মিসির আলিকে নিয়ে আশির দশক থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে নাটক এবং সিনেমা বানানো হয়েছে।
Published : 23 Jul 2024, 10:41 PM
একার জীবন কাটিয়ে দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক, ভগ্নস্বাস্থ্য এবং বারবার অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ঠাঁই নিতে হয় তাকে। মনোবিজ্ঞানের সেই শিক্ষকের বুদ্ধি কিন্তু ক্ষুরধার। কখনো তিনি কট্টর যুক্তিবাদী, যিনি কী না বিজ্ঞানের সত্যের বাইরে কিছুই বিশ্বাস করেন না। আবার কখনো এই মানুষটি প্রকৃতির বিপুল রহস্যের বিষয়ে নিশ্চুপ থাকেন, যেন পরাস্ত তিনি। এমন একটি চরিত্র যে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে উঠতে পারে, নন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ূন আহমেদের ‘মিসির আলি’ তার উদাহরণ।
হুমায়ূনের এই চরিত্রটি কেবল দুই মলাটেই বন্দি হয়ে থাকেনি। মিসির আলিকে নিয়ে আশির দশক থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে নাটক এবং সিনেমা বানানো হয়েছে।
এসব নাটক-চলচ্চিত্রে মিসির আলি হয়ে দর্শকের সামনে হাজির হয়েছেন প্রয়াত অভিনেতা আবুল খায়ের, আবুল হায়াত, আশীষ কুমার লৌহ, শতাব্দী ওয়াদুদ, আশীষ খন্দকার, হুমায়ুন ফরীদি, জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় এবং চঞ্চল চৌধুরী।
হুমায়ূনের ১২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে পাঠকপ্রিয় চরিত্র ‘মিসির আলি’ নির্মাণের স্মৃতি, অভিনয় অভিজ্ঞতা এবং লেখকের সঙ্গেও বিশেষ স্মৃতি জানতে গ্লিটজ কথা বলেছে অভিনেতা আবুল হায়াত, পরিচালক অনিমেষ আইচ, অভিনেতা শতাব্দী ওয়াদুদ এবং আশীষ খন্দকারের সঙ্গে। তাদের কথায় উঠে এসেছে হুমায়ূন এবং তার সৃষ্টি মিসির আলির কিছু গল্প।
প্রথম নাটকে আবুল হায়াত, হুমায়ূন বললেন ‘এটা আমার মিসির আলি না’
১৯৮৭ সালে নাটকে মিসির আলির প্রথম আবির্ভাব হয় অভিনেতা আবুল হায়াতের মাধ্যমে। মুস্তাফিজুর রহমানের পরিচালনায় 'অন্য ভুবনের সে' নাটকটি প্রচার হয়েছিল বিটিভিতে। এর দুবছর পরে মিসির আলি নিয়ে মুস্তাফিজুর রহমানকে ফের নির্মাণ করতে হয়েছে 'অন্য ভুবনের ছেলেটা' নামের আরেকটি নাটক। দ্বিতীয়বারও একই চরিত্রে অভিনয় করেছেন আবুল হায়াত। নাটকটি দ্বিতীয়বার নির্মাণের পেছনে ছিল বিশেষ কারণ। সেই কারণ গ্লিটজকে জানান বর্ষীয়ান অভিনেতা আবুল হায়াত।
'অন্য ভুবনের সে' নাটকের স্মৃতি হাতড়ে আবুল হায়াত বলেন, “আমি ও নির্মাতা দুজনে মিলে চিন্তাভাবনা করে নাটকে মিসির আলিকে ফুটিয়ে তুলি। প্রচারের পর বেশ প্রশংসা এসেছিল। কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ বলে ফেললেন, 'এটা আমার মিসির আলি না। আমার গল্পের মিসির আলি এমন না। এটা তো প্রোফেসর শঙ্কু হয়ে গেল’। তখন মোস্তাফিজুর আমাকে বললেন, ‘আমাদের মিসির আলি করতে হবে হুমায়ূনের ভাবনা অনুযায়ী’।
