মৃত্যুর মাস দেড়েক আগে গ্লিজকে সবশেষ পূর্ণাঙ্গ একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন শাফিন আহমেদ, যা প্রকাশিত হয় ২৮ জুন। নতুন দল নিয়ে পথচলা, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সংস্কৃতিগত পরিবর্তন, ব্যান্ডসংগীতের সেকাল-একাল নিয়ে তিনি খোলামেলা কথা বলেছিলেন। প্রতিবেদনটি পুনঃপ্রকাশ করা হল।
Published : 28 Jun 2024, 09:31 AM
‘মাইলস’ নামটির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সংগীত তারকা শাফিন আহমেদ গত তিন বছর ধরে পথ চলছেন ‘ভয়েস অব মাইলস’ নামের ব্যান্ড দল নিয়ে। নতুন করে পথচলার গল্প, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সংস্কৃতিগত পরিবর্তন, ব্যান্ডসংগীতের সেকাল-একাল নিয়ে এক সন্ধ্যায় শাফিন আহমেদের সঙ্গে তার বনানীর স্টুডিওতে কথা হয় গ্লিটজের।
গ্লিটজ: ‘ভয়েস অব মাইলস’ ব্যান্ড সম্পর্কে জানতে চাই।
শাফিন: ‘ভয়েস অব মাইলস’ এর তিন বছর হল। অভ্যন্তরীণ কিছু সমস্যা থাকার কারণে ‘মাইলস’ থেকে সাময়িকভাবে সরে রয়েছি। সমস্যা নিরসন না হওয়া পর্যন্ত, মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত তাদের সঙ্গে আমাকে পাওয়া যাবে না। সেই জায়গা থেকে নিজের মত করে অন্য লাইনআপে কাজ করার যে উদ্যোগ নিয়েছি, সেটারই প্রতিফলন হচ্ছে ‘ভয়েস অব মাইলস’। শুরুর দিকে কোনো নাম ব্যবহার করিনি। শুধু শাফিন আহমেদ নামেই যাত্রা করেছিলাম। আমার ইচ্ছে ছিল একসঙ্গে কাজ করতে না পারলে ‘মাইলস’ নামটা ব্যবহার না করাই ভালো। কিন্তু অপরপক্ষ 'মাইলস' নামটি ব্যবহার করা থেকে বিরত হয়নি। অর্থাৎ তারা মাইলস ব্যবহার করে আসছিল আমার অনুরোধ উপেক্ষা করে। যার কারণে এক পর্যায়ে আমার সিদ্ধান্ত নিতে হল যে, 'মাইলস' নামটা তো আমারই, অনেকাংশে আমারই হাতে গড়া। সুতরাং আমি এটাকে পুরোপুরি ছেড়ে না দিয়ে নামকরণ করলাম ‘ভয়েস অব মাইলস’।
গ্লিটজ: ‘ভয়েস অব মাইলস’ নতুন কী আয়োজন নিয়ে আসছে?
শাফিন: ‘ভয়েস অব মাইলস’ অনেক লাইভ কনসার্ট করছে। দেশে ও দেশের বাইরের কনসার্ট, দুই ধরনের ব্যস্ততাই আছে। আগের গানগুলোর সঙ্গে এখনকার স্টেজের ভার্সনগুলো ভিন্ন, স্টেজে ভিন্নভাবে গানগুলো করা হচ্ছে। আমার এত বছরের এতগুলো গান, সেইগুলো পারফর্ম করা হচ্ছে, তবে তাতে সংযোজন করা হচ্ছে। ভিন্নভাবে পরিবেশন হচ্ছে। এই লাইনআপে একজন ফিমেল ভয়েসও রয়েছে; অন্তরা রহমান, যে বেশ ভালো গায়৷ খুব সুযোগ্য একজন গায়িকা হিসেবে আমার ব্যান্ডে গান গাইছেন। ‘ভয়েস অব মাইলস’ এর গানগুলো নতুন কালার বা ভিন্নভাবে মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে। পাশাপাশি নতুন গান রেকর্ড করতে শুরু করেছি৷ আশা করছি কিছু নতুন গান শিগগিরই উপহার দিতে পারব শ্রোতাদের।
গ্লিটজ: আগের দিনে ব্যান্ড সংগীতের সঙ্গে এখনকার পার্থক্য কেমন?
