ব্যান্ড ফেস্টে অংশ নিতে আয়োজকরা আমন্ত্রন জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের অনেকগুলো দলকে।আয়োজকদের ডাকে সাড়া দিয়ে উৎসবে অংশ নিয়েছে ব্ল্যাক, আর্টসেল, এল আর বি, অবসকিউর, প্রমিথিউস, ডিফারেন্ট টাচ, উচ্চারণ, আর্ক, মেহরীন, তীরন্দাজ, চিরকুট, শূন্য, রেডিও অ্যাকটিভ, পার্থিব, জলের গান, দূরবীণ, ব্যান্ড সিক্স এবং চট্টগ্রামের ব্যান্ডদল বে অব বেঙ্গল ও পিপীলিকা।
শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর হঠাৎ মৃত্যুতে স্তম্ভিত সংস্কৃতি অঙ্গন। শোকের কালো ছায়া পড়েছিল ব্যান্ড উৎসবেও। আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীরা এক মিনিট নীরবতা পালন করলেন, শ্রদ্ধা জানালেন সদ্যপ্রয়াত শিল্পীকে।
উৎসবের শুরুতেই ফকির আলমগীর, আজাদ রহমান, ফেরদৌস আরা মঞ্চে এসে নবীন ব্যান্ডশিল্পীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে গেলেন। অনুরোধ করলেন, "অন্যান্য সংগীতের পাশাপাশি ব্যান্ড সংগীত নিয়ে বিশ্ব দরবারে বাংলা গানকে পরিচয় করিয়ে দিতে হবে।”
আসর শুরু করলেন আজম খানের ব্যান্ডদল ‘উচ্চারণ’। তারা গাইলেন গুরুর গাওয়া দুটি জনপ্রিয় গান ‘ওরে সালেকা, ওরে মালেকা...’ এবং ‘ রেললাইনের বস্তিতে...’ ।
এরপরই সঞ্চালক অপু মাহফুজ মঞ্চে ডাকলেন মেহরীনকে। অনেকদিন পর লাইভ পারফরমেন্সে মেহরীন শুরু করলেন ‘তুমি আছো বলে...’ দিয়ে। আরও গাইলেন ‘আনাড়ি’ গানটি।
নরওয়ে, ভারতসহ বেশ কটি দেশ মাতিয়ে আসা চিরকুট ব্যান্ডের কাছে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’। গানে, গানে বাংলা ও বাঙ্গালির কথা বলতে চান তারা। চিরকুটের পাশেই মঞ্চে হাজির ছিল ‘জলের গান’। চিরকুটের ভোকাল সুমি, পিন্টু যখন ‘এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি’ বলে সুর ধরলেন, দেশের গানে মাতোয়ারা হতে তাদের সঙ্গে যোগ দিলেন জলের গানের কণক, রাহুল, ইমন। দর্শকের অনুরোধে চিরকুট আরও শোনালো ‘জাদুর শহর’ ও ‘কানামাছি’ গান দুটি।
এরপর জলের গানের পালা। তারা শোনালো ‘বকুল ফুল’, ‘এমন যদি হতো আমি পাখির মতো’ এবং ‘পাতার গান’।
রিয়ালিটি শো ‘গেট সেট রক’ থেকে উঠে আসা নতুন ব্যান্ডদল সিক্স ব্যান্ড গাইল ‘কানার হাটবাজার’ ও ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর’ গান দুটি।
অনেকদিন ধরেই আলোচনায় নেই ব্যান্ডদল আর্ক। নব্বইয়ের দশকের আলোচিত এই ব্যান্ডটি আবারও নিজেদের গুছিয়ে নিচ্ছে। ব্যান্ড ফেস্টে এসে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিলেন। ‘জন্মভূমি’ অ্যালবাম থেকে হাসান গাইলেন ‘প্রেম তুমি’ গানটি। হারিয়ে যায়নি বিপ্লব ও তার ব্যান্ড প্রমিথিউস। তারাও পারফর্ম করেছে চ্যানেল আইয়ের এই ব্যান্ড উৎসবে।
উৎসবে এসেছিল অবসকিওর এবং ডিফারেন্ট টাচও। পড়ন্ত বিকালে অবসকিওর শোনাল ‘বৃষ্টি’ আর ‘স্বাধীনতার বীজমন্ত্র’ গান দুটি। ডিফারেন্ট টাচ গাইলো ‘মন কি যে চায় বলো’, ‘শ্রাবণের মেঘগুলো’। তাদের গান যেন সবাইকে নিয়ে গেলো বাংলা ব্যান্ড সংগীতের সেই সোনালী অতীতে।
উৎসব মাতিয়ে রেখেছিল হাল আমলের রেডিও অ্যাকটিভ, পার্থিব, সিক্স, পিপীলিকা ব্যান্ডগুলো। দুপুর আর বিকাল মাতিয়ে তারা জানাল, ব্যান্ড সংগীত নিয়ে তারা যেতে চায় অনেকদূর। শহীদের ব্যান্ড দুরবীন গাইল ‘এমন মানব জনম আর কি হবে’, ‘কত স্বপ্ন আছে তোর চোখে’ গান দুটি।
শেষ হলো পরিবেশনা। কিন্তু আইয়ুব বাচ্চুকে মঞ্চ থেকে নামতে দিচ্ছে না তরুণরা। আয়োজনের ক্রম অনুযায়ী মঞ্চে তখন আর্টসেল। তারা শোনালো ‘অন্য সময়’ আর ‘চিলেকোঠার সেপাই’ গান দুটি।
বিকাল গড়িয়ে তখন সন্ধ্যা নামছে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে মঞ্চে এলেন ফরিদুর রেজা সাগর। তিনি ঘোষণা দিলেন, এখন থেকে ১লা ডিসেম্বর প্রতি বছর ব্যান্ড দিবস হিসেবে উদযাপন করবেন তারা। প্রবীণদের পাশাপাশি থাকবে নতুন ব্যান্ডদলগুলোও।