বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে কড়াইলে টেলিনর হেলথ

সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মধ্যে ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরি ও বিনা খরচে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা ও পরামর্শ দেওয়ার লক্ষ্যে টেলিনর হেলথ স্বাস্থ্য সেবা ক্যাম্পের কার্যক্রম শুরু করেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Sept 2019, 12:48 PM
Updated : 1 Sept 2019, 12:48 PM

রোববার সকালে রাজধানীর মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে এই কার্যক্রম শুরু করে তারা।

টেলিনর গ্রুপের ডিজিটাল হেলথ সাবসিডিয়ারি টেলিনর হেলথের আয়োজনে ‘পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ’ স্কুল প্রাঙ্গণে এই কার্যক্রমটি শুরু হয় সকাল ১১টায়।

তিন দিনব্যাপী এই স্বাস্থ্য সেবা ক্যাম্পের উদ্বোধনী দিনে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. মমিনুর রহমান মামুন, ঢাকা-১৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মফিজুর রহমান।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমসহ তিনটি সংবাদ মাধ্যমের সহযোগিতায় এই ক্যাম্পেইন আগামী মঙ্গলবার অবধি প্রতিদিন সকাল ১১টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত চলবে।

সকাল ১১টায় ক্যাম্পেইন শুরু হতেই কড়াইল বস্তিবাসী আসতে শুরু করেন একে একে।

কড়াইলের বাসিন্দা সামসুন্নাহার বেগম এসেছিলেন তার ৪ বছর বয়সী মেয়ে জান্নাতকে নিয়ে।

তিনি বলেন, “কয়দিন আগে মাইয়ার জ্বর আইছিল। হেরপর থেইক্যা সে কিছু খাইতে চায় না। অহনও থাইমা থাইমা জ্বর আহে। গত ৪-৫ দিন ধইরা বমিও করতাসে। তাই তারে লয়া আসছি।”

৮ বছর বয়সী ছেলে জুয়েলকে নিয়ে ডলি বেগম এসেছিলেন ক্যাম্পে।

তিনি বলেন, “ফার্মাসি থিকা ওষুধ তো আইন্যা খাওয়াইসি। কিন্তু কাজে দিতাসে না। পোলার গায়ে জ্বর বাইতাসে। কমার নাম নাই। তারে লয়া আইলাম।”

ক্ষণিক পর ক্যাম্পে এলেন মোছাম্মৎ কোহিনূর আক্তার, বেশকিছু দিন আগে ডেঙ্গু জ্বর থেকে সেরে উঠেছে তার পরিবারের এক সদস্য।

তিনি জানান, ডেঙ্গু সচেতনতায় পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম নিয়ে জানলেও জ্বর সেরে যাওয়ার পর কী কী খাবার খেতে হবে বা কোন ওষুধগুলো খেতে হবে, তা নিয়ে ধারণা নেই তার।

১৩ বছর বয়সী মনির হোসেনকে নিয়ে আসেন হুইলচেয়ারে করে আসেন তার মামা মনির হোসেন।

তিনি বলেন, “ডাক্তারের ওষুধ খায়া কোনো কাজে আসতাসে না। ভাইগ্নার শরীলে ছাইরা ছাইরা জ্বর আসে। তাই এখানে টেস্ট করাইতে আসছি।”

কড়াইলের স্বাস্থ্য সেবা নিয়ে আরেক বাসিন্দা লাইলি বেগম বলেন, “১৫-১৬ বছর ধইরা আমি এইখানে থাকি। টাকার অভাবে আমরা নিয়মিত হাসপাতালে গিয়া চিকিৎসা নিতে পারি না। তাই ঘরের পাশে যে ফার্মাসি আছে, সেখান থিকা ওষুধ নিয়া খাই। কখনও সারে, কখনও সারে না। যাও কিছু ডাক্তার মাঝেমধ্যে আসে, কিন্তু তাগোরেও তো আমরা সব সময় পাই না।”

তাসলিমা বেগম, আমিরুন বেগমরাও আনেন একই অভিযোগ। মাতৃ স্বাস্থ্য নিয়েও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবাও তারা পান না বলে জানান।

পরে কাউন্সিলর মফিজুর রহমানকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখানে দুজন সরকারি চিকিৎসক আছেন। তারা সপ্তাহে এক দিন করে এসে চিকিৎসা দেন। বস্তি এলাকায় সরকারি ডাক্তাররা আসতে চান না একথা সত্যি। বস্তিবাসীর চিকিৎসা সেবা নিয়ে আমাকে আরো কাজ করতে হবে।”

টেলিনর হেলথের ব্র্যান্ড অ্যান্ড মার্কেটিং ম্যানেজার  আলিফ আল মো. সালাউদ্দিন জানান, ক্যাম্পেইন চলাকালে ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে বস্তিবাসীদের মধ্যে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে।

টেলিনর হেলথের পক্ষ থেকে ফ্রি মেডিকেল চেক আপ, প্রয়োজনে ফ্রি তে ডেঙ্গু টেস্ট করিয়ে নেওয়ায় আহ্বান জানানো হয়।

ক্যাম্পে টেলিনর হেলথ এর বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা চিকিৎসা সেবা প্রদান করছেন। 

এই ক্যাম্পেইনে আসা কারও শরীরে ডেঙ্গুর লক্ষণ দেখা গেলে তাকে দেওয়া হবে একটি টোকেন ও প্রেসকিপশন। সেগুলো নিয়ে গুলশানের সাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করিয়ে নিতে পারবেন। এরপর ডেঙ্গু সনাক্ত হলে তাকে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সেবা দেবে এই ক্যাম্প।

আলিফ আল মো. সালাউদ্দিন বলেন, “স্বাস্থ্য সেবার ক্যাম্পেইন নিয়ে আমাদের কার্যক্রম শুরু করলাম। সামনে সারা দেশে আরো প্রোগ্রাম রয়েছে আমাদের।  আমরা মানুষের জন্য কাজ করতে এসেছি।”

২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় টেলিনর গ্রুপের ডিজিটাল হেলথ সাবসিডিয়ারি টেলিনর হেলথ। নন কমিউনেকবল রোগ এবং স্বাস্থ্য সেবা সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়গুলো চিহ্নিত করাই টেলিনর হেলথের প্রথম উদ্যোগ।