খাদ্যে রাসায়নিকে ন্যূনতম আমৃত্যু কারাদণ্ড চান বদরুদ্দোজা

ক্যান্সার ও কিডনিসহ বিভিন্ন রোগের জন্য দায়ী খাদ্যে রাসায়নিক প্রয়োগের সর্বনিম্ন শাস্তি আমৃত্যু কারাদণ্ড করার কথা বলছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Sept 2017, 08:33 AM
Updated : 15 Sept 2017, 11:50 AM

শুক্রবার রাজধানীর ডেইলি স্টার ভবনে ‘ক্যান্সার প্রতিরোধে সচেতন নাগরিক ও গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।

ডা. বদরুদ্দোজা বলেন, “কেমিক্যালযুক্ত মাছ খাচ্ছেন, সবজি খাচ্ছেন, অন্য অনেক খাবার খাচ্ছেন। চিকেন, দুধের মধ্যেও দেয় শুনেছি। এজন্য আমাদের দেশে কিডনি পচে যাচ্ছে, লিভার পচে যাচ্ছে। কিডনি রোগ যেভাবে বাড়ছে আপনি চিন্তাও করতে পারবেন না। ১৫ বছর আগে যেটা ছিল এখন বোধহয় তার তিনগুণ-চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।এর জন্য দায়ী কেমিক্যালস।

“এদের (খাদ্যে রাসায়নিক প্রয়োগকারী) জন্য, আমার মনে হয়… এসিডের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল, এক্ষেত্রেও আমাদের ওইরকম করে শুরু করতে হবে। যাবজ্জীবন নয় কিন্তু, কিছুদিন পর ছাড়া পেয়ে যায়। আমৃত্য কারাদণ্ড এক নম্বর এবং তারপর মৃতুদণ্ড। কারণ তারা হত্যাকারী, তারা মানুষ মারছে।”

মোসাব্বির ক্যান্সার কেয়ার সেন্টার আয়োজিত এই আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এক সময়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বদরুদ্দোজা ক্যান্সার প্রতিরোধে প্রাথমিক পর্যায়ে তা শনাক্তের প্রয়োজনে দেশব্যাপী স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার ওপর জোর দেন।

এ বিষয়ে দেশের খ্যাতনামা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বদরুদ্দোজা বলেন, “ক্যান্সারের আর্লি ডিটেকশন খুব প্রয়োজন। এটা রোগীরা বা তাদের আত্মীয় স্বজন পারবে না, ডাক্তাররা পারবে। সহজ প্রক্রিয়ায় করা যাবে সেটা...

“আমাদের যে চার শতাধিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে, এদের প্রত্যেকটিতে ১৫-২০জন করে চিকিৎসক আছে। তিনটা চিকিৎসককে যদি বছরে একবার করে তিনদিনের জন্য ট্রেইনিংয়ে নিয়ে আসেন, গলায় হাত দিয়ে জয়েন্ট অনুভব করা, পেটে হাত দিয়ে লিভার অনুভব করা, এগুলো টেকনিক মনে করায় দিতে হয়। প্রত্যেকটি হাসপাতালে চেস্ট এক্স-রে আছে। সেটা নিয়ে ৯০ শতাংশ ফুসফুস ক্যান্সার ডায়াগনোস করা যায়। কঠিন না এটা।”

ক্যান্সারের ওষুধ তৈরির কাঁচামালে শুল্ক প্রত্যাহার এবং অস্বচ্ছল রোগীদের জন্য বিনামূল্যে কিংবা স্বল্প খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেন বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সভাপতি।

তিনি বলেন, “কেমিক্যাল তৈরি করতে অনেক টাকা খরচ হয়। সেজন্য কেমিক্যাল বেসিকসটা আমদানি করতে হবে, সরাসরি। সব তরফ থেকে, কারণ বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ছাড়তে চাইবে না।

“র ম্যাটেরিয়াল ইমপোর্ট করেন ট্যাক্স ফ্রি; সঙ্গে সঙ্গে ওষুধের দাম অর্ধেক হয়ে যাবে। সরকারি ফ্যাক্টরিতেও ওটা করতে পারে। কিন্তু আমাদেরকে ওষুধ তৈরি করতে হবে।”

