নবজাতকের মৃত্যু হার শূন্যে নামানোর অঙ্গীকার

নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করে শিশু মৃত্যুর হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার অঙ্গীকার এসেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের আয়োজনে এক গোলটেবিল আলোচনায়।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2018, 11:04 AM
Updated : 26 April 2018, 03:16 AM

স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, শিশু মৃত্যুর হার কমিয়ে আনার বিষয়টি আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে যুক্ত করা হবে।

সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের দুজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞ আর জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার কর্তারাও যার যার অবস্থানে থেকে এ বিষয়ে আরও উদ্যোগী হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। 

এই উদ্যোগকে ফলপ্রসূ করতে বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি বাল্য বিয়ে বন্ধ করা, নিরাপদ মাতৃত্ব সেবা বাড়ানো এবং সচেতনতামূলক প্রচারণা বৃদ্ধির তাগিদ এসেছে এই আলোচনা থেকে।

পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে বিশ্বে প্রশংসিত হলেও নবজাতকের মৃত্যুহার কমানো এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার পথ খুঁজতে বুধবার বিকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই গোলটেবিলের আয়োজনে বাংলাদেশের প্রথম ইন্টারনেট সংবাদপত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গী ছিল জাতিসংঘ শিশু তহবিল- ইউনিসেফ। 

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর সঞ্চালনায় এই গোলটেবিল বৈঠকে প্রসূতিসেবা ও নবজাতকের সুরক্ষার প্রায় প্রতিটি দিক নিয়ে আলোচনা হয়।

সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দুই অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের বিষয়টি যেমন এ আলোচনায় এসেছে, তেমনি এসেছে শিশুর নিরাপদ জন্মের বিষয়ে একটি সচেতনতামূলক বুকলেট তৈরির পরামর্শ।  

 

বাংলাদেশে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে শিশু জন্ম দেওয়ার প্রবণতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ পেয়েছে খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের কণ্ঠে। আর বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতেই যে এই প্রবণতা বেশি, মূল প্রবন্ধে সে বিষয়টি তুলে ধরেছেন বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী মোস্তফা সারোয়ার, জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) বাংলাদেশ প্রতিনিধি অশা তরকেলসন, সেইভ দ্য চিলড্রেন এর ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেকটর ইশতিয়াক মান্নান, ইউনিসেফ বাংলাদেশের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ সীমা সেনগুপ্ত, বাংলাদেশে ইউনিসেফের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান মায়া ভ্যানডেনেন্ট, ইউনিসেফ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. জিয়াউল মতিন এসব বিষয়ের ওপর আলোচনায় অংশ নেন। 

আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে নবজাতকদের সুরক্ষার বিষয়টি রাখার আহ্বান এসেছে এ গোলটেবিল বৈঠকের শিরোনামেই।

আরও পড়ুন

নবজাতকের সুরক্ষায় পথ দেখিয়েছে বাংলাদেশ: সেইভ দ্য চিলড্রেন

পরিবর্তনের জন্য স্বাস্থ্য খাতে আরও বিনিয়োগ দরকার: ইউনিসেফ

শিশুমৃত্যু শূন্যে নামানোর অঙ্গীকার থাকবে ইশতেহারে, প্রতিশ্রুতি মন্ত্রীর

নবজাতকের মৃত্যু: স্বাস্থ্যের সঙ্গে সমন্বয়ের অভাব পরিবার পরিকল্পনার

নবজাতক বাঁচাতে ধাত্রী সেবায় বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ

সেবা কেন্দ্রে প্রসব কমাবে নবজাতকের মৃত্যু: স্বাস্থ্যের ডিজি

জীবিত নবজাতককে মৃত ঘোষণা: তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন  

 নজর বাড়াতে হবে প্রথম আট দিনে

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে গত সিকি শতাব্দীতে নবজাতক বা সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশু মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ১৯৯০ সালের প্রায় আড়াই লাখ থেকে ২০১৬ সালে নেমে এসেছে ৬০ হাজারে।

