বক্তারা।

বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি তৌফিক মারুফের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইন্সটিটিউশনের মহাপরিচালক মো. মুয়াজ্জেম হোসাইন, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৈয়দা সারওয়ার জাহান, ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের।

অনুষ্ঠানে আলোচ্য বিষয় নিয়ে আলোকপাত করেন অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, মুহাম্মদ রুহুল কুদ্দুস ও মো. হাসান শাহরিয়ার।