সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়: মহানায়ক নন, শিল্পী শিরোমণি

তিনি অপু? নাকি ফেলুদা? ভারতীয় বাংলা সিনেমায় মহানায়কের মুকুট হয়ত তার মাথায় ওঠেনি, তবে অনেক বোদ্ধার বিচারে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ভারতবর্ষের সেরা অভিনয়শিল্পীদেরই একজন।  

সাইমুম সাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Nov 2020, 12:04 PM
Updated : 15 Nov 2020, 01:27 PM

অভিনয়টা রক্তে থাকলেও তারুণ্যের প্রথমভাগে রূপালী পর্দা খুব একটা টানেনি তাকে, বরং চলচ্চিত্র নিয়ে নিজের ভাষাতেই ‘নাক উঁচু’ সৌমিত্রের মন মজে ছিল আবৃত্তি আর মঞ্চনাটকে।

ভারতীয় চলচ্চিত্রের দিকপাল সত্যজিত রায় সেই মনের জানালা খুলে দেন, তার হাত ধরেই হয় বড়পর্দায় অভিষেক। এরপরের গল্প- ‘এলাম, দেখলাম, জয় করলাম’।

কলকাতার বেলভিউ ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার দুপুরে এই দুনিয়ার রঙ্গমঞ্চকে বিদায় জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের কিংবদন্তী অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।

৮৫ বছরের জীবনে ছয় দশকের বেশি সময় কেটেছে অভিনয়ের ঘোরে। তিনশর বেশি চলচ্চিত্রে দর্শক দেখেছে তার দাপুটে উপস্থিতি।

তারপরও ‍শুরুর সেই ‘অপরাজিত’র তরুণ অপু আর বাঙালির একেবারে নিজস্ব গোয়েন্দা চরিত্র ‘ফেলুদা’ই তাকে বাঁচিয়ে রাখবে সব সময়। 

নদিয়ার কৃষ্ণনগরের আইনজীবী বাবা মোহিত কুমার চট্টোপাধ্যায় ও মা আশলতা চট্টোপাধ্যায় ছিলেন মঞ্চনাটকে সম্পৃক্ত। আশালতা ছিলেন স্থানীয় নাটকের দল ‘প্রতিকৃতি’র প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। সেই হিসেবে অভিনয় গুণ সৌমিত্রের জন্মসূত্রেই পাওয়া।

২০১৫ সালে ঢাকায় গঙ্গা-যমুনা নাট্যোৎসবে এসেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়

১৯৩৫ সালের ১৯ জানুয়ারি কৃষ্ণনগরেই তার জন্ম। পরিবারে ডাক নাম ছিল ‘পুলু’। বাড়ির বসার ঘরে নিয়মিত নাটকের মহড়া দেখে বেড়ে উঠলেও অভিনয়ের সঙ্গে তার আনুষ্ঠানিক যোগসূত্র তৈরি হয় আরও পরে।

কৃষ্ণনগরের সেন্ট জোনস বিদ্যালয়ের পাট চুকিয়ে কলকাতার সিটি কলেজে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক আর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর করেন সৌমিত্র। ছাত্রজীবনেই প্রখ্যাত অভিনেতা ও নির্দেশক অহীন্দ্র চৌধুরীর হাত ধরে মঞ্চনাটকে পা রাখেন তিনি।

তরুণ বয়সে আরেক বিখ্যাত অভিনেতা-নির্দেশক শিশির ভাদুড়ির নাটক দেখে মঞ্চের প্রতি ভালোলাগা আরও পোক্ত হয়। উইলিয়াম শেক্সপিয়রের ‘কিং লেয়ার’ অবলম্বনে নির্দেশক সুমন মুখোপাধ্যায়ের ‘রাজা লিয়র’ নাটকে নাম ভূমিকায় অভিনয় করে দর্শকদের মনে স্থায়ী আসন তৈরি নেন সৌমিত্র। অনেকের বিচারে এটিই তার সবচেয়ে প্রশংসিত মঞ্চনাটক।

আবৃত্তি ও নাটকের মঞ্চে বুঁদ সৌমিত্রের নিজের ভাষাতেই চলচ্চিত্র নিয়ে বেশ ‘নাক উঁচু’ স্বভাব ছিল তার। ফলে বাংলা সিনেমার জগৎ তাকে সেভাবে টানেনি।

তবে সত্যজিৎ রায়ের‘পথের পাঁচালী’ দেখে তার সেই ভাবনা পাল্টে যায়। সৌমিত্র তখন ভাবলেন, সিনেমাও তো করা যায়!

