দুই বছর ইন্টার্নশিপ: প্রতিবাদের মুখে সরলো খসড়া নীতিমালা

ইন্টার্নশিপ দুই বছর করার সরকারি প্রস্তাবের বিরোধিতায় মেডিকেল শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মুখে এ সংক্রান্ত নীতিমালার খসড়াটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে সরানো হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Sept 2019, 11:15 AM
Updated : 1 Sept 2019, 11:53 AM

রোববার উপসচিব মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বকাউল স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ওয়েবসাইটে দেওয়া খসড়াটি দেওয়া হয়েছে, সেটি চূড়ান্ত নীতিমালা নয়।

এতে বলা হয়, ‘মেডিকেল কলেজ, ডেন্টাল কলেজ ও ডেন্টাল ইউনিট এর এমবিবিএস/বিডিএস কোর্সের শিক্ষার্থীদের জন্য ইন্টার্নশীপ প্রশিক্ষণ ও ভাতা প্রদান সংক্রান্ত একটি খসড়া নীতিমালা অংশীজনদের সাথে প্রাথমিকভাবে আলোচনা করে মতামতের জন্য ওয়েবসাইটে প্রদর্শন করা হয়েছিল। এটি খসড়া নীতিমালা, চূড়ান্ত কোন নীতিমালা নয়। নীতিমালাটি চূড়ান্ত করার নিমিত্তে অংশীজনদের সাথে আরো আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।’

এরই মধ্যে যারা মতামত দিয়েছেন, তাদেরকে ধন্যবাদ জানিয়ে খসড়াটি ওয়েবসাইট থেকে আপাতত প্রত্যাহার করা হয়েছে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

‘সকল অংশীজনদের সাথে আলোচনা করে চূড়ান্ত করার পূর্বে আবার ওয়েবসাইটে প্রদর্শন করা হবে,’ বলেও এতে উল্লেখ করা হয়েছে।  

গত ২৭ অগাস্ট স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে ‘মেডিকেল কলেজ/ ডেন্টাল কলেজ/প্রতিষ্ঠান এর এমবিবিএস/বিডিএস কোর্সের মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশীপ প্রশিক্ষণ ও ইন্টার্নশীপ ভাতা প্রদান সংক্রান্ত নীতিমালা-২০১৯’ এর খসড়া প্রকাশ করা হয়।

বর্তমানে পাঁচ বছরের এমবিবিএস কোর্সের পর মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের এক বছর নিজ প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করতে হয়, নতুন নীতিমালার যা দুই বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

দুই বছরের মধ্যে প্রথম বছরটি শিক্ষার্থীদের নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করতে হবে। আর দ্বিতীয় বছর কোনো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তাদেরকে যুক্ত করা হবে।  

“প্রথম বছরের প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান দ্বিতীয় বছর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অনুশীলন করিবে,” বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।

আগামী ১৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওই খসড়ার ওপর মতামত চাওয়া হয় সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে।

প্রজ্ঞাপনটি প্রকাশের পর থেকেই সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ করে আসছিলেন মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা।

রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মিছিল এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে সমাবেশ করেছেন।

আন্দোলনে থাকা শিক্ষার্থী রবিন হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, দাবি আদায়ে তারা কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবং হাসপাতালের পরিচালকের কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন।

শনিবার আন্দোলনে নামা ঢাকার আরেক প্রতিষ্ঠান স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের (মিটফোর্ড) শিক্ষার্থীরা রোববারও তাদের প্রতিবাদ কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন।

সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতেও সরব হন চিকিৎসকরা।

 

এর আগে রোববারই বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ প্রজ্ঞাপনটি প্রত্যাহারের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিশ্চিয়তা পাওয়ার কথা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন।

দেশে মেডিকেলের পাঠ্যক্রম এবং ইন্টার্নশিপ বিষয়ক যে কোনো সিদ্ধান্ত বিএমডিসিই নিয়ে থাকে।

অধ্যাপক মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ জানান, তিনি বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন।

“প্রজ্ঞাপনটি প্রত্যাহার করার ব্যাপারে তারা আমাকে নিশ্চয়তা দিয়েছেন,” বলেন অধ্যাপক শহিদুল্লাহ।

বর্তমানে মেডিকেলের শিক্ষার্থীদের পাঁচ বছরের এমবিবিএস কোর্স সম্পন্ন করার পর বিএমডিসি থেকে সাময়িক লাইসেন্স নিয়ে একবছরের ইন্টার্নশিপ করতে হয়। নিজ নিজ মেডিকেল কলেজের হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ শেষ করার পর সেই লাইসেন্স স্থায়ী হয়।

শিক্ষার্থীরা বলছেন, শিক্ষাজীবন করে চিকিৎসক হতে এখনই তাদের লেগে যায় সাড়ে ছয় বছরের মতো। এর সঙ্গে আরও এক বছর যুক্ত হলে তাদের পেশাগতজীবন শুরুর সময়টা দীর্ঘায়িত হবে।