ঢাকায় ব্যান্ড সংগীত উৎসব

ঢাকার মঞ্চে একসঙ্গে পারফর্ম করলো বিশটি ব্যান্ড। সোমবার এই ঘটনার সাক্ষী হয়ে থাকল বাংলা গানের শ্রোতারা। সোমবার দিনভর চলে ‘কোকাকোলা-চ্যানেল আই ব্যান্ড ফেস্ট’। 

জয়ন্ত সাহাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Dec 2014, 11:41 AM
Updated : 2 Dec 2014, 11:41 AM
পরিকল্পনা ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চুর। ভাবছিলেন বাংলাদেশের ব্যান্ড সংগীত নিয়ে একটি ‘ব্যতিক্রমী’ আয়োজন করবেন। পরিকল্পনার কথা ভাগ করে নেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগরের সঙ্গে। সাগরও বললেন ‘হয়ে যাক ভিন্ন কিছু।’ ‘ব্যান্ড ফেস্ট’ আয়োজনের কৃতিত্ব তাই এই দুজনের।

ব্যান্ড ফেস্টে অংশ নিতে আয়োজকরা আমন্ত্রন জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের অনেকগুলো দলকে।আয়োজকদের ডাকে সাড়া দিয়ে উৎসবে অংশ নিয়েছে ব্ল্যাক, আর্টসেল, এল আর বি, অবসকিউর, প্রমিথিউস, ডিফারেন্ট টাচ, উচ্চারণ, আর্ক, মেহরীন, তীরন্দাজ, চিরকুট, শূন্য, রেডিও অ্যাকটিভ, পার্থিব, জলের গান, দূরবীণ, ব্যান্ড সিক্স এবং চট্টগ্রামের ব্যান্ডদল বে অব বেঙ্গল ও পিপীলিকা।

স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশে পপ সংগীতের ‘গুরু’ আজম খানের পাশাপাশি ফেরদৌস ওয়াহিদ, নাজমা জামান, পিলু মমতাজ, ফকির আলমগীরসহ অগ্রজদের স্মরণ করেই শুরু হল ‘ব্যান্ড ফেস্ট’। আজম খান নেই- কথাটি মানতে নারাজ তার উত্তরসূরীরা। সবাই গানে-গানে বাঁচিয়ে রাখছেন তাদের গুরুকে। ‘গুরু’ স্মরণে আইয়ুব বাচ্চু খালি গলায় শোনালেন তার লেখা ‘লম্বা চুলের মানুষটা গাইছে গান...'।

শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর হঠাৎ মৃত্যুতে স্তম্ভিত সংস্কৃতি অঙ্গন। শোকের কালো ছায়া পড়েছিল ব্যান্ড উৎসবেও। আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীরা এক মিনিট নীরবতা পালন করলেন, শ্রদ্ধা জানালেন সদ্যপ্রয়াত শিল্পীকে।

উৎসবের শুরুতেই ফকির আলমগীর, আজাদ রহমান, ফেরদৌস আরা মঞ্চে এসে নবীন ব্যান্ডশিল্পীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে গেলেন। অনুরোধ করলেন, "অন্যান্য সংগীতের পাশাপাশি ব্যান্ড সংগীত নিয়ে বিশ্ব দরবারে বাংলা গানকে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।”

আসর শুরু করলেন আজম খানের ব্যান্ডদল ‘উচ্চারণ’। তারা গাইলেন গুরুর গাওয়া দুটি জনপ্রিয় গান ‘ওরে সালেকা, ওরে মালেকা...’ এবং ‘ রেললাইনের বস্তিতে...’ । 

উচ্চারণের পর মঞ্চে উঠল চট্টগ্রামের ব্যান্ডদল ‘বে অফ বেঙ্গল’। বিজয়ের মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে ভোকাল বখতিয়ার হোসেন গাইলেন ‘বিদ্রোহ’ ট্র্যাকটি। তারপর তরুণ শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে গাইলেন রোমন্টিক ট্র্যাক ‘জোছনা স্নান’। চট্টগ্রাম থেকে এসেছিল আরেকটি ব্যান্ড। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের নিয়ে গড়া তীরন্দাজ শোনাল ‘জাগো বাংলাদেশ’, ‘গড়বো বাংলাদেশ’ গান দুটি।

এরপরই সঞ্চালক অপু মাহফুজ মঞ্চে ডাকলেন মেহরীনকে। অনেকদিন পর লাইভ পারফরমেন্সে মেহরীন শুরু করলেন ‘তুমি আছো বলে...’ দিয়ে। আরও গাইলেন ‘আনাড়ি’ গানটি।

