প্যালিয়েটিভ সেবা যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জে

নিরাময় অযোগ্য রোগীদের চিকিৎসা ও পরিচর্যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিয়েটিভ সেবা এবার যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2018, 06:08 PM
Updated : 23 May 2018, 06:08 PM

ওই সেবা বিস্তৃত করতে বুধবার ‘মমতাময় নারায়ণগঞ্জ’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড হসপিস এন্ড প্যালিয়েটিভ কেয়ার এলায়েন্সের ডব্লিউএইচপিসিএ) সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে বাংলাদেশের একমাত্র চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়টি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া এবং ডব্লিউএইচপিসিএ-এর নির্বাহী পরিচালক স্টিফেন কোন্নরের পক্ষে সংগঠনের গ্লোবাল এডভোকেসি ডিরেক্টর ক্লেয়ার মার্গারেট মরিস সমঝোতা স্মারকে সই করেন।

বিএসএমএমইউ’র ডা. মিলন হলে অনুষ্ঠিত সমঝোতা স্মারক সই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী।

প্যালিয়েটিভ সেবাকে নারায়ণগঞ্জে প্রসারণের এই উদ্যোগকে ‘অনন্য সাধারণ’ অভিহিত পেশায় চিকিৎসক আইভী বলেন, “সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জায়গা বরাদ্দ দেয়া, ভবন নির্মাণসহ যত ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন তা করা হবে।”

“নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় নিরাময় অযোগ্য, জীবন সীমিত ও দীর্ঘস্থায়ী রোগে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ও পরিচর্যায় ‘মমতাময় নারায়ণগঞ্জ’ প্রকল্প কাজ করবে।”

উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, “বাংলাদেশসহ বর্তমান বিশ্বে নিরাময় অযোগ্য রোগীদের জন্য প্যালিয়েটিভ সেবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি সেবা। বাংলাদেশেও এ সেবাটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এ ধরনের রোগীদের প্রকৃতপক্ষে দেখার কেউ নেই। তাই প্যালিয়েটিভ সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।”

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ও সারাবিশ্বের প্যালিয়েটিভ সেবার নানাদিক তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যালিয়েটিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নিজামউদ্দিন আহমদ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে ক্যান্সার রোগীর কোনো নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান নেই। ধারণা করা হয় যে, দেশে ১০ লক্ষ ক্যান্সার রোগী বাস করেন এবং প্রতি বৎসর ২ থেকে ৩ লক্ষ নতুন রোগী ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন।

“বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণের অভিমত যে এই সব রোগীর শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ নিরাময় অযোগ্য অবস্থায় চিকিৎসকদের কাছে আসেন। এই সব রোগীর জন্য আমাদের দেশে কোনো সংগঠিত চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা নেই।”

অত্যন্ত অল্প ব্যয়ে, সীমিত প্রশিক্ষণে পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশ তাদের নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্ত রোগীদের জন্য একটি জাতীয় উপসর্গ প্রশমন চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা এবং ব্যথামুক্ত অন্তিম সময় নিশ্চিত করতে পেরেছে বলে উল্লেখ করেন অধ্যাপক নিজামউদ্দিন।

“ভারতের দক্ষিণাংশ, স্পেন, উগান্ডা এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মত উন্নয়নশীল দেশগুলোতে সমাজের সব স্তরের মানুষকে প্যালিয়েটিভ কেয়ারে সংযুক্ত করে সমাজভিত্তিক প্যালিয়েটিভ কেয়ারের এক নতুন মাত্রার সংযোজন করেছে।”

বাংলাদেশে বর্তমানে প্যালিয়েটিভ কেয়ার প্রয়োজন এমন ছয় লাখ মানুষ আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “২০১১ সালে পৃথিবীতে প্রায় ১৬ হাজারেরও বেশী সংস্থা এই সেবার সাথে জড়িত। প্রয়োজনের তুলনায় এটি এখনো অত্যন্ত অপ্রতুল। আর বাংলাদেশে ধারণাটি মাত্র জন্ম লাভ করেছে।”

অধ্যাপক নিজামউদ্দিন বলেন, “প্যালিয়েটিভ কেয়ার কঠিন নিরাময় অযোগ্য রোগে আক্রান্ত রোগীদের জীবনের মান বাড়ায়, মানসিক কষ্ট কমায়, অনর্থক চিকিৎসার বোঝা কমায় এবং বেশীদিন বাঁচতে সাহায্য করে।

“প্যালিয়েটিভ কেয়ার দীর্ঘমেয়াদী, জীবন সংশয়ী বা নিরাময় সম্ভাবনাবিহীন অসুখে আক্রান্ত যে কোনো বয়সের মানুষের জন্যে, রোগের যে কোনো অবস্থায় প্রযোজ্য। সাধারণত ক্যান্সার, শেষ পর্যায়ের হার্ট, ফুসফুস, লিভার, কিডনি রোগ, স্মৃতিভ্রংশ, এইচআইভি/এইডস, এবং মটর নিউরণ ডিজিজ, সিজোফ্রেনিয়া ও শিশুদের ক্ষেত্রে জন্মগত হার্টের সড়বায়ুরোগ এর মধ্যে পড়ে।”

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য  অধ্যাপক শহীদুল্লাহ সিকদার, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল, বেসিক সায়েন্স ও প্যারাক্লিনিক্যাল সায়েন্স অনুষদের ডীন অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান, ডব্লিউএইচপিসিএ-এর গ্লোবাল এডভোকেসি ডিরেক্টর ক্লেয়ার মার্গারেট মরিস বক্তব্য দেন।