পরিবর্তনের জন্য স্বাস্থ্য খাতে আরও বিনিয়োগ দরকার: ইউনিসেফ

বাংলাদেশে প্রতিটি শিশুকে বাঁচাতে প্রচারাভিযান শুরু করা ইউনিসেফ বলছে, এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য স্বাস্থ্য সেবা খাতে আরও বিনিয়োগ করতে হবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2018, 05:49 PM
Updated : 25 April 2018, 11:13 PM

বাংলাদেশে পাঁচ বছরের নিচের শিশুর মৃত্যুর অধিকাংশই এক মাস বয়সের মধ্যেই হওয়ায় নবজাতকের সুরক্ষায় জোর দেওয়া হয়েছে ইউনিসেফের প্রচারাভিযানে।

এই জাতিসংঘ সংস্থাকে নিয়ে বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘প্রতিটি নবজাতককে বাঁচাতে হবে: প্রয়োজন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সেখানে উপস্থিত স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আগামী জাতীয় নির্বাচনে তার দল আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে শিশু মৃত্যুর হার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার অঙ্গীকার যুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন।

ইউনিসেফ বাংলাদেশের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ সীমা সেনগুপ্ত বলেন, বাংলাদেশে শিশু সুরক্ষায় রাজনীতিকদের জবাবদিহি নিশ্চিতে তাদের এই প্রচারাভিযান ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদী।

 

গোলটেবিল আলোচনার সঞ্চালক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিশু সুরক্ষার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য ‘অনেক কিছু’ করতে হবে।

জাতিসংঘের শিশু সংস্থা বাংলাদেশের অনেক হাসপাতালে নিওনেটাল কেয়ার ইউনিট এবং অনেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ সংক্রান্ত ইউনিট স্থাপনে সহায়তা করছে।

শিশু মৃত্যু হার কমিয়ে আনতে এগুলো কী যথেষ্ট, প্রশ্ন করেন তৌফিক খালিদী।

বাংলাদেশে ইউনিসেফের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান মায়া ভ্যানডেনেন্ট বলেন, “সেবা কেন্দ্রে বিনিয়োগ প্রকৃতঅর্থে জটিল বিষয়।”

তিনি বলেন, নবজাতকের মৃত্যুর ৩০ শতাংশ যথাযথ স্পেশাল নিউ-বর্ন কেয়ার ইউনিটের মাধ্যমে কমিয়ে আনা সম্ভব, ওই ইউনিটগুলো বিভিন্ন হাসপাতালে তৈরি করা হচ্ছে।

বাংলাদেশজুড়ে আরও এ ধরনের ইউনিট স্থাপনের বিষয়ে সরকারের সঙ্গে তাদের আলোচনা চলছে বলে জানান তিনি।

প্রতিটি জেলা সব শিশু নবজাতকের সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এটা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

তবে এখনও বাংলাদেশে অনেক মা বাড়িতে সন্তান প্রসব করেন বলে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন ইউনিসেফের এই কর্মকর্তা।

 

এক চা শ্রমিকের উদাহরণ তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমাদের দক্ষ প্রসব সহায়তাকারীদের তাদের কাছাকাছি নিয়ে যেতে হবে এবং তাদের বোঝাতে হবে স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে যাওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। সেবার মানও খুব গুরুত্বপূর্ণ।”

সীমা সেনগুপ্ত বলেন, শিশু সুরক্ষায় রাজনৈতিক অঙ্গীকার আদায়কে তারা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

“কোন দল ক্ষমতায় সেটা কোনো বিষয় নয়। বাংলাদেশ সরকার থেকে বাংলাদেশ সরকারের জন্য এই প্রতিশ্রুতি আসতে হবে। এটা খুবই সাধারণ। আর এটাই আমাদের দরকার,” নিজেদের ক্যাম্পেইন নিয়ে বলেন তিনি।

ইউনিসেফ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. জিয়াউল মতিন নবজাতকের মৃত্যুর হার কমানোয় প্রচেষ্টার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, বিশ্বে এই প্রচারাভিযান শুরুর আগেই বাংলাদেশ তা করেছে।

“গত ফেব্রুয়ারিতে আমরা এটা শুরু করেছি। আর বাংলাদেশ আগেই জাতীয়ভাবে এই ক্যাম্পেইন শুরু করেছে।”

 

নবজাতকের সুরক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে রয়েছে।”

এটা যথেষ্ট কি না-সঞ্চালকের এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমাদের অন্তত কিছু আছে।”

তবে বাংলাদেশে এখনও মৃত শিশুর জন্ম উদ্বেগের বিষয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। বছরে বাংলাদেশে ৮৩ হাজার মৃত শিশুর জন্ম হয়ে থাকে।

সঞ্চালক তৌফিক ইমরোজ খালিদী এ সময় এক দম্পতির উদাহরণ তুলে ধরেন, যারা দুইবার মৃত শিশুর জন্মের পর দেশ ছেড়ে পশ্চিমা একটি দেশে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। এর কারণ জানতে চান তিনি।

জবাবে ইউনিসেফের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপক বলেন, বাংলাদেশে এখনও মানসম্মত সেবা ‍নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

“মান নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোতে আমাদের আরও বিনিয়োগ করা দরকার।”

জন্মের পর শিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথাও বলেন তিনি।