তখন অপু ট্রিলজির দ্বিতীয় চলচ্চিত্র ‘অপরাজিত’র জন্য অপু চরিত্রের অভিনয়শিল্পী খুঁজছিলেন সত্যজিৎ রায়। তার সহকারী নিত্যানন্দ দত্তের সঙ্গে সৌমিত্রের বন্ধুত্ব ছিল। বন্ধুর সঙ্গে সেই চলচ্চিত্রের জন্য অডিশনও দিতে গিয়েছিলেন সৌমিত্র। তবে চরিত্রের সঙ্গে সৌমিত্রের বয়স না মেলায় সেবার শিকে ছেঁড়েনি।

সত্যজিৎ রায় কিন্তু সৌমিত্রকে মনে রেখেছিলেন; ১৯৫৯ সালে নির্মিত অপু ট্রিলজির শেষ চলচ্চিত্র ‘অপুর সংসার’ এ তরুণ অপুর চরিত্রের জন্য তাকেই বেছে নিয়েছিলেন।

অপুর সংসারে সৌমিত্রের বিপরীতে অভিনয় করেন ১৩ বছর বয়সী শর্মিলা ঠাকুর। সেই সিনেমাতেই রূপালী পর্দায় অভিষেক ঘটে দুজনের।

সিগারেটের প্যাকেটে লেখা ‘খাওয়ার পর একটা করে, কথা দিয়েছ’র মত দৃশ্য আর সৌমিত্র-শর্মিলা জুটির রসায়ন দর্শকদের মনে এখনও অমলিন।

 

অপুর সংসার দর্শকমহলে দারুণ সাড়া ফেলার পর তাদের আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। একের পর চলচ্চিত্রে অভিনয় করে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।

সত্যজিতের ৩৪টি সিনেমার ১৪টিতেই অভিনয় করেছেন সৌমিত্র। অপু ছাড়াও ফেলুদা চরিত্রেও অভিনয় করে সমালোচকদের কাছে প্রশংসিত হয়েছেন।

সত্যজিতের সঙ্গে গাঁটছড়া বেশ শক্ত হলেও মৃণাল সেন, তপন সিনহা, তরুণ মজুমদার, গৌতম ঘোষ, ঋতুপর্ণ ঘোষ, অপর্ণা সেনদের চলচ্চিতেও সৌমিত্র নিজেকে অপরিহার্য করে তুলেছিলেন অভিনয়গুণে।

সাত পাকে বাঁধা, চারুলতা, বাক্স বদল, আকাশ কুসুম, মণিহার, কাঁচ কাটা হীরে, ঝিন্দের বন্ধী, অরণ্যের দিনরাত্রি, সোনার কেল্লা, জয় বাবা ফেলুনাথ, হীরক রাজার দেশে, ঘরে বাইরে, আবার অরণ্যের মত সিনেমার মধ্য দিয়ে সৌমিত্র স্থায়ী আসন করে নিয়েছেন দর্শকের হৃদয়ে।

সমকালীন আরেক কিংবদন্তি অভিনেতা উত্তম কুমারের সঙ্গে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের তুলনা এসেছে বারবার। অভিনয়ে কার চেয়ে কে বড়, সে তর্কে বহুদিন মশগুল থেকেছে ভক্তকুল।

অনেক আগেই পৃথিবীকে বিদায় জানানো উত্তম কুমার তার জীবদ্দশাতেই হয়ে উঠেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়ক। তাহলে সেই রূপালী ভূবনে সৌমিত্রর স্থান কোথায়?

