'আমাকে এখন আর প্রয়োজন নেই'

অর্ধ শতকের সংগীত জীবনে ইতিহাস গড়েছেন বহুবার। ১৯৫৪ সালে জন্ম নেওয়া এই শিল্পী গান গাইছেন শিশুকাল থেকেই। রেডিও, টেলিভিশন, প্লেব্যাক, অডিও, মঞ্চ সবক্ষেত্রেই রয়েছে দৃপ্ত পদচারণা। আজও অপ্রতিদ্বন্দ্বী সাবিনা ইয়াসমিন।

চিন্তামন তুষারচিন্তামন তুষারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 July 2015, 06:00 PM
Updated : 20 July 2015, 07:08 AM

গ্লিটজ: আপনার সংগীত জীবন পঞ্চাশ বছরের বেশি সময়ের। কেমন ছিল পার করে আসা সময়টা?

সাবিনা ইয়াসমিন: পঞ্চাশ বছর চলে গেলো দেখতে দেখতে। সময়টা যে কিভাবে চলে গেছে, অবাক লাগে! এই সময়ে বিশেষত সংগীত জীবনে যা পেয়েছি, যা অর্জন করেছি, তার কোনো তুলনাই নাই। আমার মনে হয়, এটা আল্লাহর অসীম দান ও দয়ার ফল। গুরুজনদের আর্শীবাদ, মা-বাবার দোয়া, শ্রোতাদের ভক্তি-শ্রদ্ধা। আর সবার ভালোবাসা… সবার ভালোবাসা নিয়েই এতদূর এসেছি।

গ্লিটজ: সংগীতচর্চার জন্য বাসার পরিবেশ কেমন পেয়েছেন?

সাবিনা ইয়াসমিন:
ছোট থেকেই গান গাইছি। বাড়িতে একটা সংগীতের পরিবেশ দেখেছি। মা গান গাইছেন, বাবাও খুব ভালো গাইতেন। বোনেরা তো গাইছেন। আম্মার গানের গলা অসম্ভব সুন্দর ছিলো এবং তিনি গাইতেনও খুব সুন্দর। এতো সুন্দর হারমোনিয়াম বাজাতেন, আমি অবাক হয়ে দেখতাম এবং ‍শুনতাম। আমার বড় বোন ফরিদা ইয়াসমীন, ফৌজিয়া খান উচ্চাঙ্গ শিখতেন ওস্তাদ দূর্গাপ্রসাদ রায়ের কাছে। আমরা তখন বাবার চাকরীর সুবাদে নারায়ণগঞ্জ থাকতাম। আমি আর নীলুফার মাঝেমাঝে বসতাম তাদের পাশে। দেখতাম কী শিখছেন।

এভাবেই আমারও গান শেখা শুরু হয়ে যায়। আর গানের ব্যাপারটা আমার ভেতরে ছিলই। আমার মা ও নানা একসঙ্গে গান শিখতেন মুর্শিদাবাদে, ওস্তাদ কাদের বক্সের কাছে। তিনি সে সময়ের নামকরা একজন সংগীতজ্ঞ ও ওস্তাদ ছিলেন। সেই সময় মুসলিম নারীদের জন্য গান-বাজনা চর্চা করা সহজ ছিলো না। পরে অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে যাওয়ায় সংসারে ঢুকে গান-বাজনা কিছুই হলো না আম্মার। আমার মায়ের মনে জিদ ছিল এজন্য, আমাদের অর্থ্যাৎ তার সন্তানদের গান শেখানোর বিষয়ে। আরেকটা ব্যাপার, আম্মা পড়াশোনাতেও অসম্ভব ভালো ছিলেন, সেটাও চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি তার পক্ষে। এজন্য আমাদের এ দুটি দিকেই সমান মনোযোগী করতে সচেষ্ট ছিলেন তিনি।

গ্লিটজ: ছোটবেলায় আপনি খুব ডানপিটে টাইপের ছিলেন, চঞ্চল ছিলেন শুনেছি…

সাবিনা ইয়াসমিন: আমি খুব চঞ্চল ছিলাম ছোটবেলায়। এই কারণে কিছু উত্তমমধ্যমও খেয়েছি (হাসি) আম্মার কাছে। আব্বা মারতেন না, হালকা শাসন করতেন। তবে মায়ের কথানুযায়ী সব ঠিকঠাকমতো করতে হতো।

গ্লিটজ: পরিবারের কার বেশী প্রেরণা পেয়েছেন, প্রভাবিত হয়েছেন?