শাফিন: কিছুটা পার্থক্য তো খুবই লক্ষণীয়। আগে আমাদের মধ্যে কনসার্টের যে আবেদনটা ছিল শুরুর দিকে, যে আকর্ষণ, আমাদের পথচলাতে যে ব্যান্ডগুলো ছিল, সমসাময়িক সেই ব্যান্ডগুলো, সবার মধ্যে একটা উচ্ছ্বাস ছিল। ব্যান্ডগুলোর গড়ে ওঠা, বেড়ে ওঠা, নতুন নতুন জিনিস যোগ হত, ওপেন এয়ার কনসার্টে সবাই তখন খুব তৎপর ছিল। সকলের মধ্যে একটা ভ্রাতৃত্ব ছিল, ব্রাদারহুড ছিল, ইউনিটি ছিল। এখন সেটা নেই। সবকিছু শেয়ার করা , অভিজ্ঞতাগুলো একসঙ্গে অর্জন করা, আমাদের মধ্যে বন্ডিং ছিল ভালো। সেটা স্টেজের পিছনে গল্প দিয়ে, আড্ডার মধ্যে বোঝা যেত, আমাদের মধ্যে একটি সুন্দর প্রতিযোগিতা ছিল। কে কার আগে যাবে, সে সুন্দর বাজিয়েছে, তাহলে আমারটা ভালো করতে হবে, এই ধরনের ইতিবাচক প্রতিযোগিতা ছিল। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটা ছিল, সবাই সবকিছু শেয়ার করত, একে অপরের শুভাকাঙ্ক্ষী ছিল। ওই জিনিসটা এখন নষ্ট হয়ে গেছে। এখন অনেক বেশি কমার্শিয়াল হয়ে গেছে সবাই। এখন অন্যদের কীভাবে দাবিয়ে রেখে কাজ আদায় করে নেবে, একই জায়গা থেকে, একই মার্কেট থেকে, নিজে টেকার জন্য অন্যের ক্ষতি করার মনোভাব চলে এসেছে। বাজে কম্পিটিশন চলে এসেছে। আগের মত বন্ডিং নেই। কেউ কারো ভালো চায় না এখন। সামনে একরকম ব্যবহার পেছনে একরকম। ব্রাদারহুড নেই।
গ্লিটজ: এখন গানের প্ল্যাটফর্ম বদলে ডিজিটাল হয়ে গেছে। এ মাধ্যমে সাড়া কেমন পান?
