প্রসবকালীন ফিস্টুলা নির্মূলে বিশ্বের অঙ্গীকার চায় ইউএনএফপিএ

প্রসবকালীন ফিস্টুলা নির্মূলে বিশ্বের সব দেশকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল-ইউএনএফপিএ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 May 2018, 01:46 PM
Updated : 23 May 2018, 02:06 PM

বুধবার আন্তর্জাতিক প্রসবকালীন ফিস্টুলা নির্মূল দিবসে ইউএনএফপিএর নির্বাহী পরিচালক নাতালিয়া কানেমের এই আহ্বান আসে। 

এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের বিষয়টি মাথায় রেখে ফিস্টুলার কষ্টভোগ থেকে প্রসূতিদের রেহাই দিতে কাজ করার এখনই সময়।

আগামী এক প্রজন্মের মধ্যে প্রসবকালীন ফিস্টুলা নির্মূলে ইউএনএফপিএ-এর দৃঢ় অবস্থানের কথা জানিয়ে নির্বাহী পরিচালক বলেন, “এই দৃঢ় চেষ্ঠায় হাত মেলাতে  আমরা বিশ্ববাসীকে আহ্বান জানাচ্ছি।”  

সাধারণত স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত নারীরা বিলম্বিত ও বাধাগ্রস্ত প্রসবের কারণে প্রসবকালীন ফিস্টুলার সমস্যায় ভোগেন। 

এ ধরনের রোগীদের যোনিপথ, মূত্রথলি ও মলদ্বারের মাঝখানে অস্বাভাবিক একটি ছিদ্র  তৈরি হয় এবং সেই পথে মল-মূত্র বেরিয়ে আসে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে।

সঠিক সময়ে জরুরি ও উন্নত চিকিৎসা না পেলে এবং অদক্ষ ধাত্রীর মাধ্যমে সন্তান প্রসবের চেষ্টা হলে সাধারণত এ জটিলতা তৈরি হয়।

দুই বছর আগে আইসিডিডিআর,বির এক গবেষণায় জানা যায়, বাংলাদেশে প্রসবকালীন ফিস্টুলায় ভুগছেন ১৯ হাজার ৭৫৫ জন নারী।

ইউএনএফপিএ-এর নির্বাহী পরিচালক বলেন, একজন নারীর জীবনে সবচেয়ে আনন্দের যে মুহূর্তগুলো আসে, তার মধ্যে গর্ভধারণ ও সন্তানজন্মদানের সময়গুলো অন্যতম। 

“এটা খুবই বেদনায়দায়ক যে বিশ্বের দরিদ্র ও প্রান্তিক মহিলাদের জন্য সেই মুহূর্তগুলো আনন্দের হয়ে ওঠে না। প্রসবকালীন ফিস্টুলা এক নীরব ঘাতকের মত মেয়েদের স্বাস্থ্য, আশা ও আত্মমর্যাদাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।”

প্রসবকালীন ফিস্টুলার কারণে নারীরা প্রসবকালে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে ব্যর্থ হন। পরিণামে তার সন্তানের মৃত্যু হয়।

উন্নত দেশে এই সমস্যা নির্মূল করা গেছে জানিয়ে নাতালিয়া কানেম বলেন, এ রোগটির উপস্থিতি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ব্যর্থতাকেই আঙুল তুলে দেখিয়ে দেয়; বিশ্বে সামাজিক অবিচার আর বৈষ্যম্যের কথাই মনে করিয়ে দেয়।

সুবিধাবঞ্চিত, আড়ালে থাকা কোনো প্রান্তজন যেন আর পেছনে পড়ে না থাকে সেটাই বিশ্বব্যাপী টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য।

আন্তর্জাতিক প্রসবকালীন ফিস্টুলা নির্মূল দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য – “সুবিধাবঞ্চিত থাকবে না কেউ: এখনই ফিস্টুলা নির্মূলে করি অঙ্গীকার!” 

ফিস্টুলা নিরসনে ব্যর্থ হলে উন্নয়নের অনেক সম্ভাবনাকেই তা ঝুঁকির মুখে ফেলবে বলে মনে করেন নাতালিয়া কানেম।

তিনি বলেন, ক্যামেরুনের আমিনা বাল্যবিবাহের কারণে শারীরিকভাবে প্রস্তুত হওয়ার আগেই মাত্র ১৩ বছর বয়সে অন্তঃসত্ত্বা হয়। প্রসবকালে সে ফিস্টুলার জটিলতায় পড়ে। ওই অবস্থায় তাকে ত্যাগ করে তার স্বামী ও পরিবার। ফলে আমিনা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে।

আমিনাকে ফিস্টুলার সমস্যায় ভুগতে হয়েছিল সাত বছর। শেষ পর্যন্ত ইউএনএফপিএ এর মাধ্যমে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়।

ফিস্টুলা নিরসনে ২০০৩ সালে বিশ্বব্যাপী প্রচারাভিযান শুরু করে ইউএনএফপিএ। এ পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ফিস্টুলা রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে তারা।

ইউএনএফপিএ- এর তথ্য অনুযায়ী,  বিশ্বে এখনও ২০ লাখ নারী ও মেয়ে ফিস্টুলায় আক্রান্ত।