অমানুষ- ডাকাতদের নিয়ে গোঁজামিলে ভরা এক সিনেমা

‘অমানুষ’ নাইক্ষ্যংছড়ির এক জঙ্গলে থাকা ডাকাতদের গল্প। ডাকাতদের দলে আবার নারীরাও আছে। তারা পুরুষ ডাকাতদের ভাত রান্না করা ও প্রেমের কাজে নিবেদিত! একইসঙ্গে নাইক্ষ্যংছড়ির জঙ্গলে ডকুমেন্টারি করতে আসা নুদরাত নামের এক নারীর অপহরণের গল্প অমানুষ।

>> আহসান কবিরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2022, 11:36 AM
Updated : 3 July 2022, 11:50 AM

সিনেমায় ডাকাতদের দেখানো হয়েছে অমানুষ হিসেবে, যারা কিনা আবার নারীকে অসম্মান করে না, কিন্তু খুব সহজেই খুন খারাপিতে মেতে ওঠে! আবার যাদের মানুষ দেখানো হয়েছে, তারা কি না খুন ও কিডন্যাপের ষড়যন্ত্রের মাস্টারমাইন্ড! শেষমেষ প্রচলিত গল্প ও অসঙ্গতিতে ভরা এক ফর্মুলা সিনেমার নাম অমানুষ।

সিনেমা দেখে বোঝার উপায় নেই যে জঙ্গলটা নাইক্ষ্যংছড়ির কি না। তবে শুটিং হয়েছে বান্দরবান, রাঙামাটি, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহসহ আরও কিছু জায়গায়।

এখানে ওসমান নামের এক ডাকাতের রাজত্ব, যে বন্দুকের ভাষায় কথা বলে। সে আবার নারীর গায়ে হাত তোলে না। ডাকাত দলের এক নারী সদস্য তাকে ভালোবাসে। জঙ্গলে ওসমানের প্রতিপক্ষ রাশেদ মামুন অপুর দল। এই দুই দলের খোরাক হতে এখানে ডকুমেন্টারি করতে আসে নুদরাত নামের এক নারী, যার চাচা কি না ডাকাতদের সঙ্গে আগে থেকেই যোগাযোগ রাখতো। ডাকাত অপুর দলের লোকজন নুদরাতকে কিডন্যাপ করার আগেই সেই দান মেরে দেয় ওসমান। ফর্মুলা সিনেমার গৎ ধরে শুরু হয় সেই পুরোনো ও পরিচিত গল্প।

নুদরাত ওসমানকে বলে বাস্টার্ড। আর ওসমান তাকে ডাকে ইংলিশ। কিন্তু গৎ অনুসারে এই দুজনের প্রেম জমে। তারা আকাশ বাতাস সাক্ষী রেখে গানও গায়। এদিকে একটা এসএমএস আসে মোবাইলে! নুদরাতের মাথার দাম দেড় কোটি টাকা। নুদরাতের চাচা তাকে একারণে খুন করাতে চায় যে নুদরাত তার বাবার সম্পত্তি ট্রাস্টি করে দিতে চায়! এই টাকা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে দল ভাঙে ওসমানের। সে সবকিছু ছেড়ে নুদরাতকে নিয়ে পালায়।

এই পলায়ন আপাতত বনের ভেতরেই। কিন্তু অপু বা ওসমানের সহযোগী যারা দল ভেঙে আলাদা ডাকাত দল গড়েছে, তারা নুদরাত ও ওসমানকে খুঁজে পায় না! ওসমানকে তার ডাকাত দলের যে ভালোবাসে সেই নারী(নওশাবা) ঠিকই খুঁজে পায় ওসমানকে। তখন জানা যায় নুদরাতের প্রতি ইর্ষান্বিত হয়ে দেড় কোটি টাকার এসএমএসটা সেই নারী ডাকাত করেছে! ওসমান পড়ালেখা জানে না, ইংরেজির মানে বোঝে না আবার এসএমএস পড়তে বা বুঝতে পারে!