শাফিন: নতুন এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা সবার কাছেই খুব সহজ। হাতের কাছে ইন্টারনেট কানেকশন যেখানেই আছে, সেখানেই পাওয়া যাচ্ছে। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে ভিন্ন ধরনের শ্রোতা আছে। কেউ ট্র্যাডিশনাল মিউজিক পছন্দ করে, কেউ ফোক মিউজিক, কেউ ব্যান্ড মিউজিক, একেকজনের একেক ধরনের পছন্দ। এখন যারাই আমরা গান রিলিজ করছি, আমাদের কিন্তু ইউটিউব, স্পটিফাই এসব জায়গাতেই গান রিলিজ করতে হচ্ছে। সেখানে শ্রোতারা তাদের পছন্দমত গান টেনে নিচ্ছেন। এই সাড়া পাওয়ার বিষয়টা এখন দুটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এক হচ্ছে শ্রোতাদের পছন্দ এবং আরেক হচ্ছে প্রচারের জন্য টাকা খরচ করলে সেটারও সাড়া মেলে। অনেক কোম্পানি আছে তারা গান প্রচারের জন্য অনেক টাকা খরচ করে গানের ভিউজ বাড়ায়। সেটা সব শিল্পীর জন্য সম্ভব না। আমি যদি রেগুলার গান রিলিজ করি, সেটার পেছনে ভিউজ বাড়ানোর জন্য খরচ করা তো সম্ভব না। আমার কাছে মনে হয়– মিলিয়ন প্লাস ভিউজ, তাৎক্ষণিকভাবে এটা সবার মুঠোয় চলে আসছে। আমি সেই খেলার মধ্যে নেই। আমি যে সময় থেকে মিউজিক করছি, সে সময় এ ব্যাপারগুলো ছিল না। আমি এই ব্যাপারটার সঙ্গে অভ্যস্ত না। আমরা সবসময় মিউজিক, গান তৈরি করে এসেছি। আর যারা আমাদের কাছ থেকে গানগুলো নিয়ে বাজারজাত করত, তাদের কাজ ছিল কীভাবে গানের প্রচার, প্রসার বাড়াবে। শিল্পী হিসেবে আমি মনে করি না এটা আমার কাজ৷ আমি শিল্পী হিসেবে এখনো গান রিলিজ করলে সেটা অর্গানিক রাখতে চেষ্টা করি। প্ল্যাটফর্মে উঠে থাকলে যেটা সুবিধা, সেটা হল একবার উঠে গেলে তা স্থায়ীভাবে থেকে যাবে। গান শেষ করে ইন্টারনেটে তুলে রাখাটা একটা বড় কাজ এখন। সেইদিক থেকে গানের সাড়া অর্গানিক হলে, ভালো হলেই সন্তুষ্ট। এর পেছনে টাকা পয়সা খরচ করে ভিউজ বাড়ানোর পক্ষপাতী আমি না।
গ্লিটজ: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সংস্কৃতিগত পরিবর্তন এসেছে, যেমন একটি গান আপনি প্লে করলেন, ইউটিউব, স্পটিফাই কিন্তু আরেকটা গান নিজে থেকেই সাজেস্ট করে। সেখানে কোনো একক শিল্পীর গান শোনা যায় না। সবার গানই শোনা যাচ্ছে। এই পরিবর্তনটা কীভাবে দেখেন?
শাফিন: এ বিষয়টা খুব লক্ষণীয়, কিন্তু আমাদের এটা পরিবর্তন করার সুযোগ নেই। আগে শ্রোতাদের হাতে অপশন ছিল যখন ক্যাসেটে, সিডিতে গান ছিল, তখন তারা বেছে বেছে নিজের পছন্দের গানটা প্লেয়ারে দিত। হয়ত এক ঘণ্টা ধরে সেটাই শুনত। এই ক্যাসেটে যত গান, এই অ্যালবামে যত গান। এখন এই অপশনটা নাই। অনেকাংশেই এই প্ল্যাটফর্মগুলোই আমাদের গান শোনাচ্ছে। আপনি যদি একটা গান নিজে পছন্দ করে শুনে থাকেন, তারপর প্ল্যাটফর্ম সাজেস্ট করবে আপনি এই গানগুলো শোনেন। অটোমেটিক লোড হচ্ছে, অটোমেটিক প্লে হচ্ছে। চলতে চলতে সবাই যে গানগুলো শুনছে, অনেকেই তা নিজে থেকে পিক করেনি, ইউটিউব শোনাচ্ছে। আগের থেকে গান শোনার এই পদ্ধতিটা অনেকাংশেই বদলে গেছে। কেউ এখন মিউজিক (ওউন) করে না, মিউজিক কিনে শোনে না। গানের কালেকশন রাখার ব্যাপারটা আর নেই। ইন্টারনেটে ভাসছে, সেখান থেকে স্ট্রিমিং হচ্ছে। আগে মানুষ গর্ব করে দেখাত আমার কাছে গানের এই এই সিডি আছে, অ্যালবাম আছে। এখন সেটা করতে হচ্ছে না। এখন সবকিছু একটা (ক্রাউড) তৈরির মত, সেখান থেকে কটা গান শুনলাম, সেটা কার গান, কোন অ্যালবাম সেটাও খেয়াল করে না অনেকে। ইউটিউব, ফেইসবুক, টিকটিক এই প্ল্যাটফর্মগুলো গান সাজেস্ট করার বড় জায়গা এখন। আগের সময় থেকে গান শোনার এই পদ্ধতিটা একেবারেই পরিবর্তন হয়ে গেছে।
গ্লিটজ: সেক্ষেত্রে আর্থিকভাবে লাভজনক কোন সময়টা ছিল?