চলচ্চিত্রে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অভিষেক হয় সত্যজিত রায়ের অপুর সংসর দিয়ে

এই প্রশ্নের একটি সহজ উত্তর দিতে চেষ্টা করেছেন আজকের টালিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। তার পরিচালনাতেই তৈরি হচ্ছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বায়োপিক ‘অভিযান’। লকডাউন ওঠার পর তাতে অভিনয়ও করেছেন সৌমিত্র।

আনন্দবাজারে সৌমিত্রকে নিয়ে প্রকাশিত এক নিবন্ধে পরমব্রত লিখেছেন কোনো এক সন্ধ্যায় তাদের আড্ডার কথা।

“আমি কিউবা ঘুরেছি। যদিও সে দেশে কেউ খুব একটা ঘোরার জন্য যায় না। তো জেঠুকে যখন বললাম, কিউবা ঘুরে এসেছি, উনি জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী দেখলি ওখানে?’ আমার সবটা দেখা জেঠুকে শুনিয়েছিলাম। শেষে বলেছিলাম, ‘জানো জেঠু, আমার মনে হয়, উত্তমকুমার বাংলা সিনেমার চে গেভারা, আর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় হচ্ছেন ফিদেল কাস্ত্রো।’

“জেঠু বললেন, ‘কেন? এমনটা কেন মনে হয় তোর?’ আমি বললাম, দেখো, উত্তমকুমার যখন তার খ্যাতি ও সাফল্যের চূড়ায়, তখন মারা গিয়েছিলেন। ফলে তার সেই নায়ক ইমেজটা থেকে গিয়েছে। তাকে আর অন্য কিছুর মুখোমুখি হতে হয়নি। বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির এই দশা, সিরিয়াল- দেখতে হয়নি কোনো কিছুই। ঠিক যেমন রাজনীতিতে চে।

“আর ফিদেল? তাকে কত কিছু দেখতে হয়েছে। রাজনীতির পঙ্কিল অধ্যায় তো তাকেই কাটাতে হয়েছে। ঠিক তোমার মত। আসলে দীর্ঘ জীবন তোমায় আর ফিদেলকে এটা দেখিয়ে দিয়েছে। তাই উত্তম কুমার আমার কাছে বাংলা সিনেমার চে, আর তুমি ফিদেল।”

সিনেমার সেটে সত্যজিত রায়ের সঙ্গে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ছবি: নিমাই ঘোষ/বিবিসি

মঞ্চ নাটকের সৌমিত্র আর সিনেমার সৌমিত্র কী আলাদা মানুষ? নাট্যকার বিভাস চক্রবর্তী তার এক নিবন্ধে বিষয়টি আলাদা করেছেন এভাবে-

“সমসাময়িক সাধারণ রঙ্গালয়ের উচ্চকিত অভিনয় থেকে সৌমিত্রদা নিজেকে আলাদা করতে পেরেছিলেন। হয়তো সচেতন ভাবেই তিনি এই পথটা বেছে নিয়েছিলেন। এটাই যে থিয়েটারের একমাত্র মার্গ, তা বলতে চাইছি না। কিন্তু এটা একটা সঠিক পথ, একটা বিশিষ্ট ধারা। তিনি এটাকে রপ্ত করতে পেরেছিলেন। এখানেই মঞ্চাভিনেতা-পরিচালক সৌমিত্রদার সার্থকতা, সাফল্য।

“এই ‘স্বাভাবিক’-এর মধ্যে থেকে শিল্প সৃজন খুব সহজ নয়। সিনেমায় তিনি পেশাদার হিসেবে কাজ করেছেন বেশি। অনেক ছবিতে কাহিনি-চিত্রনাট্য-চরিত্র স্বাভাবিকতার ধার ধারে না। মুম্বই ঘরানার মূলধারার অনেক অভিনেতা সেই ব্যাপারটাকে বিশ্বস্ত করে তুলতে পারেন। কিন্তু এমন ক্ষেত্রে মনে হয় সৌমিত্রদার অসুবিধে হত।”