যাই হোক নুদরাত ও ওসমানের প্রেম শেষ হলে তারা ধরা পরে অপুদের গ্রুপের সঙ্গে। সেইসঙ্গে জানা যায় নুদরতকে অপহরণ করার পরিকল্পনা করেছিল তার চাচা এবং সেটা জানাজানি হলে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

অন্যদিকে নাইক্ষ্যংছড়ির থানা পুলিশকে ইনফর্ম করে নুদরাতের সঙ্গে আসা এক মেয়ে যে কিনা পুলিশ সদস্য, সে যেন ছবি শেষ হওয়ার জন্যই অপেক্ষা করে এবং ওসমান ও তার বিপক্ষের লোকজন এর সঙ্গে মারামারি শেষ করার পর পুলিশ সেখানে পৌঁছে ওসমানকে ধরে নিয়ে যায়।

এই চলচ্চিত্রের পরিচালক অনন্য মামুন। কাহিনী, চিত্রনাট্য এবং গানের কথাও লিখেছেন তিনি। সংলাপ লিখেছেন জুয়েল মাহমুদ ও পাপ্পুরাজ।

যারা বন জঙ্গলে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকেন কিংবা শেষমেষ পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন, তাদের জীবনাচরণ কেমন? পুলিশের চোখকে ফাঁকি দেওয়ার জন্য তারা কি মোবাইল ব্যবহার করেন কিংবা একই আশ্রয়ে দিনের পর দিন থাকেন? বনে কি গাছপালা ছাড়া আর কোন পশু পাখি থাকে না? তারা কীভাবে ডাকাতি করেন? বনের কাঠ কেটে যারা পাচার করে তাদের সঙ্গে ডাকাতদের কি সখ্য থাকে?

অনন্য মামুনের এই সিনেমা নাকি সত্যি ঘটনাকে কেন্দ্র করে নির্মিত। অবশ্য সম্পত্তির লোভে খুন করে ফেলার পরিকল্পনা নিয়ে বহু ঘটনা আছে, অনেক নাটক সিনেমাও আছে এমন কাহিনী নিয়ে। চিরাচরিত ফর্মুলা সিনেমার কাহিনীর মতোই অমানুষের গল্প।

সিনেমায় ওসমান চরিত্রে অভিনয় করেছেন নিরব এবং নুদরাতের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন রাফিয়াত রশীদ মিথিলা। ২০২১ এর নভেম্বরে ছাড়পত্র পেলেও ২০২২ সালের ১৭ জুন একসঙ্গে ৪১টি হলে মুক্তি পেয়েছে অমানুষ।

পরিচালক অনন্য মামুনের দাবি- ‘অভিনেতা নিরবের জীবনের ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হবে এই সিনেমা। ডাকাতের মতোই তাকে সাজানো হয়েছিল এতে। নিরব আসলে কেমন অভিনয় করেছেন? তিনি কী ভাঙতে পেরেছেন নিজেকে? দর্শকদের ওপরই তোলা থাক এই বিচারের ভার।

তবে নিরব ও মিথিলা অভিনীত প্রথম সিনেমা অমানুষ। মিথিলাকেও এই সিনেমায় তেমন সপ্রতিভ মনে হয়নি।

আরও অভিনয় করেছেন মিশা সওদাগর, শহীদুজ্জামান সেলিম, সাহেদ আলী এবং নওশাবা। মিশা সওদাগর এবং শহীদুজ্জামান সেলিম বরাবরের মতো স্বাভাবিক অভিনয় করেছেন। দু-জনকে সহজেই আলাদা করা যায়। একজন রাশেদ মামুন অপু। সামান্য অতি অভিনয়ের মাত্রা থাকলেও খল চরিত্রে ভালো অভিনয় করেছেন তিনি। তার ছবির জগত আরও সুন্দর হোক। নাচের অংশটুকু বাদ দিলে ভালো অভিনয় করেছেন নওশাবা। তাকেও সাধুবাদ জানাই।

অমানুষ সিনেমার সংগীত পরিচালক ছিলেন লিংকন রায় ও শাহরিয়ার মার্সেল। গান গেয়েছেন অমি, কুমকুম লায়লা ও পূজা।

জয় হোক বাংলা সিনেমার।