তবুও ব্যবসাসফল ‘তবুও ভালোবাসি’

‘তবুও ভালোবাসি’। মাহিয়া মাহি অভিনীত জাজের আরেকটি ব্যবসাসফল চলচ্চিত্র। মাহির বিপরীতে জাজের আরেক আবিষ্কার, অ-নায়কোচিত নায়ক বাপ্পী। পরিচালক অবশ্য পুরনো, অভিজ্ঞ-- মনতাজুর রহমান আকবর। আর এই চলচ্চিত্রেও নামকরণে জাজ তাদের প্রথা ধরে রেখেছে; নামে প্রেম-ভালোবাসা আছে।

নাবীল অনুসূর্যবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2013, 03:07 PM
Updated : 21 Oct 2013, 01:06 PM

নামের এই ভালোবাসাকে নায়ক-নায়িকার ভালোবাসা হিসেবে ধরে নেওয়া উচিত; অন্য কোনো ভালোবাসা সিনেমায় মাথাচাড়া দেয়নি। কিন্তু মুশকিল হল, নায়ক-নায়িকার সম্পর্কে কিছু টুইস্ট সিনেমার মধ্যে থাকলেও, কোথাও তা বিশালত্বও প্রাপ্ত হয়নি, বা সিনেমার মূল ক্লাইমেক্সেও রূপান্তরিত হয়নি। ফলে নামকরণের সার্থকতা বিচারে নামকরণটি একটু দুর্বলই হয়ে পড়ে। তবু নামে ভালোবাসা থাকায়, হৃদয়ে ভরা টাইটেল অ্যানিমেশনটিকে সুন্দরের পাশাপাশি যথার্থও বলতে হবে।

সিনেমাটির কাহিনিতে অনেকগুলো প্যাঁচ থাকলেও, কাহিনিটি এগিয়ে যায় সরলরেখায়। চাইলে সেই সরলরেখাকে চারটি ভাগেও ভাগ করা যেতে পারে। একদম শুরুতে নায়কের অফিসের কাহিনি বা খলনায়ক সাদার কিঞ্চিৎ-কাহিনি, যেটা একেবারে সংক্ষিপ্ত; এটাকে মূল কাহিনির উপক্রমণিকাও বলা যেতে পারে। পরের অংশটি নায়িকার বাসার কাহিনি বা নায়ক-নায়িকার প্রেম ও খলনায়ক লালের উপকাহিনি। তৃতীয় অংশটি নায়কের বাসার অংশ বা নায়িকার মা ও গাজী মারহাবার সংঘাতের উপকাহিনি। আর শেষের অংশে সব সাব-প্লট একত্রিত হয়েছে।

কাহিনির এইভাবে এগোনোর কৌশলটি মন্দ নয়। কিন্তু কাহিনির কিছু অংশ বেশ অদ্ভুত বটে। নায়ক-নায়িকার প্রথম সাক্ষাতের ঘটনাটি যেমন। ঘটনাটিকে হাস্যরসাত্মক করার প্রচেষ্টা ভালো; কিন্তু সেই রসিকতা একটু বেশি স্থূল এবং সেই স্থূল রসিকতার উপস্থাপনা একটু বেশিই অবাস্তব হয়ে গেল কিনা, তা ভেবে দেখা দরকার ছিল। আবার নায়ক যখন এক গভীর রাতে নায়িকার হাত চেপে ধরে, তখন নায়কের হাতের চাপে নায়িকার হাতের চুড়ি ভেঙে হাত কেটে যাওয়া একটু অদ্ভুত। আরও বেশি অদ্ভুত তারপর ভালোবাসার প্রবল আতিশায্যে দুজন মিলে, নায়িকার কেটে-যাওয়া-হাতে নায়কের স্বয়ং-কাটা-হাত মিলিয়ে রক্তে রক্ত মিশিয়ে দেওয়াটা; অবশ্য এর পক্ষে যুক্তি হতে পারে, সিনেমার প্রেম একটু অস্বাভাবিকই হয়! আবার তাদের প্রেম হওয়া, তারপর প্রেম করা এবং নায়কের বিদায়ের সম্ভাবনায় নায়িকার কান্নাকাটি করার সিকোয়েন্সগুলো ইলাস্টিকের মতো একটু বেশি প্রলম্বিত হয়ে গেছে; আর তার ফলশ্রুতিতে ‘ইন্টারভেলে’র (intervel, interval নয়) আগে বেশ বিরক্তিই লাগছিল।

