অপেক্ষায় থাকুন, আসছে বাঁধন

বিয়ে, সংসার, সন্তান নিয়ে বেশ দীর্ঘ একটা সময় কাজের বাইরে ছিলেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন।

তুষার বিডিনিউজটোয়েন্টিফোরডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 May 2013, 04:18 AM
Updated : 21 May 2013, 04:18 AM

বিয়ে, সংসার, সন্তান নিয়ে বেশ দীর্ঘ একটা সময় কাজের বাইরে ছিলেন অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন। হঠাৎ করেই ২০১০ সালের অক্টোবর মাসে মাশরুর হোসেন সিদ্দীকী সনেট নামের ব্যবসায়ী যুবকের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। এর পরের বছর সেপ্টেম্বর মাসে জন্ম দেন এক ফুটফুটে কন্যাশিশুর। এর পরের বছর ২০১২ সালের জুন মাসে পরিচালক চয়নিকা চৌধূরীর ‘ধ্রুবতারা’ দিয়ে বিরতি ভেঙে বছর শেষে তার প্রাপ্তি চার একক নাটক ও এক ধারাবহিক নাটক। বাঁধন মিডিয়ায় আসেন লাক্স ফটোজেনিক ২০০৬ সালের প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার আপ খেতাব অর্জন করে। এরপর থেকে তিনি অভিনয় করেছেন নাটক ‘বুয়াবিলাস’, ‘শুভ বিবাহ’। ধারাবাহিক-চাঁদ ফুল অমাবশ্যা, বিজি ফর নাথিং, এয়ারকম, চৈতা পাগল, রঙ। সিনেমা- ‘নিঝুম অরণ্য’। এছাড়া বেশ কয়েকটি টিভি বিজ্ঞাপনেও দেখা গেছে তার প্রশংসনীয় উপস্থিতি। রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজ থেকে পড়াশুনা শেষ করেছেন দন্ত চিকিৎসক হিসেবে। সম্প্রতি তিনি অভিনয় করেছেন রিপন রাফি পরিচালিত একক নাটক ‘মৃত্তিকা এবং অদ্বিতীয়া’। নাটকের সেটে গিয়ে তার কথা তুলে এনেছেন চিন্তামন তুষার।
 
লাক্স ফটোজেনিক খ্যাত বাঁধন মা হওয়ার পরে একটা অখণ্ড সময় কাটাচ্ছিলেন মেয়ে সায়রাকে নিয়ে। বয়স তখন আট মাস তার। এসময় হঠাৎ পরিচালক চয়নিকা নাটকে অভিনয়ের প্রস্তাব দিলেন তাকে। প্রস্তুত ছিলেন না তিনি, ভাবছিলেন আরো কয়েকটা দিন যাক। মেয়েটা আরো একটু বেড়ে উঠুক। একেতো মায়ের মন তারওপর আবার চিকিৎসায় শিক্ষা জীবন শেষ করেছেন তিনি। তাই শিশুদের জন্য ঠিক কি করা দরকার ও কিভাবে করতে হয় নখদপর্নে তার! কিন্তু চয়নিকাও ভরসা দিলেন, শিশুর যত্ন-আত্তির জন্য সর্বাত্মক সহায়তা তিনি দেবেন। বাঁধনও সম্ভবত অভিনয়ের টানেই আর না করতে পারলেন না। তাই বছরের জুন মাসে আবার ফিরে আসা, আবার মেক-আপ, অ্যাকশন, সংলাপ, কাট শুরু হলো প্রায় আঠার মাস বিরতি দিয়ে।
 
প্রথম নাটক পরিচালক চয়নিকার ‘ধ্রুবতারা’ এরপর আরেফীন পরিচালিত নাটক ‘হাঙ্গামা’ এবং এরপর আবারও চয়নিকার আরো একটি একক নাটক ‘প্রতিবেশী’।
 
যাই হোক ছোট্ট মেয়ে সায়রাকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করছেন ঠিকই। কিন্তু ধারবাহিক বা মেগার কথা তখনও ভাবেননি বাঁধন। এদিকে পরিচালক জুয়েল মাহমুদও সম্ভবত নাছোরবান্দা। তাই তার আশ্বাসের কাছে আবারও পরাজিত হলেন অভিনেত্রী বাঁধন। তখনই ভাবতে বাধ্য হলেন। নতুন স্যাটেলাইট চ্যানেল এসএ টিভি-এর জন্য ৩০০ পর্বের পরিকল্পনা করা নাটক ‘আকাশ মেঘে ঢাকা’ নির্মাতা জুয়েল এক প্রকারের জেঁকেই ধরেছিলেন তাকে। তাই অক্টোবর থেকে এ পযর্ন্ত তিন বারে প্রায় ৩০ পর্বের মতো শুটিং শেষ। আর জুয়েলও তার কথা রেখেছিলেন বলে স্বাচ্ছন্দ্য ও ছন্দ এ দুই নিয়েই কাজ করছেন এ পযর্ন্ত।
 
তবু চিকিৎসক বাঁধন এখনও বেশ উদ্বিগ্ন তার মেয়ে মিশেল আমানী সায়রাকে নিয়ে। যদিও জুয়েল ও অন্যান্য পরিচালকরা তার জন্য শুটিং স্পটে বা হাউজে আলাদা রুমের ব্যাবস্থা রাখছেন। কিন্তু তার উদ্বিগ্নতার কারণ হচ্ছে মেয়ে এখন হাটতে শিখেছে। বেশ চঞ্চলতা আছে তার মধ্যে। তাকে শুটিংয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে আজকাল। তাকে নিয়ে বাসায় থাকলে যেমন স্বস্তি পাওয়া যেতো তেমন স্বস্তিতো আর বাইরে খুজে পাওয়া যায় না! তার ভাষায়, বাড়ন্ত শিশুদের জন্য দরকার হয় উপযুক্ত পরিবেশের। আর তা জরুরী শিশুর মনস্তাত্ত্বিক ও শারীরিক গঠনের জন্য। সবচেয়ে জরুরী বিষয় হলো, তাকে সঙ্গ দেওয়া ও সঠিক পরিচর্যা নেওয়া।
 
