ব্যক্তিজীবনের নানা টানাপড়েন তার ক্যারিয়ারে বার বার ছাপ ফেলেছে। তারপরও আশির দশকে তরুণ প্রজন্মের সবচেয়ে পছন্দের নায়কদের মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেছিলেন। রোমান্টিক, শিক্ষিত শহুরে তরুণের ভূমিকায় তাকে গ্রহণ করেছিলেন দর্শকরা। সম্ভবত তিনিই ছিলেন সে সময়ের ফ্যাশন আইকন।
১৯৫০ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর ঢাকার গুলশানে জন্ম হয় জাফর ইকবালের। বাড়িতে গানবাজনার রেওয়াজ ছিল। তাঁর বোন শাহানাজ রহমতুল্লাহ একজন সুপরিচিত কণ্ঠশিল্পী। বড় ভাই আনোয়ার পারভেজও নামকরা শিল্পী। জাফর ইকবাল প্রথমে গায়ক হিসেবেই পরিচিতি পান। ১৯৬৬ সালে তিনি নিজের একটি ব্যান্ড গড়ে তোলেন। ‘পিচঢালা পথ’ সিনেমায় তিনি প্রথম গান করেন। মুক্তিযুদ্ধের আগে তিনি কবরীর বিপরীতে ‘আপন পর’ ছবিতে অভিনয় করেন। সেটিই তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র।
জাফর ইকবাল ১৫০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। যার বেশিরভাগই ছিল ব্যবসা সফল। ১৯৮৯ সালে জাফর ইকবাল অভিনীত ত্রিভূজ প্রেমের ছবি ‘অবুঝ হৃদয়’ দারুণ ব্যবসা সফল হয়। এ ছবিতে চম্পা ও ববিতার বিপরীতে তাঁর অভিনয় দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করে। ববিতার সঙ্গে তাঁর জুটি ছিল দর্শক নন্দিত। এই জুটির বাস্তব জীবনে প্রেম চলছে বলেও গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল। তাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়ায় হতাশ হয়েই জাফর ইকবাল অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে জোর গুঞ্জন উঠেছিল। ববিতার বিপরীতে ৩০টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন তিনি। জাফর ইকবাল অভিনীত ‘ভাই বন্ধু’, ‘চোরের বউ’, ‘অবদান’, ‘সাধারণ মেয়ে’, ‘একই অঙ্গে এত রূপ’, ‘ফকির মজনুশাহ’, ‘দিনের পর দিন’, ‘বেদ্বীন’, ‘অংশীদার’, ‘মেঘবিজলী বাদল’, ‘সাত রাজার ধন’, ‘আশীর্বাদ’, ‘অপমান’, ‘এক মুঠো ভাত’, ‘নয়নের আলো’, ‘গৃহলক্ষ্মী’, ‘ওগো বিদেশিনী’, ‘প্রেমিক’, ‘নবাব’, ‘প্রতিরোধ’, ‘ফুলের মালা’, ‘সিআইডি’, ‘মর্যাদা’ ,‘সন্ধি’ ইত্যাদি চলচ্চিত্র সুপারহিট হয়।
চলচ্চিত্রের বাইরে তাঁর গাওয়া গানগুলোর মধ্যে ‘সুখে থেকো ও আমার নন্দিনী’, ‘যে ভাবে বাঁচি, বেঁচে তো আছি’, ‘এক হৃদয়হীনার কাছে’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
আশির দশকের শুরুতে তার ক্যারিয়ার বিভিন্ন কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তিনি ছিলেন বেশ খামখেয়ালী, আবেগপ্রবণ এবং দারুণ অভিমানী। অনিয়মিত জীবনযাপন ও অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে তার হৃদযন্ত্র ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জাফর ইকবালের ক্যারিয়ার যখন মধ্যগগনে তখন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তিনি। ১৯৯১ সালে ২৭শে এপ্রিল মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন জাফর ইকবাল।