অনলাইন হাটে এবার বিক্রি কম

তিন বছর আগে কোরবানির পশু বিক্রির জন্য ফেইসবুকে একটি পেইজ খুলেছিলেন কুমিল্লার সানজীদা আক্তার। মহামারীর মধ্যে গত দুই বছর ক্রেতাদের কাছ থেকে সাড়াও পেয়েছিলেন ভালো। এ বছরের কোরবানির ঈদ ঘনিয়ে এলেও আগের মত সাড়া তিনি পাচ্ছেন না।

সাজিদুল হক নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 July 2022, 07:22 PM
Updated : 7 July 2022, 03:59 AM

সাতক্ষীরার সুলতান এগ্রোর রুবায়েত আহমেদ এ বছরই প্রথম অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নিজের খামারের গরু বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন। এর মধ্যে খামারের প্রায় সব গরু বিক্রিও হয়ে গেছে, তবে অনলাইনে তিনি ক্রেতা পাননি, খামারে এসেই ক্রেতারা কিনে নিয়ে গেছেন। 

উদ্যোক্তাসহ এ খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির এই চিত্র সারা দেশেই মোটামুটি কাছাকাছি। এর সম্ভাব্য দুটি কারণও তাদের কথায় এসেছে।

করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক এখন আর আগের মত নেই। ফলে সুযোগ যেখানে আছে, সেখানে খামারে কিংবা হাটে গিয়েই পশু কিনতে চাইছেন ক্রেতারা। আর দ্বিতীয় কারণটি হল আস্থার সঙ্কট, কারণ গত দুই বছর অনলাইনে গরু কেনার অভিজ্ঞতা সবার ভালো নয়।   

তবে লাভ যে একেবারে হচ্ছে না তা নয়। অনলাইনে বিক্রি কম হলেও প্রচারের কাজটা ভালো হচ্ছে বলে জানালেন কয়েকজন খামারি।

আগামী ১০ জুলাই বাংলাদেশে উদযাপিত হবে কোরবানির ঈদ। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশে মোট ৬ লাখ ৮১ হাজার ৫৩২ জন খামারির কাছে এক কোটি ২১ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৯টি কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে। আর কোরবানির পশুর সম্ভাব্য চাহিদা ৯৭ লাখ ৭৫ হাজার ৩২৫টির।

কোরবানিযোগ্য পশুর মধ্যে ৪৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯৭টি গরু, ১ লাখ ৭৩ হাজার ৫০৪টি মহিষ, ৬৫ লাখ ৭৩ হাজার ৯১৫টি ছাগল, ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৬৮২টি ভেড়া এবং ১ হাজার ৪০৯টি অন্যান্য পশু রয়েছে।

সানজু-শফিক এগ্রো’র উদ্যোক্তা সানজীদা আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন, গত বছর তার খামারের ১৩টি গরু ঈদের আগে অনলাইনে বিক্রি হয়েছিল। এবার এখন পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে মাত্র তিনটা।

“ক্রেতারা সবাই দেখে নিতে চাইছেন। আমরা যেহেতু হোম ডেলিভারি দিই নিজ দায়িত্বে, সেজন্য আশা করেছিলাম এবারও ভালো সাড়া পাব। কিন্তু এখন পর্যন্ত আশানুরূপ সাড়া পাইনি।”

সাতক্ষীরার রুবায়েত আহমেদ জানালেন, তার খামারের গরু তিনি অনলাইন মার্কেটপ্লেস দারাজে দিয়েছিলেন বিক্রির জন্য।

“এখনও সেখানে কোনো ক্রেতা পাইনি। ভেবেছিলাম অনলাইনে ভালো সাড়া পাব। কিন্তু আমার খামারের প্রায় সব গরু সরাসরি বিক্রি হয়ে গেছে।”

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) তথ্য অনুযায়ী, গতবছর অনলাইন হাট থেকে বেচাকেনা হয়েছে ৩ লাখ ৮৭ হাজার গরু-ছাগল ও অন্যান্য পশু।

সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম শোভন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ বছর করোনার সংক্রমণ কম থাকায় অনলাইন পশুর হাটে মানুষের আগ্রহ কম। আর দাম নিয়েও মার্চেন্টেদের মধ্যে একটা দোলাচল আছে। তারা বুঝতে পারছেন না এবার দাম কম হবে না বেশি হবে। আমরা আশা করছি, দুই লাখের বেশি কোরবানির পশু বিক্রি হবে। তবে গত দুবছরের তুলনায় এখন পর্যন্ত সাড়া কম পাচ্ছি। “

বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাদিক এগ্রোর কর্ণধার মো. ইমরান হোসেন বলেন, “গত বছর সারা দেশে সাড়ে ৩ লাখ গবাদিপশু বিক্রি হয়েছে অনলাইনে। যার বাজারমূল্য আড়াই হাজার কোটি টাকা। এ বছর অনলাইনে সাড়া কম পাচ্ছি। ইভ্যালি, কিউকম, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, আলাদিনের চেরাগ, আলেশা মার্টের প্রতারণার কারণে মানুষের আস্থা কমে গেছে।

“তবে মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে এবার অনলাইন শপগুলো ভালো রেসপন্স দিচ্ছে। ক্রেতারা দেখছে কেমন গরু আছে। নতুন খামারিরা যুক্ত হচ্ছে। এদিক থেকে এটা প্লাস পয়েন্ট। বিক্রি কম হলেও মার্কিটিং প্লেস হিসেবে রোল ভালো।”

গতবছর অনলাইন হাটে গরু কিনলেও এবার সরাসরি হাটে গিয়েই কিনতে চান ঢাকার ধানমণ্ডির বাসিন্দা আমজাদ আলী।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “গতবছর ঈদে অনলাইনে গরু দেখে অর্ডার করে যে রকম দেখেছিলাম সেরকমই পেয়েছিলাম। তবে সাইজে একটু ছোট মনে হয়েছিল। আসলে ছবি দেখেতো পুরোপুরি বোঝাও যায় না। তবে এ বছর হাটে গিয়ে গরু কিনব। কোরবানির পশু চোখে দেখে কেনার মধ্যে স্বস্তি আছে।”

ডিজিটাল হাট

গতবারের মত এবারও ডিজিটাল কোরবানির হাট বাস্তবায়ন করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) ও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ)। কারিগরি সহযোগিতা দিচ্ছে এটুআইর অনলাইন প্ল্যাটফর্ম একশপ।

এছাড়া দারাজ কয়েক বছর ধরে 'গরুর হাট' শিরোনামে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে কোরবানির পশু বিক্রি করে আসছে। তারা ফেইসবুক লাইভে গরুর ওজন, রঙ, দাঁত দেখে কেনার এবং খামার ও গরুর ভিডিও দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে।

তবে হাটের ক্যাম্পেইন চলাকালে তাদের কেনা-বেচা সম্পর্কে প্রতিষ্ঠানটি কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।

২০২০ সাল থেকে কোরবানির পশু বিক্রি করে আসছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের ই-কমার্স কোম্পানি ‘অথবা ডটকম’।

আরেক কোম্পানি বেঙ্গল মিট রাজধানীসহ সারাদেশেই অনলাইনে কোরবানির পশু সরবরাহ করছে।

পশুর হাটে নিরাপদ ও সহজ লেনদেন নিশ্চিত করতে ডিএনসিসি এবার ছয়টি পশুর হাটে ডিজিটাল পেমেন্ট বুথ বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

‘স্মার্ট হাট’ নামে নামের এই প্রকল্প নিয়েছে ডিএনসিসি। একটি পাইলট প্রকল্পের আওতায় এই স্মার্ট হাট কার্যক্রম চালাবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

স্মার্ট হাটে ডিজিটাল পেমেন্ট বুথ থাকবে। ফলে হাটে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের নগদ টাকা বহন করতে হবে না।

হাটের বুথ থেকে ক্রেতারা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে পিওএস, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস, কিউআর কোডের মাধ্যমে অথবা বুথে স্থাপন করা এটিএম মেশিন থেকে নগদ অর্থ তুলে হাট থেকে কেনা গরুর মূল্য পরিশোধ করতে পারবেন। পাশাপাশি হাটের হাসিলও দিতে পারবেন এই পদ্ধতিতে।