মঙ্গলবার বিশ্ব আত্মহত্যা প্রতিরোধ দিবসে রাজধানীর হাতিরঝিলে এই সাইক্লিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করে ব্রাইটার টুমোরো ফাউন্ডেশন (বিটিএফ)।
প্রতিযোগিতার সমাপনী অনুষ্ঠানে বক্তারা আত্মহত্যা প্রতিরোধে সংবেদনশীল সমাজ গঠন এবং খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে তরুণদের সম্পৃক্ত করার ওপর জোর দেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক অনুষ্ঠানে বলেন, ”আমাদের শরীরের অন্যান্য রোগের মতো আত্মহত্যাও একটি। এই সামাজিক ব্যধি দূর করতে হলে পুরো সমাজের দায়িত্ব আছে। আর তা হল সংবেদনশীল পরিবেশ তৈরি করা।”
তিনি বলেন, আত্মহত্যা প্রতিরোধে আত্ম-উপলব্ধি এবং সংবেদনশীলতা তৈরি করা দরকার। সব রকম পরিস্থিতিতে- বিপদ, দুঃখ ও বেদনার সামনে ইতিবাচক থাকতে হবে। খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।”
শান্তি নিকেতনে পড়ার সময়ে সাইকেল চালানোর কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
তিনি বলেন, “আমি যখন শান্তি নিকেতনে পড়তাম, তখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে টাকা বাঁচানোর জন্য জন্য সাইকেল চালাতাম।”
সাইকেলের ধাক্কায় আহত হওয়ার কথা স্মরণ করে বন্যা বলেন, “নিউ ইয়র্কে আমি রাস্তা পার হওয়ার সময় একজন সাইক্লিস্ট আমার পায়ে ধাক্কা দিলে আমার হাঁটু ভেঙে যায়। এরপর থেকে আমি ক্র্যাচে ভর করে হাঁটাচলা করি। সেজন্য সাইক্লিস্টদের সতর্ক থাকা জরুরি, যাতে অন্যের ক্ষতি না হয়।”
তিনি বলেন, “সাইকেল গতি দেয় এবং এই গতি দিয়ে সব স্থবিরতা এবং হতাশা সমাজ থেকে দূর করা যায়- এমনটা মনে করি। সমাজ থেকে হতাশা দূর হলে আত্মহত্যার প্রবণতাও কমে যাবে।”
সকাল সাড়ে ৬টায় হাতিরঝিলের এম্ফিথিয়েটার থেকে শুরু হয় ‘সাইক্লিং অ্যারাউন্ড ঢাকা’ কর্মসূচি। সারাদেশ থেকে আসা প্রায় দেড়শ সাইক্লিস্ট এই প্রতিযোগিতায় নেন।
নিজের দুই সন্তান একসঙ্গে আত্মহত্যা করার পর ব্রাইটার টুমোরো ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠার কথা জানান সভাপতি জয়শ্রী জামান।
তিনি বলেন, ”২০১৪ সালে আমার দুই সন্তান একসঙ্গে আত্মহত্যা করে। এরপর আমি হতাশ হয়ে পড়ি। কিছুতেই সেই হতাশা কাটিয়ে উঠতে পারছিলাম না। এরপর এক সময় আমার মনে হল, আমার সন্তান আত্মহত্যা করেছে, কিন্তু পৃথিবীর আর কোনো মায়ের সন্তান যেনো আত্মহত্যা না করে, আমি সেজন্য কাজ করব।”
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বাংলাদেশের প্রায় ৬৫ লাখ মানুষ আত্মহত্যাপ্রবণ এবং প্রতিবছর প্রায় ১১ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে।
আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে, বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় আট লাখ লোক আত্মহত্যা করেন। বিশ্বজুড়ে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন মানুষ আত্মহত্যায় মারা যান।