সাবিনা ইয়াসমিন: পরিবারের মধ্যে আমার মা ছিলেন আমাদের সবকিছু। প্রেরণা যতোভাবে পেতে পারে তার সবদিক থেকেই পেয়েছি আম্মার কাছ থেকে। আর ব্যাকগ্রাউন্ডে আব্বা। আম্মার কাছে অনেক গান শিখেছি, হারমোনিয়ামে তুলেছি।

গ্লিটজ: আপনার মা কী গান গাইতেন?

সাবিনা ইয়াসমিন: তাঁর সময়ের আধুনিক গানগুলোই বেশি গাইতেন। তার সময়ে জনপ্রিয় শিল্পী ছিলেন কানন দেবী, সুপ্রীতি ঘোষ, জগন্ময় মিত্র, কেএল সায়গলসহ আরও অনেকে। আব্বা রবীন্দ্রসংগীত গাইতেন। আমি আম্মার কাছ থেকে সুপ্রীতি ঘোষের কয়েকটি গান তুলেছিলাম।

গ্লিটজ: মায়ের সূত্রে সেই সময়ের শিল্পীদের আপনিও পছন্দ করতেন নিশ্চয়?

সাবিনা ইয়াসমিন:
হ্যা, কিছু শিল্পীর গান খুবই ভালোলাগতো আমার। গান ভালো লাগায় সেই গানের শিল্পীকেও ভালোলাগতো। উৎপলা সেনের একটা গান ওই সময় খুব গাইতেন আম্মা। গানটা আমারও ভালো লাগত। বলা যায়, আম্মার পছন্দের শিল্পীদের আমিও পছন্দ করতাম। পরবর্তীতে আমি যখন একটু বড় হয়েছি, তখন আমার সবচেয়ে প্রিয় শিল্পী হয়ে গেলেন প্রতিমা বন্দোপাধ্যায়। তার গাওয়া-- ‘মনে আগুন জ্বলে চোখে কেন জ্বলে না’, ‘একটা গান লিখ আমার জন্য’, গানগুলো আমি অনুষ্ঠানেও গাইতাম।

গ্লিটজ: সেই গানগুলো তো এখনও শোনে লোকজন…

সাবিনা ইয়াসমিন: এখনও শোনে এবং সারাজীবনই শুনবে…

গ্লিটজ: পরিবারে পাঁচবোনের মধ্যে আপনারা চারবোন গান গাইতেন, নিজেদের মধ্যে কী কোনো প্রতিযোগিতা ছিল?

সাবিনা ইয়াসমিন: না, কোনো রকমের প্রতিযোগিতা ছিল না। বরং তারা খুবই সহযোগিতা করতেন এবং উৎসাহ দিতেন।

গ্লিটজ: ছোট বলে স্নেহ বেশি পেতেন…

সাবিনা ইয়াসমিন: ছোট বলে আম্মার কাছে একটু বেশি স্নেহ পেয়েছি, আর বোনদের কাছেও। গান গাইতাম বলে আরও একটু বেশি আদর পেতাম।

গ্লিটজ: নীলুফার ইয়াসমীনের সঙ্গেও কোনও প্রতিযোগিতা ছিলো না?

সাবিনা ইয়াসমিন: তাঁর সঙ্গে যে ভালো লাগা, ভালোবাসা আর বন্ধুত্ব ছিল তা এক কথায় বলা কঠিন। তিনি আমার চেয়ে বয়সে কিছুটা বড় হলেও ছিলেন আমার অন্তরাত্মা। এমনও মনে হতো তিনি কাছে না থাকলে আমার জীবনটাই চলে যাবে।

গ্লিটজ: খান আতাউর রহমানের সঙ্গেও তো সম্পর্ক ভালো ছিল আপনার...