নরওয়ে, ভারতসহ বেশ কটি দেশ মাতিয়ে আসা চিরকুট ব্যান্ডের কাছে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’। গানে, গানে বাংলা ও বাঙ্গালির কথা বলতে চান তারা। চিরকুটের পাশেই মঞ্চে হাজির ছিল ‘জলের গান’। চিরকুটের ভোকাল সুমি, পিন্টু যখন ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি’ বলে সুর ধরলেন, দেশের গানে মাতোয়ারা হতে তাদের সঙ্গে যোগ দিলেন জলের গানের কণক, রাহুল, ইমন। দর্শকের অনুরোধে চিরকুট আরও শোনালো ‘জাদুর শহর’ ও ‘কানামাছি’ গান দুটি।

এরপর জলের গানের পালা। তারা শোনালো ‘বকুল ফুল’, ‘এমন যদি হতো আমি পাখির মতো’ এবং ‘পাতার গান’।

রিয়ালিটি শো ‘গেট সেট রক’ থেকে উঠে আসা নতুন ব্যান্ডদল সিক্স ব্যান্ড গাইল ‘কানার হাটবাজার’ ও ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর’ গান দুটি।

অনেকদিন ধরেই আলোচনায় নেই ব্যান্ডদল আর্ক। নব্বইয়ের দশকের আলোচিত এই ব্যান্ডটি আবারও নিজেদের গুছিয়ে নিচ্ছে। ব্যান্ড ফেস্টে এসে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিলেন। ‘জন্মভূমি’ অ্যালবাম থেকে হাসান গাইলেন ‘প্রেম তুমি’ গানটি। হারিয়ে যায়নি বিপ্লব ও তার ব্যান্ড প্রমিথিউস। তারাও পারফর্ম করেছে চ্যানেল আইয়ের এই ব্যান্ড উৎসবে।

উৎসবে এসেছিল অবসকিওর এবং ডিফারেন্ট টাচও। পড়ন্ত বিকালে অবসকিওর শোনাল ‘বৃষ্টি’ আর ‘স্বাধীনতার বীজমন্ত্র’ গান দুটি। ডিফারেন্ট টাচ গাইলো ‘মন কি যে চায় বলো’, ‘শ্রাবণের মেঘগুলো’। তাদের গান যেন সবাইকে নিয়ে গেলো বাংলা ব্যান্ড সংগীতের সেই সোনালী অতীতে। 

উৎসব মাতিয়ে রেখেছিল হাল আমলের রেডিও অ্যাকটিভ, পার্থিব, সিক্স, পিপীলিকা ব্যান্ডগুলো। দুপুর আর বিকাল মাতিয়ে তারা জানাল, ব্যান্ড সংগীত নিয়ে তারা যেতে চায় অনেকদূর। শহীদের ব্যান্ড দুরবীন গাইল ‘এমন মানব জনম আর কি হবে’, ‘কত স্বপ্ন আছে তোর চোখে’ গান দুটি।

আইয়ুব বাচ্চু এলআরবির সদস্যদের নিয়ে মঞ্চে আসতেই ব্যান্ড উৎসব পেল এক অন্য মাত্রা। তরুণরা তখন একের পর এক গানের আবদার ছুঁড়ে দিচ্ছে। আবদার রাখলেন বাচ্চু, গাইলেন ‘কত দিন দেখিনি দুচোখ‘, ‘সেই তুমি কেন অচেনা হলে’, ‘মন চাইলে মন পাবে’, ‘রূপালী গিটার’ গানগুলো।

শেষ হলো পরিবেশনা। কিন্তু আইয়ুব বাচ্চুকে মঞ্চ থেকে নামতে দিচ্ছে না তরুণরা। আয়োজনের ক্রম অনুযায়ী মঞ্চে তখন আর্টসেল। তারা শোনালো ‘অন্য সময়’ আর ‘চিলেকোঠার সেপাই’ গান দুটি।

বিকাল গড়িয়ে তখন সন্ধ্যা নামছে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে মঞ্চে এলেন ফরিদুর রেজা সাগর। তিনি ঘোষণা দিলেন, এখন থেকে ১লা ডিসেম্বর প্রতি বছর ব্যান্ড দিবস হিসেবে উদযাপন করবেন তারা। প্রবীণদের পাশাপাশি থাকবে নতুন ব্যান্ডদলগুলোও।