ওমেগা-৩ তে সুস্থ হৃদপিণ্ডের ভাবনা ‘অনর্থক’

মাছের তেলের মধ্যে থাকা ফ্যাটি এসিড ওমেগা-৩ কে হৃদপিণ্ডের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে বিবেচনা করা হলেও বিশেষজ্ঞরা এ সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 July 2018, 11:14 AM
Updated : 18 July 2018, 11:21 AM

এক লাখেরও বেশি ব্যক্তির ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কোচরেনের গবেষকরা বলেছেন, ওমেগা-৩ যে হৃদরোগ প্রতিরোধে কার্যকর, সে ব্যাপারে অতি সামান্যই প্রমাণ মিলেছে। এ থেকে অর্থপূর্ণ সুবিধা পাওয়ার সম্ভাবনাও হাজারে মাত্র এক।

মাছের তেলের এ সম্পূরক উপাদানকে ‘তেমন কার্যকর’ নয় হিসেবে অভিহিত করলেও সুষম খাদ্যতালিকায় তৈলাক্ত মাছের অন্তর্ভূক্তির ওপর গবেষকরা জোর কমাচ্ছেন না বলেও জানিয়েছে বিবিসি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তৈলাক্ত মাছকে স্বাস্থ্য সুরক্ষায়ও বেশ প্রয়োজনীয় বলেই মনে করছেন তারা।

শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় চর্বি পেতে স্যামন, তাজা টুনা কিংবা ম্যাকরেলের মতো তৈলাক্ত মাছের টুকরাসহ প্রত্যেকেরই সপ্তাহে অন্তত দুই টুকরা মাছ খাওয়া উচিত বলে জানিয়েছে যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসও (এনএইচএস)।

ওমেগা-৩’র মধ্যে যে আলফা-লাইনোলেনিক এসিড (এএলএ) পাওয়া যায়, তা মানবদেহ নিজে থেকে উৎপাদন করতে পারে না। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য অতীব প্রয়োজনীয় এ উপাদানটি মেলে বীজ, শাকসব্জির তেল ও বাদামের মধ্যে।

এএলএ থেকে মানবদেহ এইকোসাপেন্টায়েনোয়েক এসিড (ইপিএ) ও ডোকোসাহেক্সানয়েক এসিডও (ডিএইচএ) তৈরি করতে পারে; মাছের তেল ও তৈলাক্ত মাছের মধ্যেও এ দুটি উপাদানের খোঁজ পাওয়া যায়।

দুধ, ইয়োগহার্ট ও রুটির বিভিন্ন ব্র্যান্ডেও অনেক কোম্পানি অতিরিক্ত ওমেগা-৩ যোগ করে থাকে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

“ওমেগা-৩ সম্পূরক অংশ হৃদপিণ্ডকে সুরক্ষিত রাখে এমন জনপ্রিয় ধারণার বিরুদ্ধে গেলেও গবেষণায় যা পেয়েছি, তার ব্যাপারে আমরা আত্মবিশ্বাসী হতে পারি; দীর্ঘ সময় নিয়ে হাজার হাজার মানুষকে পর্যবেক্ষণ শেষে আমরা এ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। সব ধরনের তথ্য বাদেও, আমরা এর (ওমেগা-৩) কোনো কার্যকারিতা পাইনি,” বলেছেন কোচরেনের প্রধান গবেষক ড. লি হারপার।

সাপ্লিমেন্ট ওমেগা-৩ হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্যের উপকারিতায় প্রভাব ফেলে গবেষণায় এমন কিছুই পাওয়া যায়নি বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এর পরিবর্তে শাকসব্জি খাওয়ায় জোর দিতে বলেছেন শেফিল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক টিম চিকো।

“একটা সময় গেছে, যখন হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ওমেগা-৩ সম্পূরক খেতে পরামর্শ দিত এনএইচএস। কয়েক বছর ধরে তা বন্ধ রয়েছে। এই ধরনের সম্পূরকের দামও কম নয়। এখন কেউ যদি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এসব কিনতে চান, আমি তাদেরকে শাকবব্জিতে টাকা খরচের পরামর্শ দেবো,” বলেছেন তিনি।

হৃদপিণ্ডের সুরক্ষায় ওমেগা-৩’র কার্যকারিতা প্রমাণিত না হলেও খাদ্যতালিকা থেকে এখনই একে বাদ দেয়া উচিত হবে না বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাজ্যের হেলথ অ্যান্ড ফুড সাপ্লিমেন্টস ইনফরমেশন সেন্টারের ড. ক্যারি রুক্সটন।

“যারা ম্যাকরেল, স্যামন কিংবা হেরিং খেতে পারছেন না, প্রতিদিনকার মাছের তেলের সম্পূরক অংশ তাদের চাহিদা মেটাতে বেশ কার্যকর। হৃদপিণ্ডের জন্য না হলেও চোখের স্বাস্থ্য, রোগ প্রতিরোধ কার্যক্রম ও মস্তিষ্কের জন্য মানবদেহে এখনও ওমেগা-৩’র ব্যবহার আছে,” ভাষ্য তার।