আর এর ফলে শিশুর স্বাস্থ্য তো বটেই, মস্তিষ্কের বিকাশও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে; ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সামাজিক দক্ষতা।
গবেষণার এই তথ্য তুলে ধরে শুক্রবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধনী ও অনুন্নত দেশগুলোতে শিশুরা দৈনিক এক ঘণ্টাও শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকছে না।
এই পরিস্থিতিকে গবেষকরা দেখছেন একটি ‘বৈশ্বিক সঙ্কট’ হিসেবে। আর বাংলাদেশের শিশুরাও এই ঝুঁকির বাইরে নয়।
সাইক্লিং, সাঁতার, ফুটবল খেলা, লাফানো, দড়ি লাফ, জিমনাস্টিকসের মত শারীরিক কসরৎ- যা হৃদস্পন্দন বাড়ায়, ফুসফুসকে আরও বেশি সক্রিয় করে- এমন যে কোনো দৈহিক কর্মকাণ্ডকে ‘ব্যায়াম’ হিসেবে ধরে এই সমীক্ষা চালানো হয়েছে।
আর শিশুরা দিনে অন্তত এক ঘণ্টা মাঝারি থেকে ভারী ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করছে কি না, তার ওপর নজর রেখেছেন গবেষকরা।
যে ১৪৬টি দেশে ডব্লিউএইচও এই সমীক্ষা চালিয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশেই শিশুদের নিষ্ক্রিয়তার মাত্রা সবচেয়ে কম। তারপরও এদেশের ৬৬ শতাংশ, অর্থ্যাৎ প্রতি তিনজনে দুই জন শিশু শরীর চর্চার পেছনে দৈনিক এক ঘণ্টাও সময় ব্যয় করে না।
তাদের এই গবেষণা বলছে, চারটি বাদে সব দেশেই ছেলেরা মেয়েদের চেয়ে বেশি সক্রিয়। ফিলিপিন্সে ৯৩ শতাংশ ছেলেশিশু এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় ৯৭ শতাংশ মেয়েশিশু শারীরিকভাবে যথেষ্ট সক্রিয় জীবন যাপন করছে না। যুক্তরাজ্যে ৭৫ শতাংশ ছেলেশিশু আর ৮৫ শতাংশ মেয়েশিশুর শরীরচর্চার অভ্যাস নেই।
শারীরিক পরিশ্রমে পুরুষের তুলনায় নারীরা অন্তত ২০ শতাংশ কম সক্রিয়- এরকম নয়টি দেশের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছিল ২০১৮ সালে ডব্লিউএইচও’র এক গবেষণা প্রতিবেদনে। সেই তালিকায় বাংলাদেশও ছিল।
বাংলাদেশে পুরুষদের ক্ষেত্রে অপর্যাপ্ত শারীরিক শ্রমের হার যখন ২০ থেকে ২৯ দশমিক ৯ শতাংশ, নারীদের ক্ষেত্রে তা ৩০ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ শতাংশ। আর এর ফলে নারীদের মধ্যে হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের মত অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ছে।
ডব্লিউএইচও’র ২০১৪ সালের আরেক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর হার ৫৯ শতাংশ। এর মধ্যে হৃদরোগে মারা যায় সবচেয়ে বেশি- ১৭ শতাংশ। আর ১০ শতাংশ মৃত্যু হয় ফুসফুসের অসুখ ও ক্যান্সারে।
ডব্লিউএইচও’র ড. রেজিনা গুথল্ড বলেন, বয়ঃসন্ধিকালে সক্রিয় থাকাটা পরবর্তী জীবনেও সক্রিয় থাকতে সহায়তা করে।
দৈহিক ভাবে কর্মক্ষম থাকলে পরে হৃদরোগ, স্ট্রোক আর টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। পাশাপাশি শৈশব-কৈশোরে মস্তিষ্কের বিকাশের জন্যও সক্রিয় থাকাটা জরুরি বলে মত দিচ্ছেন গবেষকরা।
রেজিনা গুথল্ড বলেন, যে শিশুরা নিয়মিত শরীরচর্চা করছে, তারা বেশ বুদ্ধিদীপ্ত হয়; সহজে শিখতে পারে, সামাজিক যোগাযোগের দক্ষতাও তাদের বেশি হয়।
ড. ফিওনা বুল বলছেন, শিশুরা আসলে অলস নয়।
“শিশুদের শরীরচর্চাকে প্রাধান্য দিতে না পারাটা আমাদেরই অবহেলা আর ব্যর্থতা। আর এই পরিস্থিতি সারাবিশ্বেই। ”
এর পেছনে যে ঘরের বাইরে শিশুদের খেলাধুলার ব্যবস্থা না থাকা এবং নিরাপত্তার অভাববোধের বিষয়টিও কাজ করছে- সে কথাও বলছেন গবেষকরা।
এবারের প্রতিবেদনের সহলেখক লিয়ানে রিলে বলেন, শিশুদের কঠোর পরিশ্রম করতে উৎসাহ দেওয়া হয় ঠিকই, কিন্তু তা কেবল পড়ালেখা আর পরীক্ষার জন্য। বাচ্চারা লম্বা সময় ধরে স্কুলে থাকে, বসে বসে হোমওয়ার্ক করে, খেলাধুলার ফুরসত আর হয় না।
রাস্তাঘাটের অবস্থা ভালো না হলে অভিভাবকরা বাচ্চাদের সাইকেল চালাতে বা হাঁটতে দিতে চান না। ফলে শিশু অবসরে অভ্যস্ত হয়ে উঠছে মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট, কমপিউটারে ‘ডিজিটাল খেলায়’, যা নিয়ে গবেষকরাও উদ্বিগ্ন।