ইন্ডাস্ট্রি বড় বেশি কমার্শিয়াল: সায়মন

এ প্রজন্মের সম্ভাবনাময় অভিনেতাদের মধ্যে একজন সায়মন সাদিক। তার অভিনীত ‘তোমার কাছে ঋণী’ এবং ‘তুই শুধু আমার’ সিনেমা দুটি এ বছর মুক্তি পেলেও সেভাবে সাড়া ফেলতে পারেনি। ক্যারিয়ার নিয়ে নতুন করে ভাবছেন তিনি। গ্লিটজের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিলেন নিজের পরিকল্পনাগুলো, সেই সঙ্গে আলাপ হলো ঢাকাই সিনেমার হালচাল নিয়ে। 

তানজিল আহমেদ জনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2014, 01:44 PM
Updated : 21 Nov 2014, 01:44 PM

সাফিউদ্দিন সাফি পরিচালিত ‘ব্ল্যাকমানি’ সিনেমার সেটে গ্লিটজের মুখোমুখি হয়েছিলেন এই অভিনেতা। আড্ডার ফাঁকে তার ছবি তুলেছেন তানজিল আহমেদ জনি।

গ্লিটজ:  সাফিউদ্দিন সাফির সঙ্গে প্রথমবারের মতো কাজ করছেন। ‘ব্ল্যাকমানি’ সিনেমায় আপনার চরিত্র সম্পর্কে কিছু বলুন।

সায়মন: সিনেমাতে আমি শ্রাবণ চরিত্রে অভিনয় করছি। টাকাপাগল ছেলেটির জীবনে একটাই চাওয়া- টাকা আর টাকা। টাকার লোভে যে কোনো কাজ করতেই প্রস্তুত। এক পর্যায়ে সে জড়িয়ে পড়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে। আর তখনই পরিচয় নায়িকার সঙ্গে। তখন জড়িয়ে পড়ে প্রেমের সম্পর্কে। ভুল বুঝতে পারে। অন্ধকার জীবন থেকে বেরিয়ে আলোর সন্ধান পায় তারা।

গ্লিটজ: আপনার অভিনীত চরিত্রটির মাধ্যমে দশর্কের কাছে কি বার্তা পৌছাতে চান?

সায়মন: মানুষ তার জীবনে টাকার পেছনে অবশ্যই ছুটবে কিন্তু তা অবশ্যই সৎ পথে টাকা উর্পাজনের জন্য। কোনোভাবেই অন্যায় পথে টাকা উর্পাজনের জন্য নয়। যদি অসৎ উপায়ে কিংবা অসৎ পথে মানুষের জীবনে কোনো টাকা আসে তাহলে মানুষ যেন সে টাকা গ্রহণ না করে।

গ্লিটজ: আপনার সহশিল্পী কেয়াকে কেমন দেখছেন?

সায়মন: কেয়ার সঙ্গে এটি আমার দ্বিতীয় সিনেমা। ওর সঙ্গে আমার প্রথম কাজ ছিল শাহীন সুমনের ‘মন শুধু তোমারই’। শিডিউল মেলাতে না পারায় সিনেমাটির শুটিং এখন বন্ধ রয়েছে। আর কেয়া খুবই ভালো কাজ করে। ওর সিনেমাগুলো দেখেছি। সহশিল্পী হিসেবে সে দারুণ।

গ্লিটজ: কিছুদিন পরই মুক্তি পাবে ‘স্বপ্ন ছোঁয়া’ সিনেমাটি। ববির বিপরীতে এটাই আপনার প্রথম চলচ্চিত্র। এ চলচ্চিত্রে কোন চরিত্রে কাজ করছেন?

সায়মন:  এ বছর ১২ই ডিসেম্বর সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে। সিনেমাতে আমি মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা ছেলে শক্তির চরিত্রে আমি অভিনয় করছি। শক্তির জীবনে তার বাবা-মা নেই। কিন্তু জীবন নামে তার একজন ধনী বন্ধু আছে। উভয় বন্ধুর জীবনে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ আসলেও শক্তি সবসময় জীবনকে বাঁচানোর জন্য ঝুঁকি নেয়। তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে আর্বিভাব ঘটে নায়িকা ববির। এভাবে নানা নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায় সিনেমার গল্প।

‘স্বপ্নছোঁয়া’ সিনেমাটি নিয়ে আমি বেশ আশাবাদী।

গ্লিটজ: আপনার সমসাময়িক অভিনেতাদের সিনেমাগুলো একের পর এক মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে। আর আপনার সিনেমাগুলোর মুক্তি পাচ্ছে বেশ দেরি করে। আপনার কি মনে হচ্ছে না, আলোচনা থেকে সরে যাচ্ছেন?

সায়মন: আমাদের ইন্ড্রাষ্ট্রির কথা বিবেচনা করলে আমার মনে হয় বছরে পাঁচ-ছয়টির বেশি সিনেমা মুক্তি পাওয়া খুব বড় সমস্যা। সেক্ষেত্রে যদি বছরে একটি সিনেমা করেই চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হতো তাহলে বছরে আমি একটি সিনেমা করতাম। কিন্তু এখনো আমাদের এখানে সেই বাজারটা গড়েও উঠে নাই।

আলোচনার কথা বলছেন। আমাদের সিনেমার প্রচারণাও সেভাবে হচ্ছে না। সিনেমা নিয়ে যদি সেভাবে প্রচারণা না হয়, তাহলে আমরা আলোচনায় আসব কি করে?

