নবজাতক বাঁচাতে ধাত্রী সেবায় বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ

সারা দেশের সব জায়গায় মা ও নবজাতকের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে ধাত্রী সেবার উন্নয়নে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) বাংলাদেশ প্রতিনিধি অশা তরকেলসন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2018, 03:25 PM
Updated : 25 April 2018, 09:42 PM

বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি বলেছেন, একজন প্রশিক্ষিত ধাত্রী মা ও নবজাতকের প্রয়োজনীয় সেবা দিতে পারেন।

মেডিকেল জার্নাল ল্যানসেটের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, সন্তান জন্মের আগে-পরে যেসব সেবার দরকার হয় তার ৮৭ শতাংশই ধাত্রীরা দিতে সক্ষম।

‘প্রতিটি নবজাতককে বাঁচাতে হবে: প্রয়োজন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি’ শীর্ষক আলোচনায় অশা তরকেলসন বাংলাদেশে প্রসূতি নারীদের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পৌঁছানোর কারণগুলো তুলে ধরেন। এক্ষেত্রে বাল্য বিয়ে ও স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের বাইরে সন্তান জন্মদানের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।  

ইউএনএফপিএর সহযোগিতায় ২০১০ সালে বাংলাদেশে ধাত্রী সেবাকে পেশার স্বীকৃতি দেয় সরকার। বর্তমানে দেশে ৩৪টি ধাত্রী প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে।

 

এগুলো বাংলাদেশের জন্য পর্যাপ্ত কি না সেই প্রশ্ন করেছিলেন গোলটেবিলের সঞ্চালক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী।

জবাবে ইউএনএফপিএর মিশন প্রধান বলেন, প্রশিক্ষিত ধাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি এবং মাতৃ মৃত্যুহার, যা বর্তমানে এক লাখ জীবিত জন্মে ১৭০ জন, তা কমিয়ে আনার লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন।

মায়েদের সচেতনতার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে, সেক্ষেত্রে আপনারা কীভাবে সহযোগিতা করেন-সঞ্চালকের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “অবশ্যই, আমরা সচেতনতা তৈরি ও বিষয়টিতে সংবেদনশীল (পরিবারগুলোকে) করেছি।”

১৯৯০ সালে যেখানে দুই লাখ ৪১ হাজার নবজাতকের মৃত্যু হত, সেখানে ২০১৬ সালে তা কমে ৬২ হাজারে এসেছে। তবে এখনও প্রতিদিন ১৭০টি নবজাতকের মৃত্যু হচ্ছে জীবনের প্রথম মাস পূরণ করার আগেই।

অপরিণত অবস্থায় জন্ম, জন্মের সময় শ্বাস নিতে না পারা এবং জীবাণু সংক্রমণে জন্মের প্রথম দিনেই অনেক শিশুর মৃত্যু হয়। সময়োচিত পদক্ষেপে এই শিশুদের ৮৮ শতাংশেরই মৃত্যু এড়ানো সম্ভব। ১০ টাকা থেকে  ৫০০ টাকা মূল্যের সরঞ্জাম ব্যবহারের সুযোগ নিশ্চিত করা গেলে এসব শিশুর জীবন বাঁচানো সম্ভব বলে বৈশ্বিক বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে।

অপরিণত শিশুর (প্রিম্যাচিউর) শ্বাসজনিত সমস্যায় মৃত্যু ঝুঁকি কমাতে প্রসূতিকে স্টেরয়েড ইনজেকশন দেওয়া, জন্মের সময় শ্বাস নিতে না পারা শিশুকে রক্ষায় রিসাসিটেশন ডিভাইস, সংক্রমণ রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নবজাতকের নিউমোনিয়া ও সেপসিসের চিকিৎসায় ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রদেয় অ্যান্টিবায়োটিকের সুপারিশ করা হয়।

গোলটেবিল বৈঠকে আলোচকরা

বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতের নতুন কর্মসূচিতে (২০১৭-২০২২ মেয়াদী) প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে নিউবর্ন হেলথ প্রোগ্রাম নেওয়া হয়েছে, যাতে নবজাতকের সেবার মানোন্নয়ন করা যায়।

এই গোলটেবিল আয়োজনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে ছিল ইউনিসেফ, যারা বাংলাদেশে নবজাতক ও মাতৃ স্বাস্থ্য সেবা উন্নয়ন প্রচেষ্টার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়কে নবজাতক, মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়নের উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে সংস্থাটি।

আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দল থেকে প্রতিশ্রুতি আদায়ের লক্ষ্যে গত ফেব্রুয়ারিতে ‘প্রতিটি নবজাতককে বাঁচাতে হবে’ শিরোনামে প্রচারণা শুরু করে ইউনিসেফ।

একই বিষয়ের ওপর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম আয়োজিত এই গোলটেবিল বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে শিশু মৃত্যুর হার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার অঙ্গীকার যুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।  

বৈঠকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী মোস্তফা সারোয়ার, বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, সেইভ দ্য চিলড্রেন এর ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেকটর ইশতিয়াক মান্নান, ইউনিসেফ বাংলাদেশের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ সীমা সেনগুপ্ত, বাংলাদেশে ইউনিসেফের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান মায়া ভ্যানডেনেন্ট, ইউনিসেফ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. জিয়াউল মতিন আলোচনায় অংশ নেন।