‘ফ্লপমাস্টার’ থেকে ‘মহানায়ক’

বাংলা চলচ্চিত্রে প্রতিভাবান অভিনেতার অভাব নেই। কিন্তু মহানায়ক একজনই। তিনি উত্তম কুমার। হয়তো সে কারণেই সত্যজিৎ রায় তার ‘নায়ক’ চলচ্চিত্রে সাধারণ তরুণ থেকে চিত্রনায়ক হয়ে ওঠা অরিন্দম চ্যাটার্জির ভূমিকায় উত্তম ছাড়া অন্য কাউকে ভাবতে পারেননি।

শান্তা মারিয়া, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 July 2014, 08:43 AM
Updated : 24 July 2014, 10:31 AM

উত্তম কুমার তার অভিনয়, নায়কোচিত সৌষ্ঠব ও তারকাদ্যূতিতে বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ আসনটি দখল করে আছেন। ১৯২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর কলকাতায় এই মহান অভিনেতার জন্ম। ১৯৮০ সালের ২৪ জুলাই মাত্র ৫৩ বছর বয়সে মৃত্যু হয় তার।

তার পারিবারিক নাম ছিল অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়। কলকাতার আহিরীটোলায় মামাবাড়িতে জন্ম। ভবানীপুরের গিরিশ মুখার্জি রোডে ছিল পৈতৃক বাসভবন। বাবা সাতকড়ি চ্যাটার্জি এবং মা চপলা দেবী। এক সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন তিনি। ঠাকুরমা আদর করে ডাকতেন উত্তম নামে। উত্তমকুমার যখন নিতান্তই শিশু তখন একবার তাদের বাড়িতে আসেন পরিবারের কুলগুরু। তিনি শিশু উত্তমকে কোলে নিয়ে বলেন-- “এই ছেলে একদিন হাসিতে ভুবন ভোলাবে।” পরবর্তীতে কথাটি সত্যি প্রমাণিত হয়েছিল।

কলকাতার সাউথ সাবার্বান স্কুলের ছাত্র ছিলেন উত্তম। স্কুলের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন। পাড়ার থিয়েটারেও অভিনয় করতেন। গোয়েংকা কলেজে লেখাপড়া করেন। তবে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতে পারেননি। তার আগেই চাকরি নেন কলকাতার পোর্টে। এদিকে প্রেম করে বিয়ে করেন গৌরী দেবীকে। একদিকে চাকরি আর সংসার অন্যদিকে অভিনয়ের আগ্রহ। মধ্যবিত্ত ঘরের এই তরুণের পক্ষে বেশ কঠিন হয়েছিল সিনেমায় সুযোগ পাওয়া। অনেক পরিচালকের নির্মম বিদ্রুপেরও শিকার হতে হয়েছে। সেসব দিনের কথা উত্তম বলেছেন তার আত্মজীবনী ‘আমার আমি’তে।

উত্তম প্রথম সুযোগ পান ‘মায়াডোর’ নামে একটি ছবিতে। তবে ছবিটি শেষ পর্যন্ত মুক্তি পায়নি। নীতিন বোস পরিচালিত ‘দৃষ্টিদান’ মুক্তি পায় ১৯৪৮ সালে। এটি উত্তম অভিনীত প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি। এর পর ‘কার পাপে’ সহ কয়েকটি ছবিতে ছোট ছোট ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি। দুয়েকটি ছবিতে নায়কও হয়েছিলেন। তবে কোন সিনেমাই ব্যবসা সফল হয়নি। ফলে তার নামই হয়ে যায় ‘ফ্লপ মাস্টার’। তিনি সেটে ঢুকলেই লোকজন ঠাট্টা তামাশা করতো তাকে নিয়ে। এ সময় অরুণ চ্যাটার্জি, অরুণ কুমার, উত্তম চ্যাটার্জি ইত্যাদি বিভিন্ন নামে অভিনয় করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উত্তম কুমার নামেই থিতু হন। ‘বসু পরিবার’ সিনেমায় এক যৌথ পরিবারের আদর্শবাদী বড় ভাইয়ের চরিত্রে অভিনয় করে তিনি দর্শকদের দৃষ্টি কাড়েন। এ সিনেমায় সুপ্রিয়া দেবী ছিলেন তার ছোট বোনের ভূমিকায়। এটিই উত্তম-সুপ্রিয়া অভিনীত প্রথম ছবি।

 

‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবিতে উত্তম প্রথম জুটি বাঁধেন নবাগতা সুচিত্রা সেনের সঙ্গে। ছবিটিতে তারা রোমান্টিক জুটির ভূমিকায় থাকলেও এর মূল অভিনেতা ছিলেন ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, তুলসী চক্রবর্তী, মলিনা দেবী। কমেডি সিনেমাটি ব্যবসাসফল হওয়ায় উত্তম কুমারের ভাগ্য খুলে যায়। ১৯৫৪ সালে আশাপূর্ণা দেবীর গল্প অবলম্বনে ‘অগ্নিপরীক্ষা’ সিনেমায় উত্তম-সুচিত্রা জুটির পর্দা-রোমান্স দারুণ জনপ্রিয়তা পায়। আর এ সিনেমার সঙ্গেই শুরু হয় উত্তম সুচিত্রা যুগের। ছবিটি দারুণভাবে ব্যবসা সফল হওয়ায় নায়ক উত্তম কুমারের আসন স্থায়ী হয়ে যায়। একের পর এক মুক্তি পায় উত্তম কুমার-সুচিত্রা সেন অভিনীত সুপারহিট ছবি ‘শাপমোচন’, ‘শিল্পী’, ‘হারানো সুর’, ‘সাগরিকা’, ‘পথে হলো দেরী’, ‘ত্রিযামা’, চাওয়া পাওয়া, ‘সপ্তপদী’, ‘বিপাশা’, ‘ইন্দ্রাণী’, ‘সূর্য তোরণ’, ‘সবার উপরে’, ‘সাহেব বিবি গোলাম’ ইত্যাদি।

সুপ্রিয়া চৌধুরী, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, শর্মিলা ঠাকুর, মাধবী মুখোপাধ্যায়সহ বিভিন্ন জনপ্রিয় নায়িকার বিপরীতে অসংখ্য ব্যবসা সফল ছবিতে অভিনয় করলেও সুচিত্রা সেনের সঙ্গে তার জুটি বাংলা ছবির ইতিহাসে সবচেয়ে রোমান্টিক জুটি বলে এখন পর্যন্ত বিবেচিত।

 

তবে শুধু রোমান্টিক নায়ক নয়। অনেক ব্যতিক্রমী চরিত্রে অভিনয় করেছেন উত্তম যা তাকে অভিনেতা হিসেবে সার্থক প্রমাণিত করেছে। ধরা যাক অষ্টাদশ শতকের ফিরিঙ্গি কবি অ্যান্টনির কথা। ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ ছবিতে নাম ভূমিকায় ছিলেন উত্তম কুমার। এখানে তার বিপরীতে ছিলেন তনুজা। একজন কবির আবেগ, হতাশা, যন্ত্রণা, কবির লড়াইয়ে উত্তেজনা সবই সার্থকভাবে তুলে ধরেছিলেন উত্তম। কিংবা ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’ ছবির উন্মত্ত যুবক থিরুমলের কথা বলা যায়। এখানে তার বিপরীতে ছিলেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প ‘খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন’ অবলম্বনে নির্মিত সিনেমায় গৃহভৃত্য রাইচরণের চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেন উত্তম। বিমল মিত্রের উপন্যাস নিয়ে ‘স্ত্রী’ ছবিতে লম্পট অথচ সরলমনা জমিদারের চরিত্রেও তিনি অনন্য। তিনি এখানে খলনায়ক হয়েও প্রধান ভূমিকায়। নায়কের ভূমিকায় ছিলেন সৌমিত্র চ্যাটার্জি। তারাশংকর বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস ‘বিচারক’ অবলম্বনে নির্মিত সিনেমায় নাম ভূমিকায় ছিলেন উত্তম কুমার। বিচারকের মনোজগতের দ্বন্দ্ব সার্থকভাবে পর্দায় তুলে ধরেন তিনি।

 

‘মায়ামৃগ’ সিনেমায় পার্শ্ব চরিত্রে অভিনয় করেও দৃষ্টি কেড়ে নেন। ‘শেষ অংক’ ছবিতে তিনিই যে স্ত্রীর হত্যাকারী এ বিষয়টি দর্শককে চমকে দেয়। ‘সপ্তপদী’তে ফাদার কৃষ্ণেন্দ, ‘অগ্নিশ্বর’ ছবির চিকিৎসক, ‘নিশিপদ্ম’ ছবির মাতাল, ‘থানা থেকে আসছি’র ইন্সপেক্টর, ‘দেবদাসে’র চুনিলাল এসব চরিত্র নায়ক উত্তমকে নয় বরং অভিনেতা উত্তমকে তুলে ধরে। ‘আমি, সে ও সখা’ ছবিতে ডাক্তার সুধীরের ভূমিকায় তার অভিনয়ও ছিল অসাধারণ।