চলচ্চিত্রে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার ছাড়াও বেশ কয়েকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ফ্রান্স সরকার তাকে ‘লিজিয়ন অব দ্য অনার’ পদকে ভূষিত করেছে। ২০০৪ সালে ভারত সরকার তাকে দিয়েছে ‘পদ্মভূষণ’ খেতাব।

অভিনয় খ্যাতি এনে দিলেও সৌমিত্র কবিতা আর আবৃত্তি ছাড়েননি একদিনের জন্যও। সমানতালে চলেছে লেখালেখি, মঞ্চ নাটকের নির্দেশনা। ‘টিকটিকি’, ‘নামজীবন’, ‘রাজকুমার’, ‘নীলকণ্ঠ’ তারই লেখা নাটক।

‘সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ কবিতা’, ‘মধ্যরাতের সংকেত’, ‘হায় চিরজল’, ‘জন্ম যায় জন্ম যাবে’, ‘যা বাকি রইল’, ‘হে সায়ংকাল’- তার লেখা কবিতার বইয়ের কয়েকটি।

আবৃত্তিতে সবসময়ই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জীবনানন্দ দাশের কবিতা তাকে টেনেছে। তাদের কবিতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কণ্ঠে পেয়েছে ভিন্নমাত্রা।

সৌমিত্রকে অন্যভাবে দেখার সুযোগ হয়েছে চলচ্চিত্র পরিচালক সন্দীপ রায়ের; তিনি সত্যজিৎ রায়ের একমাত্র ছেলে।

আনন্দবাজারে এক নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, “গলার স্বর, কথা বলার ভঙ্গি— সব কিছু প্রথম থেকেই অসাধারণ ছিল, ওকে কোনো চেষ্টাই করতে হয়নি, তা কিন্তু একেবারেই নয়। ‘অপুর সংসার’-এর সময় বাবা বলতেন, ওর গলার আওয়াজ বড্ড পাতলা। ও মা! সেই সৌমিত্রকাকু একজন দক্ষ আবৃত্তিকার হয়ে উঠলেন!

“এই যে নিজেকে তৈরি করার বিষয়টা, এটাই আমায় আশ্চর্য করত। গলার আওয়াজ নিয়ে নানা চর্চা, বিভিন্ন দিকে তার শ্রম তাকে কেবলমাত্র একজন অভিনেতা নয়, একজন শিল্পী হয়ে ওঠার দিকে নিয়ে গেল! নিজের সঙ্গে নিজের চ্যালেঞ্জ ছিল ওর। কিছু হয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জ। “

ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, “তার কণ্ঠস্বরটিও ছিল আলাদা করে বলার মতো। কাজি সব্যসাচীর ভরাট উদাত্ত কণ্ঠস্বর যেমন তাকে আলাদা করে চিনিয়ে দিত, শম্ভু মিত্রকে যেমন চিনিয়ে দিত তার সামান্য সানুনাসিক কণ্ঠস্বর আর বলার ভঙ্গি, তেমনই সৌমিত্রদাকে চিনিয়ে দিত তার একেবারে নিজস্ব কণ্ঠস্বর আর নিজস্ব পাঠভঙ্গি।

“তার কণ্ঠস্বরটি পুরোপুরি আলাদা। আমার খুব ভাল লাগত তার গলায় জীবনানন্দের কবিতা। ধীরে ধীরে টানতে লাগল তার বলা অন্যান্য কবিতাও। রবীন্দ্রনাথের কবিতা, রবীন্দ্র-পরবর্তী কবিদের কবিতা এবং এখনকার সমকালীন কবিদের কবিতা। বুঝলাম একটা নিজস্ব বোধের জায়গা থেকে, বিশ্বাসের জায়গা থেকে তিনি কবিতা পড়তেন।”

পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেকের থেকে সৌমিত্র নিজেকে আলাদা করতে পেরেছিলেন, তার একটি বড় কারণ ছিল তার বৌদ্ধিক অভিযাত্রা, পঠন-পাঠন, নিজস্ব সৃষ্টিজগৎ আর সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় সাবলীল বিচরণের ক্ষমতা।