সাবিনা ইয়াসমিন:
হ্যা, অনেক ভালো সম্পর্ক ছিলো। কারণ আমাকে অনেক ছোট থেকে দেখেছেন তিনি। সেই সময় ফরিদা আপা, ফৌজিয়া আপাদের দিয়ে বেশ কিছু গান করিয়েছিলেন তিনি। অবশ্য শালী-দুলাভাইয়ের মিষ্টি সম্পর্কের প্রতি তার খুব একটা ঝোঁক ছিলো না। তার মতে, তিনি আমার বড় ভাই, আমি তার ছোট বোন। যেমন আদর করতেন, তেমনি শিখিয়েছেনও অনেক কিছু। গান গাওয়ার ক্ষেত্রে, শেখার ক্ষেত্রে।

গ্লিটজ: আপনার সুদীর্ঘ সংগীত এবং কণ্ঠ সৌন্দর্য গড়ায় কার অবদান কার বেশি?

সাবিনা ইয়াসমিন: আতা ভাই অবশ্যই, ইন্ড্রাস্ট্রির অনেকেই শিখিয়েছেন আমাকে সেজন্য তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ আমি। প্রথমেই বলতে হবে আমার ওস্তাদ পিসি গোমেজের কথা। যার কাছে আমি এবং নীলুফার গান শিখতাম একসঙ্গে। দুষ্টুমিটা একটু বেশি করতাম, পালিযে যেতাম মাঝে মাঝে। তখন নীলুফারই একা বসে শিখত। পরবর্তীতে আমি যাদের সুরে গান গেযেছি, যাদের সংস্পর্সে এসেছি, যারা আমাকে দিয়ে গান গাইয়েছেন, তাদের কাছ থেকে আমি এতো কিছু শিখেছি, যা বলে শেষ করা যাবে না। এখনও পযর্ন্ত আমি যার সুরেই গান করি না কেন, তাকে আমি গুরুই মনে করি। তিনি আমার চাইতে বয়সে ছোট হলেও, তিনি মিউজিক ডিরেক্টর। দেশ-বিদেশে অনেকের সুরেই গান গেয়েছি, সবার কাছেই আমি কিছু না কিছু শিখেছি এবং আদায় করেও নিয়েছি। এক্ষেত্রে সত্যিই ভাগ্যবান আমি।

গ্লিটজ: আদায় করার ক্ষেত্রে পারস্পরিক আদান-প্রদান হয়েছে?

সাবিনা ইয়াসমিন: হ্যা, নিশ্চয়।

গ্লিটজ: প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আপনার কণ্ঠে গান তুলে দিচ্ছেন। কার সুরে বা নির্দেশনায় গাইতে ভালো লাগে আাপনার, স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?

সাবিনা ইয়াসমিন: অনেকের সঙ্গে কাজ করেছি। এর মধ্যে যাদের সঙ্গে বেশি কাজ করেছি, স্বাভাবিকভাবেই স্বাচ্ছন্দ্য তাদের সঙ্গেই একটু বেশিই, যেমন-- সত্য সাহা, সুবল দাস, তারপরে আলম খান, আলী হোসেন, খন্দকার নুরুল আলম, আলাউদ্দিন আলী, আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল সহ এমন আরও অনেকে। এভাবে আমি যাদের সান্নিধ্যে বেশি এসেছি, যাদের সুরে বেশি গান গেয়েছি, তাদের সঙ্গে আমি খুব বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি।

গ্লিটজ: রেকর্ডিংয়ের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা রিহাসার্ল করতে হতো!