সাহিত্যনির্ভর চলচ্চিত্রেও তিনি ছিলেন দারুণ মানানসই। শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ‘গৃহদাহ’, ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’, ‘কমললতা’, ‘চন্দ্রনাথ’, ‘পথের দাবী’ ও ‘বড়দিদি’তে তিনি নায়ক চরিত্রে অনবদ্য ছিলেন। এর মধ্যে পাঁচটিতেই তিনি জুটি বেধেছিলেন সুচিত্রা সেনের সঙ্গে।

 

উত্তম কুমার ২০২টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। এর মধ্যে ৩৯টি ছবি ব্লকবাস্টার হিট, ৫৭টি সুপারহিট  ও ৫৭টি ছবি ব্যবসা সফল হয়েছে। শক্তি সামন্ত পরিচালিত উত্তম অভিনীত হিন্দি ছবি ‘অমানুষ’ ও ‘আনন্দ আশ্রম’ সুপারহিট হয়। এ দুটি ছবিতে তার বিপরীতে ছিলেন শর্মিলা ঠাকুর। সত্যজিৎ রায়ের ‘চিড়িয়াখানা’ ছবিতে গোয়েন্দা ব্যোমকেশ বক্সীর ভূমিকায় ছিলেন অসাধারণ। ‘চিড়িয়াখানা’ ও ‘অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য সে বছর (১৯৬৭) তিনি সেরা অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার পান। ১৯৬১ সালে ‘দোসর’ ছবিতে অভিনয়ের জন্যও সেরা অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার পান। ‘হারানো সুর’, ‘হ্রদ’, ‘সপ্তপদী’, ‘নায়ক’, ‘গৃহদাহ’, ‘এখানে পিঞ্জর’, ‘অমানুষ’, ‘বহ্নিশিখা’ ছবির জন্য ৮ বার বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সেরা অভিনেতার পুরস্কার পান। এছাড়াও তিনি অনেক সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের পুরস্কার লাভ করেছেন।

 

কমেডিতেও তিনি ছিলেন অনবদ্য। মাধবী মুখোপাধ্যায়ের বিপরীতে ‘ছদ্মবেশী’ সিনেমায় তার অভিনয় নির্মল হাসির খোরাক দেয় দর্শককে। ‘দেয়া-নেয়া’ , ‘নবজন্ম’ সিনেমাতেও কমেডি চরিত্রে দারুণ অভিনয় করেছিলেন তিনি। ‘নবজন্ম’ ছবিতে নিজের কণ্ঠে কয়েকটি গানও গেয়েছিলেন তিনি। এ ছবিতে তার বিপরীতে ছিলেন সাবিত্রী। ‘অভয়ের বিয়ে’ সিনেমায় জীবন সম্পর্কে অনভিজ্ঞ ও সরল ধনাঢ্য যুবক অভয়ের ভূমিকায় উত্তমের কমেডি ছিল অনবদ্য। তবে উত্তমের সেরা কমেডি বলা যায় শেক্সপিয়রের নাটক ‘কমেডি অফ এররস’ অবলম্বনে নির্মিত ‘ভ্রান্তি বিলাস’ সিনেমাটিকে। এখানে উত্তম কুমার ও ভানু বন্দ্যোপাধ্যাযের দ্বৈত অভিনয় ছিল অনন্য।

উত্তম-সুচিত্রা জুটির মতো না হলেও উত্তম-সুপ্রিয়া জুটিও জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। উত্তম-সুপ্রিয়া অভিনীত ‘চিরদিনের’, ‘বনপলাশীর পদাবলী’, ‘কাল তুমি আলেয়া’, ‘লাল পাথর’, ‘শুন বরনারী’, ‘মন নিয়ে’, ‘শুধু একটি বছর’, ‘সন্ন্যাসী রাজা’ ইত্যাদি সিনেমা ব্যবসা সফল হওয়ার পাশাপাশি সমালোচকদের প্রশংসাও পায়।

 

উত্তম-সাবিত্রী জুটিও দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিল। বস্তুত তার বিপরীতে যে নায়িকারা অভিনয় করেছেন তাদের মধ্যে সাবিত্রীর অভিনয়ই ছিল সবচেয়ে সাবলীল ও স্বাভাবিক। তিনি গ্ল্যামারাস নায়িকা না হলেও সুঅভিনেত্রী ছিলেন নিঃসন্দেহে। ফলে উত্তম-সাবিত্রী জুটির অভিনীত সিনেমাগুলো ছিল স্বাভাবিক অভিনয়ের ধারায় সুনির্মিত। এই জুটির ‘নিশিপদ্ম’, ‘নবজন্ম’, ‘মরুতীর্থ হিংলাজ’, ‘অভয়ের বিয়ে’, ‘হাত বাড়ালেই বন্ধু’, ‘কলংকিত নায়ক’, ‘কুহক’, ‘দুই ভাই’, ‘ভ্রান্তি বিলাস’, ‘মোমের আলো’, ‘মৌচাক’ ব্যবসা সফল হয় এবং সমালোচকদের প্রশংসাও পায়।

