বিভ্রান্ত করছে দুই সিটি করপোরেশন: অধ্যাপক রশীদ-ই-মাহবুব

ডেঙ্গু রোগ নিয়ে ‘অজ্ঞতা’ থেকে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ‘ভুল’ তথ্য দিয়ে নগরবাসীকে বিভ্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন স্বাস্থ্য অধিকার আন্দোলনের সভাপতি অধ্যাপক রশীদ-ই-মাহবুব।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 August 2019, 04:04 PM
Updated : 3 August 2019, 03:49 AM

তিনি বলেছেন, ডেঙ্গু যখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে, তখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রথম কাজ হওয়া উচিৎ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে চিকিৎসকদের এ বিষয়ে প্রশিক্ষিত করা।

শুক্রবার ঢাকায় ‘ডেঙ্গু জ্বরের বর্তমান অবস্থা: আতঙ্ক, সংকট, বাস্তবতা ও করণীয়’ শিরোনামে এক সংবাদ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ উপাচার্য রশীদ-ই-মাহবুব এ কথা বলেন।

‘ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ ব্যানারে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ডেঙ্গু রোগ সনাক্তকরণে প্রয়োজনীয় কিট বিনামূল্যে অথবা নামমাত্র মূল্যে সরবরাহ করার পরামর্শ দেন সরকারকে।

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রশিদ বলেন, “ডেঙ্গু রোগ নিয়ে আমাদের দুই সিটি করপোরেশনের অজ্ঞতা রয়েছে। এই অজ্ঞতা দিয়ে তারা নগরবাসীকে বিভ্রান্ত করছে।”

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ২১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় এক হাজার ৬৮৭ জন নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে হাসপাতালে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এ পর্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যুর তথ্য দিলেও গণমাধ্যমে মৃতের সংখ্যা অর্ধশত ছাড়ানোর খবর আসছে। ডেঙ্গুর ভাইরাসের বাহক এইডিস মশা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতায় সমালোচিত হচ্ছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। 

রশীদ-ই-মাহবুব মনে করেন, মশা নিধন কার্যক্রমে সিটি করপোরেশনের বাজেট ‘অপর্যাপ্ত’।

“মশক নিধনে আরো উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি রয়েছে। সেগুলো আনতে হবে। সিটি করপোরেশনের বাজেট না থাকলে জরুরি ভিত্তিতে বাজেট দিতে হবে তাদের।

“মশা মারার ওষুধ আনতেও নানা ব্যবসা হচ্ছে। প্রমাণিত হয়েছে যেসব ওষুধ আনা হয়েছে, তা অনুপযোগী। এখন আমাদের উপযোগী জিনিস আনতে হবে।”

রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু সনাক্ত করা গেলেও জেলা ও উপজেলা সদরের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকদের এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রশিক্ষণ নেই বলে জানান বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের সাবেক এই উপ উপাচার্য।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ঈদে বহু মানুষ বাড়িতে যাবে। তাতে ডেঙ্গুর জীবাণু সারা দেশে ছড়াবে।

এলাকাবাসীকে সম্পৃক্ত করে প্রতিটি পাড়া-মহল্লা-গ্রামে মশক নিধন অভিযান শুরু করারও তাগিদ দেন তিনি।

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে দেশের নানা প্রান্ত থেকে যখন মৃত্যুর খবর আসছে, তখন রাজধানীর বেশকটি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগ সনাক্তকরণের প্রয়োজনীয় কিট ফুরিয়ে যাওয়ার সংবাদ আসছে সংবাদমাধ্যমে।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম এইচ চৌধুরী লেনিন বলেন, “প্রয়োজনে ভর্তুকি দিয়ে হলেও আরও কিটস কিনে আনতে হবে। একেবারে ফ্রি অথবা স্বল্পমূল্যে এই কিটস দিতে হবে।”

নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে যে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে- সেই হুঁশিয়ারি জানিয়ে তিনি বলেন, “এই দুর্যোগ মহাদুর্যোগে রূপান্তরিত হতে পারে। ইন্টিগ্রেটেড ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান নিতে হবে এখনই।”

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোশতাক হোসেন বলেন, রোগীর সংখ্যা নির্ণয়ে প্রায়ই নানা বিভ্রান্তি দেখা দেয়। জ্বর নিয়ে হাসপাতালে আসা ৮০ ভাগ রোগীর মধ্যে ২০ ভাগের ডেঙ্গু সনাক্ত হয়। প্রায় দুই ভাগ রোগীকে সিরিয়াস রোগী বলে চিহ্নিত করা যায়।

রোগীর সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক না করে এই রোগ প্রতিরোধ সম্মিলিতভাবে কাজ করার ওপর জোর দেন তিনি।

ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কেও কার্যকরী ভূমিকা রাখতে হবে বলে মন্তব্য করেন ডক্টরস ফর হেল অ্যান্ড এনভায়রমেন্টের সাধারণ সম্পাদক কাজী রকিবুল ইসলাম।

অন্যদের মধ্যে জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ফয়জুল হাকিম, পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক মজহারুল হক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন।