চলচ্চিত্রে বাবা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনা। ইতালিতে ফ্যাসিস্ট বাহিনীর কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে বন্দী বাবা ও ছেলে। ক্যাম্পে নিপীড়ন নির্যাতন দেখে ছেলে যেন ভয় না পায় সেজন্য বাবা তাকে বলেন যে পুরো ক্যাম্প আসলে এক মজার খেলা। এই খেলায় যে জিততে পারবে সে পাবে আস্ত একটি ট্যাংক।

শান্তা মারিয়া, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 June 2014, 06:54 AM
Updated : 15 June 2014, 11:48 AM

এইভাবে রূঢ় বাস্তবতা থেকে শিশুপুত্রকে রক্ষা করেন বাবা। এর মধ্যে একদিন ফ্যাসিস্ট সৈন্যরা বাবাকে ধরে নিয়ে যায় ফায়ারিং স্কোয়াডে। ছেলেকে আগেই লুকিয়ে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন বাবা। ঘাতকরা যখন বাবাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে তখনও হাসিখুশি ভাব দেখান তিনি। যাতে লুকানো জায়গা থেকে ছেলে তাকে দেখে মনে করে ভয়ের কিছু নেই, এটা একটা মজার খেলা মাত্র। ছেলেকে অভয় দিয়ে বাবা চলে যান মৃত্যুর মুখে। এরপর মিত্র বাহিনী আসে। শিশু ছেলেটি মনে করে বাবাই মিত্রদের পাঠিয়েছেন। এবং সে মনে করে খেলাটিতে সে জিতেছে বলেই ট্যাংক পেয়েছে। শিশু সন্তানের জন্য বাবা যে হাসিমুখে প্রাণ পর্যন্ত দিতে পারেন তারই অবিস্মরণীয় চিত্র রূপ ‘লাইফ ইজ বিউটিফুল’।

রবার্তো বেনিগনি এই সিনেমাতে তিনি নিজের শৈশবের ঘটনাই বর্ণনা করেছেন। ছবিটিতে তার বাবার স্মৃতিচারণ করেছেন তিনি। তিনি নিজেই অভিনয় করেছেন তার বাবার চরিত্রে। 

হলিউড, বলিউড ও বাংলা চলচ্চিত্রে বাবাকে নানাভাবে চিত্রায়িত করা হয়েছে। রূপালি পর্দায় যে বাবাদের দেখা যায় তারা কখনও কঠোর, কখনও স্নেহময়, কখনও আদর্শবাদী আবার কখনও তারা বিপথগামী। তবে বাবা অথবা সন্তান যেই বিপথগামী হোক না কেনো সিনেমার শেষ পর্যায়ে তারা ফিরে আসে একে অন্যের কাছে। হয়তো যে কোনো একজন বা দুজনের মৃত্যুতে পরিসমাপ্তি ঘটে তাদের দ্বন্দ্বের।

বাবা-ছেলের দ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে ‘আখেরি রাস্তা’ এবং ‘শক্তি’ সিনেমা দুটির নাম মনে পড়বেই। ‘আখেরি রাস্তা’য় বাবা ও ছেলে দুজনের চরিত্রেই অভিনয় করেছেন অমিতাভ বচ্চন। স্ত্রীর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া ডেভিড এবং পুলিশ অফিসার ছেলে বিজয়ের দ্বন্দ্ব এই সিনেমার কাহিনিতে যোগ করে টান টান উত্তেজনা। সিনেমাটির মূল সম্পদ অমিতাভ বচ্চনের অসাধারণ অভিনয় এবং সংলাপ।

‘শক্তি’তে দেখা যায় আদর্শবান পুলিশ অফিসার দিলিপ কুমার ও তার বিপথগামী অভিমানী সন্তান অমিতাভ বচ্চনকে। ‘আখেরি রাস্তা’য় ছেলের হাতে বাবা এবং ‘শক্তি’তে বাবার হাতে ছেলের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে পরিসমাপ্তি ঘটে তাদের দ্বন্দ্বের।

বাবা ও মেয়ের মধ্যকার সম্পর্কের টানাপড়েন নিয়ে গড়ে উঠেছে ‘ড্যাডি’ সিনেমার গল্প। এই ছবির মাধ্যমে ১৯৯১ সালে বলিউডে অভিষেক ঘটে পূজা ভাটের। মহেশ ভাট পরিচালিত এই ছবিতে দেখা যায় শৈশবে বিচ্ছিন্ন পূজা ভাট ও তার বাবা অনুপম খেরের মধ্যকার সম্পর্কের নানা মাত্রা।

