দেহঘড়ির গবেষণায় নোবেল জয়

দেহঘড়ির আণবিক সূত্র উদঘাটন করে নোবেল পুরস্কার জিতে নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের তিন বিজ্ঞানী।  

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Oct 2017, 09:57 AM
Updated : 2 Oct 2017, 02:03 PM

সুইডেনের কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট সোমবার চিকিৎসা বিজ্ঞানে চলতি বছরের বিজয়ী হিসেবে জেফ্রি সি হল, মাইকেল রসবাস এবং মাইকেল ডব্লিউ ইয়ংয়ের নাম ঘোষণা করে।

মানুষসহ সকল প্রাণী ও উদ্ভিদের সকল জীবিত কোষ যে সময়সূত্র মেনে চলে বিজ্ঞানীরা তাকে বলেন সার্কেডিয়ান রিদম। এই দেহঘড়ির কারণেই আমরা রাতে ঘুমাতে চাই; দীর্ঘ সময় বিমানভ্রমণের পর দিন-রাতের হিসেবে গড়বড় হলে শরীরেরও মানিয়ে নিতে সমস্যা হয়।

আমাদের মনোভাব, হরমোনের মাত্রা, দেহের উষ্ণতা এবং সার্বিক বিপাকীয় কার্যাবলীর ওপর এই সার্কেডিয়ান রিদমের বড় ধরনের প্রভাব রয়েছে।    

ক্রোনোবায়োলজি বা দেহঘড়ির বিজ্ঞান এখনও বিকাশমান একটি গবেষণার ক্ষেত্র। এ বিষয়ে মানুষ যা যা জানতে পেরেছে, তার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এ বছরের নোবেল পাওয়া তিন বিজ্ঞানীর।  

আশির দশকে মাছির ওপর গবেষণা করে তারা সেই জিনটি আলাদা করেন, যা সময় মেনে দৈনন্দিন জৈবিক কর্মকাণ্ডের ছন্দ বজায় রাখে। গবেষণায় তারা দেখতে পান, ওই জিনটির কারণে কেমন করে রাতের বেলায় বিশেষ এক ধরনের প্রোটিন জমা হচ্ছে, আবার দিনের বেলায় তা মিলিয়ে যাচ্ছে।   

এ প্রক্রিয়ায় আর কোন কোন জিনের ভূমিকা আছে, তা জানা যায় পরবর্তী গবেষণায়। সেই জ্ঞান কাজে লাগিয়ে বিজ্ঞানীরা এখন ইনসমনিয়া সারাতে, ওষুধ খাওয়ার সঠিক সময়টি জানতে এবং স্বাস্থ্যসম্মত নিদ্রাভ্যাসের কৌশল ঠিক করার চেষ্টা করছেন।    

গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন সকালে মানুষের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেড়ে যায়, কারণ ওই সময় আমাদের দেহযন্ত্র নতুন একটি দিনের জন্য তার সব কলকব্জা নতুন করে চালু করে। 

সার্কেডিয়ান রিদম কোনো কারণে অল্প সময়ের জন্য বিঘ্নিত হলে মানুষের স্মৃতি রোমন্থনে সাময়িক জটিলতা দেখা দিতে পারে। কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে তা ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ও হৃদরোগের মত রোগের কারণ হতে পারে।    

কারোলিনস্কা নোবেল কমিটির সেক্রেটারি টমাস পার্লমান বলেন, “এবারের নোবেলবিজয়ীরা যে গবেষণা করেছেন, আমাদের স্বাস্থ্য ও ভালো থাকার ওপর তার সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রয়েছে।”

নোবেলজয়ের প্রতিক্রিয়ায় মাইকেল রসবাস বলেন, তিনি আপ্লুত, উত্তেজনায় যেন তার দম বন্ধ হয়ে আসছে।

“মৌলিক বিজ্ঞানের জন্য এটা দারুণ খবর। যদিও আমাদের গবেষণার খুব বেশি বাস্তব প্রয়োগ এখনও হয়নি।… এ ধরনের মৌলিক কাজে মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে, এটা ভালো।” 

 

১৯৪৪ সালে জন্মগ্রহণ করা মাইকেল রসবাস অধ্যাপনা করছেন ব্র্যান্ডিস ইউনিভার্সিটিতে। তার পরের বছর জন্ম নেওয়া জেফ্রি সি হল কাজ করছেন ইউনিভার্সিটি অব মেইনে। আর রকফেলার ইউনিভার্সিটির গবেষক মাইকেল ডব্লিউ ইয়ং জন্মগ্রহণ করেছেন ১৯৪৯ সালে।

এবার নোবেল পুরস্কারের ৮০ লাখ সুইডিশ ক্রোনার এই তিন বিজ্ঞানী ভাগ করে নেবেন। আগামী ১০ ডিসেম্বর সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হবে।

মঙ্গলবার পদার্থ, বুধবার রসায়ন, শুক্রবার শান্তি এবং আগামী ৯ অক্টোবর অর্থনীতিতে এবারের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। আর সাহিত্য পুরস্কার কবে ঘোষণা করা হবে, সে তারিখ পরে জানানো হবে বলে নোবেল পুরস্কারের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে।

জীবদেহ কেমন করে ত্রুটিপূর্ণ কোষ ধ্বংস করে নিজের সুরক্ষার ব্যবস্থা করে, আর কোষ কীভাবে নিজের আবর্জনা প্রক্রিয়াজাত করে সুস্থ থকে, সেই রহস্যে আলো ফেলে জাপানের বিজ্ঞানী ইয়োশিনোরি ওশুমি গতবছর চিকিৎসায় নোবেল পেয়েছিলেন।