দিনাজপুরে শিশু মৃত্যু ‘লিচুর কীটনাশকেই’

আমেরিকান জার্নাল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিনে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে পাঁচ বছর আগে দিনাজপুরে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে ১৩ শিশুর মৃত্যুর জন্য লিচু বাগানে ছিটানো কীটনাশক ও রাসায়নিককে দায়ী করা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 July 2017, 04:11 PM
Updated : 25 July 2017, 04:11 PM

এতে বলা হয়, লিচু বাগানে ‘মাত্রাতিরিক্ত ও অনিয়মতান্ত্রিকভাবে’ প্রয়োগ করা কীটনাশক এবং অন্যান্য রাসায়নিকে একিউট এনসেফালিটিস সিনড্রোম (এইএস) ঘটতে পারে, যাতে মস্তিষ্ক ফুলে- প্রদাহে মৃত্যু হতে পারে।

বিষাক্ত রাসায়নিকের প্রভাবেই ২০১২ সালে ওই শিশুদের মৃত্যু হয়েছিল- এর সপক্ষে আরও প্রমাণ হিসেবে দিনাজপুরেই ২০১৫ সালের জুনের দিকে কয়েকদিনের ব্যবধানে দেড় থেকে ছয় বছর বয়সী ১১ শিশুর মৃত্যু এবং অসুস্থ হয়ে আরও ১২ শিশুর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার কথা উঠে এসেছে গবেষণায়।

এসব ঘটনায় মৃত শিশুদের রক্ত ও লিচু পরীক্ষায় বিষাক্ত কীটনাশকের অস্তিত্ব পাওয়ার কথা বাংলাদেশের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) গবেষকরাও জানিয়েছিলেন।

নতুন এই গবেষণায় বলা হয়, দিনাজপুরের ওই সব লিচু বাগানে এনডোসালফানসহ বিভিন্ন শক্তিশালী কীটনাশক ব্যবহার করা হয়েছিল। বিষক্রিয়ায় মারা যাওয়া শিশুদের অনেকে নিয়মিত এসব লিচু বাগানে খেলাধুলা করত।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে এনডোসালফান ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রসহ গুটিকয়েক দেশে সীমিত আকারে এটির ব্যবহার অনুমোদিত ছিল। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রেও ওই কীটনাশক নিষিদ্ধ হয়।

তবে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সংরক্ষণ বিভাগের পরিচালক অমিতাভ দাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশেও ২০১৪ সাল থেকে এনডোসালফানের ব্যবহার নিষিদ্ধ রয়েছে।

“তাদের (গবেষক) কাছে সর্বশেষ তথ্য নাও থাকতে পারে।”

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, সচেতনতার অভাবে বাংলাদেশের কৃষকদের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের প্রবণতা রয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্য সমস্যা এড়াতে কীটনাশক প্রয়োগ ও ফল আহরণের মধ্যে যে সময়ের ব্যবধান থাকতে হয় সে বিষয়ে তাদের ধারণা নেই।

ভারতেও লিচু বাগানের কাছাকাছি এলাকায় একইভাবে শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি ল্যানসেটে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রাকৃতিকভাবে লিচুর বীজ ও শ্বাসে একটি বিষাক্ত উপাদান তৈরি হয়, যাতে তাদের মৃত্যু হয়েছে।

তবে আমেরিকান জার্নাল অব ট্রপিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন-এ প্রকাশিত নিবন্ধের প্রধান লেখক আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআর,বি) বিজ্ঞানী ম. সাইফুল ইসলাম বলেন, “আমাদের অনুসন্ধানে বলছে, বাংলাদেশে মৃত্যুর ঘটনায় বীজ সম্ভবত দায়ী নয়, যেহেতু এখানে লিচুর বীজ কেউ খায়নি।

“এসব মৃত্যুর ঘটনা এমন এক সময়ে হয়েছে যখন বাংলাদেশে লিচুর ফলন হয় এবং দেশজুড়েই তা মানুষজন খায়। যদি বীজই এর জন্য দায়ী হত, তাহলে সেটি একটি নির্দিষ্ট এলাকায় আটকে না থেকে পুরো দেশেই ছড়িয়ে পড়ত।”