‘জুলাইয়ে উৎপাদনে যাচ্ছে’ এসেনসিয়াল ড্রাগসের তৃতীয় প্ল্যান্ট

শতভাগ সরকারি মালিকানাধীন ফার্মাসিউটিক্যালস প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) তৃতীয় কারখানায় জুলাইয়ের শেষ দিকে উৎপাদন শুরু হবে বলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জানিয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2018, 06:05 PM
Updated : 6 June 2018, 06:05 PM

বুধবার মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারখানাটি উদ্বোধন করবেন।ছয়শ কোটি টাকা ব্যয়ে গোপালগঞ্জে নির্মিত এই কারখানায় জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহে উৎপাদন শুরু হবে।

১০ একর জমির উপর এই কারখানা চালু হলে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের চাহিদা শতভাগ মিটিয়ে ওষুধ রপ্তানি করাও সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “বর্তমানে আমরা চাহিদার ৭২ শতাংশ উৎপাদন করতে সক্ষম। বাকি ওষুধ আমাদের অন্য কোম্পানি থেকে কিনতে হয়। কিন্তু গোপালগঞ্জের প্ল্যান্টে উৎপাদন শুরু হলে শতভাগ হবে উৎপাদন।”

ওই কারখানা থেকে পেনিসিলিন, এন্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ উৎপাদন করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের অনেক ওষুধ আমদানি করতে হয়। কিন্তু চাহিদা মিটিয়ে এখন রপ্তানি করতে পারব।”

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক অধ্যাপক ইহসানুল কবির। কারখানাটি কীভাবে নির্মাণ করা হয়েছে তা তুলে ধরেন তিনি।

১৯৬২ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে সরকারি ফার্মাসিউটিক্যালস ল্যাবরেটরি (জিপিএল) নামে এ কোম্পানির যাত্রা শুরু হয়। ১৯৭৯ সালে এর নাম বদল করে ফার্মাসিউটিক্যালস উৎপাদন ইউনিট (পিপিইউ)করা হয়।

কোম্পানি আইনের অধীনে ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠানটির নাম পুনরায় বদল করে রাখা হয় এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড এবং ওই বছরই প্রতিষ্ঠানটি একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয়।

ইডিসিএলের ওয়েসসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ এই প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত ওষুধ সাশ্রয়ী মূল্যে সরকারি হাসপাতালসহ সিভিল সার্জন অফিস, সরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি এবং আন্তর্জাতিক (অমুনাফাকারি) প্রতিষ্ঠান যেমন ইউনিসেফ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, আইসিডিডিআর,বি ইত্যাদিতে ওষুধ সরবরাহ করা হয়।

জাপনি অনুদানে ১৯৮৫ সালে বগুড়াতে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড নামে আরও একটি প্ল্যান্ট চালু করা হয়।

এরপর ২০১০ সালে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডেরই একটি অন্যতম ইউনিট হিসেবে খুলনায় কলেপ (খুলনা এসেনসিয়াল লেটেক্স প্রকল্প) নামে একটি কনডম কারখানা স্থাপিত হয়।

এছাড়াও খুলনা এসেনসিয়াল লেটেক্স প্রকল্পের অধীনে টাঙ্গাইলের মধুপুর জেলায় একটি ল্যাটেক্স প্রসেসিং প্ল্যান্ট নির্মিত হয়।

এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানির অপর একটি কারখানা রয়েছে বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া এলাকায়। উত্তরাঞ্চলের একমাত্র সরকারি ওষুধ উৎপাদনকারী এই প্রতিষ্ঠানটির বগুড়া প্ল্যান্টে গত বছর ১২৩ কোটি টাকার ওষুধ উৎপাদিত হয়েছে।

জিওবি ফান্ডে নির্মিত গোপালগঞ্জে ইডিসিএলের তৃতীয় প্রকল্পে জন্ম নিয়ন্ত্রণ ইনজকেশন, আইভি ফ্লয়েড, পেনিসিলিন পণ্য, জন্মনিয়ন্ত্রন বড়িও উৎপাদিত হবে বলে ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে।

সবচেয়ে কম দামে ওষুধ সরবরাহ করার সুনাম রয়েছে সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটির।

‘মাদক হচ্ছে সামজিক ক্যান্সার’

বিকালে আওয়ামী  লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে  ১৪ দলের সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিম বলেন, “মাদক হচ্ছে সামজিক ক্যান্সার। এই ক্যান্সার আমাদের নারী-পুরুষ ও শিশুদের গ্রাস করে নিচ্ছে। ড্রাগের ছোবলের দৃষ্টান্ত ঐশী।”

‘মাদক ক্যান্সার’ ওয়াজ-নসিহত ও হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন ডোজ দিয়ে নির্মূল হবে না  মন্তব্য করে আগে ১৪ দলের মুখপাত্র নাসিম বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মাদকবিরোধী যুদ্ধে ১৪ দল পূর্ণ সমর্থন করছে।

“জঙ্গি দমনের সিদ্ধান্তের মতো মাদক নিয়ন্ত্রণের যে কাজ চলছে সেটিতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। এই মাদক নির্মূল পদক্ষেপকে যাতে কোনোভাবেই কেউ ব্যাহত করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।”

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, “মাদকবিরোধী অভিযান কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়। বিএনপি মাদকবিরোধী অভিযানে একাত্মতা ঘোষণা করলে তাদেরও লাভ হত।”

১৪ দলের এই সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী  লীগের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, জাসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য এজাজ আহমেদ মুক্তা, গণতান্ত্রিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এবং গণআজাদী লীগের সভাপতি এস কে সিকদার।