নড়াইল হাসপাতালের চার চিকিৎসক ওএসডি

নড়াইলের সাংসদ মাশরাফি বিন মুর্তজা আকস্মিক জেলা সদর হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসক না পাওয়ার পর ওই হাসপাতালের চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2019, 04:57 PM
Updated : 28 April 2019, 06:46 PM

চার চিকিৎসককে বিনা অনুমতিতে হাসপাতালে অনুপস্থিতির কারণ দর্শানোর নোটিশের পাশাপাশি দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।

এই চিকিৎসকরা হলেন- নড়াইল সদর হাসপাতালের সার্জারির সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. আখতার হোসেন, কার্ডিওলজির জুনিয়র কনসালটেন্ট ডা. মো. শওকত আলী ও ডা. মো. রবিউল আলম এবং মেডিকেল অফিসার ডা. এ এসএম সায়েম।

রোববার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এই চিকিৎসকদের ওএসডি করে সাত কর্মদিবসের মধ্যে মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে যোগ দিতে বলা হয়েছে।

ওই চিকিৎসকদের প্রত্যেককে পৃথকভাবে পাঠানো কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়েছে, আপনি গত ২৪ এপ্রিল কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন।

“আপনার উক্ত কার্যকলাপ সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮ মোতাবেক অসদাচরণের শামিল। আপনার এহেন আচরণের বিরুদ্ধে কেন বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা অত্র পত্র প্রাপ্তির তিন কর্মদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা প্রদান করার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল।”

বাংলাদেশ ওয়ান ডে ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাশরাফি এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নড়াইল-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার বেড়ে ওঠা ও বসবাস নড়াইল শহরে। ওই শহরেই জেলা সদর হাসপাতাল।

সম্প্রতি মাশরাফির ওই হাসপাতাল পরিদর্শনের একটি ভিডিও ফেইসবুকে ভাইরাল হয়। বিকালে হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকদের না পেয়ে তিনি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এবং সার্জারির একজন চিকিৎসকের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন।

ভিডিওতে মোবাইলে সার্জনের সঙ্গে কথোপকথনে মাশরাফিকে বলতে শোনা যায়, “এসব কথা বললে তো হবে না। আপনি চার্জ দিয়ে চলে গেছেন এটা কেমন কথা? আরে বাবা আপনি তো আজকেই প্রথম তত্ত্বাবধায়ক হননি।

“আপনি কালকে এখানে যোগ দিছেন সেটা বিষয় না। কালকে যোগ দিছেন বলে আজকে রুগী মারা যাইতে না পারে এ রকম তো গ্যারান্টি নাই। আচ্ছা এখানে এখন একজন মানুষও নাই, কয়েকজন নার্স আছে। আপনার এখানে নার্সিং সুপারভাইজার যেটা থাকার কথা সেটাও অ্যাবসেন্ট।

“আপনি বাসায় গেছেন কেন স্যার, আপনি সেটা আমাকে বুঝাই বলেন। আপনার থাকার কথা নড়াইলে। আজকে যদি এই হসপিটালে কোনো একটা পেশেন্টের সার্জারি প্রয়োজন হয়, আপনি কি সুন্দর বলতেছেন রবিবারে আসেন, আমি রবিবারে সার্জারি করব! তা এই দুদিন আপনার জন্যে পেশেন্ট পড়ে থাকবে?

“এখন আপনি বলেন, আপনার কী করব, বলেন? বলেন আপনিই বলেন, আপনারে আমি কী করব বলেন? কী হল কথা বলেন না কেন?

“আপনি ফাইজলামি শুরু করছেন? আজকে যদি একটা পেশেন্টের প্রয়োজন হয় সার্জারি করার কাকে দিয়ে সার্জারি করাবে? আপনি কি এটা ভাবেননি একবারও?”

নড়াইল সদর হাসপাতালে চিকিৎসকদের ৩৯টি পদের মধ্যে আরএমও এবং পাঁচজন সংযুক্তিতেসহ ১৭ জন কর্মরত ছিলেন। তাদের মধ্যে চারজনকে ওএসডি করা হল।

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আব্দুস শাকুর রোববার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেসব চিকিৎসক সময়মতো হাসপাতালে আসেন না তাদের বিরুদ্ধেও পর্যায়ক্রমে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

মাশরাফির পরিদর্শনের দিন তিনজন চিকিৎসক হাসপাতালে অনুপস্থিত ছিলেন। হাজিরা খাতায় তাদের স্বাক্ষর পাননি সাংসদ মাশরাফি। ওএসডি করা চার চিকিৎসকের মধ্যে ওই তিনজন রয়েছেন।

ব্কিালে হাসপাতাল ঘুরে যাওয়ার পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে হাসপাতালের কর্মকর্তাদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেন মাশরাফি। হাসপাতালের সম্মেলন কক্ষে ওই সভায় জেলা প্রশাসক আনজুমান আরা, পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আব্দুস শাকুর, সিভিল সার্জন ডা. আসাদ-উজ-জামানমুন্সি, হাসপাতালের আরএমও ডা. মশিউর রহমান বাবু উপস্থিত ছিলেন।

সেখানে বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দেন মাশরাফি-বিন মর্তুজা। সেগুলো হল-

# যেসব চিকিৎসক হাসপাতালে সময়মতো আসনে না এবং অনুপস্থিত থাকেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

# হাসপাতালে প্যাথলজিক্যাল সেবা যতটা দেওয়া সম্ভব তার সবটুকু যেন সাধারণ রোগী পান।

# সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত চিকিৎসকদের হাসপাতালে অবস্থান করতে হবে।

# হাসপাতালের দুটি অ্যাম্বুলেন্স বাদে প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো অ্যাম্বুলেন্স হাসপাতালের ভিতরে থাকতে পারবে না।

# কোনো দালাল চক্র হাসপাতালে প্রবেশ করতে পারবে না।

# সব রোগী যাতে সরকারি ওষুধ পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।

# বড় বড় ওয়ার্ডে দুজন করে নার্স দিতে হবে।

# জরুরি প্রয়োজনে হাসপাতালের জেনারেটর চালু রাখতে হবে।

এসবের কোনোটি ঠিকঠাক মতো না হলে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন মাশরাফি।