অকাল প্রয়াত এই জনপ্রিয় নায়কের মৃত্যুদিন ৬ সেপ্টেম্বর। জন্মও তার সেপ্টেম্বর মাসেই। ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের জকিগঞ্জে নানাবাড়িতে তার জন্ম। কমর উদ্দিন চৌধুরী ও নীলা চৌধুরীর বড় ছেলে ছিলেন তিনি। তার প্রকৃত নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। রূপালি পর্দায় তিনি সালমান শাহ নামে পরিচিত হন।
খুলনা কেটেছে স্কুলজীবন। এসএসসি পাশ করেন ঢাকার আরব মিশন স্কুল থেকে। আদমজি ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ড. মালেকা সায়েন্স ইনস্টিটিউট থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন। ১৯৯২ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে তিনি বিয়ে করেন বার্মিজ মেয়ে বিউটি পার্লার ব্যবসায়ী সামিরাকে।
মঈনুল আহসান সাবেরের লেখা ধারাবাহিক ‘পাথর সময়’-এ একটি চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে সালমান শাহ-এর অভিনয় জীবন শুরু হয়। সে সময় ইমন নামে অভিনয় করেছিলেন তিনি। ওই নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে তৌকির আহমেদ অভিনয় করলেও ইমনের চরিত্রটি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। হানিফ সংকেতের উপস্থাপনায় একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে গানের মডেল হন ইমন। কয়েকটি বিজ্ঞাপনেও কাজ করেন।
১৯৯৩ সালে সালমান শাহ নামে আবির্ভূত হন রূপালী পর্দায়। প্রথম ছবি ছিল সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’। আমির খান ও জুহি চাওলা অভিনীত সুপারহিট হিন্দি সিনেমা ‘কেয়ামত সে কেয়ামত তক’-এর রিমেক ছিল সেটি। এ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় সালমান শাহ ও মৌসুমীর। প্রথম আর্বিভাবেই বাজিমাত করেন সালমান। দর্শকরা এই সুদর্শন ও স্মার্ট তরুণকে তাদের হৃদয়ের সিংহাসনে ঠাঁই দেয়।
সালমান শাহ বেশ কয়েকটি টেলিভিশন নাটকেও অভিনয় করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘ইতিকথা’, ‘আকাশছোঁয়া’, ‘দোয়েল’, ‘সব পাখি ঘরে ফেরে’, ‘সৈকতে সারস’, ‘নয়ন’ ইত্যাদি।
প্রিয় নায়কের মৃত্যুশোক সহ্য করতে না পেরে বেশ ক’জন ভক্ত আত্মহত্যা করেন।
কিন্তু সালমান শাহ-এর পরিবারের সদস্যরা বিশেষ করে মা নীলা চৌধুরী কিছুতেই তার মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে মেনে নেননি। সালমান শাহ-এর মৃত্যুকে ঘিরে জন্ম হয় নানা প্রশ্নের। এক অবাঙালি ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর সঙ্গে স্ত্রী সামিরার সম্পর্কের জেরে সালমান খুন হয়েছেন এমন অভিযোগ ওঠে। সালমান যে ব্র্যান্ডের সিগারেট খেতেন সেটি ছাড়া অন্য একটি ব্র্যান্ডের সিগারেট তার ঘরে পাওয়া যায়। প্রতিবেশীদের কয়েকজন তার ফ্ল্যাট থেকে ধস্তাধস্তির শব্দ পাওয়ার কথাও বলেন। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
সালমান শাহর মৃত্যুর ১৮ বছর হতে চললো। কিন্তু তার জন্য ভক্তদের ভালোবাসা এতটুকু ম্লান হয়নি। বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের আকাশে সালমান শাহ এক চিরউজ্জ্বল নক্ষত্র হয়েই থাকবেন।