ওষুধে মশা মরে না, কোম্পানি কালো তালিকায়

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) তিন বারের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হওয়ায় মশার ওষুধ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান লিমিট অ্যাগ্রো প্রোডাক্টসকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2019, 04:45 PM
Updated : 12 July 2019, 12:59 PM

সচিবালয়ে রোববার ঢাকা মহানগরীর মশক নিধন কার্যক্রম বিষয়ক পর্যালোচনা সভায় সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে এই তথ্য দেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।

লিমিট অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস নামে ওই কোম্পানির কাছ থেকে করপোরেশন আর মশা মারার ওষুধ নেবে না জানিয়ে মেয়র বলেন, “ওই কোম্পানিকে ব্ল্যাক লিস্টেড করা হয়েছে। এই কোম্পানি ঢাকা সিটি করপোরেশরনের কোনো টেন্ডারে কোনো সময়ই আর অংশগ্রহণ করতে পারবে না।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান ভাণ্ডার রক্ষক ও ক্রয় কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওষুধে কমপক্ষে ৮০ ভাগ মশা মরলে সেটাকে কার্যকর বলে ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানটির ওষুধ তিনবারের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি।

“তিনবার মশার ওষুধ পরীক্ষা করেছি। কিন্তু তিনবারই তাদের দেওয়া ওষুধে কাঙিক্ষত পরিমাণ মশা মরেনি। একবার মরেছে ২ ভাগ, আরেকবার ১৮ ভাগ, তৃতীয় দফায় ৫০ ভাগ। কোনোবারই কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় যায়নি। এ কারণে আমরা এক বছরের জন্য তাদের কালো তালিকাভুক্ত করেছি।” 

ডিএনসিসিতে যোগ দেওয়ার মেয়াদ এক বছরও না হওয়ায় কতদিন ধরে লিমিট অ্যাগ্রো প্রোডাক্টসের কাছ থেকে ওষুধ নেওয়া হচ্ছে তা বলতে পারলেন না জাকির হোসেন।

তবে বেশিরভাগ সময় এই প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেই ওষুধ কেনা হত বলে জানান তিনি।

ডিএনসিসি থেকে জানা যায়, গত ১১ বছর ধরে মশা নিধনে লিমিট অ্যাগ্রো প্রোডাক্টস ও নোকন লিমিটেড নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান থেকে থেকে একটি নির্দিষ্ট মিশ্রণের ওষুধ সংগ্রহ করা হয়ে আসছে।

পূর্ণ বয়স্ক মশা নিধনে প্রতি এক লিটার কেরোসিনের সঙ্গে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ পারমেথ্রিন, শূন্য দশমিক দুই শতাংশ টেট্রামেথ্রিন এবং শূন্য দশমিক এক শতাংশ এস-বায়োঅ্যালাথ্রিন মিশিয়ে ফগার মেশিন দিয়ে ছড়িয়ে দেয় স্প্রে ম্যান বা মশক নিধন কর্মীরা।

এই ওষুধে মশা মরছে না জানিয়ে গত সপ্তাহে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ- আইসিডিডিআর,বি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

সেখানে মশা মারতে ওষুধে পরিবর্তন আনার পরামর্শ দিয়ে পারমেথ্রিনের পরিবর্তে ম্যালাথিয়ন ও ডেল্টামেথ্রিন ব্যবহার করতে বলেন তারা।

সে সময় ওষুধ পরিবর্তনে ‘চিন্তা চলছে’ জানানো হলেও তাদের ’টেস্টে ওষুধের কার্যকারিতা কখনোই কম পাওয়া যায়নি’ বলে জানিয়েছিলেন ঢাকা উত্তরের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান মামুন।

এর সপ্তাহ ঘুরতেই মশার ওষুধ পরিবর্তনের ঘোষণা দিলেন মেয়র আতিকুল।

সচিবালয়ের সভায় তিনি বলেন, “আমরা আইসিডিডিআর,বি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে খুব দ্রুত মশার ওষুধের কম্পোজিশন পরিবর্তন করব।

“বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন নিয়ে নতুন ওষুধ ও নতুন কম্পোজিশন এনে এই প্রথমবারের মতো আমরা ট্রাই করতে যাচ্ছি। যে তিনটি কম্পোজিশন নিয়ে ওষুধটি হয় এর একটি পরিবর্তন করা হয়েছে। আমি বলেছি তিনটি কম্পোজিশনই পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের বিশ্বাস আমরা একটি ভালো রেজাল্ট আনতে পারব।”