কাহিনিতে আবার কিছু রহস্যও রেখে দেওয়া হয়েছে, যদিও সিনেমাটির জনরা সম্ভবত রোম্যান্স-কমেডি, রহস্য নয়। কাহিনির এই রহস্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়টি হল-- লাল নামের দস্যুর হাতে নায়িকার পরিবারের সকলে কচুকাটা হওয়ার পরে নায়িকা নিজে কী করে বেঁচে ফিরে এল? আর অন্যতম উপরহস্য-- গুলি খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরের সিকোয়েন্সেই নায়কের বোন কী করে দিব্যি সেজেগুজে উপস্থিত হল?

অন্যদিকে সিনেমার সমাপ্তি আবার অতিনাটকীয়। ঘটা করে লোকজন জড়ো করে লাল-সংগ্রামের (নায়কের নাম সংগ্রাম) মারামারি; অনেকটা রেসলিং যেন; কেবল পার্থক্য, লালের হাতে তার আইডেন্টিকাল খুরটিও উপস্থিত। আর ‘সমাপ্তি’র একদম আগের সিনটি অতি-অতিনাটকীয়। মা ক্ষতবিক্ষত ছেলেকে বুকে নিয়ে যেভাবে বললেন, এমন ছেলে বাংলার প্রতি ঘরে ঘরে আসুক, তা মন্দ নয়; কিন্তু তাতে সিনেমাকে শিক্ষামূলক করে তোলার একটা অপপ্রয়াস রীতিমতো চোখে লাগে। তারচেয়ে বড় কথা, মারদাঙ্গা ছেলে চাইলে, তাকে পুলিশ-আনসার-র‌্যাব-সেনাবাহিনীতে পাঠানোই মঙ্গলজনক, নয়তো এই আইন-শৃঙ্খলা এবং দেশ রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর প্রয়োজনীয়তাও অস্বীকার করা হয়ে যায়। আর সবচেয়ে বড় কথা, ঐতিহ্যগত ও ঐতিহাসিকভাবে বাঙালি দরদী জাতি।

চরিত্রের নাম হিসেবে দুই ভিলেনের নামকরণ খুবই কৌতূহলোদ্দীপক; একজনের নাম লাল, আরেকজনের নাম সাদা; দুই ভাই। সাদা ঢাকার বনানীতে গার্মেন্টস থেকে চাঁদা তোলে, লাল টাঙ্গাইলের রানিনগরের ডন। সিনেমার শুরুতে এই সাদার উপকাহিনির মধ্যে ‘জাজ গার্মেন্টস’-এর আমদানিও একটু কৌতূহলোদ্দীপক; যেহেতু অধুনা বাংলা সিনেমায় এজেআই গ্রুপের মালিক এজে অনন্ত একজন ‘বিগ ওয়ান’, জাজের বিশেষ প্রতিদ্বন্দ্বী, যে এজে গার্মেন্টসের মালিক তো বটেই, প্রতিটি ছবিতে নায়ক হিসেবে সেই গার্মেন্টসের মালিকের চরিত্রেই অভিনয় করেন।

‘তবুও ভালোবাসি’তে মাথা-টেকো-করে অমিত হাসান খলনায়ক লালের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। সিনেমায় তার আইডেন্টিকাল সংলাপটিও অসাধারণ-- “আমার মাথায় নাই চুল, কাজে করি না ভুল। বিছাই সন্ত্রাসের জাল, নাম আমার লাল।”

তুলনায় সংগ্রাম নামের চরিত্রে নায়ক বাপ্পির আইডেন্টিকাল সংলাপটি একটু দুর্বল। কারণ তাতে অনুপ্রাসে স্বরের স্খলন ঘটে-- “নাম আমার সংগ্রাম, যত রংবাজ চাঁদাবাজ দুর্নীতিবাজদের আমি যম।” তবে সিনেমার ক্লাইমেক্সে খলনায়ক লাল নায়ক সংগ্রামকে উপহাসভরে যে সংলাপটি বলে, সেটি আসলেই অসাধারণ-- “দূরত্ব মাপতে লাগে কিলোমিটার, দুধ মাপতে লাগে লিটার, ওজন মাপতে লাগে গ্রাম, তোর নাম সংগ্রাম।”

আইডেন্টিকাল সংলাপগুলো অসাধারণ হলেও সিনেমার মূল সংলাপ তেমন আহামরি নয়; তদুপরি বিশেষ বিশেষ মুহূর্তে, যখন অসাধারণ সংলাপ নিতান্ত প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায়, সে সব সিনে সংলাপ বেশ দুর্বল। বিশেষ করে নায়ক-নায়িকার অন্তরঙ্গ রোমান্সের সময় ডায়লগ আরেকটু শক্তিশালী হলে ‘ইন্টারভেলে’র আগের অংশটা এতটা বিরক্তিকর হয়ে উঠত না।

আবার টাঙ্গাইলের রানিনগরের গ্রামবাসীরা যখন কথা বলেছে, যদিও এমন চরিত্রগুলোর ডায়লগ সিনেমায় খুবই কম, তখন তারাও চেষ্টা করেছে মানভাষায় কথা বলতে। আর কোনো গ্রামবাসী অন্য গস্খামবাসীকে ডাকার সময় “গ্রামবাসীরা, তোমরা কে কোথায় আছ...” এমন সম্বোধন করে কিনা, তাও রীতিমতো গবেষণার বিষয়।

সিনেমার সেরা ডায়লগটি অবশ্য যথারীতি খলনায়কের মুখনিঃসৃত; খুনে সিদ্ধহস্ত লাল নায়িকার শিক্ষক বাবাকে, যে তারও শিক্ষক ছিল, উদ্দেশ্য করে বলে, “স্যার, আপনার কোনো শিক্ষাই আমার কাজে লাগে নাই। আপনে শিখাইছিলেন সাত যোগ সাত চৌদ্দ। কিন্তু আমার হিসাবে সাত যোগ সাত হয় তের। (আঙুলের কড় গুনতে গুনতে) ১ মানে এ, ২ মানে বি, ... ১৩ মানে এম, আর এম ফর মার্ডার।”

অমিত হাসান খলনায়ক চরিত্রে ভালো অভিনয় করেছেন, জাজের কল্যাণে তিনি নায়ক থেকে পুরোদস্তুর খলনায়কই বনে গেলেন। নায়িকার বাবা এবং একজন আদর্শ শিক্ষকের চরিত্রে সোহেল রানার অভিনয় ভালো হয়েছে। নায়িকার মা, একজন আদর্শ ইউপি চেয়ারম্যান লায়লা চৌধুরীর চরিত্রে দিতির অভিনয়কেও সু-অভিনয় বলা যেতে পারে। দিতির বিপরীতে খলনায়ক গাজী মারহাবার চরিত্রে মিজু আহমেদ এফডিসি ঘরানার অভিনয় চালিয়ে গেছেন। মাহিয়া মাহিও ভুরু নাচিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে আদুরে মেয়ের চরিত্র এক রকম ফুটিয়ে তুলেছেন। তবে বাপ্পির মধ্যে এখনও নায়কোচিত ব্যাপারটির অভাব রয়ে গেছে; তার প্রতি সালমান শাহর সিনেমাগুলো আবার দেখার ছোট্ট অনুরোধ রইল।

সিনেমাতে চরিত্রগুলোর নামকরণ যে অনেকটাই অদ্ভুতুড়ে, তা তিন খলনায়কের নামেই প্রমাণিত; নায়কের নামটি অবশ্য মারদাঙ্গা-- সংগ্রাম; অন্যদিকে নায়িকার নাম কাব্যগন্ধী-- সুনয়না।