শাফিন: আমাদের একটি গান এখন খুব বেশি সফল হলে, খুব বড় বড় ভিউজ থাকলে তাহলে হয়ত কিছু ন্যায্য আয় হতে পারে। কিন্তু ব্যাপারটা খুব সাময়িক। একরকম হয় না। আগে কিন্তু একটাই পদ্ধতি ছিল গানগুলো বিক্রি করে দেওয়া। গানগুলো দিয়ে দেওয়া। সেটার বিনিময়ে অর্থ আসত। এখন কোনো কোনো সংস্থার সঙ্গে সেটা সম্ভব। গান তৈরি করে দিয়ে দিলাম, কিন্তু তাতে কিন্তু আমার রাইটসটা আমি হারাচ্ছি। আরেকজনকে বিক্রি করে দিলাম। তবে আমার মনে হয় নিজের অধিকার নিজের কাছে রাখা, নিজের প্ল্যাটফর্ম নিজের তৈরি করা ভালো। তবে এখন একজন শিল্পীর সব করতে হয়। মার্কেটিং, প্রচার সবই শিল্পীর উপরে এসে পড়ে। সেক্ষেত্রে গান যদি অতিমাত্রায় সফল হয়, তাহলে কিছু টাকা পাওয়া যায়। কিন্তু স্ট্রিমিংয়ের যে রেট, সেটা যদি চিন্তা করি, স্পটিফাই, ইউটিউব থেকে যেটা দেওয়া হয়ে থাকে, সেটা খুবই খুবই অল্প। সেটা আগের তুলনায় কিছুই না। এক হাজার বার গান শুনলে যে রেট দাঁড়ায়, সেটা শুনলে অনেকেই অবাক হবে এই মূল্য দিয়ে কী হবে! খুব বড়ভাবে সাড়া ফেলতে পারলে হয়ত আর্থিকভাবে একটু লাভবান হওয়া যায়। তবে সব গান মিলিয়ন বার স্ট্রিমিং হবে সেটা ভাবাটাও ভুল। তাই আগের তুলনায় যে আয়টা আসে, সেটা খুবই অল্প এবং আমাদের জন্য কিছু না৷
গ্লিটজ: বাংলাদেশে ব্যান্ড মিউজিকের নিজস্ব ওয়েবসাইট নেই, যেখানে শাফিন আহমেদ বা ‘ভয়েজ অব মাইলস’ লিখে সার্চ দিয়ে সব ধরনের তথ্য এবং আপডেট পাওয়া যাবে, এই ঘাটতিটা কীভাবে দেখেন?