সাবিনা ইয়াসমিন: ঘণ্টার পর ঘণ্টা রিহার্সাল করতাম এরপর রেকর্ডিং। তার আগেও দুই-তিনদিন ধরে রিহার্সাল করেছি কখনও সংগীত পরিচালক, সুরকারদের বাসায় বসে, কখনও তারাই এসেছেন আমার বাসায়। রের্কডিংয়ের সময় সব মিউজিশিয়ান, শিল্পীরা একসঙ্গে আছেন... তখনকার পরিবেশই ছিল অন্য মাত্রার। আজকে যেমন ডুয়েট গানও আমরা একসঙ্গে গাইছি না, এই কারণে সেটায় ফিলও দেওয়া যায় না সেভাবে।

গ্লিটজ: তাহলে বলছেন, এখন আর সেই রসায়ন ফুটে উঠছে না...

সাবিনা ইয়াসমিন: হ্যা, সাধারণভাবেই ভালো গাইবার চেষ্টা করা যায়। ওই সময়ে সারারাত ধরে রেকর্ডিং হতো। অনেক আগের কথা যদিও। একসঙ্গে কাজ করার অন্যরকম আনন্দ ছিল… আমার মনে হয়, আমার গানগুলো তাতেই বেশি প্রাণ পেতো।

গ্লিটজ: সেই সময়ে কোনও স্মৃতি আপনার সবসময় মনে পড়ে কী...

সাবিনা ইয়াসমিন:
সেরকম স্মৃতি বলতে… আসলে এতো বেশি কাজ করেছি যে অনেক ভালো স্মৃতিই জমে আছে; সুখের, দুঃখের। তবে দুঃখের, কষ্টেরগুলোই যেন বেশি মনে পড়ে। একটা ব্যাপার, যেমন-- টেক নাম্বার আশি, নব্বই, একশো হয়ে গেছে কখনও। তবু ভুল হয়ে যাচ্ছে কারো না কারো, ভুল হতেই পারে যে কারো। এরপরও গাইছি, এদিকে রাত বাজে চার কি পাঁচ। তখন খুব কষ্ট লাগতো, খারাপ লাগতো। এখন মজা লাগে, হাসি পায়। আরেকটা ব্যাপার, এফডিসিতে রেকর্ডিংয়ের জন্য খুব ডাক পড়তো আমার। বশির আহমেদ, মাহমুদুন্নবী, খন্দকার ফারুকদের মতো শিল্পীদের সঙ্গে গাইতে গেলে উচ্চতা নিয়ে সমস্যা হতো আমার। তখন আমার জন্য দুই ধাপের সিড়ি বানানো হয়েছিল। সেই দুইধাপের সিড়ি ব্যবহার করে আমার সহশিল্পীর উচ্চতা অনুযায়ী দাড়িয়ে মাইক্রোফোনে এক পাশে গাইতাম আমি। সেসময় খুব মজা লেগেছিল। এখন মনে হয়, সিড়িটা যদি রেখে দিতাম খুব ভালো হতো।

গ্লিটজ: শেষ কবে রেকর্ডিং করেছেন?

সাবিনা ইয়াসমিন: স্বাধীনতার কিছু পরেই যন্ত্রশিল্পী, কণ্ঠশিল্পীদের একসঙ্গে রেকর্ডিং করা বন্ধ হয়ে যায়। আমি সম্ভবত সিনেমার জন্য এফডিসিতে শেষ রের্কডিং করেছিলাম ১৯৭৩-৭৪ সালের দিকে। যুদ্ধের পরেই ব্যাক্তিগত উদ্যোগে বেশ কয়েকটি স্টুডিও গড়ে ওঠে। এর মধ্যে আতা ভাইয়ের ‘শ্রুতি’ স্টুডিও প্রতিষ্ঠিত হয় প্রথম দিকেই। এগুলোর ফলে এফডিসিকেন্দ্রিক রেকর্ডিং কমে গেছে ধীরে-ধীরে। আর এখন তো ঘরে-ঘরে স্টুডিও…

গ্লিটজ: এই ঘরে ঘরে স্টুডিও হওয়া কেমন হয়েছে? প্রযুক্তির কল্যাণে আপনার সেই লাইভ টেকের কষ্টটা কিন্তু এখন আর নেই...

