হিন্দি সিনেমা ঠেকানোর আন্দোলন ‘স্থগিত’

‘আগামীতে বাংলাদেশে আর কোনো ভারতীয় সিনেমা আমদানি করা হবে না’ -- এ মর্মে তথ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টার ‘আশ্বাস’ মিলেছে দাবি করে চলমান আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ঐক্যজোট।

জয়ন্ত সাহাও তানজিল আহমেদ জনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Jan 2015, 12:16 PM
Updated : 27 Jan 2015, 12:36 PM

একই সঙ্গে ধর্মঘট তুলে নিয়ে মঙ্গলবার থেকে আবারো চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট সব কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।

মঙ্গলবার বিকালে গ্লিটজকে এ খবর নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সহ-সভাপতি ও ঐক্যজোট নেতা সোহানুর রহমান সোহান।

সোহান বলছেন, “তথ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টার আশ্বাস পেয়ে আমরা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের বিশ্বাস বাংলা চলচ্চিত্রকে ধ্বংস করার জন্য আমদানি করা ভারতীয় সিনেমার বিরুদ্ধে সরকার খুব শীঘ্রই কোনো পদক্ষেপ নেবে। আমরা তাই আন্দোলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

ফাইল ছবি

এর আগে সোমবার চলচ্চিত্র ঐক্যজোট নেতারা তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেখানে আরও ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম হারুন অর রশীদ।

ঐক্যজোট নেতাদের মধ্যে ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার জাহান ঝন্টু, সহ-সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান, মুশফিকুর রহমান গুলজার, অভিনেতা শাকিব খান, মিশা সওদাগরসহ অনেকে।

তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বার্তায় জানানো হয়েছে, বৈঠকে পরিচালক সমিতির নেতৃবন্দ ও অভিনেতারা ভারতীয় হিন্দি চলচ্চিত্র আমদানি ও প্রদর্শন বন্ধে তথ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

বৈঠকে তথ্যমন্ত্রী ঐক্যজোট নেতাদের জানান, ভারতীয় হিন্দি চলচ্চিত্র আমদানি ও প্রদর্শনের সঙ্গে তথ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো ‘প্রশাসনিক অনুমতি’ বা ‘সিদ্ধান্তের’ সম্পর্ক নেই।

মন্ত্রী জানান, এ চলচ্চিত্রগুলো বিমানবন্দর থেকে ছাড় করা বা সেন্সর বোর্ডে জমা দেওয়ার বিষয়টি তথ্য মন্ত্রণালয়ে দুবছর পরীক্ষাধীন থাকার পর এক পর্যায়ে সর্বোচ্চ আদালতের রায় এবং আইন মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তির ভিত্তিতে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ঐ চলচ্চিত্রগুলো বিমানবন্দর থেকে ছাড় হয়ে সেন্সর বোর্ডে জমা পড়ে এবং বোর্ড তা সেন্সর করে।

ফাইল ছবি

মন্ত্রী বলেন, “আদালতের রায়ের বিষয়ে সরকারের হাত বাধা। তবে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে বাধা নেই।”

তথ্যমন্ত্রী দ্রুত বিরোধ নিষ্পত্তি করে দেশীয় চলচ্চিত্র শিল্প বিকাশে চলচ্চিত্র প্রযোজক-প্রদর্শক-পরিচালক-শিল্পীদের একযোগে কাজ করার ‘আহ্বান’ জানান।

বৈঠক শেষে সোহানুর রহমান সোহান দাবি করছেন, “তারা দুজনই আমাদের আশ্বস্ত করেছেন পরবর্তীতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহে ভারতীয় সিনেমা প্রদর্শিত হবে না। ইতোমধ্যে সেন্সর সনদ পাওয়া ‘‘ডন-টু’, ‘তারে জামিন পার’, ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমাগুলো যেন কোনো হলে মুক্তি না পায় সেক্ষেত্রেও তারা সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে সিদ্ধান্ত নেবেন।”

সোহান বলছেন, “আইনি ফাঁকফোকড় গলে পরবর্তীতে যেন কোনো ভারতীয় সিনেমা দেশে মুক্তি না পায় সে ব্যাপারেও আমরা তাদের অনুরোধ করেছি। এ ব্যাপারে সরকার বিশেষ নজর দেবেন বলে তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।”

বৈঠক শেষে ঐক্যজোট নেতা মুশফিকুর রহমান গুলজার গ্লিটজকে জানান, শুধু বাণিজ্যিক সিনেমাই নয়, বাস্তব কাহিনিভিত্তিক সিনেমা আমদানি করার ক্ষেত্রেও তথ্যমন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেছেন। একই সঙ্গে সাফটা চুক্তি অনুযায়ী ভারতীয় সিনেমা আমদানির ক্ষেত্রে খুব শিগগিরই তথ্য মন্ত্রণালয় একটি পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করবে।

এদিকে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির শাকিব-মিশা-সোহান-গুলজারের সিনেমা প্রদর্শন না করার সিদ্ধান্তের বিষয়ে গুলজার বলছেন, “প্রদর্শক নেতারা কোন যুক্তিতে এসব কথা বলছেন বুঝতে পারছি না। তাদের নেতাদের অনেকের তো নিজস্ব কোনো হল নেই। আবার অনেকে বুকিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করছে। শাকিব-মিশাদের সিনেমা না চালালে তারা কি করে টিকে থাকবে!”

এদিকে প্রদর্শক সমিতির সহ-সভাপতি সুদীপ্ত দাশ বলছেন, যদি সরকার ভারতীয় সিনেমা আমদানির ক্ষেত্রে সত্যিই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন, প্রদর্শক সমিতি আবারো আদালতে যাবে।