 

হলিউডে বাবা ও সন্তানের সম্পর্ককেন্দ্রিক সিনেমার মধ্যে টম হ্যাংকস অভিনীত ‘স্লিপলেস ইন সিয়াটল’-এর নাম বলা যায় প্রথমেই। একা বাবা স্যাম (টম হ্যাংকস) এবং তার শিশুপুত্র জোনাহকে নিয়েই পুরো গল্প। নিউইয়র্কের আম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে জোনাহ পড়ে গেছে মনে করে স্যামের যে অভিব্যক্তি এবং শেষ পর্যন্ত তাকে জীবিত দেখতে পেয়ে তার আবেগ সেটা একমাত্র কোনো বাবার পক্ষেই অনুভব করা সম্ভব।

বাবা ও শিশু সন্তানের সম্পর্ক নিয়ে মনে পড়ছে ‘ক্র্যামার ভার্সেস ক্র্যামার’-এর কথা। এই সিনেমায় সংসার ছেড়ে স্ত্রী চলে যাওয়ার পর টেড ক্র্যামার তার শিশুপুত্রকে দেখাশোনার জন্য সময় দিতে গিয়ে চাকরি হারায়। অনেক বিপত্তির পর বাবা ও সন্তান যখন একে অন্যের পরিপূরক হয়ে ওঠে তখন ডিভোর্সের পর ছেলের অভিভাবকত্ব পায় মা। বাবার কাছ থেকে সন্তানের বিচ্ছিন্ন হওয়ার দৃশ্যটি দর্শককে আবেগ আপ্লুত করে। ক্ল্যাসিক এই সিনেমার বলিউডি রিমেক ‘আকেলে হাম আকেলে তুম’-এ আমির খান চমৎকার অভিনয় করেছেন বাবার ভূমিকায়। বলিউডি ছবিটি অবশ্য মিলনাত্বক।

 

‘টু কিল এ মকিং বার্ড’ সিনেমায় দেখা যায় এক গুরুগম্ভীর বাবাকে। আপাত দৃষ্টিতে সফল আইন ব্যবসায়ী ফিনশ ( গ্রেগরি পেক) তার দুই শিশুসন্তানের প্রতি তেমন কোনো আবেগ উচ্ছ্বাস দেখায় না। মাতৃহীন সন্তানদুটি বেড়ে ওঠে প্রায় অনাদরে। কিন্তু প্রয়োজনে ফিনশ তার সন্তানদের রক্ষা করতে কতটা বদ্ধ পরিকর তা বোঝা যায় ছবির ক্লাইমেক্সে। এ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য গ্রেগরি পেক সেরা অভিনেতার অস্কার জিতেছিলেন। গ্রেগরি পেককে ‘ইয়ার্লিং’ সিনেমায় স্নেহশীল এক বাবার ভূমিকায় দেখা যায়। আবার হরর মুভি ‘ওমেন’-এ গ্রেগরি পেক অশুভ শক্তির অধিকারী তার কথিত সন্তানকে হত্যা করে মানবজাতিকে বাঁচাতে বদ্ধপরিকর।

বাবা-মেয়ের সম্পর্ক নিয়ে একটি ক্ল্যাসিক সিনেমা ‘ফাদার অব দ্য ব্রাইড’। এলিজাবেথ টেলর এবং স্পেন্সার ট্রেসি অভিনীত এ সিনেমায় মেয়ের বিয়ের আয়োজন নিয়ে বাবার কার্যকলাপ দর্শকের হাসির খোরাক জোগালেও মেয়ের প্রতি বাবার ভালোবাসা, তাকে বিদায় দিতে বেদনা এবং তার ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বেগ ধরা পড়ে যা কাহিনিকে দান করে ভিন্ন মাত্রা। বাবা-কন্যার সম্পর্ক নিয়ে আরেকটি স্মরণীয় ছবি ‘দ্য পেপার মুন’। ১৯৭৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ সিনেমায় বাস্তব জীবনের বাবা-মেয়ে রায়ান ও ট্যাটাম ও’নিল অভিনয় করেছিলেন।

