হৃদরোগীদের সেবায় অ্যাপ ‘ই-হার্ট’

রোগীর বিস্তারিত তথ্য, চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র, স্বাস্থ্য পরীক্ষার ফল থেকে শুরু ওষুধ খাওয়া এবং চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়সহ বিস্তারিত তথ্য মিলবে এখন একটি জায়গায়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 July 2017, 02:31 PM
Updated : 25 July 2017, 02:31 PM

‘ই-হার্ট’ নামের মোবাইল অ্যাপ থেকে এখন এসব নানা সেবা নিতে পারবেন ঢাকার ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে (এনএইচএফ) চিকিৎসা নিতে আসা হৃদরোগীরা।

এনএইচএফ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সহায়তায় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির আরবান ল্যাবের গবেষকরা এই স্বাস্থ্য বিষয়ক অ্যাপটি তৈরি করেছে।

মঙ্গলবার মিরপুরে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অডিটোরিয়ামে ‘ই-হার্ট’’ অ্যাপের উদ্বোধন করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আজমেদ পলক, যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার বায়ো ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ হোসাইনী, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান কাজী জামিল আজহার।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক বিগ্রেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, হৃদরোগীদের বেশিরভাগই বয়স্ক। তারা প্রায়ই ভুলে যান কখন কোনো ওষুধ খাবেন, কবে চিকিৎসকের কাছে যাবেন, কোন রির্পোট কোন চিকিৎসকে দেখাবেন। অ্যাপের মাধ্যমে এসব সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে হার্ট ফাউন্ডেশন। রোগীকে ওষুধ খাওয়া সময়, চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার সময় অ্যালার্ম দিয়ে জানিয়ে দেবে এই অ্যাপ।

এ অ্যাপের সুবিধা শুধু ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের রোগীরাই পারবেন। ফাউন্ডেশন থেকে রোগীদের দেওয়া আইডি বা অ্যাপ ডাউনলোড করে রেজিস্ট্রেশন করে ব্যবহার করা যাবে।

অ্যাপে পেশেন্ট প্রোফাইল, রিস্ক স্কোর, চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়, ব্যবস্থাপত্র, টেস্ট রেজাল্ট, রিস্ক ট্রেন্ড, ফলোআপ, হার্ট রেইট অপশন রয়েছে। রোগীর প্রোফাইলে নাম, বয়স, উচ্চতা, ওজন, রক্তের গ্রুপ, রোগের ধরণ ইত্যাদি থাকবে।

অ্যাপের উল্লেখযোগ্য দিক

>> রিস্ক স্কোর: এই মডিউলে রোগীর ঝুঁকির হিসাব থাকবে। প্রধানত রোগীর কোলেস্টেরল, এইচডিএল কোলেস্টেরল, রক্তচাপ, রোগীর বয়স, লিঙ্গ, ডায়াবেটিস, ধূমপানের তথ্য ঝুঁকি স্কোর গণনায় ব্যবহৃত হবে। স্কোর অনুযায়ী রোগীর একটি গ্রাফ তৈরি হবে।

এই মডিউলে গেলে রোগী দেখতে পাবেন তিনি কতটা ঝুঁকির মধ্যে আছেন।

>> অ্যাপয়েন্টমেন্ট: অ্যাপয়েন্টমেন্ট মডিউলে হৃদরোগী নতুন অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে পারবেন। এখানে হার্ট ফাউন্ডেশনের চিকিৎসকদের বিস্তারিত তথ্য থাকবে। রোগী যে চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিতে চান তার অ্যাপয়েন্টমন্ট নিতে পারবেন।

>> টেস্ট রেজাল্ট: চিকিৎসক রোগীকে যেসব পরীক্ষা দেবেন তার রিপোর্ট এই মডিউলে দেখতে পাবেন রোগী। হার্ট ফাউন্ডেশনে রোগী পরীক্ষা করালে তা সার্ভার থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যাপে রোগীর আইডিতে চলে যাবে।

>> প্রেসক্রিপশন: এটি অ্যাপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখানে রোগের মাত্রা অনুযায়ী চিকিৎসক ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দেবেন। কোন ওষুধ কখন খেতে হবে তা থাকবে। ওষুধ সেবনের সময় গুগল ক্যালেন্ডার ব্যবহার করে অ্যালার্ম অপশনে গিয়ে অ্যালার্ম দিয়ে রাখলে তা রোগীকে সময় মতো জানিয়ে দেবে। প্রতিটি ওষুধের সঙ্গে অ্যালার্ম দেওয়ার সুযোগ থাকবে এতে।

>> রোগীর ফলোআপ: রোগী কখন কোন চিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তা থাকবে এই অংশে। গুগল ক্যালেন্ডার থেকে তারিখ, সময় নির্দিষ্ট করে অ্যালার্ম দিয়ে রাখলে জেনে যাবেন রোগী।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র আনিসুল হক বলেন, “হৃদরোগীরা অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে থাকে। তাদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে একটু এদিক-ওদিক হলে সমস্যা হয়ে যায়। রোগীরা এ ডিজিটাল অ্যাপ ব্যবহার করে নিয়মিত চিকিৎসা, ওষুধ সেবন করতে পারবেন। এতে রোগীর সময় সাশ্রয় হবে, হয়রানি থেকে মুক্তি পাবেন, চিকিৎসকদের সাথে ভালো একটি সম্পর্ক তৈরি হবে।”

প্রতিমন্ত্রী জনাব জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছেন তা বাস্তবায়নে সরকার অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে।

“ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমাণের ধারাবাহিকতায় এখন আমরা স্বাস্থ্যসেবা ডিজিটাল করায় নজর দিয়েছি। কারণ, বাংলাদেশের জনগোষ্ঠির বিশাল একটি অংশ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত, বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত। মানুষের তুলনায় ডাক্তার অনেক কম। এ ধরনের অ্যাপ ভবিষ্যতে একেকজন ডাক্তারের ভূমিকা পালন করবে।”

অনুষ্ঠানে ‘ই-হার্ট’ অ্যাপ সেট করা তিনটি স্মার্টফোন তিনজন রোগীর হাতে তুলে দেওয়া হয়।