শাফিন: ওয়েবসাইট থাকা উচিত। এখন তো সোশাল মিডিয়ায় একাধিক প্ল্যাটফর্ম রয়েছে- ফেইসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টুইটার অনেককিছুই, সেখানে সব ধরনের আপডেট তুলে ধরা হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ফেইসবুকটা একটা বিশাল বড় প্ল্যাটফর্ম। ফেইসবুকে একটা পেইজ থাকা মানে অনেকেই সেটাকে নিজের ওয়েবসাইট মনে করে বা চিন্তা করে। এটার সুবিধা-অসুবিধা দুটোই আছে। ফেইসবুকে আগের পোস্টগুলো সহজে খুঁজে পাওয়া যায় না। আমি হয়ত রেগুলার পোস্ট দিতে পারি, রেগুলার আপডেট তুলে ধরতে পারছি৷ কিন্তু মানুষের তো এত ধৈর্য নেই যে এক বা চার বছর আগের পোস্ট খুঁজে দেখবে। সেইদিক থেকে ওয়েবসাইট থাকা দরকার। এখানে সবকিছু সাজিয়ে নেওয়া, শিল্পীদের সব তথ্য দেওয়া উচিত৷ যেন ভিজিটররা সহজেই তাদের পছন্দের সেকশনে চলে যেতে পারে। আমার ওয়েবসাইট আছে শাফিন আহমেদ নামেই ডোমেইন পাওয়া গেছে। ওয়েবসাইট শুধু খুলে রাখলেই হয় না, কাজের দায়িত্ব বাড়ে, উন্নয়ন দরকার। সেখানে গান রিলিজের আপডেট থেকে সব ধরনের আপডেট থাকা দরকার, কনসার্ট, ফটো গ্যালারি, সব ধরনের তথ্য থাকা দরকার। সুযোগ রয়েছে, এগুলোও হয়ত খুব দ্রুতই হবে। একজন শিল্পীর জন্য ওয়েবসাইট থাকা উচিত, সেখানে অনেক কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
গ্লিটজ: আগে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে অনেক ব্যান্ড শো হত, এখন হয় না কেন? আর্থিক কোনো কারণে কী আপনারা ফিরিয়ে দেন? নাকি আগের মত প্রস্তাব আসে না?
শাফিন: বেশি পেছন দিকে না যাই, অনেক বছর আগে কিন্তু টিভিতে লাইভ পারফরম্যান্স ছিল না। আজ থেকে ৫ বা ১০ বছর আগেও লাইভ ব্যান্ড শো যেগুলো হত, সেগুলো কিন্তু খুব জনপ্রিয় ছিল৷ টিভি চ্যানেলগুলো সপ্তাহে এক দুইবার এই প্রোগ্রামের আয়োজন করত। এক প্রকার হিড়িক পড়েছিল সে সময়, জনপ্রিয়তা ছিল। সেটা এখন কমে গেছে বা পুরো জিনিসটাই পড়ে গেছে। এসবের মধ্যে টিভি বাজেটের কথা অবশ্যই চলে আসে। বড় শিল্পীদের বা নামকরা ব্যান্ডদের ডাকতে গেলে যে বাজেট দরকার হবে, খরচ দরকার, সেটা এখন আর টিভি চ্যানেলগুলো করতে চায় না। এখন তাদের বাজেটের মধ্যে নতুন শিল্পীদের নিয়ে আসে। তারাই পুরাতন জনপ্রিয় গানগুলো গায়৷ টিভিতে সেই বাজেট নেই বলে হয়ত তারা আমাদের কাছে আসতে সংকোচ বোধ করে। তাছাড়া টিভির এই শোগুলোর স্ট্যান্ডার্ড ড্রপ করেছে। তারা হয়ত জানে এটার পেছনে যে পারিশ্রমিক দেওয়া দরকার সেটা হয়ত তাদের কাছে নেই। তাই আর ডাকে না। প্রোগ্রামগুলো আর হয় না।
গ্লিটজ: নব্বই দশকে যেমন ওপেন এয়ার কনসার্ট হত, সেটা কি কমেছে? নাকি আগের তুলনায় বেড়েছে?