"তারপরের নাটকে অর্থাৎ 'অন্য ভুবনের ছেলেটা' নাটকে আমরা প্রায় ওই রকম মানে হুমায়ূনের মিসির আলিকে নিয়ে আসতে পেরেছিলাম। দ্বিতীয় নাটকটি দেখার পর মোস্তাফিজুর সাহেবকে হুমায়ূন বলেছিলেন, ‘এবার ঠিক আছে, নাটক ভালো হয়েছে’।”
হায়াতের ভাষ্য, যিনি গল্প লেখেন তিনি একরকম ভেবে চরিত্র নির্মাণ করেন। আবার যিনি সেই চরিত্রকে পর্দায় তুলে ধরেন, তারও একরকম ভাবনা থাকেন।
এরপর মিসির আলির কোনো নাটকে আবুল হায়াতকে আর পাওয়া যায়নি। কারণ কী জানতে চাইলে বলেন, “এরপরে আমি আর কখনো মিসির আলি করার প্রস্তাব পাইনি, করাও হয়নি।"
তবে হুমায়ূনের বহু নাটকে আবুল হায়াত কাজ করেছেন। তাই স্মৃতির ভাণ্ডারও পরিপূর্ণ।
“আমি ওনার স্ক্রিপ্টের খুব ভক্ত। তার স্ক্রিপ্ট অসাধারণ, গল্প বলার ধরণ অসাধারণ। যেগুলো পড়তে খুব ভালো লাগত, অভিনয় করতে ভালো লাগত। হুমায়ূনের নাটকগুলো কালজয়ী, কারণ আমরা যে সমাজে আমরা বাস করি সেই সমাজ তার নাটকে তিনি তুলে ধরতে সফল ছিলেন। সাধারণের আনন্দ, দুঃখ, বেদনা নিয়েই কাজ করতেন তিনি। এসবের মধ্যে হাস্যরস থাকত, জীবনের গল্প থাকত, যেগুলো মানুষের পছন্দ ছিল। এই মানুষটির প্রতি মানুষের যে ভালোবাসা, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।”
আবুল হায়াত মনে করেন নাটক-সাহিত্যে হুমায়ূনের শূন্যস্থান আজও অপূর্ণ।
‘কেন বৃহন্নলা নিয়ে কাজ করার অনুমতি দিলেন জানিনা’
মিসির আলিকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি নাটক নির্মাণ করেছেন পরিচালক অনিমেষ আইচ এবং দীর্ঘ সময় হুমায়ূনের সান্নিধ্যও পেয়েছেন তিনি। মিসির আলিকে নিয়ে লেখা 'বৃহন্নলা', 'নিষাদ' ও 'স্বপ্ন সঙ্গিনী' শিরোনামের নাটক অনিমেষ তৈরি করেন।
স্মৃতির ঝাঁপি খুলে অনিমেষ আইচ প্রথমেই বলেন, "আমরা যারা নব্বইয়ের প্রজন্ম তারা হুমায়ূনকে পাঠ করেই বড় হয়েছি। তার উপন্যাস, গল্প, নাটক, চলচ্চিত্র একটা কৌতুহলের জায়গা ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে পড়াশোনা করার সময় সিনেমা, নাটক এগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত হই, তখন কেবল নাটক-টেলিফিল্ম বানানো আরম্ভ করেছি। আমার পছন্দের চরিত্র ছিল মিসির আলি। একবার পরিকল্পনা করি, মিসির আলি সিরিজের সাড়া জাগানো 'বৃহন্নলা' উপন্যাসটি নিয়ে ফিকশন তৈরি করব। লেখক তখন বিটিভির বাইরে কাউকে তার কোনো উপন্যাস থেকে সিনেমা-নাটক বানানোর অনুমতি খুব একটা দিতেন না। আমি একদিন সকালবেলায় উনার বাসায় যাই এবং 'বৃহন্নলা' নাটকের একটি স্ক্রিপ্ট প্রস্তুত করে নিয়ে যাই।
