ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি ৫০০ টাকায় বেঁধে দিল সরকার

সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগের পরীক্ষা বিনামূল্যে হচ্ছে; পাশাপাশি বেসরকারি হাসপাতালেও পরীক্ষার ফি বেঁধে দিয়েছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2019, 11:12 AM
Updated : 28 July 2019, 01:27 PM

ডেঙ্গুর NS1 পরীক্ষা করতে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা নেওয়া যাবে। CBC পরীক্ষার জন্য নেওয়া যাবে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা। এছাড়া IgG ও IgM এই দুটি পরীক্ষা করাতে হবে ৫০০ টাকার মধ্যে।

রোববার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ঢাকার বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের মালিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ একথা জানান।

তিনি বলেন, “ডেঙ্গু রোগ নির্ণয়ের জন্য তিনটি টেস্ট করতে সব হাসপাতাল একই ফি নেবে। এটি আজ থেকে কার্যকর হবে। আজকের বৈঠকে যারা এসেছেন বা আসেন নাই, সবার জন্য এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।”

ডেঙ্গু শনাক্তে ঢাকার বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে রক্তের এই পরীক্ষাগুলো করাতে প্রতিটির জন্য এক থেকে দেড় হাজার টাকা লাগছিল। সরকারি এই সিদ্ধান্তের ফলে সেই খরচ এখন অর্ধেকের নিচে নেমে আসবে।

এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুজ্বরে প্রকোপ দেখা দিয়েছে ঢাকায়, ধীরে ধীরে তা রাজধানীর বাইরেও ছড়িয়ে পড়ছে।

এই বছরে রোববার সকাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ১১ হাজার ৬৫৪ জন; এর মধ্যে বেসরকারি হিসাবে অন্তত ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে।

গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ৪৮৩ জন এবং বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ২০০ জন ভর্তি হয়েছেন ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে আড়াই শতাধিক জন ভর্তি হয়েছেন। সারাদেশে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ২ হাজার ৯২১ জন। শয্যা সঙ্কটে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে রোগী ফিরিয়ে দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে।

ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ায় মশা নিধনে ব্যর্থতার জন্য ঢাকার দুই মেয়র সাঈদ খোকন ও আতিকুল ইসলামও রয়েছে সমালোচনায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ জানান, বেসরকারি হাসপাতাল মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে আরও কিছু বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

‘ডেঙ্গু রোগীর জন্য অতিরিক্ত শয্যা বাড়ানো, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে স্বতন্ত্র ডেঙ্গু কর্নার খোলা, ফোকাল পার্সন নির্ধারণ, ডেঙ্গু রেজিস্টার বই খোলা, প্রতিদিন ডেঙ্গুর তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমে পাঠানো এবং হাসপাতাল ও চিকিৎসককে ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনায় জাতীয় গাইড লাইন মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, তা দেখতে ১০টি দল গঠন করা হয়েছে বলেও জানান আবুল কালাম আজাদ।

“১০টি মনিটরিং টিম হবে যাতে তিনজন করে সদস্য থাকবেন। তারা বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল পরিদর্শন করবে। আমরা যে নির্দেশনাগুলো দিয়েছি সেগুলো বাস্তবায়ন করছে কি না, তা দেখবে।”

সরকারি হাসপাতালে ওষুধ ও স্যালাইনের সঙ্কটে রোগীদের বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, “সরকারি হাসপাতালে রোগীর চিকিৎসার জন্য ওষুধ-স্যালাইন বিনামূল্যে সরবরাহের নির্দেশনা দেওয়া আছে। এছাড়া প্রত্যেকটা হাসপাতালে অর্থ আছে, প্রয়োজনে আমরা অতিরিক্ত অর্থ দেব। জরুরি পরিস্থিতিতে তারা বাইরে থেকে ওষুধ কিনতে পারে।”

ডেঙ্গুর টিকা দেওয়া যায় কি না, সেবিষয়ে ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সানোফি এভেন্টিসের সঙ্গে আলোচনা চলার কথাও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।

শয্যা খালি নেই, মুগদা হাসপাতালে বহু রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বারান্দায় রেখে

ডেঙ্গু রোগীদের ভর্তির জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানান আবুল কালাম আজাদ।

ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তির বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, “তালিকা তৈরির প্রক্রিয়াটা দীর্ঘ। নানা কারণে প্রকৃত সংখ্যাটা জানা সম্ভব হয় না।

“তালিকাটা তৈরি করতে অনেক সময় চলে যায়। অনেকে ঠিকমতো দেয় না, কখনও কখনও বিলম্ব করে। এজন্য আমরা তাদের বলেছি, কতজন আক্রান্ত আছে, কতজন নতুন রোগী এসেছে, কারও মৃত্যু হয়েছে কি না, এই তথ্যগুলো আমাদের প্রথমে জানাবে, তারপর পুরো তথ্য আমাদের কাছে পাঠাবে।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আটজনের মৃত্যুর তথ্য দিচ্ছে, যা প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে অনেক কম।

এই তারতম্য কেন- জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, সব মৃত্যুর পর্যালোচনা এখনও শেষ হয়নি।

“বিভিন্ন হাসপাতালে পরীক্ষাটা করা হয় সেটা এনএস ওয়ান। এই রিপোর্টটা কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফলস পজেটিভও হতে পারে। তথ্যগুলো তারা আইইডিসিআরে পাঠায়, আইইডিসিআরে আইপিসিআর নামে একটি উঁচুমানের পরীক্ষা আছে। রোগীর সমস্ত বৃত্তান্ত সংগ্রহের পর বিশ্লেষণ করে, বিশেষজ্ঞ বোর্ডের সঙ্গে পর্যালোচনা করে। যে পর্যালোচনা শেষ হয়েছে সে সংখ্যাটাই আমরা বলেছি।”

তীব্র জ্বর, মাথা ব্যথা ও মাংসপেশিতে ব্যথা, শরীরে লালচে দানা ইত্যাদি ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ হলেও এবার এর ব্যতিক্রম পাওয়া যাচ্ছে।

জ্বর হলে কাছের হাসপাতালে কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে রক্তের পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়েছে সরকার।

চিকিৎসকরা জ্বরে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি রোগীকে বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়াতে বলেছেন।

এবার ডেঙ্গুজ্বরে রক্তের ঘনত্ব কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দেওয়ায় আক্রান্তের রক্তচাপ কমে যাচ্ছে কি না, তা নিয়মিত পরীক্ষা করতে বলা হচ্ছে।

জ্বর ভালো হওয়ার পরও ডেঙ্গুজনিত মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করছেন চিকিৎসকরা।

এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ায় তা প্রতিরোধে বাড়ির আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখতে বলা হচ্ছে।

অফিস, ঘর ও আশপাশে যে কোনো পাত্রে (এসির ট্রে/ফুলের টব) জমে থাকা পানি তিন দিনের মধ্যে পরিবর্তন করতে পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

এডিস মশা সাধারণত দিনের বেলা কামড়ায় বলে দিনে ঘুমানোর ক্ষেত্রেও মশারি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।