তবে মূল কথা হল, ঘন ঘন আমার সিনেমা মুক্তি পাক এটা আমি চাই না।

গ্লিটজ: ‘ইটিশ পিটিশ প্রেম’, ‘মাটির পরী’, ‘ভালোবাসি হয়নি বলা’, ‘ধ্বংস মানব’ সিনেমাগুলোতে আপনার বিপরীতে নতুন নায়িকারা অভিনয় করছেন। নবাগতাদের সঙ্গে অভিনয়ের ব্যাপারটি একটু ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে না?

সায়মন: কিছুটা ঝুঁকি তো থাকেই । চুক্তি সম্পাদনের সময় আমি জানি একজনের কথা, শুটিংয়ে গিয়ে দেখি অন্য নায়িকা, এমনও হয়েছে। পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, নানা আনুষঙ্গিক কারণে প্রথম নায়িকা সিনেমাটি করছেন না। তার পরিবর্তে অন্য নায়িকা নেওয়া হয়েছে। বেশকটি সিনেমাতে ব্যাপারটি এত খারাপ লেগেছে যে আমি সাইনিং মানি ফেরত দিয়েছি। মনে হচ্ছে প্রথম থেকেই আমার এ বিষয়ে আরেকটু নজর দেওয়া উচিৎ ছিল।

গ্লিটজ: প্রযোজনা সংস্থা নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনি কি আগের তুলনায় বেশ চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন?

সায়মন: অনেক সময় সুসম্পর্কের কারণে অনেক কাজ করতে হয়। আগে হিসাব না করেই অনেক কাজ করেছি কিন্তু সেই সুযোগটা এখন আর নেই। এখন আমি অনেক ভাবনা-চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। তাছাড়া আমি সব সিনেমাতে অভিনয়ও করছি না। ভালো গল্প, ভালো প্রযোজনা সংস্থা, ভালো পরিচালক সব কিছু মিলিয়ে আমি কাজ করার চেষ্টার করছি।

গ্লিটজ: ঢাকাই সিনেমাকে আপনি কতটুকু দিয়েছেন আর এই শিল্প আপনাকে কতটুকু দিতে পেরেছে?

সায়মন: আমিতো কিছুই দিতে পারলাম না। আমি কিছু দিতে পারলে তো ইন্ড্রাষ্ট্রি আমাকে কিছু দিবে।

গ্লিটজ: মাহী, কেয়া ছাড়াও আরো অনেকের সঙ্গেই কাজ করেছেন। বিভিন্ন সময়ে যাদের সঙ্গে কাজ করেছেন তাদের সম্পর্কে কিছু বলুন..

সায়মন: আমি যখন যার সঙ্গে কাজ করব তখন সেই আমার সহশিল্পী। অনেকের সঙ্গেই তো কাজ করলাম, কারো সঙ্গে কাজ করতে আমার কোনো অসুবিধা হয় না।

গ্লিটজ: কাজ করতে গিয়ে কোনো নায়িকার সঙ্গে বিশেষ ধরনের কোনো বন্ধুত্ব কি গড়ে উঠেছে?

সায়মন: কি বলতে চাইছেন? আমি প্রেম করছি কি না?

গ্লিটজ: আরে না! বন্ধুত্বের ব্যাপারে বলছিলাম। সহ-শিল্পীদের কেউ কি আপনার বন্ধু হয়ে গেছে?

সায়মন: এই মেরেছেন! আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি খুব বেশি কর্মাশিয়াল। এখনও পর্যন্ত মিডিয়াতে কেউ আমার কাছের বন্ধু হয়ে উঠতে পারেনি। সেটে যাদের সঙ্গে কাজ করি তারাই আমার বন্ধু হয়ে ওঠে। ডিরেক্টর ‘প্যাক আপ’ বললেই বন্ধুত্বের গল্পও শেষ।

গ্লিটজ: আগামীতে কোন সিনেমাগুলো মুক্তির তালিকায় রয়েছে?

সায়মন : মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘ইটিশ পিটিশ প্রেম’, রাজু চৌধুরীর ‘তুই শুধু আমার’, শফিক হাসানের ‘স্বপ্ন ছোঁয়া’, এ জে রানার ‘তোমার জন্য পরাণ কান্দে’ এবং ‘অজান্তে ভালোবাসা’, সায়মন তারিকের ‘মাটির পরী, মিজানুর রহমান শামীমের ‘ধ্বংস মানব’, পি এ কাজলের ‘মায়াময়’, এফ আই মানিকের ‘সারপ্রাইজ’, শাহীন সুমনের ‘প্রবাসী ডন’ ও ‘মিয়া বিবি রাজি’ এবং দেবাশীষ বিশ্বাসের ‘মন জ্বলে’।