‘তামাকপণ্য রপ্তানি অনৈতিক’

২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে তামাকজাত পণ্য রপ্তানিতে আরোপিত ২৫ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাবের সমালোচনা করেছে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো।  

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 June 2018, 07:08 PM
Updated : 23 June 2018, 07:08 PM

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাজেট পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে ধূমপান নিরুৎসাহিত করতে সিগারেটকে চার স্তরের পরিবর্তে দুই স্তর করে নিম্নস্তরের প্রতি ১০ শলাকার মূল্য ৫০ টাকা করারও সুপারিশ করা হয়।  

তামাকবিরোধী সংগঠনগুলোর এই সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন পিকেএসএফ ও ন্যাশনাল এন্টি টোব্যাকো প্ল্যাটফর্মের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জামান।

তিনি বলেন, “নিম্নস্তরের সিগারেটের ভোক্তার সংখ্যাই বেশি এবং তারাই বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকপণ্যের রপ্তানি উৎসাহিত করার অজুহাতে প্রক্রিয়াজাত তামাকপণ্যের উপর আরোপিত ২৫ শতাংশ রপ্তানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং চরম জনস্বাস্থ্যবিরোধী পদক্ষেপ।”

এই প্রস্তাব বাতিল করে শুল্ক বহাল রাখার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “তামাক নিয়ন্ত্রণ করলে মাদক গ্রহণের প্রবণতাও কমে আসবে। ”

অনুষ্ঠানের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার আব্দুল মালিক তামাকপণ্য রপ্তানি উৎসাহিত করাকে ‘অনৈতিক’ আখ্যা দেন।

তিনি বলেন, “আমাদের দেশে তামাক উৎপাদন করে অন্য দেশের জনগণকে সস্তায় তামাক ব্যবহারে উৎসাহিত করা অনৈতিক। আমরা কেবল তামাকমুক্ত বাংলাদেশই নয়, বরং তামাকমুক্ত বিশ্ব গড়তে চাই।”

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক রুমানা হক বলেন, “প্রস্তাবিত বাজেটে সিগারেটের চারটি মূল্যস্তর বহাল রাখা হয়েছে। এতে করে ভোক্তার স্তর পরিবর্তনের সুযোগ অব্যাহত থাকবে, যা তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।”

বর্তমানে সিগারেটের নিম্ন, মধ্যম, উচ্চ ও অতি উচ্চ স্তর বহাল রয়েছে।

নিম্নতম মূল্যস্তরের সিগারেটের ১০ শলাকার দাম ২৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩২ টাকা বা তার বেশি এবং সম্পূরক শুল্ক ৫২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫৫ শতাংশ; মধ্যম স্তরে ১০ শলাকার মূল্য ৪৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৮ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৬৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৬৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।

উচ্চস্তরের ১০ শলাকার দাম ৭০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা এবং ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বহাল রাখার কথা বলা হয়েছে বাজেটে।

অতি উচ্চস্তরের ১০ শলাকার সিগারেটের দাম ১০১ টাকা এবং ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক অপরিবর্তিত রয়েছে।

এই দাম বৃদ্ধি বা অপরবর্তিত রাখা কোনোটিই ‘বাস্তবসম্মত নয়’ বলে মনে করছে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো।

সিগারেটের প্রস্তাবিত চারটি স্তর থেকে দুটি স্তরে আনার পাশাপাশি নিম্নস্তরের ১০ শলাকার সর্বনিম্ন মূল্য ৫০ টাকা করে ৬০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং উচ্চস্তরে ১০ শলাকার সর্বনিম্ন মূল্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করে ৬৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার সুপারিশ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এটিএন বাংলার প্রধান প্রতিবেদক ও আত্মার যুগ্ম আহ্বায়ক নাদিরা কিরণ।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, “বহু স্তরভিত্তিক করকাঠামোর পরিবর্তে সিগারেটের ক্ষেত্রে দুটি মূল্যস্তর প্রচলন এবং সম্পূরক শুল্কের একটি অংশ সুনির্দিষ্ট কর (স্পেসিফিক ট্যাক্স) আকারে আরোপ করার দাবি করা হলেও ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে এর কোনো প্রতিফলন নেই।”

অর্থমন্ত্রী ২০৩০ সালের মধ্যে বিড়ির উৎপাদন বন্ধ করার ঘোষণা দিলেও প্রস্তাবিত বাজেটে তার প্রতিফলন ঘটেনি অভিযোগ করে তিনি বলেন, “বিড়ি কারখানার মালিকদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে প্রস্তাবিত বাজেটে বহুল প্রচলিত ফিল্টারবিহীন বিড়ির ২৫ শলাকার মূল্য ১২.৫ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।”

বিড়ির ক্ষেত্রে ফিল্টার এবং নন-ফিল্টার বিভাজন বিলুপ্ত করে প্রতি ২৫ শলাকা বিড়ির সর্বনিম্ন মূল্য ৩০ টাকা নির্ধারণ, ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ছয় টাকা সুনির্দিষ্ট কর আরোপের সুপারিশ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ক্যাম্পইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস গ্রান্টস ম্যানেজার ডা. মাহফুজুর রহমান ভূঁইয়া, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের এপিডেমিওলজি অ্যান্ড রিসার্চের বিভাগীয় প্রধান ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী এবং আত্মার আহ্বায়ক মর্তুজা হায়দার লিটন।

প্রগতির জন্য জ্ঞান (প্রজ্ঞা) ও অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স-আত্মা’র উদ্যোগে তামাকবিরোধী সংগঠন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন, এসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট (এসিডি), ইয়ং পাওয়ার ইন সোশ্যাল একশন (ইপসা), ন্যাশনাল এন্টি টোব্যাকো প্লাটফর্ম এবং তামাকবিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) সম্মিলিতভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।