‘টেলিমেডিসিন’র ‘ডব্লিউএসআইএস চ্যাম্পিয়নশিপ’ অর্জন

প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের মানুষের কাছে উন্নত চিকিৎসা সেবা পৌঁছাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘টেলিমেডিসিন’ চিকিৎসা কার্যক্রম ‘ডব্লিউএসআইএস চ্যাম্পিয়নশিপ’ পুরস্কার পেয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 July 2017, 07:19 AM
Updated : 10 July 2017, 07:19 AM

ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি-ডব্লিউএসআইএস ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশনস ইউনিয়ন (আইটিইউ) সহ জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হয়।

সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় গত ১২ থেকে ১৬ জুন ২০১৭ সালের ডব্লিউএসআইএসে ‌‘ই-স্বাস্থ্য’ ক্যাটাগরিতে এ চ্যাম্পিয়নশিপ পুরস্কার অর্জন করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাক্সেস টু ইনফরমেশন-এটুআই এর অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পটি।

অনুষ্ঠানে আইটিইউয়ের সেক্রেটারি জেনারেল হাওলিন ঝাও টেলিমেডিসিন কার্যক্রমের পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বায়োমেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের সাম্মানিক অধ্যাপক খোন্দকার সিদ্দিক-ই রব্বানীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

 ‘টেলিমেডিসিন সেবায় স্থানীয়ভাবে উন্নয়ন করা কম্পিউটার ও স্মার্টফোনভিত্তিক চিকিৎসা সরঞ্জাম ও সফটওয়্যারের মাধ্যমে গ্রামীণ উদ্যোক্তা মডেল’ শিরোনামের এই প্রকল্পে সহযোগী হিসেবে ছিল সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, পক্ষাঘাতগ্রস্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র-সিআরপি, বিবিট লিমিটেড, অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক ইনফরমেনশন সোসাইটি ইনোভেশন ফান্ড-এশিয়া এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ।

এর আগে ব্র্যাক-মন্থন-২০১৬ পুরস্কারে ‘উইনার’ এবং মন্থন-সাউথ এশিয়া-২০১৬ পুরস্কারে ‘ফাইনালিস্ট’ সনদ লাভ করে এই টেলিমেডিসিন কার্যক্রম।

এই ‘টেলিমেডিসিন’ চিকিৎসা পদ্ধতিকে ২০১৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় টেলিমেডিসিন কার্যক্রম’ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো ব্যবহারের অনুমতি দেয়।

গ্রামের মানুষের চিকিৎসার জন্য এই টেলিমেডিসিন প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় নেতৃত্ব দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বায়োমেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের সাম্মানিক অধ্যাপক খোন্দকার সিদ্দিক-ই রব্বানী।

তার নেতৃত্বে ২০০৮ সালে বায়োমেডিকেল ফিজিক্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠা হয়। চিকিৎসা প্রযুক্তির উন্নয়নে ২০১১ সালে টেলিমেডিসিনের কাজ শুরু করেন এই অধ্যাপক।

পরে ২০১৩ সালে মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষামূলকভাবে এই চিকিৎসা কার্যক্রম চালু করেন তিনি। প্রায় দুই বছর মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষণ শেষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়ে ২০১৫ এর নভেম্বর থেকে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে ইউনিয়ন পর্যায়ে ‘টেলিমেডিসিন কার্যক্রম’ ছড়িয়ে দেওয়া শুরু হয়।

একইসঙ্গে শহরে থাকা বিএমডিসি লাইসেন্সপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের মাধ্যমে এ পরামর্শ ও চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে।

টেলিমেডিসিন কী?

টেলিমেডিসিন সম্পর্কে অধ্যাপক সিদ্দিক-ই রব্বানী বলেন, শহর থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেটের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেওয়ার যে প্রক্রিয়া এটিই টেলিমেডিসিন নামে পরিচিত।টেলিমিডিসিন এর সহজ বাংলা হচ্ছে দূর চিকিৎসা।

তিনি বলেন, “যেখানে ডাক্তার নেই এমন প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকার টেলিমেডিসিন ক্লিনিক থেকে একজন রোগী আধুনিক ডিজিটাল কম্পিউটার ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহার করে অন্য শহর, এমনকি বিশ্বের যেকোনো জায়গায় থাকা একজন এমবিবিএস বা তারও বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছ থেকে চিকিৎসা-পরামর্শ নিতে পারবেন।”

এ ব্যবস্থায় সামনা সামনি একজন চিকিৎসকের কাছ থেকে যে পরামর্শ পাওয়া যায়, টেলিমেডিসিন তার প্রায় কাছাকাছি সুবিধা দিতে পারে বলছেন অধ্যাপক রব্বানী।

অন্যান্য টেলিমেডিসিন প্রকল্প থেকে এই প্রকল্পের পার্থক্যের বিষয়ে তিনি বলেন, “অন্যগুলোতে কেবলমাত্র ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে রোগী ও চিকিৎসক কথা বলে চিকিৎসা দিয়ে থাকে। এতে ভালোভাবে ঝুঝা যায় না।

“আর এই টেলিমেডিসিন পদ্ধতিতে রোগীর অবস্থা ভালোভাবে বোঝার জন্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক সংকেত পাঠানো ডিজিটাল স্টেথোস্কোপ, ইসিজি যন্ত্র, শ্বাস-প্রশ্বাস পরিমাপের যন্ত্র, ডিজিটাল ইমেজিং যন্ত্র ইত্যাদি সংযুক্ত আছে, যেগুলো নিজেরাই উন্নয়ন করেছি।”

প্রকল্পটির সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে অধ্যাপক রব্বানী বলেন, “স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায়, ইমার্জেন্সি অবস্থায়- অর্থাৎ কাটা ছেড়া হলে বা হার্ট অ্যাটাক হলে এ ব্যবস্থায় চিকিসা দেওয়া সম্ভব নয়।

“কিন্তু রোগীর সাধারণ অসুস্থতার লক্ষণ হলেও বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখাতে হবে কিনা বা হাসপাতালে নেওয়ার মত জরুরি কিনা- তা টেলিমেডিসিনে ডাক্তারের পরামর্শের বোঝা যাবে।”

বর্তমানে দেশের ২৫টি গ্রামীণ কেন্দ্রে এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজার রোগী সেবা নিয়েছে, যাদের মধ্যে ৭৫ শতাংশ হচ্ছে শিশু ও নারী।

আরও কেন্দ্র স্থাপনের জন্য উদ্যোক্তা সংগ্রহের কাজ চলছে জানিয়ে অধ্যাপক রব্বানী বলেন, “আর্থিকভাবে স্বচ্ছল রোগীদের কাছ থেকে ফিস ১৫০ টাকা নেওয়া হয়। দরিদ্র রোগীদেরকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থায় অনুদান তহবিলও গঠন করা হয়েছে।”