বাবা-সন্তানের সম্পর্ক নিয়ে সেরা ছবিগুলোর তালিকায় আরও রয়েছে কেন তাকাকুরা অভিনীত ‘রাইডিং এ্যালোন ফর থাউজেন্ডস অফ মাইলস’, ক্যারি গ্র্যান্ট অভিনীত ‘হাউজবোট’, স্টিভ মার্টিন অভিনীত ‘প্যারেন্ট হুড’, ‘বয়েজ এন দ্য হুড’ ‘চ্যাম্প’ ইত্যাদি অনেক সিনেমা।

বাবা-সন্তানের সম্পর্ক বলিউডের অনেক সিনেমাতেই দেখা গেছে। এরমধ্যে ১৯৯৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘ভিরাসাত’-এর কথা বলা যায়। বাবা অমরেশ পুরী এবং ছেলে অনিল কাপুরের মধ্যকার সম্পর্ক, তাদের মধ্যে মূল্যবোধ ও প্রজন্মগত ব্যবধান এবং শেষ পর্যন্ত বাবার আদর্শে ছেলের অনুপ্রাণিত হওয়া এ ছবির কাহিনির মূল গতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। ১৯৯৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত আরেকটি সিনেমা ‘সুরিয়াবংশম’। অমিতাভ বচ্চন এ সিনেমায় বাবা ও ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেন। ‘দেশপ্রেমী’ সিনেমাতেও অমিতাভ বাবা ও ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। দুটি সিনেমাই বাবা ও ছেলের আদর্শগত দ্বন্দ্ব নিয়ে। 

মৃত প্রেমিকার সন্তানকে ঘিরে স্ত্রীর সঙ্গে দ্বন্দ্ব নিয়েই নাসিরুদ্দিন শাহ, শাবানা আজমি অভিনীত সিনেমা ‘মাসুম’। ১৯৮৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটিতে অসহায় শিশু সন্তানের সঙ্গে বাবার সম্পর্ক অন্য মাত্রা পেয়েছে। শিশুপুত্রের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন যুগল হংসরাজ।

ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী এবং তার সন্তান হরি গান্ধীকে নিয়ে চমৎকার সিনেমা ‘গান্ধী, মাই ফাদার’। ২০০৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এ ছবিতে পুত্রের ভূমিকায় অক্ষয় খান্না দারুণ অভিনয় করেছিলেন। 

 

‘পা’ সিনেমায় বাস্তব জীবনের পিতা-পুত্র অমিতাভ ও অভিষেক বচ্চন অভিনয় করেছেন। পিতার ভূমিকায় ছিলেন অভিষেক আর বিরল রোগে আক্রান্ত পুত্রের ভূমিকায় অমিতাভ। দুর্দান্ত অভিনয় করেছিলেন অমিতাভ সে কথা বলাই বাহুল্য।

‘আ গালে লাগ যা’ সিনেমাটি বাবা-ছেলের সম্পর্ক নিয়ে বেশ চমৎকার সিনেমা। রোমান্টিক এ ছবিতে শশিকাপুরের লিপসিংয়ে জনপ্রিয় একটি গান ‘আয় মেরে বেটা, সুন মেরা কেহেনা’।

নতুন মিলেনিয়ামে অনেক হিন্দি সিনেমাতেই বাবার ভূমিকায় অভিনয় করে দর্শক হৃদয়ে আলোড়ন তুলেছেন অমিতাভ বচ্চন। ‘মহাব্বাতে’-এ মেয়ে ঐশ্বরিয়া রাইয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক কাহিনির অন্যতম মূল বিষয়। আবার ‘ওয়াকত-দ্য রেইস এগেইনস্ট টাইম’-এ মৃত্যুপথযাত্রী বাবার ভূমিকায় অমিতাভের অভিনয় অনবদ্য। তেমনি ‘বাগবান’ ছবিতে সন্তানদের স্বার্থপরতার শিকার অসহায় বৃদ্ধ বাবার ভূমিকাতে অমিতাভ অনন্য। একইভাবে ‘ভূতনাথ’-এ ছেলের স্বার্থপরতাই মূলত বাবা অমিতাভের মৃত্যুর কারণ। সিনেমার শেষে ছেলেকে ক্ষমা করেন ভূতরূপী বাবা।

