লকডাউনের মধ্যে র্যাপার সথিশন রথনায়কার এ গানটি মোবাইল ফোনে রেকর্ড করেন শ্রীলংকার তরুণ সংগীত শিল্পী ইয়োহানি দিলোকা ডি' সিলভা। এরপর যা হল তা বিস্ময়কর।
ইন্টারনেটে রীতিমত শোরগোল ফেল দিল তার কণ্ঠের ‘মানিকে মাগে হিতে’। আসল গানের প্রডিউসার তাকে ফোন করলেন। জানতে চাইলেন, ইয়োহানি এ গানের অফিসিয়াল সংস্করণে কণ্ঠ দিতে চান কি না।
রাজি না হওয়ার কোনো কারণ ছিল না ২৮ বছর বয়সী ইয়োহানির। তার মাদক কণ্ঠে সিংহলি ভাষায় ধীর লয়ের এ ছন্দময় গানের সঙ্গে যুক্ত হল দুলান এআরএক্স এর র্যাপ। গত ২২ মে ইউটিউবে প্রকাশিত হল সেই ভিডিও।
তিন মাসেরও কম সময়ে গত ১৭ সেপ্টেম্বর সে গানের দর্শক সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে ১১ কোটি। যে কোনো বিচারে সিংহলি গানের জন্য এটি রেকর্ড।
অল্প সময়ের মধ্যে দেশে-বিদেশে রীতিমত তারকা খ্যাতি পেয়ে যাওয়া ইয়োহানি ডি' সিলভা এক একান্ত সাক্ষাৎকারে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, গত কিছু দিনে যে অভিজ্ঞতা তার হয়েছে, এক কথায় তা ‘অসাধারণ’।
“এটা দারুণ অভিজ্ঞতা। সবকিছুই আমার কাছে বিস্ময়কর লাগছে। যারা গানটি শুনেছেন, পছন্দ করেছেন ও শেয়ার করেছেন তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।”
তারকাদের কেউ কেউ গানটি শেয়ার করে ভালোলাগার কথা জানিয়েছেন; অনেকে নিজেরাই গেয়ে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছেন।
অমিতাভ বচ্চন প্রথম গানটি দেখেন তার নাতনির কাছে। সেখানে ১৯৮১ সালের কালিয়া সিনেমায় অমিতাভের একটি নাচের দৃশ্যের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল‘মানিকে মাগে হিতে’ গানটি।
সাফল্যে ভাসতে থাকা ইয়োহানির কাছে বিগ বির এই প্রশংসা যেন স্বপ্নের মত।
“তার মত কেউ আমাদের গান টুইটার আর ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করবেন, প্রতিক্রিয়া জানাবেন- এটা আমার ক্যারিয়ারে কখনো ঘটবে, আমরা চিন্তাও করিনি, একদমই না। এটা স্রেফ অসাধারণ।
“বলিউডের আরও অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী ও সংগীত শিল্পী আমাদের গানটি শেয়ার করেছেন। তাদের সবার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।”
‘মানিকে মাগে হিতে’ গানের এই সাফল্য স্বাভাবিকভাবেই ইয়োহানির খ্যাতি পৌঁছে দিয়েছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। বলিউড থেকে এখন তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। সেই সম্ভাবনায় তার দিন কাটছে দারুণ উত্তেজনায়।
তবে ওই রোলারকোস্টার থেকে ছিটকে পড়তে রাজি নন ইয়োহানি। এখন তার মনোযোগ সামনের ক্যারিয়ার আর তার প্রথম অ্যালবাম নিয়ে।
“এখন অ্যালবামের কাজটাই আমার কাছে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম গানটি প্রকাশ হবে এক মাসের মধ্যে। পুরো অ্যালবামটা আসছে আগামী বছর। গান থাকছে ১২টি। অ্যালবামের নাম খেল্লা’ সিংহলি ভাষার এর মানে ‘বালিকা’।”
২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশ শ্রীলংকায় এর আগে কোনো গান ইউটিউবে এত ‘ভিউ’ হয়নি। ভাষার ব্যবধান ভুলে শ্রীলংকার বাইরে ভারত, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষেরও মুখ থেকে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে গানটি।
গানটির জন্য বাংলাদেশের দর্শক-শ্রোতাদের কাছ থেকে ‘অফুরন্ত ভালোবাসা’ পাচ্ছেন বলে জানালেন শ্রীলংকার এ শিল্পী।
বাংলাদেশের দর্শকদের উদ্দেশে তার বার্তা “যারা গানটি শুনেছেন, দেখেছেন, তাদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা আপনাদের কাছ থেকে অফুরন্ত ভালোবাসা পাচ্ছি, এটা আমাদের জন্য অসাধারণ অনুভূতি। আমরা আশা করছি, আমাদের পরের গানগুলোও আপনাদের ভালো লাগবে। সবাই নিরাপদে থাকবেন।”
“বাবা-মায়ের সঙ্গে ছোটবেলায় একবার বাংলাদেশে গিয়েছিলাম। তখন এত ছোট ছিলাম যে সব কথা খুব বেশি মনে নেই। আমি আশা করছি শিগগিরই বাংলাদেশে যাব, সেটা দুই বছরের মধ্যেই।”
সিংহলি ভাষায় প্রকাশের পর তামিল, মালায়ালামসহ বিভিন্ন ভাষায় ‘মানিকে মাগে হিতে’ গানটি গেয়েছেন ইয়োহানি। বাংলা ভাষায় গাওয়ার কোনো পরিকল্পনা কি আছে?
তিনি জানালেন, বাংলা ভাষা এখনও শেখা হয়নি তার। তবে সবসময় নতুন কিছু শিখতে তিনি ভালোবাসেন। বাংলা ভাষা শিখতে পারলে অবশ্যই গানটি বাংলায় গাইবেন।
ইয়োহানি গানের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন মায়ের কাছ থেকে। ২০১৬ সালে খোলা একটি ইউটিউব চ্যানেলে নিয়মিত গান প্রকাশ করে আসছেন। তবে আগে সেভাবে পরিচিতি পাননি; ‘মানিকে মাগে হিতে’ প্রকাশের পর তার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরে গেছে।
২০১৯ সালের দিকে শ্রীলঙ্কায় প্রথমবারের মত মঞ্চে গান পরিবেশন করেন ইয়োহানি। কিন্তু করোনাভাইরাসের মহামারীর মধ্যে অন্য সব দেশের মত শ্রীলঙ্কাতেও স্টেজ শো প্রায় বন্ধ।
স্টেজকে অনেক ‘মিস করেন’ জানিয়ে ইয়োহানি বললেন, “আশা করছি আবারও আমরা স্টেজে ফিরতে পারব। আমি সেই সময়ের জন্য অপেক্ষায় আছি। আমি আশা করছি, বাংলাদেশেও আসতে পারব।”