সালমান শাহকে দেখেই নায়ক হয়েছি: নিরব

এক ফ্যাশন হাউজের বিলবোর্ড মডেল হয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন অভিনেতা সাখাওয়াত হোসেন নিরব।বিজ্ঞাপনে বেশ সাড়া ফেললেও নাটক বা চলচ্চিত্রে এখনও শক্ত অবস্থান গড়ে তুলতে পারেননি। তবে নিরব হতাশ নন। নিজেকে অভিনেতা হিসেবে প্রমাণ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ তিনি।

তানজিল আহমেদ জনি,  বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Sept 2014, 05:10 AM
Updated : 9 Sept 2014, 07:42 AM

গ্লিটজের আমন্ত্রনে এক সন্ধ্যায় নিরব হাজির হয়েছিলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কার্যালয়ে। আলাপ করলেন ক্যারিয়ার, স্বপ্ন আর ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়ে। ছবি তুলেছেন মামুনুর রশীদ শিশির।

গ্লিটজ: শুরুটা হয়েছিল মডেলিংয়ের মাধ্যমে। সুযোগটা এল কিভাবে?

নিরব : আমার মডেলিংয়ে আসার পিছনে বড় ভূমিকা ছোটবেলার বন্ধু ডেভিডের। ২০০৩ সালের কথা। সবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি।  হঠাৎ একদিন ডেভিড তার  ফটোসেশনে তোলা ছবি আমাকে দেখায়।   তখনই আমার মাথায় ভূত চেপে বসে, আমিও ওর মতো ফটোসেশন করবো। কিন্তু ফটোসেশনের জন্য চাই সাড়ে চার হাজার টাকা।আমার কাছে এত টাকা ছিল না।  বড় ভাইয়া, আপুদের কাছে ব্যাপারটি খুলে বললাম। ওরা আমাকে টাকা দিল। সে টাকা নিয়ে ফটোগ্রাফার তানভির হোসেনের কাছে নিজের ফটোশেসন করাই। তার মাধ্যমেই একটি ফ্যাশন হাউজের মডেল হওয়ার সুযোগ মেলে, সেটি ছিল স্টিল ফটোশুট। সেই ফটোশুটে আমার বিপরীতে ছিল অভিনেত্রী তিশা।

গ্লিটজ : আপনার  র‌্যাম্প মডেলিংয়ের অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

নিরব : ২০০৪ সালে আমার র‌্যাম্পে হাঁটা শুরু হয়। র‌্যাম্পের সুযোগ মিলেছিল বন্ধু ডেভিডের মাধ্যমে।  এক মন্ত্রীর আয়োজিত ফ্যাশন শোতে প্রথম র‌্যাম্পে হাঁটি। এরপর দশটির মতো ফ্যাশন শোতে র‌্যাম্প মডেল হিসেবে কাজ করেছি। সেগুলোর মধ্যে বাটেক্সপো শো ছিলো অন্যতম। আমি  ‘ইউ গট দ্য লুক’ প্রতিযোগিতার শীর্ষ পাঁচে ছিলাম।

গ্লিটজ: বিজ্ঞাপনে কাজের ডাক পেলেন কিভাবে?

নিরব : ২০০৪ সালের মে মাসের কথা। বন্ধু সুমাইয়ার কথা মতো বিজ্ঞাপন নির্মাতা অমিতাভ রেজার অফিসে ছবি জমা দেই। সেদিনই বিকাল বেলা হাফস্টপ ডাউনের অফিস থেকে ডাক এল আমার। তিনি একটি কফি কোম্পানির বিজ্ঞাপনের জন্য আমাকে নির্বাচন করলেন। এ টিভিসিটাই আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিল। এই টিভিসির কল্যাণে আরও বেশ কয়েকটি পণ্যের বিজ্ঞাপনের অফার আসতে লাগল। আমি বিজ্ঞাপনে নিয়মিত হয়ে উঠলাম।

ছবি: মামুনুর রশীদ শিশির/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

গ্লিটজ: মডেলিংয়ে বেশ সফলতা মিলেছিল। বিজ্ঞাপনে অনিয়মিত হয়ে পড়লেন কেন?

নিরব : আমি মনে করি, একজন মডেল হিসেবে দর্শকের কাছে যতটুকু পৌছানোর দরকার আমি পৌঁছেছি। মডেলিং জগতটা যতটুকু দেখা দরকার দেখেছি। আমার কাছে বিজ্ঞাপনের অফার হরহামেশাই আসে। কিন্তু আমি যাচাই বাছাই করে  ভালো মানের কাজ করতে চাই।  এখন সিনেমা নিয়ে ব্যস্ততার কারণে বিজ্ঞাপনে তেমন সময় দিতে পারছি না।

গ্লিটজ : টিভিনাটকে সেভাবে নিয়মিত হয়ে ওঠেননি কেন?