নব্বই দশকে হিন্দি সিনেমার বিখ্যাত অভিনেতা অমরেশ পুরি খল চরিত্রের পরিবর্তে বাবার ভূমিকায় অভিনয় করে তুমুল জনপ্রিয়তা পান। ‘গারদিশ’ সিনেমায় অমরেশ পুরি ও জ্যাকি শ্রফ বাবা-ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেন। সিনেমাটি বাবা ও ছেলের সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। কমেডি সিনেমা ‘হালচাল’-এ নারী-বিদ্বেষী বাবা অমরেশ পুরী তার চার ছেলেকে অবিবাহিত রাখার জন্য কঠোর ভূমিকা নেন। সিনেমার শেষ পর্যায়ে তার অবস্থান পরিবর্তিত হয়। ‘পারদেস’ ছবিতে অমরেশ পুরি প্রথমে নিজের ছেলের সঙ্গে পালক পুত্রের দ্বন্দ্বে ছেলের পক্ষ নিলেও শেষ পর্যন্ত পালক পুত্র শাহরুখ খানের পক্ষ নেন। আবার প্রেমের ছবি ‘দিল ওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে’ তে নায়িকা সিমরানের (কাজল) কঠোর বাবা অমরেশ পুরি শেষ পর্যন্ত রাজের ( শাহরুখ) হাতে নিজেই মেয়েকে তুলে দেন। ‘যা সিমরান যা’ সংলাপটি সিনেমার ক্লাইমেক্স।

 

বলিউডে বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে অনেকেই সিনেমায় এসেছেন। তাদের কেউ কেউ একসঙ্গে সিনেমায় অভিনয়ও করেছেন। বাস্তবের বাপ-বেটা সুনিল দত্ত এবং সঞ্জয় দত্ত একত্রে অভিনয় করেছেন একটি মাত্র সিনেমায়। ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ সিনেমায় বাবা-ছেলে সেজেছেন তারা। অমিতাভ ও অভিষেক বচ্চন ‘সরকার রাজ’ সিনেমায় বাবা-ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।

পৃথ্বিরাজ কাপুর ও তার ছেলে রাজ কাপুর বাবা-ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ‘আওয়ারা’ এবং ‘কাল-আজ আউর কাল’ সিনেমায়। এ সিনেমায় রাজকাপুরের ছেলে রানধিরও রয়েছেন। ঋষি কাপুর ও রণবীরকেও একত্রে অন্য সিনেমায় দেখা গেছে। হৃত্বিক রোশান ও রাকেশ রোশান বাবা-ছেলের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ‘কোই মিল গ্যায়া’তে। যদিও তাদের একত্রে কোনো দৃশ্য ছিল না। ‘ইয়ামলা পাগল দিওয়ানা’তে ধর্মেন্দ্র ও তার দুই পুত্র সানি ও ববি দেওলকে দেখা গেছে। বলিউডে কাপুর পরিবারে চার প্রজন্ম ধরে বাবা-ছেলে-মেয়ে সিনেমায় অভিনয় করেছে। মহেশ ভাটের মেয়ে পূজা ও আলিয়া ভাট এসেছেন সিনেমায়। কবীর বেদীর মেয়ে পূজা বেদী চলচ্চিত্রে আসলেও টিকতে পারেননি। শত্রুঘ্ন সিনহার মেয়ে সোনাক্ষি এবং অনিল কাপুরের মেয়ে সোনাম সিনেমায় এসেছেন এবং নাম করেছেন। জিতেন্দ্রর ছেলে তুষার এবং মেয়ে একতা আছেন ইন্ডাস্ট্রিতে। আবার ইয়াশ চোপড়ার ছেলে আদিত্য চোপড়াকে পরিচালনায় এবং আরেক ছেলে উদয়কে দেখা গেছে অভিনয়ে। বলিউডে এখন দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্ম কাজ করছে। যেমন, ইয়াশ জোহর-করণ জোহর, জাভেদ আখতার-ফারহান আখতার-যোয়া আখতার, বিরু দেবগন-অজয় দেবগন, সেলিম খান-সালমান খান, বিনোদ খান্না-অক্ষয় খান্না প্রমুখ।

 

বাংলাদেশের সিনেমায় নায়করাজ রাজ্জাকের দুই ছেলে বাপ্পা রাজ ও সম্রাট সিনেমায় এসেছেন। সোহেল রানার ছেলে ইয়ুলও অভিনয় করছেন সিনেমায়। বাবা গোলাম মুস্তাফার পদাঙ্ক অনুসরণ করে অভিনয়ে এসেছেন সুবর্ণা মুস্তাফা। আবুল হায়াত এবং বিপাশা হায়াত দুজনেই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। 