পেশাগত জীবনে সহঅভিনেতাদের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল। বিশেষ করে পাহাড়ি স্যান্ন্যাল, বিকাশ রায়, এবং তার সহোদর অভিনেতা তরুণ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে শুটিং সেট ও পর্দায় তার রসায়ন ছিল দেখার মত। যে গানে লিপসিং করতে হবে সেটি অনেকক্ষণ ধরে নিজে গেয়ে অভ্যাস করতেন যাতে পর্দায় তা স্বাভাবিক মনে হয়। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে এবং শ্যামল মিত্র তার অধিকাংশ গানে প্লেব্যাক করেছেন।

 

গৌরীদেবীকে ভালোবেসে বিয়ে করলেও এক পর্যায়ে তার দাম্পত্য জীবনে টানাপড়েন সৃষ্টি হয়। ১৯৬৩ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে বাস করেন তিনি।

উত্তম কুমার চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক হিসেবেও সাফল্য পান। ‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী’, ‘বনপলাশীর পদাবলী’, ‘শুধু একটি বছর’ সহ বেশ কয়েকটি ছবি তিনি পরিচালনা করেন। ‘উত্তর ফাল্গুনী’ সহ বিভিন্ন সফল ছবির প্রযোজকও ছিলেন তিনি। ‘কাল তুমি আলেয়া’ সিনেমার সংগীত পরিচালনাও করেন তিনি। ‘অগ্নিপরীক্ষা’র গল্প নিয়েই হিন্দিতে তিনি নির্মাণ করেন ‘ছোটিসি মুলাকাত’।

সিনেমার ব্যস্ততার পাশাপাশি মঞ্চেও অভিনয় করতেন। ‘শ্যামলী’ নাটকে দীর্ঘদিন অভিনয় করেছেন। ‘শ্যামলী’ অবশ্য চলচ্চিত্রও হয়েছিল। সেখানে নায়ক ছিলেন উত্তম এবং নায়িকা ছিলেন কাবেরী বসু। উত্তম কুমার সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কল্যাণে পরিচালিত বিভিন্ন কর্মদ্যোগে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন।

উত্তম কুমার অভিনীত শেষ সিনেমা ‘ওগো বধূ সুন্দরী’। বার্নার্ড শ’র নাটক ‘পিগম্যালিয়ন’ অবলম্বনে হলিউডের ছবি ‘মাই ফেয়ার লেডি’র বাংলা রিমেক ছিল ‘ওগো বধূ সুন্দরী’। এই ছবিতে ডাবিং সম্পূর্ণ করে যেতে পারেননি উত্তম। পরবর্তীতে ছোটভাই তরুণ কুমার তার কণ্ঠ দিয়েছিলেন।

উত্তম অভিনীত অনেক সিনেমাই হয়তো মেলোড্রামাটিক। কিংবা বিশ্বমানের নয়। কিন্তু তিনি আন্তর্জাতিক মাপেও অসামান্য অভিনেতা ছিলেন। ‘স্পেল বাউন্ডে’ গ্রেগরি পেকের অভিনয়ের সঙ্গে তুলনায় ‘হারানো সুরে’ উত্তমের অভিনয় কোনো অংশে নিচু মানের নয়। ‘ওগো বধূ সুন্দরীতে’ তিনি কোথাও কোথাও ‘মাই ফেয়ার লেডি’র রেক্স হ্যারিসনকেও অতিক্রম করে গেছেন। তিনি বাংলা চলচ্চিত্রে অভিনয়ের ধারা পাল্টে দেন। লাউড অভিনয়ের ধারা পাল্টে তিনি আন্ডারটোন এবং স্বাভাবিক অভিনয়ের ধারার সূচনা করেন। বাস্তব জীবনে মানুষ যেভাবে হাঁটা-চলা, কথা-বার্তা বলে তিনি ক্যামেরার সামনে তাই করতেন।

উত্তম কুমার ছিলেন বাঙালির প্রাণের নায়ক। স্বাভাবিক অভিনয় এবং নায়কোচিত গ্ল্যামার তার মধ্যে মিশেছিল সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছিল তার দৈহিক সৌষ্ঠব, সুন্দর চেহারা এবং অনাবিল হাসি।

৩৪ বছর হলো তিনি লোকান্তরিত। তার মৃত্যুর পর কত নায়কই না এসেছেন দুই বাংলার রূপালি ভুবনে। কিন্তু বাংলা ছবির দর্শকদের মনে তিনি চিরদিনই মহানায়কের আসনে অধিষ্ঠিত থাকবেন।