সাবিনা ইয়াসমিন: আগেই বলেছি ঘণ্টার পর ঘণ্টা রিহার্সাল করে রেকর্ডিং করা গানে প্রাণের ছোঁয়া ছিল। সেটা একটু-একটু করে গাইতে গেলে কখনোই পাওয়া যাবে না। তবুও, আধুনিক যুগ এসেছে, নতুন প্রযুক্তি এবং যুগের পরিবর্তনের ফলে পরিবর্তন আসবেই। যতো স্টুডিওই হোক না কেন, সার্বিক দিক থেকে মানসম্পন্ন হলেই ভালো।

গ্লিটজ: আপনার গান গাওয়া কমে গেছে কেনো?

সাবিনা ইয়াসমিন: আমার মনে হয়, এখনকার সিনেমার ধরন অনুযায়ী যে গান হয় তাতে আমাকে খুব একটা প্রয়োজন হয় না। হয়তো এখনও ভালো গান হয়… ভালো গান বলতে মেলোডিয়াস বলছি যেগুলোকে। আমরা যে ধরনের গান গেয়ে এসেছি আমাদের সংগীত জীবনে, সেই সময়ে সামাজিক সিনেমায় গান এসেছে সিচুয়েশনের প্রয়োজনে। যে সিচুয়েশন না আসলে গানটাই আসতো না। সেই ধরনের সামাজিক সিনেমা এখন খুব একটা তৈরি হচ্ছে বলে মনে হয় না। সুতরাং তেমনও গানও হয় এবং আমাকেও প্রয়োজন হচ্ছে না।

গ্লিটজ: আপনার গাওয়ার ইচ্ছা আছে? পাশের দেশে প্রবীণ শিল্পীরা এখনও গাইছেন। সংগীত পরিচালকরা এখনও তাদের ব্যবহার করছেন সিনেমার গানে, গানগুলো জনপ্রিয়তাও পাচ্ছে। আমাদের সংগীত পরিচালকরা কি তাহলে ব্যর্থ হচ্ছেন না আপনাদের ব্যবহার করতে?

সাবিনা ইয়াসমিন: গাওয়ার ইচ্ছা আছে অবশ্যই। তরুণ সংগীত পরিচালকদের দোষ খুব একটা দেবো না। আমি মাঝে মাঝে শুনতে পাই, তারা আমার কাছে আসতে ভয় পায়। আরেকটা বিষয় আগেই বলেছি, সেই ধরনের গানগুলো হচ্ছে না খুব একটা। যাই হোক না কেনো, আমার কথা হচ্ছে-- অ্যাপ্রোচটা করুক আগে। আমি কাউকে দোষ দিই না বা ব্যর্থ বলবো না। আগেই বলেছি সময়েরও নিজস্ব দাবি আছে, পরিবর্তন অবশ্যই আসবে।

গ্লিটজ: গান নির্বাচনে আপনার মতামত কতোটা প্রতিফলিত হয়েছে?

সাবিনা ইয়াসমিন:
সিনেমার গানের জন্য আমার বলার কিছু ছিল না, আমি বলতামও না। কারণ আমার কাছে যেসব গান আসতো সেসব বিশেষত আমার উপযোগী করে এবং আমাকে উদ্দেশ্য করেই তৈরি করা হতো। অর্থ্যাৎ মেলোডিয়াস গানগুলো বিশেষ করে একটু দুঃখের, খুব প্রেমের গানগুলোই আসতো বেশি, গেয়েছিও। দেশের গান আছেই। আমি চটুল গানও অনেক গেয়েছি, সেগুলো হয়তো ততোটা জনপ্রিয় হয়নি, জানি না কেন!

গ্লিটজ: কোন ধরনের গান গাইতে ভালো লাগে আপনার?