সিনেমার কাহিনির গতি যেমন একরৈখিক, চরিত্রগুলোও তেমনি টাইপড, মানে বিবর্তনহীন; আগাগোড়া নায়ক মহৎ, খলনায়করা দুষ্ট, নায়কের মা আদর্শ চেয়ারম্যান। কিছুটা বিবর্তন দেখা যায় নায়িকা আর তার বাবার চরিত্রে; পরিবারের সবাই নিহত হলে নায়িকা আদুরে থেকে কিছুটা বাস্তবমুখী হয়ে ওঠে, প্রতিশোধের নেশায় কিছুটা মাতালও হয়; যদিও প্রতিশোধের অভিমুখ ভুল ছিল। আর নায়িকার বাবা শুরুতে শুধু আদর্শ শিক্ষকই নন, ব্যক্তিত্ববানও বটে। লালের ভয়ে তার হার্ট অ্যাটাক হওয়াটা সেই ব্যক্তিত্বের সঙ্গে খানিকটা সাংঘর্ষিক হয়ে গেল কিনা, তা ভেবে দেখা দরকার ছিল। বদলে তার অন্য কোনো অসুখ ঘটিয়েও ওষুধের প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করা যেত; যেহেতু অসুখের কোনো মা-বাপ নেই, যখন-তখন যার-তার যে কোনো অসুখ হতে পারে।

তবে চরিত্র নির্মাণে দৃষ্টিকটু রকমের ভুল নায়কের দুই বোন। এই চরিত্র দুটির আসলেও কোনো প্রয়োজন ছিল কি না, সে প্রশ্ন তো আছেই, তার চেয়েও জরুরি ছিল চরিত্র দুটির জন্য কাস্ট নির্বাচনে নায়ক ও নায়কের মার চরিত্র দুটির কাস্টদের কথা মাথায় রাখা। মা-ভাইয়ের সঙ্গে বোনের তো কিছু দর্শনধারি সাযুজ্য থাকে! তারপরও তাদের সাজসজ্জায় এমন দৃষ্টিকটু-রকমের গলদ না থাকলে, চরিত্র দুটিকে হয়তো মেনে নেওয়া যেত।

সিনেমার শুরুতে নায়ক অফিস তথা জাজ গার্মেন্টস থেকে পনের দিনের ছুটি নেয়। ছুটি নেওয়ার সিনে বন্ধুকে দেখান অদ্ভুত হলেও, সিনেমার ব্যাপ্তি কমবেশি পনের দিনের মধ্যেই থেকেছে। তবে এই সাফল্যের মতো সাফল্য সিনেমাজুড়ে কন্টিনিউয়িটি রক্ষায় দেখা যায়নি; যেমন নায়ক ফ্লেক্সি করার জন্য বাসা থেকে বের হয়েই পরের সিনে বাসার অন্দরমহল থেকেই ফের বের হয়ে আসেন।

সিনেমাটি এখনকার বাংলা সিনেমাগুলোর মতো অ্যাকশনে ভরপুর; তবে সেই অ্যাকশন দৃশ্যগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ অ্যাকশন ডিরেক্টর ভালো রেখেছেন। সিনেমার অ্যাকশন দৃশ্যে অ্যাকশন ডিরেক্টর তামিল ছবির মতো মাধ্যাকর্ষণ ও গতির সূত্রগুলোকে রীতিমতো বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন; বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের এই পরিমাণ বোধহয় আরেকটু কম করা যেত। বিশেষ করে তার যে আকাশে ওড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ, সেটা সিনেমায় আরেকটু কমও প্রয়োগ করা যেত। আর আমাদের সিনেমায় অপ্রয়োজনে কাচ ভাঙার দিন কবে শেষ হবে, সেই চিন্তাও করা দরকার। আর সবচেয়ে গুরুতর সমস্যা যেটা ছিল, উড়ে আসা দস্যুদের নায়ক যখন ছুড়ে ছুড়ে ফেলে দিচ্ছিল, তখন কয়েকবার খালি চোখেই দেখা গেছে, নায়ক দস্যুদের ছুঁয়েই দেখেনি; শুটিংটা সেভাবে হলেও, পর্দায় এটা বোঝা যাওয়াটা রীতিমতো বড় ধরনের গলদ।

সিনেমাতে ছোট্ট একটি ফ্ল্যাশব্যাক ব্যবহার করা হয়েছে; ফ্ল্যাশব্যাকটির ব্যবহার খুবই আকর্ষণীয়। সম্ভবত দর্শক-বিবেচনায় পরিচালক নায়িকার একাকী ফ্ল্যাশব্যাকে বলা ঘটনাটাই আবার নায়িকার মুখ দিয়ে নায়ককে বিস্তারিত বলিয়েছেন; তবে পরের ফ্ল্যাশব্যাকে আগে-দেখানো অংশটুকু না দেখালেও হয়তো চলত।

