হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ফের বেড়েছে

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে নতুন রোগী ভর্তির হার সবচেয়ে কমে আসার পরদিনই আবার বেড়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 August 2019, 12:58 PM
Updated : 25 August 2019, 03:13 PM

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সকাল ৮টা থেকে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত দেশের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে নতুন করে ১ হাজার ২৯৯ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।

গত শনিবারের তুলনায় এই সংখ্যা ১২০ জন বেশি। গত শনিবার সারা দেশে নতুন রোগী ছিলেন ১ হাজার ১৭৯।

গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৬০৭ জন, ঢাকার বাইরে ভর্তি হন ৬৯২ জন।

এর আগরে ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ৫৭০ জন এবং ঢাকার বাইরে ৬০৯ জন এইডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত সারা দেশে ৬৩ হাজার ৫১৪ জন নাগরিক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৫৭ হাজার ৪০৫ জন  রোগী ছাড়পত্র পেয়েছেন বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে।

হাসপাতালগুলোতে এখন ভর্তি রয়েছেন ৫ হাজার ৯৪০ জন ডেঙ্গুরোগী। এর মধ্যে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ৩ হাজার ২৬৮ জন এবং সারাদেশে ২ হাজার ৬৭২ জন।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, দেশের ৫৩টি হাসপাতাল থেকে তাদের কাছে ডেঙ্গু সন্দেহে ১৬৯টি মৃত্যুর তথ্য এসেছে। এর মধ্যে ৮০টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে ৪৭টি মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত বলে নিশ্চিত হয়েছেন তারা।

তবে বিভিন্ন হাসপাতাল ও জেলার চিকিৎসকদের কাছ থেকে অন্তত ১৭৮ জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

গণমাধ্যমে আসা মৃত্যুর তথ্যগুলোও আইইডিসিআর পর্যালোচনা করছে জানিয়ে ফ্লোরা বলেন, “সব হাসপাতাল থেকে তথ্য পেতে আমাদের দেরি হয়ে যায়। তারপর রোগীর রক্ত নমুনা পরীক্ষার পর আমরা নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি, তিনি ডেঙ্গুতে মারা গেছেন কি না।

“সব হাসপাতাল তৎক্ষণাৎ তথ্য দেয় না। আইইডিসিআরও পরিবারের কাছ থেকে তথ্য নেয়। তবে আমাদের যে হটলাইন নাম্বার আছে একটা, তাতে মৃত্যুর কোনো তথ্য আসেনি।”

ফ্লোরা জানান, সব বিভাগের মধ্যে বরিশালে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বেশি। আইইডিসিআর সেখানে এপিডেমিকাল ও এন্টোমোলোজিকাল সার্ভে করছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ৬০৭ জন, ঢাকা শহর ব্যতিত ঢাকা বিভাগের অন্য জেলায় ১৭৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৪ জন, খুলনা বিভাগে ১৬৬ জন, রংপুর বিভাগে ২৮ জন, রাজশাহী বিভাগে ৭৮ জন, বরিশাল বিভাগে ১২৬ জন, সিলেট বিভাগে ১০ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৬ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

গত জুনে ঢাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেওয়ার পর ব্যাপকতা বাড়ে জুলাইয়ে, সরকারি হিসাবেই সে সময় রেকর্ড ১৬ হাজার ২৫৩ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন।

অগাস্টের প্রথম সপ্তাহে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা আগের মাসের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি বেড়ে যায়, ৭ অগাস্ট একদিনে সর্বোচ্চ দুই হাজার ৪২৮ জন ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।

ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ৫ শতাংশ চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী

মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুতে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মৃত্যুর হার মোট মৃত্যুর ‘৫ শতাংশ’ বলে দাবি করেছেন  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ‍চিকিৎসকরা।

এ বছরের শুরু থেকে ৯৪ জন চিকিৎসকসহ সারাদেশে তিন শতাধিক স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হওয়ার খবর দিলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চিকিৎসক বা স্বাস্থ্যকর্মী কারও মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেননি।

বিএসএমএমইউয়ের সেমিনার সাব কমিটির আয়োজনে রোববার ‘ডেঙ্গু : বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষিত’ শীর্ষক এক সেমিনারে ৫ শতাংশ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যুর তথ্য জানানো হয়।

বিএসএমএমইউর জনসংযোগ বিভাগের সেকশন অফিসার প্রশান্ত কুমার মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সরকারি হিসেবে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মৃত্যুর খবর না এলেও বেসরকারি হিসেবে অনেকের মৃত্যুর খবর আমরা জেনেছি। আমরা তার ভিত্তিতে বলছি চিকিৎসকদের মৃত্যুর হার মোট মৃত্যুর শতকরা ৫ ভাগ।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ পর্যন্ত ৪৭ জনের ডেঙ্গুতে মৃত্যু নিশ্চিত করলেও এর কয়েকগুণ মৃত্যুর খবর গণমাধ্যমে এসেছে। চিকিৎসক ও হাসপাতালগুলোর তথ্য নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ১৭৮ জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছে।

বিএসএমএমইউর অনুষ্ঠানে চিকিৎসকরা বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যু সংখ্যা শতকরা শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ, বাংলাদেশে এই হার শূন্য দশমিক ২ শতাংশের কম।

চিকিৎসকসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরলস প্রচেষ্টা ও ব্যবস্থাপনার কারণে মৃত্যৃর হার কমিয়ে রখা গেছে বলে দাবি করা হয় অনুষ্ঠানে।

অনুষ্ঠানে বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া জানান, এ বছর বিএসএমএমইউতে ১ হাজার ২১ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩ জন মারা গেছেন। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৫ হাজার ৫৫৫ জন।

তিনি বলেন,  “সাধারণ জ্বরের রোগীদের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার এখন ১০ শতাংশের মতো।”