বাংলাদেশে নির্মিত অনেক সিনেমাতেই চিত্রনাট্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বাবার চরিত্র। এক সময় পর্দায় দাপুটে বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফতেহ লোহানী, খলিল, গোলাম মুস্তাফা। আদর্শবাদী বাবার ভূমিকায় মানানসই ছিলেন আনোয়ার হোসেন ও প্রবীর মিত্র। 

বাবা কেন্দ্রিক সিনেমার প্রসঙ্গে প্রথমেই মনে পড়ছে ‘বাবা কেন চাকর’ সিনেমাটির নাম। এখানে আদর্শবাদী এবং সন্তান দ্বারা নিপীড়িত বাবার চরিত্রে অভিনয় করেন রাজ্জাক। ১৯৯৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটি ব্যবসা সফল হয়। ছবিটির পরিচালক ছিলেন রাজ্জাক এবং প্রযোজনায় ছিল রাজলক্ষী প্রোডাকশন। 

‘জন্ম থেকে জ্বলছি’ সিনেমায় স্ত্রীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন বুলবুল আহমেদ একক বাবা হিসেবে শিশু সন্তানকে বড় করে তোলেন। সিনেমাটিতে বাবা-সন্তানের বেশ কিছু আবেগঘন দৃশ্য রয়েছে। এ ছবির ‘বাবা বলে গেল’ গানটি তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। 

মাসুদ আখন্দ পরিচালিত ‘পিতা’ সিনেমাটি গ্রামীণ পটভূমিতে মুক্তিযুদ্ধের কাহিনিকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প অবলম্বনে নির্মিত মান্না অভিনীত ‘কাবুলীওয়ালা’ সিনেমাটিও বাবা কেন্দ্রিক। এখানে শ্বাশত পিতৃত্বের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত ‘বাপ বেটির যুদ্ধ’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন রাজ্জাক, আলমগীর, শাকিব খান ও পপি। সিনেমাটিতে বাবা মেয়ের দ্বন্দ্ব কাহিনির গতিকে নিয়ন্ত্রণ করে।

‘দীপু নাম্বার টু’ সিনেমায় একক বাবা বুলবুল আহমেদের সঙ্গে তার সন্তানের সম্পর্ককে তুলে ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশে নির্মিত বাবা কেন্দ্রিক সিনেমার মধ্যে ক্ল্যাসিক হল ‘দ্য ফাদার’। কাজী হায়াৎ পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাটির কাহিনিও অত্যন্ত ব্যতিক্রমী। বিদেশী নাগরিক শেতাঙ্গ জন বাংলাদেশের একটি শিশুকে লালন পালন করেন পিতৃস্নেহে। শিশুর নাম দেন তিনি ‘খুকু’। খুকু বড় হয়ে উঠলে বাবা-কন্যার সম্পর্কের টানাপোড়েন, খুকুর শ্বশুর বাড়িতে তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে দেখা দেয় দ্বন্দ্ব। এ ছবিতে জনের একটি বিখ্যাত সংলাপ ‘এত বছর বাংলাদেশে থাকিয়াও আমি বাঙালি হইতে পারি নাই, খুকুর বাবা হইতে পারি নাই’। খুকুর ভূমিকায় সুচরিতা এবং জনের ভূমিকায় জন নেপিয়ার এডামস অভিনয় করেন। ব্যক্তিগত জীবনে এডামস বাংলাদেশে ইউএস এইড প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন।

 

বাবা-সন্তানের সম্পর্ক নিয়ে নির্মিত একটি অন্যতম সেরা সিনেমার কথা বলে এ লেখার সমাপ্তি টানতে চাই। সিনেমাটি হল ‘ফাইন্ডিং নিমো’। এই এনিমেশন ফিল্মে দেখা যায় বাবা ও ছেলে মাছের গল্প। শিশু মাছ নিমোকে উদ্ধারের জন্য বাবা মার্লিন মহাসাগর পাড়ি দেয় এবং সব বিপদ আপদ কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত ছেলেকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। অসাধারণ চিত্রনাট্যের এ ছবিটি বাবা-সন্তানের মধ্যকার নির্ভরতা ও ভালোবাসার সম্পর্কের এক অনবদ্য চিত্ররূপ।