‘তবুও ভালোবাসি’র লোকেশন নির্বাচন কাহিনির সঙ্গে যুৎসই। গানগুলো যেসব লোকেশনে চিত্রায়িত হয়েছে, সেগুলোও সুন্দর। আর লোকেশনের চেয়েও সুন্দর হয়েছে ইনডোর সেটগুলো। বিশেষ করে গানের চিত্রায়নের জন্য বানানো সেটগুলো রীতিমতো অসাধারণ। শুধু ‘সোনালি কাবিন’ গানের বরফ-পড়া সেটটির জন্যই আরেকবার সিনেমাটি দেখা যেতে পারে।

গানটির শুধু সেটই যে অসাধারণ, তাই নয়; গানটির কোরিওগ্রাফিও সুন্দর। ‘বিয়ের শানাই’ ও ‘তুমি আছ নজরে নজরে’ গান দুটোও মন্দ নয়। তবে সবগুলো গান এবং গানের কোরিওগ্রাফির জন্যই এ কথা প্রযোজ্য নয়। আর শেষ পর্যন্ত কোনো গানই মনে রাখার মতো অসাধারণ হয়ে উঠতে পারেনি।

সিনেমার আরেকটি বিষয় ব্যতিক্রমধর্মী, এবং আক্ষরিক অর্থেই আকর্ষণীয়; সিনেমাটির ব্যবসা-সফলতার পেছনে অন্যতম প্রভাবক হিসেবে যে এটি কাজ করেনি, তাও সুনিশ্চিত করে বলা যায় না; সিনেমাটিতে আইটেম গান একটি নয়, দুটি। সিনেমার শুরুতে একটি, এবং ইন্টারভেলের পরপরই আরেকটি-- ‘জ্বালাই আগুন লণ্ঠনে’। প্রথমটিতে নেচেছেন নায়িকা মাহি, কয়েক দৃশ্যে পাহাড়ি ঝরনায় ভিজতে ভিজতে; আর পরেরটিতে জাজের নিয়মিত আইটেম গার্ল বিপাশা। পরের আইটেম গানটির সেটটি ইনডোরে বানানো, মানে বেশ সুন্দর; এই গানটির কোরিওগ্রাফিও ভালো।

জাজের আগের সিনেমাগুলোতে গোলাপি-প্রীতি অনেক বেশি প্রকট ছিল; সেই প্রকোপ ‘তবুও ভালোবাসি’তে এসে অনেক কমেছে; নায়কের দুই বোনকে বিবেচনার বাইরে রাখলে পোশাক ও সাজসজ্জা পরিকল্পনাতে তেমন বড় ধরনের গলদ নেই। সাউন্ড ডিজাইন গতানুগতিক। তবে লাইটিংয়ে আরেকটু মনোযোগ দেওয়া উচিত ছিল; রাতের সিকোয়েন্সগুলোতে প্রায়ই স্ক্রিনে ছায়ারা মুখব্যাদান করে দেখা দিয়েছে।

রিভিউয়ের সমাপ্তিতে ‘তবুও ভালোবাসি’ নামটি নিয়ে আরেক দফা গবেষণায় লিপ্ত হওয়া যাক; নামে ‘ভালোবাসি’ কেন রাখা হয়েছে, সে নিয়ে অনুসিদ্ধান্ত শুরুতে দেওয়া হয়েছে; কিন্তু ‘তবুও’ শব্দটা কেন? কারণ, বিরক্তিকর প্রথম অর্ধাংশ এবং কিছু গুরুতর গলদ আছে, তবুও সিনেমাটি ব্যবসা-সফল; তবুও যে সিনেমাটি ব্যবসা-সফল হবে, এই বিশ্বাস পরিচালক-প্রযোজকদেরও হয়তো ছিল; আর তাই সিনেমার নামকরণেই সেই পূর্বাভাস তারা উপ্ত করে দেয়; ফলে সব মিলে সিনেমার নাম দাঁড়িয়ে যায়-- ‘তবুও ভালোবাসি’।