একসঙ্গে সুস্মিতা-অঞ্জন

বাঙালি পরিবারের মেয়ে হয়েও সুস্মিতা সেন এতদিন কাজ করেছেন হিন্দি সিনেমাতেই। প্রথমবারের মত তাকে দেখা যাবে বাংলা সিনেমায়। সৃজিত মুখার্জির পরিচালনায় ‘নির্বাক’ নামের ওই সিনেমায় সাবেক এই বিশ্ব সুন্দরী কাজ করবেন অঞ্জন দত্তের সঙ্গে।

সেঁজুতি শোণিমা নদীও মুনরবি অমিয়বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 July 2014, 11:34 AM
Updated : 8 July 2014, 10:26 AM

ভারতীয় দৈনিক টাইমস অফ ইন্ডিয়া বলছে, অঞ্জন দত্তর সঙ্গেও সৃজিত মুখার্জির এটিই প্রথম কাজ। ‘বাইশে শ্রাবণ’ খ্যাত এই নির্মাতার সঙ্গে এর আগেও কাজ করার কথা ছিল অঞ্জনের। কিন্তু নানা কারণেই সেটি আর হয়ে ওঠেনি।

সৃজিত মুখার্জি বলেন, “হ্যাঁ, শেষপর্যন্ত ‘নির্বাক’ সিনেমায় আমি আমার সবসময়ের প্রিয় অভিনেতা অঞ্জনদার সঙ্গে কাজ করতে যাচ্ছি। সিনেমার নাম আগে ছিল ‘দুলাল চন্দ্র ভড়ের আসল ভালোবাসার গল্প’। কিন্তু আমার মনে হয়েছে নামটা পরোক্ষভাবে একটা নির্দিষ্ট সংস্কৃতির সঙ্গেই শুধু যায়। এই নামে সিনেমাটি পশ্চিমবঙ্গের বাইরে খুব একটা গ্রহণযোগ্যতা পাবে কিনা তাতেও আমার সন্দেহ ছিল। এসব কারণে আমি নাম পাল্টে রাখি ‘নির্বাক’ (স্পিচলেস)।”

অঞ্জন দত্ত আর সৃজিত মুখার্জির টানাপোড়েনের গল্পটা বেশ পুরোনোই। অনেক বছর আগে অঞ্জনই শুরুটা করেন, সৃজিতের এক নাটক থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়ে। এরপর ২০১১ সালে ‘বাইশে শ্রাবণ’ সিনেমা থেকে সরে যান তিনি। এরপর ২০১৩ সালে আর্থিক বিষয়ে বনিবনা না হওয়ায় সৃজিতের ‘চতুষ্কোণ’ সিনেমা থেকে বেরিয়ে যান অঞ্জন দত্ত।

এ ব্যাপারে সৃজিত বলেন, “এটা ঠিক যে, এর আগে তিনবার অঞ্জনদা আমার কাজ থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছেন। যদিও মিডিয়া যেভাবে বলছে ব্যাপারটা ততটা ভয়ংকর ছিল না। তবে আমাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক সবসময়ই ভাল ছিল। পরিচালক হিসেবে কোন চরিত্রের জন্য যদি আমি তাকে চাই, তাহলে তা যে কোন মূল্যেই চাই। আমি  তাকে অসাধারণ একজন অভিনেতা বলে মনে করি। আমি যখন সিনেমার স্ক্রিপ্ট নিয়ে তার কাছে যাই, তখন চরিত্রটা নিয়ে তিনি খুবই কৌতূহলী হন। আমি তার চরিত্রটা সম্পর্কে এখন কিছুই বলবো না। শুধু এটুকু বলতে পারি যে, সিনেমায় তাকে এমন একজন হিসেবে দেখানো হয়েছে, যাতে দর্শক তাকে খুব সহজেই চিনতে পারবে। কারণ তার গানে এবং সিনেমায় এমন মানুষের কথা বারবার ঘুরেফিরে এসেছে।”

‘নির্বাক’ সিনেমাটির কাজ খুব শিগগিরই শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। অঞ্জন দত্ত ও সুস্মিতা সেন ছাড়াও সিনেমায় আরও থাকছেন যিশু সেনগুপ্ত এবং ঋত্বিক চক্রবর্তী। এছাড়া ক্যামেরার পেছনে থাকছেন ‘অটোগ্রাফ’-খ্যাত সৌমিক হালদার।

সিনেমার গল্প এগিয়েছে সমান্তরালভাবে চলতে থাকা চারটি প্রেমকাহিনী নিয়ে । সৃজিত জানান, সুস্মিতার চরিত্রটি দেখানো হবে এই চার গল্পের মধ্যে যোগসুত্রকারী হিসেবে।

সৃজিত বলেন, “একই সময়ে চলতে থাকা একাধিক ঘটনার সংমিশ্রণে তৈরি হয়েছে ‘নির্বাক’ সিনেমার কাহিনী। অনেকটা ‘ক্র্যাশ’, ‘মহানগর অ্যাট কলকাতা’ কিংবা ‘ইয়ুভা’র মতো, যাকে আমরা হাইপারলিংকড মুভি বলি। ৪টি অভিনব প্রেমকাহিনী আছে সিনেমাটিতে, যার প্রতিটির দৈর্ঘ্য বিশ মিনিট করে। আর কাহিনীগুলো কোথাও না কোথাও গিয়ে পরস্পরের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। সুস্মিতা সেনের চরিত্রটা এই কাহিনীগুলোকে জোড়া লাগানোর কাজটা করে।”

সৃজিত জানান, যুক্তরাষ্ট্রে সালভাদর দালি’র জাদুঘর দেখার সময় তার মাথায় সিনমাটির গল্প আসে। তিনি বলেন, “দালি’র অ্যান্থ্রোপোমরফিক সারিয়েলিস্টিক ছবিগুলোই দেখেই এই সিনেমার অনুপ্রেরণা পেয়েছি। এছাড়া, অনেক আগে আমি, ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত এবং শ্রীজাত মিলে একটা সিনেমার কথা ভেবেছিলাম। সেখানে আটটি ভিন্নধরণের গল্প ছিল। এই সিনেমার জন্য আমি সেখান থেকে দুটি গল্প রেখেছি এবং দালির চিত্রশিল্পের আধারে তৈরি দুটি গল্প নিয়েছি।”

সৃজিত আরও বলেন, “২৪ ঘন্টার মধ্যে সিনেমার চিত্রনাট্য তৈরি করেছি আমি। বিদেশ থেকে ফিরে আমি জেট ল্যাগের খপ্পরে পড়েছিলাম আর মাথার ভেতর দালির ছবিগুলো শুধু ঘুরপাক খাচ্ছিল। তাই একদিন আমি ভোর ৪টায় উঠে লেখা শুরু করে দেই। পরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই চিত্রনাট্য তৈরি হয়ে যায়।”