“তারপরও প্রতিদিন এই দেশে ১৭০ জন নবজাতক বা যাদের বয়স ২৮ দিনের কম, তারা মারা যায়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এই ধরনের প্রায় প্রতিটি মৃত্যু কমিয়ে আনা সম্ভব।”

এর মধ্যে ৮৮ শতাংশ মৃত্যু যে কারণে হচ্ছে, সেগুলোকে বলা হয় ‘প্রতিরোধযোগ্য’ কারণ; অর্থাৎ চাইলে সেসব মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব।   

“আরেকটি ভয়ঙ্কর তথ্য, এর অর্ধেকের মৃত্যু হয় জন্মের প্রথম দিনেই। পৃথিবীর আলো দেখবার দিনই তারা মারা যায়। সব মিলিয়ে বেশিরভাগের মৃত্যু হয় জন্মের এক সপ্তাহের মধ্যে।”

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রশিক্ষিত ধাত্রী, পরিষ্কার পানি, জীবাণুনাশকের ব্যবহার; জন্মের প্রথম ঘণ্টাতেই শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো এবং শিশুকে মায়ের বুকের উষ্ণতায় রাখা ও ভালো পুষ্টি প্রাপ্তির সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে এসব মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব।

সেই লক্ষ্যে ‘এভরি চাইল্ড অ্যালাইভ’- স্লোগান নিয়ে বাংলাদেশসহ দশটি দেশে একটি প্রচারাভিযান শুরু করেছে ইউনিসেফ। বিশ্বে এই দশটি দেশেই নবজাতকের মৃত্যু হার সবচেয়ে বেশি। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বাংলাদেশে ইউনিসেফের এই প্রচারাভিযানের অংশীদার বলে জানান তৌফিক ইমরোজ খালিদী।

 

আলোচনার মূল প্রবন্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি ও হেড অব নিওনেটালজি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রে নবজাতকের মৃত্যু হয় ইনফেকশন বা সংক্রমণের কারণে।

নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রসব এবং ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শ্বাসতন্ত্র ঠিকভাবে সাড়া না দেওয়াও নবজাতকের মৃত্যুর দুটি বড় কারণ। আর নবজাতকের মৃত্যুর অধিকাংশ ঘটনা ঘটে জন্মের আট দিনের মধ্যে। 

বাল্য বিয়েকে প্রসূতি ও শিশুমৃত্যুর একটি ‘বিপদজনক কারণ’ হিসেবে চিহ্নিত করেন নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে বাংলাদেশে নিওনেটালজির প্রবর্তনে যুক্ত থাকা এই চিকিৎসক। 

তিনি বলেন, আগে এক হাজার নবজাতকের মধ্যে ৬৪ জন মারা গেলেও এখন তা ২০-এ নেমে এসেছে। কিন্তু জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে তা ১২-তে নামিয়ে আনতে হবে।

শিশু মৃত্যুহার কমাতে প্রসবপূর্ব সেবা এবং পরিচর্যা কেন্দ্রের গুরুত্ব তুলে ধরে বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক সোসাইটির সভাপতি শহীদুল্লাহ বলেন, নবজাতককে যেন প্রথমেই গোসল করানো না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। জন্মের পর তাকে মুছিয়ে দিতে হবে; গোসল করানো যাবে তিন দিন পর।

 

প্রয়োজন বিনিয়োগ

নবজাতক মৃত্যুহার কমিয়ে আনতে নীতি নির্ধারকদের রাজনৈতিক অঙ্গীকার, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বাজেট বাড়ানো এবং গণমাধ্যমকর্মীদের সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ বাড়ানোর তাগিদ দেন অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ।

এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের বড় অংশীদার ইউনিসেফের বিশেষজ্ঞ মায়া ভ্যানডেনান্টও বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সহমত পোষণ করেন।

