কখনও ভাবিনি, ৩০ বছর টিকে যাব: শাহরুখ

তিন দশক আগে শাহরুখ খান ভেবেছিলেন অভিনয়ের সুযোগ যদি নাও জোটে, সিনেমার কোনো না কোনো কাজ পেতেই হবে। সেই জগতেই দাপটে কাজ করে হিন্দি সিনেমার এই বাদশাহ ছুঁয়েছেন অভিনয়যাত্রার ৩০ বছরের মাইলফলক।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2022, 10:26 AM
Updated : 27 June 2022, 06:13 PM

এনডিটিভি জানিয়েছে, ইনস্টাগ্রামে প্রথম লাইভে এসে দীর্ঘ অভিনয় জীবনে যারা তার পাশে থেকেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন শাহরুখ খান।

দিল্লি থেকে মুম্বাইয়ে এসে পাঁচ কি সাতটি সিনেমা করার বাসনা নিয়ে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে পা রেখে কীভাবে সুপারস্টার বনে গেলেন, স্মৃতি হাতড়ে সেসব কথা শোনানোর পাশাপাশি তিনি ভক্তদের শিখিয়েছেন টিকে থাকার মন্ত্র। 

৫৬ বছর বয়সী এই মহাতারকাকে তিন দশক আগে ‘দিওয়ানা’ সিনেমায় প্রথম দেখা যায় বড় পর্দায়। যদিও তার ক্যারিয়ার শুরু টেলিভিশন ধারাবাহিক ‘ফৌজি’ এবং ‘সার্কাস’ দিয়ে, তখন নাম ছিল আব্দুর রহমান।

১৯৯২ সালের ২৫ জুন রাজ কুমার পরিচালিত ‘দিওয়ানা’ মুক্তি পায়। ওই সিনেমায় ধনী গায়ক ‘ববির’ চরিত্রে অভিনয় করেন শাহরুখ, তার নায়িকা ছিলেন দিব্যা ভারতী।

এরপরের তিন দশকে অন্য অনেক অভিনেতার মতই নানা ধরনের চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে গেছেন শাহরুখ। বলিউডের পরিবর্তন, ভালো-মন্দে খাপ খাইয়েছেন নিজেকে। কখনও তার সাফল্যে বক্স অফিস ঝলমল করেছে, আবার একের পর এক ফ্লপ ছবি হতাশ করেছে ভক্ত-অনুরাগীদের।

অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনা এবং ক্রিকেট বাণিজ্যের খাতাতেও নাম লিখিয়েছেন কিং খান। দীর্ঘ সময় ধরে জনপ্রিয়তা ধরে রাখা বলিউড অভিনেতাদের একজন তিনি। সিনেমার সংখ্যা এবং আয়ের দিক থেকেও তিনি ভারতের শীর্ষ তারকাদের একজন।

ইনস্ট্রাগ্রাম লাইভে তিনি বলেন, “মনে হচ্ছে গতকালই কাজ শুরু করলাম। কখনও ভাবিনি ৩০ বছর টিকতে পারব। দুই এক বছর কাজ করব, বড়জোর পাঁচ থেকে সাতটি সিনেমা করতে পারব- এতটুকু আশা নিয়েই এসেছিলাম।”

যদি ওই পরিকল্পনা সফল না হত, তাহলে সিনেমা ইন্ড্রাস্ট্রির অন্য কোনো কাজ খুঁজে নেওয়ার কথাও মাথায় রেখেছিলেন জানিয়ে শাহরুখ বলেন, অভিনয়ই তাকে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছে বরাবর।

“আমি সবসময় ভেবেছি, মিডিয়াতে একটি কাজ খুঁজে পাব বা সিনেমার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিছু একটা করব, সেটা লাইটের সেটআপের কাজ বা সাউন্ড অ্যাসিস্ট্যান্টের কাজও হতে পারে। আমি শুধু সিনেমা ভালোবাসি। তাই সে সময়ে মনে হত, যদি অভিনয়ের সুযোগ না পাই, তাহলে মুম্বাইতে অন্তত সিনেমার সেটের কিছু কাজ করে বাড়ি ফিরব।“

‘বাজিগর’, ‘ডর’ সিনেমায় প্রেমিক ও খলচরিত্রে অভিনয় শাহরুখকে বিপুল খ্যাতি এনে দেয়। ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’, ‘’কুছ কুছ হোতা হ্যায়’, ‘দিল তো পাগল হ্যায়’, ‘রাজু বান গ্যায়া জেন্টলম্যান’, ‘কাভি হ্যায় কাভি না’, ‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’, ‘দেবদাসের’ মত রোমান্টিক ও অ্যাকশন সিনেমাতেও শাহরুখের অভিনয় ভক্ত হৃদয়ে ছাপ ফেলেছে।

অনেক ভক্তের কাছে বলিউডের রোমান্টিক সিনেমা মানেই নব্বই দশকজুড়ে শাহরুখ। তার অভিনীতি ‘দিলওয়ালে দুলহানিয়া লে জায়েঙ্গে’ তাকে ‘নায়ক’ তকমায় শীর্ষদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করে দেয়।