নগরীতে মশা নিধনে নিয়োজিত ‘স্প্রে-ম্যানরা’ যাতে কাজে ফাঁকি দিতে না পারেন সেজন্য কোন এলাকায় কার দায়িত্ব তা মোবাইল নম্বরসহ জানিয়ে দেওয়া হবে বলেও ঘোষণা দেন মেয়র।

তিনি বলেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকা ছাড়াও সিটি করপোরেশেনের ওয়েবসাইটে এই তালিকা দেওয়া হবে।

“মশক কর্মীদের একটি লগবুক করছি, আগামী সাত দিনের মধ্যে এটি আমরা পাবলিক করে দেব। কোন এলাকাতে কোন মশককর্মী যাবেন এবং তার ফোন নম্বর আমরা স্থানীয় সবাইকে বলে দিতে চাচ্ছি।

“তখন আপনারা ফোন করতে পারবেন যে এই রোডে এই মশককর্মী যায়নি। আমরা তাকে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করতে পারব। ফোন নম্বরটা আমরা ওয়েবসাইটেও দিয়ে দিচ্ছি, পাবলিকলিও আমরা জানিয়ে দেব।”

সভায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, ”ইতোমধ্যে ডেঙ্গু মশার উপদ্রবটা মাথাব্যথার কারণ মনে করা হচ্ছে। এটাকে নিরসন করার জন্য সিটি করপোরেশনসহ মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছি, যাতে মশা নিধন করা যায়।

“সিটি করপোরেশনগুলো মশা নিধনে কাজ করা সত্ত্বেও প্রাদুর্ভাবমুক্ত করতে পারছে না, এটাকে নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল করার জন্য সভায় বসেছি। সবার বক্তব্য শুনে করণীয় নির্ধারণ করব।”

তিনি বলেন, “বর্ষা আসার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় এবার আগেই ড্রেনগুলো পরিষ্কারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নালা, নর্দমা ও খালগুলোকে মুক্ত করাসহ নাগরিক জীবনের স্বস্তির জন্য সিটি করপোরেশন কাজ করছে।”

তাজুল ইসলাম বলেন, “শহরের রাস্তাঘাটের পাশ দিয়ে ওয়াসা, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির পাইপলাইন গেছে, এগুলো সনাতনীভাবেই প্রতিস্থাপন করতে হয়। যখনই প্রয়োজন হয় ওই কর্তৃপক্ষের মাটিকাটার বিষয়টি অপরিহার্য হয়ে যায়, আমরা শহরকে ওইভাবে গড়তে পারিনি।

“অনেক অনেক বছর আগে এসব পাইপলাইন স্থাপন করা হয়েছে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিচ্ছি যাতে এসব কষ্ট থেকে নাগরিকদের পরিত্রাণ দিতে পারি।”

ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসন প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, “আমার মনে হয় অতীতের তুলনায় সন্তোষজনক অবস্থায় আছে। আমাদের যে পরিকল্পনা আছে সেটার বাস্তবায়ন হলে আমি মনে করি, ঢাকাবাসী একটা দৃষ্টিনন্দন শহর উপভোগ করতে পারবে।”

এ সময় শান্তিনগরের জলাবদ্ধতা কমার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “সকল অর্জন এক বছরে করার পরিকল্পনা করাটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না, আপনারাও সেটাকে সমর্থন করবেন না।”

ওয়াসার পানি নিয়ে রোববার হাই কোর্টে দাখিল হওয়া একটি প্রতিবেদনের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ৩৬টি পয়েন্ট থেকে পানি পরীক্ষার পর ২৬টি স্থানের পানিতে দূষণ পাওয়া যায়নি। ৬ বা ৮টিতে কনসার্ন আছে, সেখানে ইকোব্যাকটেরিয়া পাওয়া গেছে, তবে সেটা মানবদেহের জন্য অতিমাত্রায় ক্ষতিকর না।

“আমরা একটা জায়গাতেও কোনো দূষিত পানি সাপ্লাই করার পক্ষে নই। ৩৬টির মধ্যে ২৮টির পানি যদি তাৎক্ষণিক পরীক্ষা করে ভালো পাওয়া যায় তবে এজন্য তাকে এপ্রিশিয়েট করতে হবে, আর খারাপটার জন্য তাকে অ্যাকাউন্টেবল করতে হবে। আমি মনে করি, যেগুলো খারাপ আছে সেগুলোকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেব।”

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন ছাড়াও বিভিন্ন সিটি করপোরশেনের প্রতিনিধি এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।