আইয়ুব বাচ্চুর এলআরবিতে ভাঙন

আইয়ুব বাচ্চুর মৃত্যুর পর আবারও খেই হারালো তার হাতে গড়া ব্যান্ড ‘এলআরবি’। পাঁচ সদস্যের এ ব্যান্ডের বাকি সদস্যদের ছাড়াই স্বপন ও রোমেল শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে পারফর্ম করার মধ্য দিয়েই দুই-তিনে বিভক্তি প্রকাশ্যে এলো।

সাইমুম সাদ নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 June 2019, 07:24 PM
Updated : 22 Oct 2019, 07:33 AM

বিষয়টি নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মুখোমুখি হন ব্যান্ডটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সাইদুল হাসান স্বপন

এলআরবি’র বাকি সদস্যদের রেখে শুধু দুইজন পারফর্ম করলেন কেন?

সাইদুল হাসান স্বপন: আমি আর রোমেল অনেক দিন অপেক্ষা করলাম। বাচ্চু ভাই যেমন পেশাদার ছিলেন আমাদেরও একই রকম কাজ শিখিয়েছেন। সেটা করেই আমরা খেতাম। আমাদের আর আয়ের কোনো বিকল্প নেই। আমরা অনেক দিন অপেক্ষা করেছি কিন্তু ওরা যোগাযোগ করছে না। ওরা অনেক বেশি ব্যস্ত। ওদের ব্যবসা-বাণিজ্য আছে। আমাদের তো আর কিছু নেই। আমাদের পারফর্ম করেই খেতে হবে। এজন্যই শো’টা করলাম।

আর আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য হচ্ছিল। আমাদের মোটামুটি ওরা গ্রাহ্য করে না। ওরা যা বলে সেটাই করতে হবে। অনেক অসম্মান হচ্ছিল বসের। এটা মেনে নিতে পারছিলাম না।

আইয়ুব বাচ্চুকে কীভাবে অসম্মান করা হচ্ছিল?

সাইদুল হাসান স্বপন: ব্যানারে বসের ছবি থাকতে পারবে না। টিভিতে ইন্টারভিউয়ের সময় ইমোশনাল হয়ে গেলে বসের কথা বলতে পারব না। আস্তে আস্তে বসকে লাইমলাইট থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। বসের গান গাইব, কিন্তু এলআরবির পরিচয় দেওয়া যাবে না। অন্য গান করতে হবে।

আমাদের মতের সঙ্গে ওদের মত মিলছিল না। আমরা এই অসম্মান মেনে নিতে পারিনি।এলআরবির ন্যূনতম পলিসি ছিল যে, আমরা ফ্যামিলি। এবার ঈদে এক সেকেন্ডের জন্যও একবার ফোন করেও কথা বলার প্রয়োজন মনে করেনি। অথচ আমাদের কারও ঝগড়া হয়নি, মারামারি-কাটাকাটি হয়নি। কোনো কিছুই হয়নি। শুধু মতপার্থক্য হচ্ছিল।

মাঝে ওদের একজন ময়মনসিংহ গেল, আরেকজন চীনে গেল। বলল, এসে ফটোসেশন হবে। মিডিয়ার সঙ্গে বসা হবে। এখনও পর্যন্ত কোনো যোগাযোগ করেনি। আমরা আর কয়দিন বসে থাকব? গতকালের শো’টা দীর্ঘদিন ধরে ঘুরছিল। বারবার ক্যান্সেল করা হচ্ছিল। ম্যানেজার সাহেব দীর্ঘদিন ধরেই ব্যস্ত আছেন; সঙ্গে আরেকজন মেম্বারও ব্যস্ত আছেন। আমার বউ-বাচ্চারা ভাত খাবে। তাদের যদি ইনকাম করে দিতে না পারি তাহলে খাওয়াবো কী? আটমাস বসে থাকলাম তো। আর কত?

আপনি বলছেন, আইয়ুব বাচ্চুকে নিয়ে আবেগপূর্ণ কথা বলতে বাধা পাচ্ছেন। এটা কবে থেকে ঘটছে?

সাইদুল হাসান স্বপন: ৫ এপ্রিলে যেটা হয়েছে। হঠাৎ করে বালামকে নিয়ে এসে তার নাম ঘোষণা দিয়েছিল। আমাদের সঙ্গে কথা হয়েছিল কিন্তু বলেছিলাম, ঘোষণা দেওয়া যাবে না। বালামকে নিয়ে ট্রায়াল সেশন করেছিলাম কফি শপে। কিন্তু ঘোষণা দেবে-এটা তো আমাদেরকে বলেনি। আর ব্যানারে বসের ছবি যাবে না, লুকিয়ে রেখেছে। সেটাও জানি না। ব্যানারে বালামের ছবি, বাচ্চু ভাইয়ের ছবি নেই। আমরা চুপ করে থাকলাম। ভাবলাম ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো যোগাযোগ করেনি।

আপনিও যেমন এলআরবির সদস্য বাকিরাও তেমনিই এলআরবির সদস্য। এলআরবি তাহলে এখন কার?