তিনি বলেন, সরকার নবজাতকদের ক্ষেত্রে বিশেষ বিনিয়োগ করছে, সেটা ভালো। মানসম্পন্ন বিশেষ নবজাতক ইউনিট করলেই ৩০ শতাংশ নবজাতকের মৃত্যু কমানো সম্ভব।

সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, “৪০টি জেলায় তারা এ ধরনের একটি উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা চাইব ৬৪টি জেলায় সেটা নেওয়া হোক। কাজের পরিধি বিস্তৃত করা হোক, আমরা সহায়তা দিতে প্রস্তুত আছি। কোনো জেলায় একজন নবজাতকও যেন মারা না যায়, সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করতে চাই।”

 

নবজাতকদের সুরক্ষায় বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব উদ্যোগের প্রশংসা করে ইউনিসেফ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. জিয়াউল মতিন বলেন, তাদের ‘এভরি চাইল্ড অ্যালাইভ’ শুরু হয়েছে গত ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু এ বিষয়ে বাংলাদেশের জাতীয় প্রচারাভিযান শুরু হয়েছে তার আগেই।  

“বাংলাদেশ অন্য অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে। ন্যাশনাল নিউবর্ন হেলথ ক্যাম্পেইনে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যেটা এর আগে কিন্তু কখনও করা হয়নি। তবে এটা যথেষ্ট নয়। আমাদের যে হিসাব আছে, আরও বেশি অর্থ দরকার। অন্তত আমাদের কিছু একটা করা দরকার।”

 

ইউনিসেফ বাংলাদেশের ডেপুটি কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ সীমা সেন গুপ্ত বলেন, “নবজাতকের মৃত্যু কমানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক কিছু করেছে। আমরা চাই আরেকটু এগিয়ে যাক। সেজন্য আমাদের সবাইকে একসঙ্গে হওয়া দরকার। আমরা কমিউনিটি পর্যায়ে ক্যাম্পেইনটা নিয়ে যেতে চাই। সেজন্য এটার প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ দরকার।”

রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহারে নবজাতকের মৃত্যু কমানোর অঙ্গীকার রাখার দাবি প্রসঙ্গে সঞ্চালকের এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা প্রতিশ্রুতি চাই, বাংলাদেশের সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জনগণের জন্য প্রতিশ্রুতি।”

 

সেভ দ্য চিলড্রেন এর ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেকটর ইশতিয়াক মান্নান বলেন, বাংলাদেশে জনসংখ্যা বিবেচনায় নবজাতকের মৃত্যুর হার অনেক বেশি হলেও বৈশ্বিক চিত্রে সাফল্য অনেক।

গত দশকে স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশে হওয়া দুটি বিখ্যাত গবেষণা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নীতি পরিবর্তনে বড় ভূমিকা রেখেছে বলেও জানান তিনি।  

কিন্তু তার ভাষায়, বাংলাদেশ এখন আছে ‘অভিযাত্রার শেষ মাইলে’, যেখানে আগের গতিতে দৌড়ালে সাফল্য নিশ্চিত করা যাবে না।

নবজাতকের জীবন বাঁচাবে ধাত্রী

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল- ইউএনএফপির বাংলাদেশ প্রতিনিধি অশা তরকেলসন আলোচনায় বলেন, প্রসবের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সেবাটি দিতে পারেন একজন প্রশিক্ষিত ধাত্রী।

এক গবেষণার বরাতে তিনি বলেন, বাস্তব ক্ষেত্রে প্রসবকালীন এবং পরবর্তী জরুরি সেবার ৭৮ শতাংই ধাত্রীদের মাধ্যমে দেওয়া সম্ভব। আর তাদের সেবা নিয়ে দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষেত্রে মাতৃমৃত্যু কমিয়ে আনা সম্ভব।