সাবিনা ইয়াসমিন: গান আমার কাছে গানই। যে ধরনের হোক না কেনো, আমার গাইতে ভালো লাগে। তবে যদি তার মধ্যে মেলোডি থাকে, ভালো লাগার পরিমাণটা বেড়ে যায় শুধু। আামাদের লোকসংগীতে যেমন মেলোডির কোন অভাব নেই। আর অন্যান্য দিক থেকেও সেগুলো সমৃদ্ধ, আমি খুব টান অনুভব করি।

গ্লিটজ: বর্তমান প্রজন্মের গান শোনা হয়? কেমন করছে তারা?

সাবিনা ইয়াসমিন: এখনকার ছেলেমেয়েদের গান শোনা হয়। ভালোই গাইছে। তবে সবাই খুব ভালো গাইছে তা বলতে পারছি না। এখন এতো বেশি শিল্পী, কে কোন গান গাইছে, মনে রাখা মুশকিল। তবে কিছু কিছু গান ভালোই লাগে।

গ্লিটজ: আপনার দুই ছেলেমেয়ে, সংগীতের প্রতি তাদের আগ্রহ কেমন?

সাবিনা ইয়াসমিন: পুরোপুরিভাবে গানের জগতে না আসলেও, তাদের প্রচণ্ড আগ্রহ আছে। মেয়েটা এখনও উচ্চাঙ্গ সংগীত শিখছে। এর মধ্যে দুজনে মিলে একটা অ্যালবামও করেছি। সামনে আরও কাজ করার ইচ্ছা আছে। এবছর নতুন অ্যালবামের জন্য অন্তত দুয়েকটা গানের রেকর্ডিং করবো। তবে কার সুরে অ্যালবামের কাজ করবো, সেই সিদ্ধান্ত এখনও নেইনি। এবারের ঈদে ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে দেখতে পাবেন আমাদের দুজনকে। সংগীতের প্রতি ছেলেরও খুব আগ্রহ আছে। কিন্তু বিদেশে থাকায় খুব একটা সময় দিতে পারে না।

গ্লিটজ: আপনি এবং কবীর সুমন একটি দ্বৈত গানের অ্যালবাম করেছিলেন বিয়ের পরে, এর পরে আর অ্যালবাম করলেন না...

সাবিনা ইয়াসমিন: সেই ‘তেরো’ অ্যালবামটার পরে আর কিছু করা হয়নি। তার সুরে একক অ্যালবাম করেছি দুটি। তিনি আজকাল গান গাওয়া বা অ্যালবাম করার প্রতি খুব একটা আগ্রহী না।

গ্লিটজ: গান গাওয়ানো?

সাবিনা ইয়াসমিন: হ্যা, সুর করতে তিনি এমনিতেই খুব পছন্দ করেন। গীতিকার, সুরকার হিসেবে অসাধারণ মানের একজন। সম্প্রতি ‘জাতিস্মর’ সিনেমায় সংগীত পরিচালনার জন্য সে দেশের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও পেয়েছেন। আরও কয়েকটা সিনেমার কাজ করছেন। গান গাওয়ার চাইতে গান সুর করা, কম্পোজ করা, ইন্সট্রুমেন্ট বাজানোর প্রতিই বেশি আগ্রহ তার।

গ্লিটজ: আপনার দুজনের গাওয়া, ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ গানটি ইউটিউবে বেশ জনপ্রিয়...

সাবিনা ইয়াসমিন: গানটা কলকাতায় খুবই জনপ্রিয় হয়েছে। কোন রেকর্ড ছাড়াই গানটি প্রচুর ছড়িয়েছে, কোথাও গাইতে গেলেই অনুরোধ আসে, এই গানটি গাওয়ার এবং শুরু করলে অডিয়েন্সও গলা মেলাতে শুরু করে। গানটি কিন্তু আগে শোনেনি তারা।

গ্লিটজ: আপনার শারীরিক অবস্থা কেমন?

সাবিনা ইয়াসমিন: ভালো, আল্লাহর রহমতে খুবই ভালো আছি। ২০০৭ সালে ক্যান্সার ধরা পড়েছিল আমার। এখন নিয়মিত চেকআপ করতে হয়, আপাতত কোনও সমস্যা নাই।