‘বয়স যাই হোক, প্রতিদিন একটি করে ডিম’

সব বয়সী মানুষকে প্রতিদিন ডিম খাওয়ার আহ্বানের মধ্যে দিয়ে দেশে পালন করা হল বিশ্ব ডিম দিবস।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Oct 2019, 03:37 PM
Updated : 11 Oct 2019, 03:37 PM

দিবসটি উপলক্ষে শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে একটি শোভাযাত্রা শুরু হয়ে পল্টন মোড় দিয়ে আবার প্রেস ক্লাবের সামনে এসে শেষ হয়।

'সুস্থ মেধাবী জাতি চাই, প্রতিদিনই ডিম খাই’ স্লোগান নিয়ে এই শোভাযাত্রা থেকে সাধারণ মানুষের মাঝে সেদ্ধ ডিম বিতরণ করা হয়।

২৪তম 'বিশ্ব ডিম দিবস' উপলক্ষে সিরডাপ মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, যে কোনো বয়সের মানুষ ডিম খেতে পারেন।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু সভায় বলেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) পরামর্শ হল, সুস্থ থাকার জন্য প্রত্যেক মানুষের বছরে অন্তত ১০৪টি ডিম খাওয়া দরকার।

দেশে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মাথাপিছু ডিম খাওয়ার পরিমাণ ছিল ১০৩টি। এ বছর সে ১০৪টি ডিমের লক্ষ্য পূর্ণ হবে এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা ১০৫টিতে উন্নীত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “এর মধ্যে দিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটানকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকবে।”

একে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘বড় সাফল্য’ হিসেবে বর্ণনা করে আশরাফ আলী খান বলেন, এ সাফল্যের অন্যতম অংশীদার এদেশের ডিম খামারিরা।

স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে ডিমের পুষ্টিগুণ নিয়ে তথ্য যোগ করার প্রস্তাব রেখে বক্তব্য দেন বিপিআইসিসি’র সভাপতির মসিউর রহমান।

তিনি বলেন, “পোশাক শ্রমিকসহ শ্রমজীবী মানুষের জন্য সপ্তাহে ২টি ডিম নিশ্চিত করতে পারলে তাদের উৎপাদনশীলতা বাড়বে এবং তারা দীর্ঘদিন কর্মক্ষম থাকতে পারবেন।”  

সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ল ডিপার্টমেন্ট অব পোল্ট্রি সায়েন্স’র অধ্যাপক ড. ইলিয়াস হোসেন।

মূল প্রবন্ধে ডিমকে ‘পরিপূর্ণ খাদ্য’ হিসেবে বর্ণনা করে বলা হয়, সপ্তাহে ছয়টি ডিম খেলে স্তন ক্যানসারের সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ কমে আসবে।

“শর্করা কমিয়ে প্রতিদিন ডিম খেলে মাসে ৩ পাউন্ড ওজন কমানো সম্ভব। মাত্র দুটি ডিম নারীর দৈনিক প্রোটিন চাহিদার এক চতুর্থাংশ পূরণ করতে পারে।”  

সভায় বক্তারা বলেন,  জন্মের আগে থেকেই মায়ের শরীরে পুষ্টি চাহিদা পূরণের মধ্য দিয়ে ডিমের কার্যকারিতা শুরু হয়।

“এরপর জীবনের প্রতিটি ধাপে মানুষের দরকার হয় ডিমের পুষ্টি। শৈশব-কৈশোর-যৌবন এবং জীবনের বাকিটা সময় শরীরের জন্য মূল্যবান অত্যাবশ্যকীয় আমিষের চাহিদা পূরণে ডিমের কোনো তুলনা হয় না।”

বক্তাদের ভাষ্যে, সঠিকভাবে 'প্রমোট' করা হলে এবং দেশের আপামর মানুষ যদি পরিমাণ মত ডিম খায় তবে অপুষ্টির চিত্রটা পুরোপুরি পাল্টে ফেলা সম্ভব। 

ডিম উৎপাদনে সংশ্লিষ্ট খামারিদের কারণে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, দারিদ্র্য দূর হয়েছে বলে আলোচনা সভায় মন্তব্য করেন বক্তারা।

অন্যদের মধ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রইছউল আলম মণ্ডল, প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক নাথু রাম সরকার আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

বিশ্ব ডিম দিবসে আলোচনা সভা নিয়ে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিশুদের পুষ্টি ও সুস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে স্কুলের টিফিনে সেদ্ধ ডিম দেওয়ার বিষয়টিও গুরুত্বে সাথে ভাবছে সরকার।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ধারণা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় এক হাজার ৭৮১ কোটি ডিম উৎপাদন হবে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ডিমের উৎপাদিত ছিল প্রায় এক হাজার ৭১০ কোটি।

প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ, স্বাস্থ্যবান ও মেধাবি জাতি গঠন, সর্বোপরি ডিমের গুণাগুণ সম্পর্কে জনসচেতনতা বাড়াতে ১৯৯৬ সাল থেকে এ দিবসটি বিশ্ব জুড়ে একযোগে পালিত হয়ে আসছে।