ক্যান্সারের সচেতনা বাড়াতে টেলিভিশন প্রচারণার উপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, “৪০ বছর আমি টেলিভিশনে বক্তৃতা করেছি, ক্যান্সার সম্পর্কে। আমার বক্তৃতা যারা শুনতেন, তাদের সংখ্যা নেহায়েত কম ছিল না। তারা উপকৃতও হয়েছেন বলেছেন। মানুষ টেলিভিশন দেখে এবং অনেক কিছু সম্পর্কে জেনে নেয়।

“বাংলাদেশে ওই সময়ে লাল শাক শীতকালের সবজি বলে গণ্য করা হত। এখন সারাবছর বাজারে উঠে। বিরাট ব্যাপার... আপনার চোখের জ্যোতি বাড়ছে, বাচ্চার জ্যোতি বাড়ছে। আপেল-নাশপাতির বদলে পেয়ারা খাওয়াতে হয়, এটা কেউ জানত না। স্বাস্থ্য বিষয়টা সেভাবে উপস্থাপন করা জরুরি।”

বদরুদ্দোজা চৌধুরী আরও বলেন, “সিগারেটের উপর ট্যাক্স বসাতেই হবে। কিন্তু অর্থমন্ত্রীরা কখনো সিগারেটে ট্যাক্স বসাতে চান না। কারণ সিগারেট সরকারি আয়ের অন্যতম বড় উৎস। এজন্য তারা ওটাকে মেলাতে পারে না। তবে তারা চাইলে পারেন, সেটাও দেখেছি। তামাক সম্পর্কে পরিষ্কার কথা বলা যায়, সাদা পাতা, জর্দা, গুল- একই জিনিস। অনেকে জানে না। গুল লাগিয়ে বসে থাকে, এতে কিন্তু ক্যান্সার হয়।”

তিনি বলেন, “গরীব রোগীদের জন্য ফ্যাসিলিটিজ প্রোভাইড করা। তাদের জন্য ডায়াগনোসিসের পর থাকার ব্যবস্থা করা, চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। অনেকে আছেন, তারা করতে পারেন। ডোনেশনের ব্যবস্থা করতে হবে, যারা বিত্তবান আছেন তাদের থেকে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক চৌধুরী মাহমুদ হাসান বলেন, দেশে ১৮ হাজার কোটি টাকার ওষুধের বাজার। তার মধ্যে ১০ শতাংশ খরচ হয় ডাক্তারদের পেছনে প্রোমোশনের জন্য। সেটা কিছুটা কমিয়ে এদিকে আনা গেলে ক্যান্সারের চিকিৎসায় খরচ করা সম্ভব।

আলোচনায় ক্যান্সার নিয়ে কাজ করা আশিক ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট আফজাল হোসেন চৌধুরী বলেন, “১৬ কোটি মানুষের জন্য ক্যান্সারের চিকিৎসক আছে মাত্র ১৫০ থেকে ১৬০ জন। এর বিপরীতে দেশে নিবন্ধিত ক্যান্সার রোগীর সংখ্যাই ১৫ লাখের বেশি। প্রতি বছর ২ লাখের বেশি এর সঙ্গে যুক্ত হয়। এত কম সংখ্যক চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়।”

এটিএন বাংলার উপদেষ্টা নওয়াজেশ আলী খান বলেন, ক্যান্সারের সচেতনা তৈরির কাজটি করতে পারে গণমাধ্যম। যেভাবে এসিড নিক্ষেপের বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। বিজ্ঞাপন, স্বাস্থ্যবিষয়ক অনুষ্ঠান, স্বাস্থ্যবার্তা প্রভৃতির মাধ্যমে সেটা করা যেতে পারে। পত্রিকাগুলোও নির্দিষ্ট পাতায় এ সংক্রান্ত সচেতনতা বার্তা রাখতে পারে।

মোসাব্বির ক্যান্সার কেয়ার সেন্টারের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোদাসসের হোসেন খান বীরপ্রতীকের পরিচালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে তত্ত্বাধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মাহবুব জামান, ক্যান্সার ফাউন্ডেশনের পরিচালক গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বক্তব্য দেন।