"সে সময় 'শ্যামল ছায়া' সিনেমাটি মুক্তি পেয়েছিল। সিনেমার দৃশ্যের কিছু টেকনিক্যাল ক্রুটি ধরি আমি, যা ওনার মাথায় ক্লিক করে। ওনার সঙ্গে তার সিনেমা 'আগুনের পরশমণি'র কথাও বলি সে সময়। এরপর কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে স্ক্রিপ্টটা দিয়ে উনাকে বললাম, স্যার স্ক্রিপ্টটি দেখে যদি আমাকে অনুমতি দেন তাহলে আমি 'বৃহন্নলা' নিয়ে কাজ করতে চাই। পরে উনি আমাকে অনুমতি দিলেন, কিন্তু কেন দিলেন আমি তা জানি না।"
অনিমেষের ভাষ্য, সর্বোচ্চ সময় নিয়ে তিনি ‘বৃহন্নলা’ বানিয়েছিলেন।
“মনে হল এবার তো স্যারকে সেটা দেখতে দিতে হয়। তখন একটি ডিভিডির কপি স্যারকে দিয়ে আসি। উনি তখন খুবই ব্যস্ত থাকতেন। ওই ব্যস্ততার মধ্যে উনি সত্যি দেখবেন ধারণা করিনি।"
অনিমেষ বলেছেন, তিনি জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ টেলিফোন কল পেয়েছিলেন হুমায়ূনের কাছ থেকে।
“স্যার 'বৃহন্নলা' দেখে ফোন করে ১৭ মিনিট ধরে প্রশংসা করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, কাজটি উনার পছন্দ হয়েছে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ইনামুল হক, শতাব্দী ওয়াদুদের প্রশংসা করেছিলেন। সেই প্রশংসা অনেক বড় একটা প্রাপ্তি ছিল। এবং দর্শকও খুব দারুণভাবে গ্রহণ করে নাটকটি।”
'বৃহন্নলা' নাটকে মিসির আলি চরিত্রে অভিনয় করেন শতাব্দী ওয়াদুদ। নাটকে আরো ছিলেন তৌকির আহমেদ, চাঁদনি, রহমতুল্লাহসহ কয়েকজন।
অনিমেষ বলেন, “শতাব্দীও খুব মনোযোগ দিয়ে অভিনয়টা করেছিলেন। আর নাটকটি স্যার পছন্দ করেছিলেন কারণ ওনার ভাবনার মিসির আলির সঙ্গে আমাদের মিসির আলি মিলে গিয়েছিল। সে সময় উনি ওপেনলি আমাকে বলে দেন, 'তুমি যত ইচ্ছে মিসির আলি বানাও, তোমার ক্ষেত্রে কোনো বাধা নেই’।”
‘বৃহন্নলা’ তৈরির পর হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে এক ধরনের ‘বোঝাপড়ার’ সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিলেন জানিয়ে অনিমেষ বলেন, “ আমি শুধু বলতাম ‘স্যার আমি এটা বানাব, উনি শুধু বলেতেন 'হ্যাঁ বানাও'। অনেক সময় টাকাও নিতেন না। কাজ নিয়েও উনার সঙ্গে অনেক বির্তক চলত। বির্তক মানে বলতাম যে, আপনার নাটকের লাইটিং ভালো না, ফ্রেম ভালো না, আপনি এমন করে করেন কেন! উনার শুটিং যারা দেখেছে তারা জানেন উনি ক্যামেরা রেখে একটু দূরে গিয়ে বসে অভিনয়টা দেখতেন। এসব নিয়ে আমাদের বিতর্ক হত আর কি।"
'বৃহন্নলা' নির্মাণের পর 'নিষাদ' নির্মাণ করেন অনিমেষ, এই নাটকে মিসির আলী চরিত্রে অনিমেষ নিয়ে আসেন আশীষ খন্দকারকে।
অনিমেষ বলেন, “তখন আশীষ খন্দকার এত কাজ করতেন না। ‘নিষাদ’ দিয়ে বলা চলে উনি টেলিভিশনে কাজ শুরু করলেন। আমরা সে সময়ে নাটকের একটা প্রিমিয়ার শোর আয়োজন করলাম। হুমায়ূন স্যারকে আমন্ত্রণ করলাম। তখন ছিল রোজার মাস, সকাল ১১ টায় ছিল প্রিমিয়ার শো। দর্শক আসতে দেরি করছেন। কিন্তু স্যার সাড়ে দশটায় চলে আসলেন। তখন আমরা উনাকে বললাম, আপনি এত তাড়াতাড়ি চলে এলেন যে! তখন তিনি বললেন, 'আমি শিক্ষক মানুষ আমি সময়মত সব কাজ করতে পছন্দ করি'। সাধারণত উনি কোনো প্রিমিয়ার শোতে যেতেন না। কিন্তু সেদিন উনি উনার কয়েকজন বন্ধুবান্ধবকে নিয়ে এসেছিলেন।”