নিরব : মডেলিং যখন করতাম তখন থেকেই নাটকে অভিনয়ের অফার আসতে থাকে।  নাটকে অভিনয়ের ইচ্ছা তখন ছিল না, কিন্তু  অনেকের অনুরোধ তখন ফেলতে পারিনি।  চয়রিকা চৌধুরীর পরিচালনায় ৮টি নাটকে অভিনয় করেছিলাম। এছাড়া চয়নিকা চৌধুরীর ১৩ পর্বের ধারাবাহিক ’বৈশাখ থেকে শ্রাবণ’  এবং নঈম ইমতিয়াজ নেয়ামুলের ‘১০১ এন্যালসন নাম্বার’ ধারাবাহিকে অভিনয় করেছিলাম।

গ্লিটজ :  সিনেমাতে অভিষেক হল কিভাবে?

নিরব : একটি মোবাইল সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সিরিজ বিজ্ঞাপনের পর আমার কাছে সিনেমায় অভিনয়ের প্রস্তাব আসতে শুরু করে।  ২০০৯ সালে শাহীন সুমনের পরিচালনায় ‘মন যেখানে হৃদয় সেখানে’ সিনেমার মাধ্যমেচলচ্চিত্রাঙ্গনে অভিষেক হল।

গ্লিটজ : নিরবকে আলাদাভাবে চেনা যায় - এমন সিনেমা আপনার দৃষ্টিতে কোনগুলো

নিরব : সিনেমায় ব্যতিক্রমধর্মী কোনো কিছু দেওয়ার জন্য যে ধরনের কাজ করা প্রয়োজন সত্যিকার অর্থে আমরা এখনও সে ধরনের কাজ করতে পারি নাই। আমার মোট ১৯টি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। এগুলোর মধ্যে ‘মন যেখানে হৃদয় সেখানে’, ‘মনে বড় কষ্ট’, ‘সাহেব নামের গোলাম’ - এ পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করলেও বেশ সাড়া পেয়েছি।  এছাড়া গাজী মাহাবুবের ‘রাজা সূর্যক’, এ কিউ খোকনের ‘গুরু ভাই’ ,আশরাফ রহমানের ‘তুমি আসবে বলে’ সিনেমাগুলোতে পর্দায় আমাকে একটু অন্যভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

গ্লিটজ : আপনার ‘কুমারী মা’ সিনেমাটি বেশ বিতর্কের মুখে পড়েছিল।

নিরব : সিনেমার কাজে এতটাই ডুবে ছিলাম যে পরিচালক বাবুল রেজার কথার ভিত্তিতেই আমি ‘কুমারী মা’ সিনেমাতে অভিনয় করতে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। সিনেমার নায়িকা তুলি নিজেই ছিল প্রযোজক।  এটা অনেক কম বাজেটের সিনেমা ছিল।  সত্যি বলতে, কোনো কিছু না বুঝেই সিনেমাটিতে অভিনয় করেছিলাম। বুঝতে পারি নি, সিনেমাটি আমার ক্যারিয়ারে একটা কালো দাগ ফেলবে।

ছবি: মামুনুর রশীদ শিশির/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

গ্লিটজ : আপনার সহশিল্পীদের ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কি?

নিরব : ২০০৮ সালে চিত্রনায়ক মান্না মারা যাওয়ার পড়ে শাকিব খান ছাড়া আর কোনো নায়কই ছিল না ঢাকাই সিনেমায়।আমার মতো নবাগত অভিনেতাকে কাজের ক্ষেত্রে যে সহযোগিতা তিনি করেছেন তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। নানা বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেন। তার সেই উপদেশ আমি কখনও ভুলব না।  এছাড়াও নায়িকা অপু বিশ্বাস,পূর্ণিমা, পপি, তমা মির্জা,কেয়া,  রেসি, সাহারা আমার সহশিল্পী হিসেবে কাজের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন।

গ্লিটজ : অভিনেতা হিসেবে কাউকে রোল মডেল মনে করেন?

নিরব : সালমান শাহ। স্কুলবেলায় এই অভিনেতার পাগল ভক্তদের মধ্যে আমি একজন ছিলাম। আমি জানতে পেরেছিলাম, সালমান শাহ পারিশ্রমিক হিসেবে সাত লাখ টাকা পেতেন।  আমারও ইচ্ছা হল, সিনেমাতে অভিনয় করে সাত লাখ টাকা কামাব। একেবারেই ছেলেমানুষি চিন্তা। আমি তার সিনেমা হলে গিয়ে দেখতে  কত কাণ্ড ঘটিয়েছি। মূলত তার অভিনয় দেখেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমি চলচ্চিত্রে একদিন জায়গা করে নেব।

গ্লিটজ : সালমান শাহ্ অভিনীত ‘অন্তরে অন্তরে’ সিনেমার রিমেইকে অভিনয় করছেন। সে প্রসঙ্গে কিছু বলুন।

নিরব : ‘অন্তরে অন্তরে’ সিনেমার রিমেইক করছেন পরিচালক আতিক রহমান। সিনেমার কাজ ত্রিশ ভাগ করার পর পরিচালকের মনে হলো গল্পে নতুনত্ব আনা প্রয়োজন। কেননা সিনেমায় যদি দর্শকের জন্য আধুনিকতার ছোঁয়া ও নতুন কিছুই না থাকে তাহলে দর্শক কিভাবে সিনেমাটিকে গ্রহন করবে। ঈদুল আযহার পরেই আমরা আবারও সিনেমার শুটিং শুরু করতে যাচ্ছি।

গ্লিটজ : এখন কোন কোন সিনেমাতে অভিনয় করছেন?

