জিনবাহী রোগ গোপন করায় সরকারি স্বাস্থ্যসেবার বিরুদ্ধে মামলা

লন্ডনে এক নারী তার মেয়ের জন্মের পর নিজের জিনবাহী একটি রোগের কথা জানতে পেরে ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস (এনএইচএস) এর বিরুদ্ধে দায়িত্বহীনতার অভিযোগে আদালতে গেছেন। হাই কোর্টকে ওই নারী বলেছেন, রোগটির কথা তাকে আগে জানানো হয়নি। আগে জানলে তিনি গর্ভপাত করতেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2019, 07:14 PM
Updated : 19 Nov 2019, 10:47 AM

বিবিসি জানায়, বাবার জিনগত ত্রুটি থেকেই বংশানুক্রমে ওই নারী মস্তিষ্কের ভয়াবহ হান্টিংটন’স ডিজিজ এর বাহক এবং একারণে তার জন্ম দেওয়া মেয়েরও রোগটি হওয়ার ঝুঁকি ৫০ শতাংশ।

এ রোগে মানুষের মস্তিষ্কের কোষ দ্রুত মরে যায়। ওই নারীর বাবার এ রোগ ধরা পড়েছিল এবং তাকে চিকিৎসাও করা হয়েছিল। কিন্তু সেই তথ্য গোপন করে যত্নশীলতার দায়িত্ব পালন না করার অভিযোগে ওই নারী এখন যুক্তরাজ্যের তিনটি  ‘ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস’ (এনএইচএস) ট্রাস্টের বিরুদ্ধে মামলা করছেন।

যদিও বাবার অনুরোধেই মেয়েকে সেকথা জানানো হয়নি। এ রোগের কথা জানলে মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে কিংবা গর্ভপাত করাতে পারে- এমন আশঙ্কা থেকেই চিকিৎসকদেরকে বিষয়টি গোপন রাখতে বলা হয়েছিল বলে জানিয়েছে বিবিসি।

এনএইচএস কর্মকর্তারা বলেন, মামলাটি মানুষের প্রতি এনএইচএস এর যত্নশীল হওয়ার দায়িত্ব এবং গোপনীয়তা রক্ষার দায়িত্বকে মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়েছে।

ওই নারীর মেয়ের বয়স এখন নয় বছর। শিশুটির সুরক্ষার কথা বিবেচনা করেই ওই নারীর নাম সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়নি। সেখানে তাকে এবিসি নামে ডাকা হয়েছে।

বিবিসি জানায়, এবিসির বাবা ওই রোগের কারণে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলেন। তাদের জীবনে সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনাটি ঘটে ২০০৭ সালে। যখন তার বাবা তার মাকে গুলি করে হত্যা করে।

ওই ব্যক্তি নরহত্যার অভিযোগে দোষীসাব্যস্ত হয়েছিলেন। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্য আইনে তার শাস্তি হ্রাস পায়। তখন বলা হয়েছিল, তিনি সম্ভবত ‘হান্টিংটন’স’ রোগে ভুগছেন। এ রোগের কারণে আক্রান্ত ব্যক্তির চলাফেরা, বিচারবুদ্ধিতে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। আক্রান্ত ব্যক্তি বেশিরভাগ সময় স্বভাববিরুদ্ধ আচরণ করেন এবং মাঝেমধ্যেই আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেন।

২০০৯ সালে সেন্ট জর্জের ‘এনএইচএস ট্রাস্ট’ ওই ব্যক্তির হান্টিংটনের রোগ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে। কিন্তু তিনি তার মেয়ে এবিসি’কে একথা জানাতে চাননি। কারণ, এবিসি তখন অন্তঃস্বত্তা ছিলেন।

কিন্তু সন্তান জন্মের চারমাস পর এবিসি হঠাৎ করেই তার বাবার জিনগত রোগের কথা জেনে যান এবং পরীক্ষার পর নিজেও একই জিনগত ত্রুটি বহন করছেন বলে জানতে পারেন। যদিও এবিসি’র মেয়ের এখনো কোনো পরীক্ষা হয়নি। তবে তার জিনেও একই ত্রুটি থাকার আশঙ্কা ৫০: ৫০।

এবিসি বলেন, “সেন্ট জর্জ ট্রাস্টের দায়িত্ব ছিল আমার প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং আমার বাবার রোগের বিষয়ে আমাকে জানানো, বিশেষ করে অন্তঃস্বত্তা অবস্থায় যে চিকিৎসক আমার চিকিৎসা করছিলেন তাকে সবটা বলা। এটার জন্য তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

“সেটা হলে আমি সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা করাতে পারতাম এবং সেরকম প্রয়োজন পড়লে গর্ভপাত করাতাম। ভয়াবহ এ রোগের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে সন্তানকে পৃথিবীতে আনা বা গুরুতর অসুস্থ একজনের দেখভাল করার চেয়ে গর্ভপাত করানো বরং ভাল হত।”

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যে প্রায় সাড়ে আট হাজার মানুষ হান্টিংটন’স ডিজিজে আক্রান্ত এবং আরো প্রায় ২৫ হাজার মানুষের মধ্যে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এ রোগের লক্ষণ দেখা দেওয়ার আশঙ্কা আছে।

সাধারণত ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সে এ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করে এবং লক্ষণ প্রকাশের ১০ থেকে ২০ বছরের মধ্যে রোগী মারা যায়।

২০১৫ সালে লন্ডন হাই কোর্টে প্রথম এবিসি’র ঘটনাটি নিয়ে যুক্তিতর্ক হয় এবং বিচারক সেদিনই বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে কোনো শুনানির সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলেন, এবিসি’র প্রতি দায়িত্বশীলতা নিয়ে এখানে বিতর্কের অবকাশ নেই।

কিন্তু ২০১৭ সালে আপিল আদালত আগের রায় স্থগিত করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয়।

এরপরই এবিসি এখন দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনে সেন্ট জর্জের স্বাস্থ্যসেবা এনএইচএস ট্রাস্ট, সেন্ট জার্জের মেন্টাল হেলথ এনএইচএস ট্রাস্ট এবং সাসেক্স পার্টনারশীপ এনএইচএস ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট এর বিরুদ্ধে মামলা করতে চলেছেন।

এবিসি মামলায় জিতে গেলে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সেবা আইনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে; বিশেষ করে রোগীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা সুরক্ষা আইনে।

এছাড়া, জিনগত রোগের ক্ষেত্রে রোগীর পরিবারকে তা জানানো এবং তাদেরও পরীক্ষা করানোর নীতিতে আমূল পরিবর্তন আনতে হবে।