রাজনৈতিক ভাবনাতেও নিজের কাছে তার নিজের অবস্থান ছিল স্পষ্ট। ধর্মের নামে গোঁড়ামি আর বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে তিনি বরাবরই উচ্চকণ্ঠ ছিলেন।

কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়ার (মার্ক্সবাদী) সমর্থক সৌমিত্র ছিলেন ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির কট্টর সমালোচকদের একজন। বিভিন্ন সময় লেখালেখিতেও তার রাজনৈতিক ভাবনার কথা উঠে এসেছে।

গত দুর্গা পূজার সময় সৌমিত্র যখন হাসপাতালে, সিপিএমের মুখপত্রের শারদ সংখ্যায় প্রকাশিত হয় তার শেষ লেখা, যেখানে ভারতের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নিজের মতামত তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন।

“ভাবলে অবাক লাগে, যার আমলে ২০০২ সালে গুজরাটে ভয়ঙ্কর দাঙ্গা হল, সেই তিনিই আজ ভারতবর্ষের মসনদে!  ভারতবর্ষের মানুষ এদের সহ্য করছেন, তাদেরই ভোট দিয়ে আবার জেতাচ্ছেন। তার একটা বড় কারণ আমার মনে হয়, মানুষ শক্তিশালী কোনো বিকল্প পাচ্ছেন না বা বুঝে উঠতেই পারছেন না।”  

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ভাষায়, “বামপন্থীদের নিয়ে সংশয় থাকলেও এখনও এটিই বিকল্প পথ।”

সিপিআইএম নেতা, ভারতের ইতিহাসের দীর্ঘমেয়াদে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানো জ্যোতি বসুর সঙ্গেও সখ্য ছিল সৌমিত্রর। ছেলেবেলায় কাকার হাত ধরে জ্যোতি বসুর বিভিন্ন সভায় হাজির হওয়ার স্মৃতি তিনি বিভিন্ন লেখায় তুলে এনেছেন।

২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পালা বদলের পর বাম বুদ্ধিজীবীরা যখন রঙ পাল্টে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শিবিরে (তৃণমূল কংগ্রেস) যোগ দিচ্ছিলেন, সৌমিত্র সেই ভিড়ে নিজেকে হারাননি।

সত্যজিৎ রায়ের 'অশনি সংকেত' চলচ্চিত্রে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাংলাদেশে ববিতা

সৌমিত্রের স্ত্রী দীপা চট্টোপাধ্যায়ও সংস্কৃতিকর্মী। মেয়ে পৌলমী বসু মঞ্চনাটকের নির্দেশক; মেয়ের নির্দেশনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘কালমৃগয়া’, ‘ফেরা’সহ কয়েকটি নাটকে অভিনয় করেছেন সৌমিত্র।

ছেলে সৌগত চট্টোপাধ্যায় একজন কবি; প্রচারবিমুখ মানুষটি ‘যে তিমির কবিতার’সহ বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নাতি (পৌলমীর ছেলে) রণদীপ বসু টালিগঞ্জের উদীয়মান অভিনেতাদের একজন। নির্মাতা ও গায়ক অঞ্জন দত্ত পরিচালিত ‘দ্ত্ত ভার্সেস দত্ত’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে পরিচিতি পাওয়া রণদীপ পরবর্তীতে ‘লুডো’, ‘ফ্যামিলি অ্যালবাম’, ‘মেসি’সহ আরও কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন।

সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ চলচ্চিত্রে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনয় করার সুযোগ হয় বাংলাদেশে সত্তর ও আশির দশকের জনপ্রিয় নায়িকা ববিতার।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “তার মতো শিল্পীর মৃত্যু হয় না; দর্শকদের হৃদয়ে তিনি চিরকাল ছিলেন, আছেন, থাকবেন।”

[প্রতিবেদনটি তৈরি করতে সহযোগিতা করেছেন কাজী সাজিদুল হক]