ব্লকবাস্টার সিনেমা ‘স্বদেশ’, ‘চাক দে ইন্ডিয়া’, ‘মাই নেম ইজ খান’ শাহরুখকে তার প্রচলিত কাজগুলো থেকে অনেকটা আলাদা করে ‘সুঅভিনেতা’ হিসেবে চিনিয়ে দেয়। এর একটিতে নাসার বিজ্ঞানী, অন্যটিতে হকি কোচ এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তির চরিত্রে অভিনয়ে শাহরুখ দর্শকদের সামনে আবির্ভূত হয়েছেন দুর্দান্ত রূপে।  

লাইভে এসে শাহরুখ খান বলেন, সিনেমা তৈরির প্রক্রিয়াটি তিনি বড় ভালোবাসেন। এবং প্রতিবার নতুন কিছু করার প্রচেষ্টা থাকে তার।

এর ব্যাখ্যায় শাহরুখ বলেন, “ব্যাপারটা এমন নয় যে সিনেমা মানেই এটি একটি দুর্দান্ত দৃশ্য বা কোনো খুন জখমের কোনো সিন, মূল বিষয়টা হল বাণিজ্যিক ফ্রেমের মধ্যে নতুন কিছু করার চেষ্টা।”

অভিনয়ের ৩০ বছর উদযাপনের দিন শনিবার একটি ফিল্ম সেটে ছিলেন শাহরুখ।

তিনি বলেন, “গতকাল আমি বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে পরদিন সকাল সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত শুটিং করেছি। ক্যারিয়ারের ৩০ বছর উপযাপনের দিনটিতে ১৫ ঘণ্টার টানা কাজ করাটাই সবচেয়ে আনন্দের বলে মনে করেছি।“

বড় পর্দায় ২০১৮ সালে মুক্তি পায় শাহরুখের ‘জিরো’, যা বক্স অফিসে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। জিরোর আগেও তিনটি সিনেমা ফ্লপ হয়। চারটি সিনেমার ব্যর্থতায় শাহরুখ নিজেও বিরক্ত হয়ে বিরতি নিয়েছিলেন। এমনটি নতুন কোন চিত্রনাট্যও শোনেননি এ সময়।

ধীরে ধীরে হতাশা কাটিয়ে কাজে ফিরেছেন কিং খান। ২০২৩ সালে তিন ঘরানার তিনটি ছবি ’পাঠান’, ‘ডানকি’ ও ‘জওয়ান’ এ দেখা যাবে শাহরুখকে। এরি মধ্যে জওয়ানের টিজারও প্রকাশিত হয়েছে সোশাল মিডিয়ায়।

শাহরুখ বলেন, “আমার কাজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আমি কাজটা উপভোগ করি। চার বছর আগে লক্ষ্য করলাম, আমি আর কাজ উপভোগ করছি না, এরপর এক বছর কাজ রেখেছি।”

উপভোগ করার ওই মন্ত্রটি ব্যাখ্যা করে এই অভিনেতা বলেন, “শুটিংয়ের সেটে যাওয়া এবং কিছু তৈরি করা, এই পুরো বিষয়টি আমার কাছে অত্যন্ত উত্তেজনার মনে হয়। আমি জানি, শেষ পর্যন্ত এ কাজটা কারও মুখে হাসি ফোটাতে পারে, কারও জীবনকে স্পর্শ করতে পারে এবং কারও দিনটা বদলে দিতে পারে।

“এবং আমি যদি আপনার মেজাজের পরিবর্তন এনে একটি মুহূর্তও খুশি করে তুলতে পরি, তাহলেই আমি সার্থক।“

একজন অভিনেতার জীবনকে ‘অ্যাথলেটের’ জীবনের সঙ্গে তুলনা করে এই সুপারস্টার বলেন, সাফল্য-ব্যর্থতা খেলারই একটি অংশ।

সিনেমা নির্মাণকে ১০০ মিটার দৌড়ের সঙ্গে তুলনা করে শাহরুখ বলেন, “ধরা যাক, আপনি দুই কি তিন ব্ছর ধরে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। কিছুদিন হল আপনি বিশ্ব রেকর্ড ভেঙেছেন, কিছুদিন পর আপনার গতি ধীর হয়ে যাবে, আরও কিছু দিন গেলে পেশির শিরায় টান ধরবে।

“সুতরাং যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে, নিজের সেরাটা দিতে তৈরি হতে হবে। আপনি জানেন না কখন কি ভুল হতে পারে। তারপরও দৌড়ে এগিয়ে থাকতে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।“

শাহরুখ খান বলেন, যখন যে সিনেমায় তিনি অভিনয় করেছেন, সেটি ‘সেরা’ হবে, এই প্রত্যাশা আর বিশ্বাস নিয়েই কাজটা করেছেন।

“ক্লান্তি জয় করে, একঘেয়েমিতে না ভুগে টানা ৩০ বছর ধরে কাজ চালিয়ে যাওয়ার এটাই একমাত্র উপায়।”