“অনেকের কম বয়সে বিয়ে হয়, ফলে ডেলিভারিও হয় ছোট বয়সে, যেটা একটা বড় ঝুঁকির জায়গা। আমরাও আপনাদের সঙ্গে বলতে চাই, সব নবজাতককে বাঁচাতে হবে, ধাত্রী প্রশিক্ষণে বিনিয়োগ বাড়ান, আমরা এ ক্ষেত্রে সরকারকে সহায়তা করছি।”

 

ধাত্রীবিদ্যার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ‘কিছুটা এগিয়েছে’ মন্তব্য করে তরকেলসন বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশের ৩৪টি প্রতিষ্ঠানে ধাত্রীবিদ্যা শেখানো হয়। এর পরিধি আরও বাড়ানো প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ নবজাতকের মৃত্যু হার কমাতে প্রসূতিকে প্রসবের সময় স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে নেওয়ার ওপর জোর দেন।

তিনি বলেন, শতভাগ মাকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এনে প্রসবের ব্যবস্থা করতে পারলে, প্রশিক্ষিত স্বাস্থ্যকর্মীর উপস্থিতিতে সন্তান জন্মদান হলে শিশু মৃত্যুর হার অনেক কমে আসবে।

প্রতিটি জন্মের ক্ষেত্রে সহায়তা দেওয়ার সামর্থ্য সরকারের আছে কি না- সেই প্রশ্নে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, “বাংলাদেশ সরকারের অবশ্যই সামর্থ্য আছে। কোনো মা যদি কোনো সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে সেবা নেওয়ার জন্য আসেন, অবশ্যই স্বাস্থ্য সেবা পাবেন এবং আমরা সেটা নিশ্চিত করব।”

সমন্বয়হীনতা স্বাস্থ্যের দুই দপ্তরে

অনুষ্ঠানের সঞ্চালক তৌফিক ইমরোজ খালিদী স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং পরিবার-পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য নিয়ে সরকারের এ দুই দপ্তরের মধ্যে সমন্বয়হীনতার অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন রাখেন।

জবাব দিতে গিয়ে দুই অধিদপ্তরের মহাপরিচালকই সমন্বয়ের ঘাটতি থাকার কথা স্বীকার করে নেন। সেই ঘাটতি মেটানোর চেষ্টার কথাও তারা বলেছেন।

 

স্বাস্থ্যের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, “প্রতিষ্ঠান যদি বড় হয় সমন্বয়ের ক্ষেত্রে এই দুর্বলতা দেখা দেয়। এটা অস্বীকার করব না, দুই অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয়ের কিছুটা অভাব আছে।”

আর পরিবার-পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী মোস্তফা সারোয়ার ‘খুব বেশি ঘাটতি নাই’ বলে মন্তব্য করলেও পরে আবার বলেন, “স্বাস্থ্য বিভাগের যে সাফল্য, তা স্বাস্থ্য বিভাগ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মীদের যৌথ প্রয়াসে সম্ভব হয়েছে। আমি মনে করি, যদি আমাদের কোনো সমন্বয়ের ঘাটতি থাকে, সেটা দূর করা সম্ভব।”

অধ্যাপক আজাদ বলেন, “আমরা চেষ্টা করছি। গ্রাম পর্যায়ে আমাদেরও স্বাস্থ্যকর্মী আছে, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরেরও স্বাস্থ্যকর্মী আছে। উভয় অধিদপ্তরে আমরা কেন্দ্র থেকে শুরু করে প্রান্তিক পর্যন্ত এক সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার চেষ্টা করি।”

তিনি বলেন, “আমার কমিউনিটি ক্লিনিকে অবশ্যই সিজারিয়ান সেকশন হবে না। তবে অনেক ক্লিনিকে হয়ত আমরা ডেলিভারি করতে পারব, এই কথা বলতে পারি, আমাদের যে কোনো কেন্দ্রে বা যে কোনো স্বাস্থ্যকর্মীর কাছে যদি কোনো মা আসে, আমরা তাহলে দায়িত্ব নেব।”