নিরব: অঞ্জন দত্তের ‘মন বাকসো’ , আহমেদ আলী মন্ডলের ‘প্রবাসীর প্রেম’, সাইফ চন্দনের ‘টার্গেট’, ওয়াকিল আহমেদের ‘লাভ ইন কোরিয়া’ সিনেমাতে অভিনয় করছি। শুটিং শুরু হতে যাওয়া ‘মন বাকসো’ সিনেমাতে আমি দৈর্ঘ্য চরিত্রে অভিনয় করছি।  এ সিনেমাতে যে সুযোগ পাব, এ আমি স্বপ্নেও ভাবি নি। অঞ্জন দত্তর মতো গুণী পরিচালকেরসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে নিশ্চয়ই অভিনয়ের অনেক খুঁটিনাটি শিখতে পারব। ‘প্রবাসীর প্রেম’ সিনেমাতে আমার বিপরীতে রয়েছে জান্নাতুল ফেরদৌস পিয়া, ‘টার্গেট’- এ অমৃতা, ‘লাভ ইন কোরিয়া’-তে নিপুণ ও রাবিনা আমার বিপরীতে অভিনয় করবেন।

গ্লিটজ : সামনে আপনার অভিনীত কোন সিনেমাগুলো মুক্তি পাবে?

নিরব : রয়েল অনিক এর ‘গেইম’ সিনেমার কাজ শেষ করেছি। আন্ডারগ্রাউন্ড ডনের গল্প নিয়ে নির্মিত এই সিনেমায় দর্শক নিরবকে নতুনরুপে দেখতে পাবেন।  এতে আমার বিপরীতে রয়েছেন অমৃতা খান। মোহাম্মদ জাকিরখানের ‘চার অক্ষরের ভালোবাসা’ও রয়েছে মুক্তির অপেক্ষায়। আমার বিপরীতে রয়েছেন পপি।

ছবি: মামুনুর রশীদ শিশির/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

গ্লিটজ : দেশের বাইরের দুটি সিনেমা ‘সদরঘাট’ ও ‘বাংলাশিয়া’-তে অভিনয় করছেন আপনি। সেগুলোর হালচাল কী?

নিরব : ’সদরঘাট’- সিনেমার গল্পটি খুবই সুন্দর।  এটি পরিচালনা করবেন শ্রী লালশংকর ভট্টাচার্য। এতে আমার  বিপরীতে অভিনয় করবেন ভারতীয় অভিনেত্রী রাইমা সেন।  সুচিত্রা সেনের মৃত্যুর পর রাইমা সেন বেশ কিছুদিন বিরতি চেয়েছিলেন। তার শিডিউল মেলানো যাচ্ছে না এখন। আশা করি, শীঘ্রই এ সিনেমার শুটিং শুরু হবে। মালয়েশিয়ান পরিচালক নেমুই পরিচালিত ‘বাংলাশিয়া’তো বন্ধ হয়ে গেল। সিনেমাটির মাধ্যমে মালয়েশিয়ার ভাবমূর্তি বিনষ্ট হবে কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে সিনেমাটি মুক্তি না পেলেও বিদেশী সিনেমার ইউনিটের সঙ্গে কাজ করার যে অভিজ্ঞতা আমি অর্জন করেছি তা আমার জন্য অনেক বড় ব্যাপার।

গ্লিটজ : ভবিষ্যতে নিজেকে কোন অবস্থানে দেখতে চান?

নিরব : অভিনেতা হিসেবে আমি নিজেকে ভালো অবস্থানে দেখতে চাই। ভালো সিনেমাতে অভিনয় করতে চাই। হলবিমুখ মধ্যবিত্ত দর্শককে আবার হলে ফিরিয়ে আনতে চাই।  অভিনেতা হিসেবে নিরব কতটা সফল, তা দর্শকই বলবে।

গ্লিটজ : এবার একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন। আপনার সাবেক প্রেমিকা সারিকা তো বিয়ে করে দিব্যি সংসার করছে। আপনি কবে করছেন বিয়ে?

নিরব: ২০১২ সালেই সারিকার সঙ্গে আমার সব সম্পর্ক চুকেবুকে গেছে। সারিকা কি করল, না করল তাতে আমার কিছু আসে যায় না। বিয়ে নিয়ে এখনই ভাবছি না। সময় ঢের পড়ে আছে। আমি এখন কাজ নিয়েই ভাবতে চাই। মায়ের অপারেশনের কারণে সাত মাস আমি কোনো সিনেমাতে কাজ করতে পারিনি। এখন নিজেকে ফেরাতে হলে কী করণীয় তা নিয়েই ভাবছি।