অনিমেষ মিসির আলিকে নিয়ে আরো বানিয়েছেন নাটক ‘'স্বপ্ন সঙ্গিনী'। এটি হুমায়ূনের ‘সঙ্গীনি’ গল্পের অবলম্বনে তৈরি নাটক।
‘'স্বপ্ন সঙ্গিনী' তৈরি নিয়ে অনিমেষ বলেন, “চেয়েছিলাম হিমু বানাতে। তিনি বললেন আরেকটা মিসির আলি করো। তার পর 'স্বপ্ন সঙ্গিনী'র কথা বলতে তিনি অনুমতি দিলেন। সেখানে আসলেন হুমায়ুন ফরীদি। তিনি এত বড় একজন শিল্পী, তখন আমার মনে হল দাড়িবিহীন একটা মিসির আলি করে দেখি কেমন হয়। দীর্ঘদিন ধরে শুটিং করলাম কারণ তখন হুমায়ুন ফরীদি অসুস্থ ছিলেন। তিনি শুটিংয়ে যেতেন আড্ডা দিতেন, সাতটা বেজে গেলে বলতেন, আজকে আর না অন্যদিন। এভাবে দীর্ঘদিন নিয়ে কাজটি করলাম।”
“তারপর নাটকটা স্যারকে দেখতে দিলাম। হুমায়ুন স্যার কাজটি পুরোটা দেখেননি কারণ তিনি বেশ কিছু কুসংস্কারের বিশ্বাস করতেন বা ওগুলো মেনে চলতেন। নাটকের শুরুর দৃশ্যে ছিল মাকড়সা। যা দেখে স্যার বললেন, 'অনিমেষ এটা আমি আর দেখব না। মাকড়সা আমার জন্য ভালো কিছু না।”
মিসির আলির চরিত্র নিয়ে লেখা ‘চশমা’ বইটি হুমায়ূন আহমেদ অনিমেষকে উৎসর্গ করেন বলেও জানান এই পরিচালক।
“স্যার বইটিতে লিখেছিলেন, 'অনিমেষ আইচ মিসির আলিকে খুঁজে বেড়ান। তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন বিনোদন ব্যক্তিকে ধরে ধরে মিসির আলি বানিয়ে দেন।'”
মৃত্যুর আগে হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে দেখা করার জন্য তার বাড়ির কাছে গিয়েও ফিরে এসেছিলেন বলে দারুণ আক্ষেপ আছে অনিমেষের।
অনিমেষ বলেন, "আমি ভেবেছিলাম চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে স্যার দেশে ফেরত আসুক তারপর দেখা করব। এর মধ্যে চিকিৎসার মাঝখানে উনি একবার দেশে এসেছিলেন ১২ দিনের জন্য। তখন ডা. এজাজ বলেছিলেন এখন উনার সঙ্গে দেখা করতে গেলে ওনার ভালোর চেয়ে মন্দটাই বেশি হবে। উনার বাসার গলি পর্যন্ত গিয়েও নিজেকে সংবরণ করে। আমি ফেরত আসি। ওই যে গেলাম ঠিকই কিন্তু আর দেখা হলো না।”
'ইয়াংম্যান তোমাকে বোঝাই যায় না, ভালো হয়েছে কাজ'
‘বৃহন্নলা’ এবং ‘নিষাদ’ নাটকে যে দুই অভিনেতা মিসির আলী হয়েছিলেন অভিনেতা শতাব্দী ওয়াদুদ এবং আশীষ খন্দকার। হুমায়ূন, মিসির আলী এবং নাটকের কাজ করার অভিজ্ঞতা-এই তিন নিয়ে জানতে এই দুজনের সঙ্গেও কথা বলেছে গ্লিটজ।
শতাব্দী যখন অনিমেষের কাছ থেকে মিসির আলি হওয়ার প্রস্তাব পান, তখন তার ক্যারিয়ার মাত্র শুরু।