সারোয়ার বলেন, “কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরা যদি মাঠ পর্যায়ে কোথাও যায়, আমাদের কর্মীরা তাদের সাহায্য করছে, ডেলিভারি কর্মীরা এক সঙ্গে কাজ করছে।”

সমন্বয়ের ঘাটতি মেটাতে দুই মহাপরিচালক একসঙ্গে বসেন কি না- সে প্রশ্নও দুজনের কাছে রেখেছিলেন তৌফিক ইমরোজ খালিদী।

উত্তরে পরিবার-পরিকল্পনা অধিদপ্তরে মহাপরিচালক বলেন, “মাঝে-মধ্যে মন্ত্রণালয়ের মিটিংয়ে আমরা একসঙ্গে হই। বিভিন্ন অসঙ্গতি আছে সেগুলো দূর করার আলোচনা আমরা করি।”

আর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, “আমাদের দুই অধিদপ্তরের স্বতন্ত্র বিভাগ আছে শুধু এই বিষয়টি নিয়ে। মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্য। দুই বিভাগই একত্রে কাজ করে।”

ইশতেহারে থাকবে অঙ্গীকার

আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে শিশু মৃত্যুর হার কমানোর অঙ্গীকার যুক্ত করার প্রতিশ্রুতি এসেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের কাছ থেকে।

আলোচনায় তিনি বলেন, “আগামী নির্বাচনে বড় একটা অঙ্গীকার থাকবে, যে কোনো মূল্যে শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে চাই। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য হিসেবে এটা বলে যাচ্ছি।”

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “আমরা শিশু ও মাতৃ মৃত্যুর হার কমাতে চাই। বাল্যবিয়ে যত বন্ধ করতে পারব তত বেশি নিরাপদ মাতৃত্ব …বাল্য বিয়েকে নিরুৎসাহিত করছি। একজন মেয়েকে সন্তান ধারণের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।”

প্রসূতির স্বাভাবিক প্রসব না করিয়ে অস্ত্রোপচারের প্রবণতার কঠোর সমালোচনা করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “অনেকে মনে করে সিজার করলে নিরাপদ মাতৃত্ব হবে। একবার সিজার করলে বার বার সিজার করতে হয়, ঝুঁকি থাকে।”

বেসরকারি হাসপাতালে ওই প্রবণতা ঠেকাতে সরকার কোনো উদ্যোগ নেবে কি না জানতে চাইলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “সিজার যারা করতে যায়, তার কিন্তু কিছুটা শিক্ষিত মানুষ, পয়সা-কড়ি আছে। তারা মাতৃত্বের বেদনা সহ্য করতে চায় না, নয় মাস বেদনা সহ্য করে আর প্রসব বেদনা সহ্য করতে চায় না।”

তিনি বলেন, “অভিভাবকদের দায়িত্ব নিতে হবে, মা-বোনদের দায়িত্ব নিতে হবে। ছয় মাস বুকের দুধ খাওয়াতে হবে, মায়ের দুধ অমৃতের সমান- এটা থেকে অনেকে সরে আসে, এ নিয়ে কেন ক্যাম্পেইন করতে হবে?”

বাংলাদেশে শিশু খাদ্যের বিজ্ঞাপনের ভাষা নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে গণমাধ্যম উদ্যোগ নিলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তাতে সমর্থন দেবে বলে জানান নাসিম।

এক প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য বিভাগের দুই মহাপরিচালকের মধ্যে সমন্বয় ‘কম থাকতে পারে’ স্বীকার করে নাসিম বলেন, “উনারা নিজেরা সচেতন, তারা নিজেরা এখন ভাই ভাই হিসেবে কাজ করছেন, কেউ বড় ছোট নয়।”

ঢাকা মেডিকেলে জীবিত নবজাতককে মৃত ঘোষণা এবং পরে ওই শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কারও দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরও পড়ুন