অবহেলা-দুর্নীতিতে ডেঙ্গু ছড়িয়েছে: টিআইবি

ডেঙ্গুর প্রকৃত চিত্র চিহ্নিত করার কাজে ‘ঘাটতি’ এবং আগাম পূর্বাভাসকে গুরুত্ব না দিয়ে ‘অনিয়ম-দুর্নীতির’ কারণে সারাদেশে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি হয়েছে বলে মনে করছে টিআইবি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2019, 05:03 PM
Updated : 25 Sept 2019, 05:03 PM

বুধবার ধানমণ্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যাদের ওপর মশা নিয়ন্ত্রণের মূল দায়িত্ব ছিল, তাদের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি ও অবহেলা ছিল।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এইডিস মশা নিয়ে আগাম পূর্বাভাসকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।

"২০১৮ সালের মে মাসে এইডিস মশার কয়েকটি কীটনাশকের ক্ষেত্রে প্রতিরোধক্ষমতা পরীক্ষায় এইডিস ও কিউলেক্স মশার মধ্যে অতি উচ্চ মাত্রায় পারমিথ্রিন কীটনাশকের প্রতিরোধ ক্ষমতা দেখা যায়। কিন্তু জাতীয় নির্বাচনের বছর হওয়ার কারণে একজন উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা আইসিডিডিআরবির এই গবেষণার তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশ না করার নির্দেশ দেন।"

সংবাদ সম্মেলনে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দুই সিটি করপোরেশনের যে মশক নিধন কার্যক্রম চালানো হয়েছে তা ছিল অনেকাংশে লোক দেখানো।

"তারা এডাল্টিসাইডিং বেশি করেছে, কারণ এডাল্টিসাইড মানুষকে বেশি দেখানো যায়। অ্যাডাল্টিসাইডের জন্য ওষধ ক্রয় করতে হয় বেশি। যে কারণে এর প্রতি দুই সিটি করপোরেশনের আগ্রহ দেখা গেছে।"

এবার বর্ষার শুরুতে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর ক্রমশ তা ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। সরকারি হিসাবেই এ পর্যন্ত ৮৫ হাজারের বেশি মানুষ এ বছর মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় ঢাকা সিটি করপোরেশনের মশা নিধন কার্যক্রমে শিথিলতার অভিযোগ ওঠে। পাশাপাশি সিটি করপোরেশন মশা মারতে যে ওষুধ দিচ্ছে তা কার্যকর নয় বলে আইসিডিডিআর,বির গবেষণায় উঠে আসে।

এ নিয়ে সমালোচনা আর উদ্বেগের মধ্যে বিষয়টি উচ্চ আদালতে গড়ায়। পরে কোরবানির ঈদের আগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন চীন থেকে এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ভারত থেকে নতুন ওষুধ নিয়ে আসে।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মশার ওষুধ যেভাবে কেনা হয়েছে তা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন তোলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

তিনি বলেন, “এতে ক্রয় নীতিমালা লঙ্ঘন করে একটি প্রতিষ্ঠানকে ক্রয়ের আদেশ দেওয়া হয়েছে। এ কারণে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মশক নিধনে মোট ব্যয়ের ৪০ ভাগ ক্ষতি হয়েছে। ওষুধ কেনার প্রতিটি ধাপে ঘুষ লেনদেন বা অবৈধ যোগসাজশ ছিল।"

টিআইবির সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মশক নিধনে বাজেটের কোনো ঘাটতি ছিল না, ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনিয়ম ছিল।

সংবাদ সম্মেলনে 'ঢাকা শহরে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়' শীর্ষক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন টিআইবির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. জুলকারনাইন ও মো. মোস্তফা কামাল।

সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশে গত কয়েক বছর ধরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব থাকলেও জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে ডেঙ্গুর বাহক মশা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধকে ‘যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি’।

“এইডিস মশা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে ‘সমন্বিত ব্যবস্থাপনা না রেখে’ দুই সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম শুধু রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রিক ও এডাল্টিসাইড পদ্ধতি নির্ভর, যা  এইডিস মশার ক্ষেত্রে কার্যকর নয়। কীটনাশক ক্রয় নির্ভর হ‌ওয়ায় দুর্নীতির ক্ষেত্র তৈরি করে।”

টিআইবি বলছে, ‘বিক্ষিপ্তভাবে লোক দেখানো অকার্যকর’ কার্যক্রম গ্রহণ এবং সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশের নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে ‘সীমাবদ্ধতা অনিয়ম-দুর্নীতির’ কারণে ডেঙ্গু এবার সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে, যা লক্ষাধিক মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে এবং দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছে।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে বছরব্যাপী কর্মপরিকল্পনা নেওয়ার সুপারিশ করেছে টিআইবি।