চরিত্র নিয়ে শতাব্দী তিনি বলেন, "আমাদের বাংলা সাহিত্যে এই ধরনের চরিত্র খুব বেশি তৈরি হয়নি, ওপার বাংলায় হয়েছে কিন্তু আমাদের দেশে কম। মিসির আলি চরিত্রটা রহস্যে ভরপুর, আবার অনেক সাদামাটা। তাই ওরকম একটা চরিত্রে কাজ করতে গিয়ে আমার প্রথমেই মনে হয় যে, যতটা পারা যায় স্বাভাবিক থাকতে হবে। চরিত্রটা করতে না চেয়ে চরিত্রটা হতে চেয়েছিলাম। সেই জায়গা থেকে খুব দারুণ অভিজ্ঞতা ছিল। আর 'বৃহন্নলা' অনিমেষের শ্রেষ্ঠ একটা কাজ।"
‘বৃহন্নলা’ প্রচারের পর এক সাক্ষাৎকারে শতাব্দীর প্রশংসা করেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ।
হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে সামনাসামনি কথা হয়েছিল জানিয়ে শতাব্দী বলেন, "কাজটির পর অনিমেষকে স্যার (হুমায়ূন আহমেদ) বলেছিলেন, মিসির আলি নির্মাণে আর কোনো অনুমতি লাগবে না। তিনি আমাকেও অ্যাপ্রিশিয়েট করে বলেছিলেন যে, ‘এই তুমি কি ইয়াংম্যান তোমাকে বোঝাই যায় না, ভালো হয়েছে কাজ, পছন্দ হয়েছে’। উনার কাছে থেকে সামনাসামনি এত প্রশংসা পাওয়াটাও একটা দারুণ অর্জন বলতে পারেন।"
শতাব্দীর আফসোস লেখকের প্রয়াণের সাথে হারিয়ে গেছে এই চরিত্রের নতুন নতুন গল্পও।
'নিষাদ' নাটকে মিসির আলি হওয়ার অভিজ্ঞতা জানিয়ে আশীষ খন্দকার বলেন, “পরিচালকের ভিজুয়ালাইজেশন থেকে মিসির আলির চরিত্রে আমাকে চিন্তা করা হয়েছিল। আমি চেষ্টা করছিলাম মিসির আলির কাছাকাছি যেতে। কাজ বেশ গোছানো হয়েছিল। আর এটা সত্যি যে মিসির আলির চরিত্রে অভিনয় করা আমার জন্য এক বিশাল অভিজ্ঞতা। সেই যাত্রায় সময়, সম্পর্ক, এবং আত্মজ্ঞান সবই প্রাসঙ্গিক ছিল।"
হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে কোনো স্মৃতি আছে কী না জানতে চাইলে অভিনেতা বলেন, "একবার বাংলা একাডেমির বইমেলায় তার সঙ্গের পরিচয় হয়েছিল। সেটি ছিল একটি অন্যরকম অভিজ্ঞতা। আমি তখন তরুণ, ইন্টেলেকচুয়াল। বুঝেছিলাম তিনি সমাজ নিয়ে ভাবছেন, ভিজ্যুয়াল কাজ নিয়ে ভাবছেন। অতএব, তিনি আমার গভীর পর্যবেক্ষণের মধ্যে ছিলেন।"
'দেবী' চলচ্চিত্র দিয়য়ে প্রথমবারের মত মিসির আলি হয়েছেন পর্দায় এসেছিলেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। সিনেমাটি বানান পরিচালক অনম বিশ্বাস। এলো চুল, মোটা ফ্রেমের চশমা, আঙুলের ফাঁকে সিগারেট, নিজের জগতে থাকা নিভৃতচারী মিসির আলি হয়ে পর্দায় হাজির হয়েছিলেন এই অভিনেতা। চরিত্রটি নিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছিল অভিনেতাকে।
বিভিন্ন সময়ে এই অভিনেতা বলেছেন, দুই থেকে আড়াই মাস ভাবার পর এই চরিত্র করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন তিনি।
চঞ্চলের ভাষ্য, চরিত্র হয়ে উঠতে কয়েকশ' চশমা পরতে হয়েছে তাকে।
“কোন ড্রেস পরব, কীভাবে হাঁটব, কথা বলব- এগুলো নিয়ে দিনের পর দিন খাটতে হয়েছে।”