গ্যাঁড়াকলে ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’

১৬ মে মুক্তি পাওয়া বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ সিনেমাটির বিরুদ্ধে ‘যৌথ প্রযোজনার শর্ত লঙ্ঘনে’র অভিযোগ এনেছে তথ্য মন্ত্রণালয়ের চলচ্চিত্র বিভাগ। সোমবার মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে চলচ্চিত্রটির বাংলাদেশী পরিচালক অনন্য মামুনকে স্থগিতাদেশের চিঠি দেয়া হয়েছে।  

জয়ন্ত সাহাবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 May 2014, 01:15 PM
Updated : 19 May 2014, 01:15 PM

যৌথ প্রযোজনায় চলচ্চিত্র নির্মাণের চিত্রনাট্য পরীক্ষাকরণ কমিটি এ চিঠি দেয়।

সিনেমাটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশের অনন্য মামুন ও কলকাতার অশোক পাতি। প্রযোজনা করছে অনন্য মামুনের প্রতিষ্ঠান অ্যাকশন কাট এন্টারটেইনমেন্ট এবং কলকাতার এস কে মুভিজ।

মন্ত্রনালয়ের স্থগিতাদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তথ্য মন্ত্রনালয়ের যুগ্ম সচিব (চলচ্চিত্র) রেবা রাণী সাহা।

রেবা রাণী গ্লিটজকে বলেন, “যৌথ প্রযোজনার নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগ পাওয়ায় অনন্য মামুনের সিনেমা প্রদর্শনে স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, প্রদর্শকদের নিয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। তারা তদন্ত করবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সেন্সর বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হবে।”

বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের অফিস সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সিনেমার সেন্সর বাতিলের ‍বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সেন্সর বাতিল হলে পরিচালক সমিতির সদস্যপদ হারাবেন 'মোস্ট ওয়েলকাম' খ্যাত অনন্য মামুন।

বিএফডিসির লেটারহেডে কমিটির চেয়ারম্যান ও বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম হারুন-অর-রশীদ স্বাক্ষরিত পত্রে বলা হয়েছে “মেসার্স এ্যাকশন কাট এন্টারটেইনমেন্ট প্রযোজিত ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ নামক ছায়াছবিটি নির্মাণকালীন অনুমোদিত চিত্রনাট্য অনুযায়ী নির্মাণ করা হয় নাই এবং যৌথ প্রযোজনার শর্ত লঙ্ঘন করে চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উত্থাপিত অভিযোগ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’ ছবির প্রদর্শন স্থগিত করা হল।”

এর আগে চলতি বছর ১২ ফেব্রুয়ারি কমিটির এক সভায় যৌথ প্রযোজনার সিনেমাটির চিত্রনাট্য অনুমোদন করে কমিটি। কমিটির সভাপতি একইসঙ্গে তথ্য মন্ত্রণালয়ের চলচ্চিত্র উন্নয়ন বিভাগে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তখন চিত্রনাট্যে বলা হয়, বাংলাদেশের বেশ কজন তারকা সিনেমাতে অভিনয় করবেন। কিন্তু পরে ‘গল্পের প্রয়োজনে’ পরিকল্পনা বদলে ফেলেন পরিচালক অনন্য মামুন। সিনেমাতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন শুভশ্রী গাঙ্গুলী এবং অঙ্কুশ হাজরা। সিনেমার দুটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেন বাংলাদেশের মিশা সওদাগর ও মডেল মেঘলা।

মুক্তির পর সিনেমাটি পর্যালোচনা করে পরিচালক সমিতি জানতে পারে মামুন যৌথ প্রযোজনার শর্ত মানেননি। এরপর অনন্য মামুনের বিরুদ্ধে ‘প্রতারণা’র অভিযোগ এনে তার সদস্যপদ কেন বাতিল হবে না মর্মে কারণ দর্শাও নোটিশ পাঠানো হয়। এফডিসির মহাপরিচালক অধিদপ্তর বরাবর নালিশ জানিয়ে সেন্সর বাতিলের আবেদনও করেছে তারা।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির মহাসচিব মুশফিকুর রহমান গুলজার গ্লিটজকে বলেন, “২০১২ সালে প্রণীত যৌথ প্রযোজনার সিনেমার শর্তানুযায়ী, দুই দেশের সমান সংখ্যক শিল্পী থাকতে হবে। কিন্তু মামুন তা করেননি। এছাড়া সিনেমার শুটিংয়ের ক্ষেত্রেও মামুন নীতিমালা মানেননি। নীতিমালা অনুযায়ী দুদেশেই ৫০ ভাগ করে শুটিং হতে হবে। মামুন নামকাওয়াস্তে একটি গানের শুটিং করেছেন বাংলাদেশে। পুরো কাজটাই তিনি ভারতে করেছেন।”

গুলজার আরও বলেন, “একটি যৌথ প্রযোজনার সিনেমা ফেব্রুয়ারিতে অনুমতি পেল আর মে মাসে মুক্তি পেয়ে গেল, ব্যাপারটি খটকা লেগেছে পরিচালক সমিতির। আমাদের মনে হয়েছে অনেক আগেই সিনেমাটি নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। বাংলাদেশে ভারতীয় সিনেমা নিয়ে ব্যবসা করায় ধান্দায় চালাকি করেছে এস কে মুভিজ। তাদের হয়ে যাবতীয় কাগজপত্র বৈধ করার কাজ করছিল অনন্য মামুন।”

মামুনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, দুটি নোটিশই পেয়েছেন তিনি। তবে এফডিসি ও পরিচালক সমিতির অভিযোগকে তিনি ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেন।

তার কাছ থেকে কেবল একটাই উত্তর এসেছে, “আমি কোনোভাবেই নীতিমালা লঙ্ঘন করি নি।”

এদিকে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন মামুনও তিনি ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগে প্রদর্শন কেন বাধাগ্রস্থ হবে’ এ মর্মে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়েছেন তদন্ত কমিটি, পরিচালক সমিতি, প্রযোজক সমিতির ১১ জন সদস্যকে৤

মামুনের অভিযোগ, “আসলে ওরা চায় না এ দেশে ভালো সিনেমা তৈরি হোক। আমার সিনেমা এখন দারুণ ব্যবসা করছে। সপ্তাহ না পেরুতেই আমার সিনেমাটি আয়ের দিক থেকে রেকর্ড গড়েছে। এতে একটি বিশেষ মহল আমার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে।”

তার সিনেমা কত টাকা আয় করে রেকর্ড গড়েছে, গ্লিটজের এমন প্রশ্নের উত্তরে মামুন সিনেমাটিকে ‘সুপারহিট’ দাবি করে জানান, প্রতিদিন হলগুলো ৯০ শতাংশ হাউজফুল থাকে।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সেন্সর বোর্ড যতক্ষণ পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে না ততদিন সিনেমাটি আরও হলে মুক্তি দেবেন বলে মামুন জানান। সোমবার অবধি সিনেমাটি ৬৭টি হলে চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।