সাইদুল হাসান স্বপন: সেটা দর্শকরাই সিদ্ধান্ত নেবে। এলআরবির ফাউন্ডার মেম্বার বাচ্চু ভাই আর আমি। বাচ্চু ভাই তো বেরিয়ে গেছে। একজন রিজাইন করেছে।রিয়াদ বেরিয়ে যাওয়ার পর রোমেল এসেছে। আমি ফাউন্ডার মেম্বার। ডেফিনেটলি এলআরবি আমারই করার কথা। বাচ্চু ভাইও তো সেটাই বলে গেছে। আমি সবাইকে নিয়েই কাজ করছিলাম কিন্তু কেউ যদি কাজের আগ্রহ না দেখায় তাহলে ‘একলা চলো রে’ রীতিতে চলতে হবে। বাচ্চু ভাইও এটাই বলে গেছেন।

ব্যান্ডটির ভবিষ্যত কী?

সাইদুল হাসান স্বপন: এলআরবির ভবিষ্যত হচ্ছে আপাতত আমি আর রোমেল। পেশাদারভাবে কাজ করতেই থাকব। তারা ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যস্ত। ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ব্যস্ত।ওদের পেট চলছে। আমরা গান-বাজনা ছাড়া কিছুই শিখিনি। ওরা ব্যবসা-বাণিজ্য করে। ভালোই আয় আছে। তার স্ত্রী চাকরি করে। আমার স্ত্রী গৃহিণী। আমরা গান করেই খাই। সবাই জানে এটা।

কিন্তু কপিরাইট অফিস বলছে, আইন অনুযায়ী আপনি কিংবা ব্যান্ডের বাকি সদস্যদের কারও মালিকানার অধিকার নেই; একমাত্র মালিকানা আইয়ুব বাচ্চুর ও তার উত্তরাধিকারদের। তাহলে ‘এলআরবি’কে নিজের বলছেন কীভাবে?

সাইদুল হাসান স্বপন: এই বিষয়টা নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। তখন বাচ্চু ভাইয়ের ছেলে ঘোষণা দিয়েছিল, এলআরবি এলআরবির মতো পারফর্ম করুক। বাবার গানগুলো বেঁচে থাকুক। তারপর আর বিতর্ক থাকার কথা না। বাচ্চু ভাই এলআরবির লোগোটা রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। এলআরবি নামে ফার্নিচারের নামও আছে পান্থপথে।কোনো প্রতিষ্ঠান তো কারও ব্যক্তিগত হতে পারে না। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফল। আমি ওনাকে অসম্ভব শ্রদ্ধা করি। কোথাও যেন ওনার অসম্মান না হয় সেই চেষ্টাটাই করে এসেছি। ভবিষ্যতে করে যাব। আমরা ওনার গান করতেই থাকব।

শুক্রবারের পারফর্মে আপনাদের দুইজনের সঙ্গে আর কারা কারা ছিলেন?

সাইদুল হাসান স্বপন: বাচ্চু ভাইয়ের গান যারা ভালো গায় তারাও গেয়েছেন। আমরা বাইরে থেকে আর্টিস্ট নিয়ে গিয়েছি। যারা বাচ্চু ভাইকে শ্রদ্ধা করে তারা সবাই মিলেমিশে গান করেছি। মিউজিকে শেষ বলে কিছু নেই। আমরা ওদের বের করে দিয়েছি কিংবা আমরা বের হয়ে এসেছি- এই ধরনের কোনো কথা আমি বলছি না। আমি বলছি, মতপার্থক্য হচ্ছে। যার কারণে থেমে নেই, কাজ করে যাচ্ছি।

আপনাদের দুইজনের পরিকল্পনা কী?

সাইদুল হাসান স্বপন: যারা বাচ্চু ভাইয়ের গান ভালো করে তাদেরকে নিয়ে কাজ করে যাব। বাঁচতে তো হবে। আমরা হায়ার হ্যান্ডস দিয়ে চলছি। যেমন ওয়ারফেইজের টিপুর কাছ থেকে আমরা পরামর্শ নিয়েছি। ব্যান্ডের জন্য যেটা বেস্ট সেই কাজটাই করব। যাকে দিয়েই সম্ভব তাকে নিয়েই আমরা সামনে এগিয়ে যাব।