ইউরোপে হামের প্রকোপ বেড়ে চলায় সতর্ক করল ডব্লিউএইচও

অভিভাবকদের মাঝে শিশুদের টিকা দেওয়ার অনাগ্রহ বাড়ায় এ বছর ইউরোপের চার দেশে হামের প্রাদুর্ভাব ফিরে এসেছে, যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। 

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 August 2019, 04:39 PM
Updated : 30 August 2019, 05:34 PM

বৃহস্পতিবার নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের মধ্যভাগ পর্যন্ত ইউরোপীয় দেশগুলোতে হাম আক্রান্তের সংখ্যা ছিল গত বছরের দ্বিগুণ।

ডব্লিউএইচও বলছে, গত বছর প্রথম ছয় মাসে যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৪৪ হাজার ১৭৫ জন, সেখানে এ বছর এরই মধ্যে ৯০ হাজার মানুষ হামে আক্রান্ত হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টিকাদান বিভাগের পরিচালক ডাক্তার কেট ও ব্রায়ান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন,  “আমরা পেছনের দিকে ফিরে যাচ্ছি, আমরা ভুল পথে হাঁটছি।”

অঞ্চলভিত্তিক কোনো রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে বা কোনো রোগের বিলোপ ঘটলে তা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে ডব্লিউএইচও। এ সংস্থার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি কোনো দেশে বছরের প্রতি মাসেই মানুষের আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নজরে আসে, তবে সেই দেশকে আর ‘হামমুক্ত’ বলার সুযোগ নেই। 

ফ্রান্স, জার্মানি, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, রাশিয়াসহ ১২টি দেশের সঙ্গে আলবেনিয়া, ব্রিটেন, চেক রিপাবলিক ও গ্রিসও ঘোষণা দিয়েছিল, তাদের দেশ থেকে হাম দূর হয়েছে। কিন্তু ডব্লিউএইচও বলছে, এসব দেশে এখন হাম ফিরে এসেছে।

হামের প্রাদুর্ভাব ফিরে আসার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রেও দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস। গত এক দশকের মধ্যে এবারই প্রথম এত উদ্বেগজনক পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে সেখানে।

এর আগে ১৯৯২ সালে হামে আক্রান্তের সংখ্যা রেকর্ড ছাড়িয়ে গেলেও এর আট বছর পর, ২০০০ সালে হাম দূর হওয়ার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র।   

তবে ডব্লিউএইচও বলছে, ‘নির্মূল’ হওয়ার ঘোষণা কোনোভাবেই হাম সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হওয়া বোঝায় না। এতে শুধু এটাই বোঝায় যে, দেশটি টানা ১২ মাস হামের প্রকোপমুক্ত ছিল। আর এ কারণেই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা শিশুদের টিকা দেওয়ার তাগিদ দিয়ে থাকেন।

নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, হামের রোগীর সংখ্যা নতুন করে বাড়তে থাকায় এটা স্পষ্ট হচ্ছে যে, শিশুদের টিকাদানে অভিভাবকদের গাফিলতি ছিল।

পশ্চিমের অভিভাবকদের অনেকের মধ্যে একটি ভুল ধারণা কাজ করে যে, টিকা দিলে সন্তান ভবিষ্যতে অটিজমে আক্রান্ত হতে পারে। বিজ্ঞানীরা বারবার এই ভুল ভাঙানোর চেষ্টা করে এলেও অনেক উন্নত দেশে টিকাদানের হার কমে আসছে। 

ডব্লিউএইচওর তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশেই টিকাদানের হার ৯০ শতাংশের বেশি। আর ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ৮৬ শতাংশ শিশুকে হামের অন্তত একটি টিকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু হাম অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ বলে এ রোগের বিস্তার ঠেকাতে ৯৩ থেকে ৯৫ শতাংশ মানুষের শারীরিকভাবে হাম প্রতিরোধী হয়ে ওঠা দরকার।

হাম আক্রান্তরা শুরুতে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যায় ভোগেন। তারপর প্রবল জ্বরের সঙ্গে গায়ে লাল লাল দানা দেখা দেয়। রোগের লক্ষণ দেখা দিলে তা উপশমের চিকিৎসা রয়েছে। তবে হামে আক্রান্তদের চোখ ও মস্তিষ্কে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।

চিকিৎসকরা বলেছেন, এই রোগ নিরাময়যোগ্য। যেসব প্রতিষেধক শিশুদের জন্য রয়েছে সেগুলো যথেষ্ট নিরাপদ ও কার্যকর।

এই মুহূর্তে ইউরোপের চার দেশ আলবেনিয়া, ব্রিটেন, চেক রিপাবলিক ও গ্রিস হামের প্রাদুর্ভাবের কারণে ডব্লিউএইচওর নজরদারিতে রয়েছে।

ডব্লিউএইচওর ইউরোপ অঞ্চলের টেকনিক্যাল কর্মকর্তা ডা. ড্রাগন জাঙ্কোভিচ নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, “এই ঘটনা অন্য দেশগুলোর জন্যও একটি হুঁশিয়ারি। তারা যদি এখনই সচেতন না হয়, তবে তারা যা অর্জন করেছিল তা শেষ হয়ে যাবে।”

২০১৭-১৮ সালে যুক্তরাজ্যে নবজাতক ও শিশুদের টিকা দেওয়ার হার কমে এসেছিল। ওই সময় হাম, মামস, রুবেলার এমএমআর টিকা নিয়েছিল ৯১ দশমিক ২ শতাংশ, যা ছিল দেশটির গত এক দশকে টিকাদানের হারের মধ্যে সবচেয়ে কম। 

নতুন করে প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় এখন টিকা দেওয়ার হার বাড়ানো, ডাক্তারের কাছে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোসহ অভিভাবকদের সচেতন করতে উদ্যোগী হয়েছে তারা।

যুক্তরাজ্যের টিকাদান কর্মসূচির প্রধান ডা. মেরি রামসে বলেন, এমএমআর টিকার হার বাড়ানোর মাধ্যমেই হামমুক্ত থাকা সম্ভব।