এখন অনেক স্মার্টফোন ব্যবহারকারী অ্যাপনির্ভর বিভিন্ন হেলথ গেজেট ব্যবহার করেন। এসব গ্যাজেটের সেন্সর চলাফেরা ও গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে প্রতিদিনের হাঁটার পরিমাণ, ক্যালরি খরচ, রক্তচাপসহ বিভিন্ন তথ্য ব্যবহারকারীকে জানিয়ে দেয়।
স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা তাদেরেএ গবেষণায় অর্গাস অ্যাকটিভিটি মনিটরিং অ্যাপ ব্যবহারকারী সাত লাখ মানুষের হাঁটার তথ্য বিশ্লেষণে করেছেন, যারা ৪৬টি দেশের বাসিন্দা। তাদের এ গবেষণা নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারে।
ওই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়, হাঁটার মতো শারীরিক সক্রিয়তার কাজে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে হংকং। সেখানে মানুষ প্রতিদিন গড়ে ছয় হাজার ৮৮০ কদম হাঁটে।
আর সবচেয়ে কম হাঁটেন ইন্দোনেশিয়ার বাসিন্দারা। প্রতিদিন তারা গড়ে তিন হাজার ৫১৩ বার পা ফেলেন।
অবশ্য শুধু হাঁটার মতো শারীরিক সক্রিয়তা বিবেচনা করে কোনো দেশের মানুষকে অলস বলা যায় কিনা- সেই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত দেননি গবেষকরা।
গবেষণাপত্রে তারা বলেছেন, সাঁতার কাটা বা ফুটবল খেলার মতো যেসব কাজে স্মার্টফোন সঙ্গে রাখা ঠিক যুতসই নয়, সেসব শারীরিক সক্রিয়তার তথ্য তারা নিতে পারেননি।
এ গবেষণার অন্যতম গবেষক বায়োইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক স্কট ডেল্প বলছেন, তাদের যে পরিমাণ তথ্য বিশ্লেষণ করতে হয়েছে তার আকার এ বিষয়ে আগের যে কোনো গবেষণা থেকে হাজারগুণ বড়।
“আমরা আগে যা যা করেছি, তার চেয়ে বড় পরিসরে বিজ্ঞানের নতুন দিকের দরজা খুলে দিয়েছে এ গবেষণা।”
গবেষণায় মোট ১১১টি দেশের মানুষের হাঁটার তথ্য সংগ্রহ করা হলেও তার মধ্যে ৪৬টি দেশের তথ্য বিশ্লেষণের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিটি দেশের অন্তত এক হাজার স্মার্টফোন ব্যবহারীর হাঁটার তথ্য গবেষকরা বিবেচনায় নিয়েছেন।
তথ্য বিশ্লেষণে তারা দেখেছেন, পৃথিবীতে মানুষ দিনে গড়ে চার হাজার ৯৬১ কদম হাঁটে।
এ গবেষণার বিভিন্ন দিক বিভিন্ন দেশে মুটিয়ে যাওয়া সমস্যার সমাধান খুঁজতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
তারা দেখিয়েছেন, কোনো দেশের মানুষ গড়ে বেশি হাঁটলেও সে দেশে ওবেসিটির সমস্যা থাকতে পারে। দেশের ভেতরে আয় বা সম্পদের বৈষম্যের মত ‘শারীরিক সক্রিয়তায় অসাম্যের’ কারণেই এটা হতে পারে।
শারীরিক সক্রিয়তার অসাম্যের বিষয়টি নারী-পুরুষ বা কোনো শহরে হাঁটার পরিবেশ কেমন- তার ওপরও নির্ভর করে। যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবে নারী ও পুরুষের মধ্যে শারীরিক সক্রিয়তার অসাম্য বেশি। কম সক্রিয়তার কারণে নারীদের মুটিয়ে যাওয়ার প্রবণতাও সেখানে বেশি।
আবার জাপানে এই অসাম্য দেখা যায়নি। সেখানে নারী ও পুরুষ সমানভাবে সক্রিয়।
নিউ ইয়র্ক বা সান ফ্রান্সিসকোর মতো শহর পথচারীবান্ধব হওয়ায় সেখানে মানুষের হাঁটার প্রবণতাও বেশি। অর্থাৎ, যেখানে সহজে হাঁটা যায়, মানুষ সেখানেই বেশি হাঁটে।
গবেষণার এই দিকটি উপযুক্ত শহর গড়ার ক্ষেত্রেও সহায়ক হতে পারে বলে গবেষকদের ভাষ্য।