শাফিন: আগের থেকে অনেক বেশি কনসার্ট হচ্ছে এখন, অনেক বেড়েছে। আগে কম হত বলে প্রচার বেশি হত, সবার মধ্যে অন্য ধরনের উন্মাদনা কাজ করত। নব্বই দশকে ওপেন এয়ার কনসার্ট বলতে খোলা বড় মাঠে টিকেট কেটে অনেক জায়গা নিয়ে, অনেক ভিড়ে কনসার্ট হত। কিন্তু সেটা হাতেগোনা কয়েকটা। সেটায় একটা রোমাঞ্চকর ব্যাপার ছিল। শ্রোতাদের জন্যও নতুন ছিল, আমাদের জন্যেও। সবাই অপেক্ষা করত। আমরাও অপেক্ষায় থাকতাম। বিশাল সংখ্যক দর্শক হত। বেশিরভাগ জায়গায় ঘোষণা দিয়ে কনসার্ট হত। তখন শৃঙ্খলা থাকত। এখনও প্রতিনিয়ত কনসার্ট হচ্ছে। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি- যে আনন্দ উৎসব করছে সবই কনসার্টের মাধ্যমে। যার কারণে দেশের সমস্ত ব্যান্ড, শিল্পীরা খুব ব্যস্ত থাকে শো নিয়ে।
গ্লিটজ: চলতি বছর প্রকাশিত ‘পথিকার’ নামে আপনার জীবনীগ্রন্থ সম্পর্কে জানতে চাই।
শাফিন: তিন বছর আগে আমার মনে হয়েছে এবার আমার আত্মজীবনী লেখা প্রয়োজন। সে চিন্তা থেকেই এগোতে এগোতে কাজটি সম্পন্ন হয়েছে এ বছর। বইটার মধ্যে আমি অনেককিছুই বলেছি, আমার ব্যক্তিগত জীবন থেকে শুরু করে মিউজিক জীবনের ক্যারিয়ারের কথা সবই রয়েছে। আমার এই গল্প লিখেছে সাজ্জাদ হুসাইন। ‘পথিকার’ নামকরণের পেছনেও গল্প রয়েছে। এটা খুঁজে বের করতে হলেও বইটা পড়া দরকার। অনেক গল্প আছে। আমি সেখানে কিছু ছবি ব্যবহার করেছি যেগুলো খুব রেয়ার।
গ্লিটজ: 'মাইলস'কে মিস করেন?
শাফিন: না, আমার মিস করার সুযোগ নেই। আমি মনে করি, আমি যেসব কারণে সেখানে থাকতে পারিনি, কাজের আগ্রহ পেলাম না, সেগুলো খুব জোরালো কারণ এবং অনেক বড় বড় কারণ। তাই যা করেছি, খুব চিন্তাভাবনা করেই করেছি এবং গান, মিউজিক এমন একটা বিষয়ে যাদের সঙ্গে কাজ করব, যাদেরকে সাথে নিয়ে চলব, তাদের সঙ্গে সম্পর্কটা আনন্দদায়ক হওয়া উচিত। শুধু উচিত না; দরকার, প্রয়োজন। তা না হলে এতটা সময় কাটানো যায় না। দর্শক হয়ত একটা কনসার্টে দেখবে। কনসার্টের পেছনে আগে ১০ দিনের একটা রিহার্সাল থাকে। সেটা সঠিক মানুষের সঙ্গে হওয়া প্রয়োজন। আর এটা না হলেই ব্যান্ডদল ভেঙে যায়। সমস্যার সমাধান পাওয়ার জন্যই এ পদক্ষেপ। আমার যে অধিকার, পাওনা, কার সঙ্গে কি ধরনের চুক্তি হচ্ছে সেটা জানার রাইটস, পারফর্ম করার রাইটস, রয়্যালটির রাইটস, সেই বিষয়গুলো বড় বিষয়। এই সমস্যাগুলো সমাধান না হওয়া, একে অপরের সঙ্গে ব্যবহার ঠিক না থাকলে একসঙ্গে কাজ করা যায় না। এক কথায় যেখানে সম্মান নেই সেখানে না যাওয়াই ভালো।