বাঁধন প্রকৃতই বেশ যত্ন নিয়েছেন সায়রার, প্রমাণ হলো। কথা বলার ফাকে সায়রার কণ্ঠ শোনা গেলো, ততোক্ষণ সে ঘুমাচ্ছিলো পাশের ঘরে। তাকে কোলে তুলে নিতে ছুটে গেলেন মা বাঁধন। কোলে নিয়ে ফিরে এসে পরিচয় করিয়ে দিলেন মামা বলে। মেয়েকে সালাম দিতে বললেন মা। এক বছর চার বয়সী মেয়েও যথারীতি অবাক করে সালাম দিয়ে বসলো, নতুন মামাকে! মুখে নয় একটু লাজুক ভঙ্গীতে মাথা নীচু করে কপালে ডান হাত তুলে। একটা অভিজ্ঞতা হলো বটে! বাঁধনের মতে, শিশুদের যা শেখানো হবে তাই তো শিখবে। সেই সঙ্গে মা-বাবার জীবনাচরণে নিয়ন্ত্রণ বা পরিমার্জন, পরিবর্ধন করাও জরুরী। কারণ শিশুরা তাদের দেখেই শিক্ষার প্রথম পাঠ পায়। আর তাদের মনো ও বাহ্যিক জগতে আবশ্যিকভাবেই মা-বাবার প্রভাব পড়ে। তাই খুব সাবধান হতে হয় নিজের জীবনাচরণ নিয়ে।
 
অতএব সায়রাকে বেড়ে উঠতে সাবধানেই সময় দিচ্ছেন বাঁধন। কিন্তু ক্যারিয়ার নিয়ে কি কোন দুশ্চিন্তা নেই তার, নাকি আর ফিরতে চান না এই অঙ্গনে? অবশ্যই ফিরতে চান, তবে ক্যারিয়ার নিয়ে কোন দুশ্চিন্তা নেই তার। কারণ দুইটা বছর বাইরে ছিলেন, অনেক কিছু মিস করেছেন, অনেকে এগিয়ে গেছে, তাকে ছাড়িয়ে গেছে, এমন মনোভাব তার মধ্যে নেই। আকাঙ্খা আছে, নেই উচ্চাকাঙ্খা। আছে স্বপ্ন, আছে পরিকল্পনা। ক্যারিয়ার নিয়ে সেই পরিকল্পনা মোতাবেকই এগুচ্ছেন তিনি। তিনি জানেন, যে কোন কাজই ঠিকমতো গুছিয়ে করলে ফলাফল কখনো শূন্য হয়না।
 
সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী পড়াশুনা শেষ হওয়ার তিন মাসের মাথায় বিয়ে, বিয়ের এক বছরের মধ্যে সন্তান ধারণ। শুধু পরিকল্পনা অনুযায়ী মা হওয়ার পরে আবার অভিনয় শুরু করতে পারলেন না। এ নিয়ে আক্ষেপও নেই মনে হয় তার। যাক শুরুতো হলো এবং যেহেতু শুরু একবার হয়েই গেছে, তাই অভিনয় করেই যেতে হচ্ছে। বাঁধন সম্প্রতি অভিনয় করছেন রিপন রাফির চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় একক নাটক ‘মৃত্তিকা ও অদ্বিতীয়া’। নাটকে তার সঙ্গে আরো অভিনয় করেছেন কল্যাণ কোরাইয়া।
 
বছরে এই তার শেষ কাজ। ২০১৩ সালে চয়নিকার আরো দু’টি নাটকে অভিনয়ের কথা চুড়ান্ত এবং অন্যান্য অনেকেই যোগযোগ রাখছেন তাকে নিয়ে নির্মাণ করার আশায়। তিনিও সেভাবেই পরিকল্পনা করে এগুতে চাইছেন। সেই পরিকল্পনা এই মুহুর্তে ফাঁস করা হচ্ছে না বলে কোন আক্ষেপ রাখার দরকার নেই। অপেক্ষায় থাকুন পাঠক, সময়মতোই সবই জেনে যাবেন।
 
বাঁধন কথা প্রসঙ্গে জানাচ্ছিলেন চিকিৎসা বিজ্ঞান কি বলে, সন্তান ধারণ, জন্মদান, মায়ের ভ‚মিকা, বাড়ন্ত শিশু পরিচর্যায়। এক ফাঁকে মতামত জানতে চাওয়া হলো, মনোবিজ্ঞান বলে, দাম্পত্য জীবন অর্থাৎ সংসার ধর্ম পালন এবং সন্তান জন্ম ও লালন-পালনে নাকি মায়েদের মানসিক পরিপক্কতা বৃদ্ধি পায়? তা কি তার ক্ষেত্রেও ঘটেছে কিনা? অতএব পাঠক ও বাঁধন প্রিয় বন্ধুরা জেনে আনন্দিত হন, দাঁতের চিকিৎসক বাঁধন এ বিষয়ে সহমতই জানিয়েছেন। সবশেষে, অভিনেত্রী বাঁধন প্রিয়দের জন্য খবর হলো, আরো শক্ত বাঁধনে জড়ানোর সকল প্রস্তুতি শেষ। এখন শুধু অপেক্ষার প্রহর গোণা, নব-বাঁধনে জড়ানোর।